অনুভূতি গল্প শেষ পাট
‘সমস্ত চিন্তাকে একপাশে সরিয়ে শক্ত করণ আরাফাত। প্রথমেই খানসাকে পাঁজাকোলা করে নামিয়ে সন্তর্পনে বসিয়ে দি
শাড়ীর ফোনে রাখা যাবে। তাতে কুসুম গরম পানি ঢেলে দিলো। এটার নিচে পরিষ্কার প্লাস্টিকের মাটি আগে থেকেই বিছিয়ে রেখেছিল। এবার নিজের দু মাস পড়ে নিয়ে ওর পাশে বসে পড়ল। খানসার একেকটা আর্ত চিৎকার আরাফাতের পাঁজর গুড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু নিরুপায় কারণ খানসার একার। একজন মায়ের ব্যথা একজন বাবার পক্ষে অনুভব করা তো দূরের কথা আঁচ করাও সম্ভব হয় না। আরাফাত বারবার চুমু খেলো খানসার কপালে গালে ঠোঁটে যেন চুমুর সাথে খানসার ব্যথাগুলো ওর কাছে চলে আসবে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না। খানসার কাতরানো আরো বাড়লো।
এবার সে দরদর করে ঘামছে। ওর হাতের মুঠোয় আরাফাতের শার্ট ছিঁড়ে যাবার দশা হয়েছে। প্রিয় মানুষটার এমন যন্ত্রণা চোখের সামনে দেখা যে কতটা কষ্টের তা ভুক্তভোগী ছাড়া বাকীরা বলতে পারবেনা। আরাফাতে চোখের কোন ভিজে উঠেছে। শক্ত করে খানসাকে জড়িয়ে পরে তর মাথায় নিজের গাল ঠেকিয়ে বলে উঠল, ও পরম করুণাময়। আমার সন্তানের আগমনকে সহজ আর নিরাপদ করে দাও। বলতেই সচকিত হলো আরাফাত। ফিসফিসিয়ে উচ্চারণ করল,
‘হেয়ার সি কামস। মাই ডারলিং বেবী। একটু কষ্ট করো জান। আমার সোনামনি। একটু কষ্ট করো। জাস্ট পুশ ইট।
বলতে
‘
আই কান্ট আরা..ফ। আল্লাহ।’ প্রবল শক্তিতে চিৎকার দিতে গিয়েও আরাফাতের বাহুতে মুখ গুঁজে শব্দটা ঠেকালো। হঠাৎ অসহনীয় ব্যথায় শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে কী যেন বলতে চাইল খানসা। আর প্রায় সাথেই নিস্তেজ হয়ে গেল । মাথা হেলে পড়ল আরাফাতের কাঁধে। পানিতে ভাসছে একজন মানবশিশু। পরমানন্দে আরাফ উচ্চারণ করলো,
‘আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। সমস্ত প্রশংসা শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য। যিনি চরম কষ্ট চরম আনন্দে পরিণত করে নিতে পারেন। হাসছে আরাফ। নিজের ঔরসজাত কন্যার আগমণধ্বণী তবে হাসছে। তারস্বরে কাঁদছে তার মেয়েটা। ওর কান্না শুনে আরাফাতের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । একটু আগে কষ্টের পানি এখন আনন্দের ফোয়ারায় রূপ নিয়েছে। প্রিয় সন্তানের মায়ের কপালে মমতার আরেকটি স্পর্শ দিয়ে বাকী কাজে মনোযোগী হলো আরাফাত। এনাটমি আর ফিজিওলজীর ক্লাসে আরাফাতের পছন্দের টিচার ছিলো আব্রাহাম নামের একজন গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট। তার কাছেই আরাফাত হাতেকলমে শিখেছিলো বেবী বার্থিং এর সমস্ত খুঁটিনাটি।
শেখার সময় কস্মিন কালেও মনে হয়নি, একদিন নিজের স্ত্রীর প্রসব কাজ ওকেই করতে হবে।
যথেষ্ট দক্ষতার সাথে প্লাসেন্টা কেটে বাচ্চাটাকে নরম কাপড় দিয়ে
পরিস্কার করল। এমনিতেও পানিতে ওর শরীরে লেগে থাকা জেলো পদার্থগুলো অনেকটাই ধুয়ে গেছে। মাথায় সামান্য ব্লাড লেগেছিল। আরাফাত সেটাকে সযত্নে মুছে দিয়ে ওকে খানসার বুকে তুলে দিল। ‘তোমার মতোই রেশম কোমল চুল হয়েছে আমার মেয়ের। তবে তোমার চেয়ে ব্রাইট হবে ও।’ খানসা রুষ্ট চোখে তাকাল, ‘ওহ্, আমি তাহলে এখনই কালো হয়ে
গেলাম তোমার কাছে?’ বলেই আরাফাতের দাড়ি মুঠোর মধ্যে নিয়ে নিল। আরাফাত আস্তে করে ওর হাত ছাড়িয়ে সেই হাতে চুমু খেয়ে বলল, তুমি কালো কিংবা ধলো। সেটা এখন আর আমার কাছে ম্যাটার করে না। আমি খানসাকে ভালোবাসি। মানুষ খানসাটাকে। তোমার শরীর, গায়ের রং, সৌন্দর্য এসব তো বোনাস আমার জন্য। কেউ যখন মধু পান করে তখন সেটার মিষ্টতার জন্য করেনা। করে তার উপকারীতার জন্য। মিষ্টতাটা তো তার জন্য বাড়তি স্বাদ বয়ে
আনে। মধূ খেতে তেতো হলেও মানুষ সেটা ঔষধ মনে করেই খেতো। তুমি আমার জন্য সেরকমই। একজন প্রিয়তমা স্ত্রী উপকারী হলে স্বামীর জন্য সে সর্ববিচারে নিয়ামত। তার সৌন্দর্যটা তখন স্বামীর জন্য বাড়তি আনন্দ বয়ে আনে। সে সুন্দর না হলেও স্বামীর তাতে তেমন কিছু আসে যায় না। মানুষটাই তখন প্রাধান্য পায়। তুমি সুন্দর না হলেও আমি তোমাকে এতোটাই ভালোবাসতাম খানসা।’
খানসা এবার বুকের কাছে উপুড় হয়ে থাকা বাচ্চাটার দিকে তাকাল। দুচোখ পানিতে ভরে গেলো ওর। বাচ্চাটা তখন খাবারের খোঁজে মুখ ঘষতে শুরু করে দিয়েছে। খানসা অসহায়ের মতো বললো, “এই দ্যাখো, ও কেমন করছে। “একটু সবর করো। দুই মা মেয়েতে কথা বলো। আমি এগুলো পরিষ্কার করে গোসল না করে ওকে নেবো না। তুমি যে হারে ঘেমেছো তোমাকে পরিষ্কার না করে ওকে তোমার স্কিনে টাচ করানো ঠিক হবে না। জাস্ট ওয়েট। আমি সব ঠিক করে দিচ্ছি।’ বলে আরাফাত দ্রুত হাতে সমস্ত কিছু গোছাতে লেগে গেল। খানসাকে পরিষ্কার করে পরিপাটি করে বাচ্চা সহ ওকে বেডে তুলে দিল। এরপর ফ্লোর ম্যাট ধুয়ে গাড়ীর ছোট্ট বাথরুমটাতে নিজে গিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গোসল সেরে এল।
খানসাকে দেখা গেল মেয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে সে।
বেচারীর গলা দিয়ে ঐ ভাবে শব্দ বেরুচ্ছে না। সম্ভবত একটু আগের
চ্যাঁচামেচির কারণে ওর গলাটাই বসে গেছে।
আরাফাত এসে এবার বাচ্চাটাকে
হম, বলবো। তবে তার আগে ইহসানকে একটা কঠিন লেসন দিতে চাই আমি। সানফ্রানসিসকো গিয়েই আগে ওকে ধরবো। প্রতিবার তার
একটা না একটা কৈফিয়ত তৈরী থাকে আর দিয়াও সেটা মেনে নেয়। এবার আর তা হতে দিচ্ছি না। ইহসানকে এবার চরম মূল্য দিতে হবে। ওর গাফলতির।
“কী দরকার ছিল এসবের। দিয়াপি তো মেনে নিয়েছে।” “কিন্তু আমি মানবো না খানসা। ওর কারণে আফাজের এতো বড়
দুঃসাহস হয়েছে আমাকে চ্যালেঞ্জ করার। এবার আমি আফাজকেও ছাড়বো না। আমার সম্পদের দিকে তাকানো প্রতিটা কুনজর আমি
উপড়ে ফেলব।’ বলে খানসার দিকে তাকালে একই সাথে খানসাও ওর দিকে তাকাল। আরাফাত ঝুঁকে ওর কপালে চুমু খেয়ে ফিসফিসিয়ে
বলল, ‘তুমি আমার সম্পত্তি নও আমার সম্পদ! আমার সম্পদ এত সহজলভা না।?
খানসা আর কিছু না বলে এবার চোখ বুজলো। পরম নির্ভরতায়। কারণ সে ভালো করেই জানে আরাফাত তার দুবাহু মেলে ওদের মা মেয়েকে
আগলে রাখবে। মুচকি হেসে বলল, ‘আমার মেয়েকে কী নামে ডাকবো আরাফ ?? দু চোখ বন্ধ রেখেই
প্রশ্নটা করলো খানসা। আরাফাতও মুচকি হেসে পর্যায়ক্রমে মা মেয়ে দুজনকেই চুমু খেয়ে খানসার কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছু বলল আর
তাতেই হেসে ফেলল খানসা । দু চোখ বন্ধ করে হাসছে সে। বড়
অপূর্ব সে দৃশ্য। একই সাথে উম্মে আমারা’র ঠোঁটের কোণও বেঁকে গেছে। তারমানে সেও হাসছে। 🥰🥰🥰