অভিশপ্ত ভয়ংকর ভুতের গল্প কাহীনি
রাত এখন প্রায় ১১টা বাজে। নিজের বাড়ির উঠানে একা একা বসে আছি। হাতে একটা ভুতের গল্পের বই। বাড়িতে একা রয়েছি তার উপর আবার পূর্নিমার রাত। আবার চারিদিকে হালকা হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছিলো। এরকম পরিবেশে ভূতের গল্প পড়া যে কি মজার তা শুধু যারা এই পরিবেশে বই পড়ে অভ্যস্ত তারাই বলতে পারবে। আমার বাড়িটা গ্রামের অনেক ভেতরে অবস্হিত। তাই বেশ নির্জন একটা বাড়ি। আশেপাশে অন্য আর কোন বাড়ি নেই। আমার বাড়ি থেকে একটু দুরেই শুধু পরিত্যাক্ত একটা বাংলো রয়েছে। বাংলোটার নাম হরিনাথ বাংলো। বাংলোটা দেখতে বেশ সুন্দর। যদিও এখানে এখন কেউ থাকে না।
বই পড়তে আমি ভীষণ ভালোবাসি। বিশেষ করে ভূতের বা কোন রহস্য গল্পের বই হলেতো আর কোন কথাই নেই। অবশ্য এই শেষ বয়সে আর কিইবা করতে পারি! আমার বয়স ৪০ পেরিয়ে ৫০ এর কাছাকাছি। এখন আর ঠিক আগের মতো কাজ করতে পারি না। অবশ্য কাজই বা করবো কাদের জন্য! এই পৃথিবীতে যে আমি বড় একা। খুবই একা। আমার কোন আপনজন আর বেঁচে নেই। সবাই ওপারের দুনিয়ায় পারি দিয়েছে।
আমার জন্মের ৩ মাস আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আমার বাবা মারা যান। আর আমার জন্মের সাথে সাথেই আমার মা মারা যায়। এরপর থেকে আমাকে আমার বড় ভাই রহিম শেখ লালন-পালন করে
বড় করেন। কিন্তু আমার যখন ১৭ বছর বয়স তখন এক রাতে নৌকা ডুবিতে আমার সেই বড় ভাইও মারা যায়। পুরো পৃথিবীতে আমি বড় একা হয়ে যাই। ঠিক সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমার দেখাশোনা করতে থাকেন রমিজ চাচা। রমিজ চাচা আমার রক্তের সম্পর্কে কেউ না। আমাদের বাড়িতে টুকটাক কাজ করতো। আমার বাবা এবং বড় ভাইয়ের খুব বিশ্বস্ত কাজের লোক ছিলো। রমিজ চাচার এই পৃথিবীতে মা ছাড়া আর আপন কেউ বেঁচে নেই। যদিও তার মা এখান থেকে অনেক দুরে একটা গ্রামে থাকেন। রমিজ চাচা আমাকে তার সন্তানের মতোই ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে। রমিজ চাচা আমারো খুব বিশ্বস্ত। এরপর আমার যখন ২৭ বছর বয়স হয় তখন রেহেনা আক্তার নামে একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়। এরপর থেকে আমার জীবন খুব ভালোভাবেই চলছিলো। আমার তখন বয়স ৩৫। তখন আমার একটা ৫ বছরের ছেলেও ছিলো। নাম তার ছিলো রাফি। একরাতে আমি, রেহেনা আর রাফি গাড়ি করে এক দাওয়াত থেকে ফিরছিলাম। হঠাৎ একটা ট্রাক এসে আমাদের গাড়িতে ধাক্কা দেয়। আমি কোনভাবে সেই দুর্ঘটনায় বেঁচে যাই। কিন্তু রাফি আর রেহেনাকে কোনভাবেই বাঁচাতে পারিনি। এরপর থেকে এই পৃথিবীতে আমি একা। বড় একা। এরপর থেকে নির্জন এই বাড়িতে থাকতে শুরু করি। এখন আমার বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বলই এই বইগুলো।
আর আমার দেখাশোনা করার দায়িত্বটা নেন এই রমিজ চাচা। তাই এখন আমি আর রমিজ চাচাই শুধু এখানে থাকি।
সব ছেড়ে এই বাড়িতে চলে আসারো একটা কারণ আছে। এই বাড়ির উঠানের পাশে ৫ টা কবর রয়েছে। এইগুলো আমার বাবা,মা, ভাই, স্ত্রী ও ছেলের কবর। এদের কবরের পাশে আরেকটা কবরের জায়গাও রাখা আছে। আমার ইচ্ছা কবরটা আমার হবে।
তাই প্রতি রাতেই উঠানে বসে আমি গল্পের বই পড়তে বসি। মাঝেমধ্যে মনে হয় তারা আমার পাশেই আছে।
প্রতিদিনই আমার পাশে এখানে রমিজ চাচা থাকে। কিন্তু আজ সেও বাড়িতে নেই। তাই আমি একা। আসলে হঠাৎ গতকাল রমিজ চাচা খবর পায় যে তার মা নাকি মারা গেছে। তাই রমিজ চাচা তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন গতকাল। যাওয়ার আগে বলে গেছেন ফিরতে ৩-৪ দিন লাগবে। আমিও তাকে আটকাইনি। যদিও রমিজ চাচাকে ছাড়া থাকার অভ্যাস আমার খুব একটা নেই। বসে বসে গল্পের বই পড়ছিলাম আর রমিজ চাচার কথা মনে করছিলাম। সে এখন এখানে থাকলে হয়তো আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে খাওয়াতো।
সব চিন্তা বাদ দিয়ে বইটার দিকে আবার মনোযোগী হলাম। খুব মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার মনোযোগটা নষ্ট করে দিলো একটা তাজা গোলাপের গন্ধ। আমি বেশ অবাক হলাম। এতোরাতে এখানে গোলাপের গন্ধ আসলো কিভাবে!! আমার বাড়িতেতো আমি একা
রয়েছি। আর পুরো বাড়িতে কোন গোলাপের পারফিউম নেই। আর গোলাপ গাছ! আমাদের গ্রামতো দুরের কথা আশে পাশের চৌদ্দ গ্রামের ভেতর কোন গোলাপ গাছ নেই।
হঠাৎ গোলাপের গন্ধে বেশ অবাকই হলাম। হঠাৎ আমার অবাক দৃষ্টিকে আরো অবাক করে দিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হলো রমিজ চাচা। আমি রমিজ চাচাকে দেখে খুব অবাক হলাম। চাচারতো এখন তার গ্রামে থাকার কথা! সে এখন এখানে কি করছে! আমি অবাক হয়ে রমিজ চাচাকে প্রশ্ন করলাম:-
-রমিজ চাচা! তুমি এতো রাতে?! তোমার না মা মারা গেছে?! তোমারতো এখন গ্রামে থাকার কথা ছিলো?
-জ্যাঁ বাবু। মায়ের দাফন আজ সকালেই দেওয়া হইয়া গেছে। আপনারে ছাড়া মনটা কেমন যেনো করতাছিলো। তাই দাফন শেষ কইরাই চইলা আসছি। সেখানেতো আর আমার আপন কেউ নাই।
-তা যা বলেছো। তোমাকে ছাড়াও আমার খুব একা লাগছিলো। এসে যখন পড়েছো। ঘরে চলে যাউ। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। সকালে আবার কথা হবে।
-জ্যাঁ বাবু। আচ্ছা একটা কথা কইতে চাইছিলাম যে!
-কি কথা? বলো!
-আসলে বাবু! আমি ট্রেনে কইরা এইখানে আসতেছিলাম। ট্রেন যখন প্রায় এই স্টেশনে আইসা পৌছাইলো তখন আমার লগে একটা মাইয়াও ট্রেন থিকা নামছিলো। মাইয়াটা আমারে একটা ডায়েরি দিয়া কইলো যে ডায়েরিটা একটু ধরতে। সে একটু পরেই আইসা নিয়া
যাইবো। এরপর মাইয়াটা পাশের একটা জঙ্গলে চইলা গেলো। আমি ভাবলাম হয়তো কোন টয়লেটে গেছে। তাই এক ঘন্টা ধইরা সেইখানে মাইয়াটার লাইগা দাড়াইয়া ছিলাম। কিন্তু জঙ্গল থিকা আর কেউ বাহির হইয়া আসে নাই। এরপর আমি জঙ্গলে গেলাম কিন্তু কাউরে খুইজা পাইলাম না। এরপর আর কিছু না বুইঝা ডায়েরিটা লগে কইরা নিয়া আইছি। আমিতো মুর্খ মানুষ কি লেখা আছে পড়তে পারি না। তাই ডায়েরিটা আপনেই রাখেন।
-কোথায় ডায়েরিটা? দেখি!
এরপর রমিজ চাচা তার পটলা(ব্যাগ) থেকে একটা ডায়েরি বের করে আমাকে দিলেন। ডায়েরিটা দেখেই বুঝতে পারলাম যে ডায়েরিটা খুব পুরাতন একটা ডায়েরি। হয়তো কারো ব্যাক্তিগত কথা লেখার ডায়েরি। কারো অনুমতি ছাড়া তার ব্যাক্তিগত ডায়েরি পড়া উচিত হবে না। তাই ডায়েরিটা রমিজ চাচার কাছ থেকে নিয়ে উঠানের পাশে থাকা একটা টেবিলে রাখলাম। রমিজ চাচাকে বললাম:
-আচ্ছা পরে পড়ে নিবো আমি।
রমিজ চাচা আমার কথা শুনে বললেন:
-ঠিক আছে বাবু। আচ্ছা আপনার জন্য কি চা বানাইয়া নিয়া আসবো?
-তোমার হাতের চা না খেলেতো আমার রাতে ঘুমই হয় না চাচা। কিন্তু তুমিতো মাত্র কত দুর থেকে আসলে। থাক! আজ বাদ দাও।
-কি যে বলেন বাবু! চা বানাইতে আর কতক্ষন সময় লাগবো। আপনি বসেন একটু। আমি চা বানাইয়া নিয়া আসতেছি।
এরপরেই রমিজ চাচা চা বানাতে বাড়ির ভেতরে গেলেন। রমিজ চাচা এতো দ্রুত গ্রাম থেকে চলে আসায় মনে মনে বেশ খুশিই হলাম। আসলে তাকে ছাড়া আমি খুব একটা থাকতে পারি না। এরপর আবার উঠানের চেয়ারে বসে সেই ভূতের গল্পের বই পড়তে শুরু করি। সেই ডায়েরিটা আমার থেকে বেশ কিছুটা দূরে টেবিলেই পরেছিলো। ডায়েরিটা সম্পর্কে এতোটাও আগ্রহ ছিলো না আমার। আমি টানা এক ঘন্টা মনোযোগ দিয়ে সেই বইটাই পড়তে থাকলাম। হঠাৎ আমার মনে পড়লো। আরে! রমিজ চাচা না সেই কখন গেল চা বানাতে! তারতো এতক্ষন সময় লাগার কথা না! তাহলে কি রমিজ চাচা চা বানানোর কথা ভুলে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে! অবশ্য রমিজ চাচা ভুলে জাওয়ার মানুষো না। ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ খটকা লাগলো। তাই বইটা টেবিলে রেখে রমিজ চাচাকে খুজতে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। আমি জোরে জোরে শব্দ করে তাকে ডাকছিলাম:-
-রমিজ চাচা? রমিজ চাচা? কোথায় তুমি? ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? রমিজ চাচা?
কিন্তু বাড়ির ভেতর থেকে কোন উত্তরই এলো না। এরপর আমি পুরো বাড়ি খুজলাম কিন্তু কোথাও রমিজ চাচাকে খুজে পেলাম না। আমি খুব অবাক হলাম। রমিজ চাচা কি উধাও হয়ে গেলো নাকি!! আমি আরো কয়েকবার রমিজ চাচাকে ডাকতে ডাকতে পুরো বাড়ি তাকে খুজলাম। কিন্তু তাকে কোথাও খুজে পেলাম না।
অবেশেষে তাকে খুজে না পেয়ে খুব বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা বের করে তাকে কল দিলাম। কিছুক্ষন কল বাজার পরেই রমিজ চাচা কলটা ধরলেন। রমিজ চাচা কলটা ধরতেই খুব গম্ভীর আর কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে আমি তাকে বললাম:
-রমিজ চাচা? চা বানাতে গিয়ে তুমি কোথাও উধাও হয়ে গেলে। এখন তুমি কোথায়?
এই বলেই কলটা আমি কেটে দিলাম। রমিজ চাচাকেতো বেশ চিন্তা করতে না করে দিলাম। কিন্তু আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম।
রমিজ চাচা যদি না এসে থাকে তাহলে একটু আগে আমি যাকে দেখলাম যার সাথে কথা বললাম। সে কে ছিলো! আর আসলেইতো রমিজ চাচাতো ট্রেনে করে যাতায়াত করেন না। তিনি সব সময় বাসে যাতায়াত করেন। তাহলে কি একটু আগে রমিজ চাচা আমার কাছে এসেছিলো এটা শুধুমাত্র আমার কল্পনা ছিলো!! এরপর গম্ভীরভাবে বাড়ির উঠানে গেলাম। সেখানে গিয়ে টেবিলে যা দেখলাম আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। টেবিলে এখনো সেই ডায়েরিটা পরে রয়েছে যেটা কিছুক্ষন আগে রমিজ চাচা আমাকে দিয়েছিলো। রমিজ চাচা যদি নাই আসে তাহলে এই ডায়েরিটা আমার কাছে এলো কিভাবে! ব্যাপারটা যদি আমার কল্পনা হতো তাহলেতো আর ডায়েরিটা এখানে পরে থাকতো না!
আর রমিজ চাচাও মজা করার মানুষ না।
বুঝলাম এই সকল রহস্যের সমাধান এই ডায়েরির ভেতরেই রয়েছে। এরপর ডায়েরিটা টেবিল থেকে নিয়ে পড়া শুরু করলাম . . . . . . . . . . .
ডায়েরিটা খুলেই দেখলাম যা ভেবেছিলাম তাই। এটা একটা ব্যাক্তিগত ডায়েরি ছিলো। ডায়েরিটা বেশ পুরাতন ছিলো। ডায়েরি পুরোটাই বাংলা ভাষায় লেখাছিলো। যে ডায়েরিটা লিখেছে তার লেখার প্রশংসা করতে হয়। অসাধারণ সুন্দর হাতের লেখাছিলো ডায়েরিটাতে! ডায়েরির শুরুতেই যে লিখেছে তার নাম লেখা ছিলো। ডায়েরিটার লেখিকার নাম ছিলো:-
“-সানজিদা আফজাল মিশি।”
এরপর পুরো ডায়েরিটা পড়া শুরু করলাম। সেখানে লিখাছিলো:
” আমার নাম সানজিদা আফজাল মিশি। আমার জন্ম হয় বাংলাদেশে। আমার যখন ১৩ বছর বয়স ছিলো তখন আমার বাবা-মা এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় । এরপর থেকে আমার মামা-মামিই আমাকে বড় করে তোলে। আমি ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বাংলাদেশেই ছিলাম। এরপর আসিফুর রহমান আসিফ নামের একজন ছেলের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। এরপর আমি আসিফের সাথে অ্যামেরিকায় চলে যাই। আসিফ অ্যামেরিকার একটা সফটওয়্যার কম্পানিতে কাজ করতো। আমরা খুব ভালোভাবেই সেখানে বসবাস করতে থাকি। আসিফো অনেক ভালো একটা ছেলে ছিলো। সেও আমার মতো অনাথ। আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে তার আপন আর কেউ ছিলো না। তাই সে আমায় অনেক ভালোবাসতো। যদিও সে দেশের বাহিরে ছিলো সে বাংলাদেশকে অনেক ভালোবাসতো। সে চাইতো এই দেশে এসেই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু কাজের চাপে সে দেশে ফেরার সময়ো পায়না। দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের ৭ বছর কেটে যায়। এর মধ্যে আমাদের একটা মেয়েও হয়ে গিয়েছিলো। ভালোবেসে আসিফ নাম দিয়েছিলো রাত্রি। তখন রাত্রির বয়স ছিলো ৫ বছর। সেবার আসিফের সফটওয়্যার কম্পানি থেকে হঠাৎ আসিফকে এক মাসের ছুটি দেওয়া হয়। ছুটি পাওয়ায় আসিফ, আমি আর রাত্রি ৩ জনেই বেশ খুশি হয়েছিলাম।
একদিন রাতে আসিফ হঠাৎ এসে আমার হাতে একটা খাম গুজে দেয়। খামটা খুলে দেখলাম সেখানে ৩ টা পাসপোর্ট ছিলো। পাসপোর্টগুলো বাংলাদেশে যাওয়ার। আমি বেশ অবাক হলাম। আসিফ আমাকে বললো আমরা এই ছুটিতে বাংলাদেশে যাবো ঘুরতে। সেখানেই আমরা ছুটি কাটাবো। আমি আর আমার মেয়ে রাত্রি দুজনেই অনেক খুশি হলাম। এরপর আমরা বাংলাদেশে চলে আসি। প্রথমে আমরা চট্রোগ্রামের কক্সবাজারে যাই, এরপরে সিলেটের জাফলং, রাঙামাটি,বান্দরবান সহ বাংলাদেশের আরো অনেক সুন্দর এলাকা ঘুরে বেড়াই। দেখতে দেখতে আমাদের ছুটির এক মাস কেটে যায়। কিন্তু আমরা ৩ জনেই বাংলাদেশের প্রেমে পরে যাই। আমি আর রাত্রি দুজনেই আসিফকে অনুরোধ করলাম যে আমরা আর অ্যামেরিকায় ফিরে যাবো না। আমরা সাধারণ ভাবেই হোক বাংলাদেশে থাকতে চাই। এই দেশেই আমার মেয়ে বেলার হাজারো স্মৃতি রয়েছে। আসিফও এই দেশকে অনেক ভালোবাসে। তাই সে আর না করলো না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বাংলাদেশেই থাকবো। এরপর অ্যামেরিকায় আমাদের যে সম্পদ ছিলো সেগুলো বিক্রি করে ফেলি আমরা। আসিফো তার চাকরি ছেড়ে দেয়। আমরা বাংলাদেশের ভেতরেই একটা গ্রামাঞ্চলের দিকে একটা পরিত্যাক্ত বাড়ি কিনি। বাড়িটা আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছিলো। আসলে বাড়িটার সৌন্দর্য বলে প্রকাশ করার মতো না। কিন্তু বাড়িটার সৌন্দর্যের তুলনায় দাম ছিলো
খুবই কম। এর প্রধান কারণ ছিলো বাড়িটা নাকি ভুতের বাড়ি নামে খ্যাত। এখানে নাকি ভূতেরা থাকে। এর আগেও কয়েকটা পরিবার এখানে এসে থাকার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু তারা নাকি ভুত থেকে পালিয়ে গেছে। ভূতের কথা শুনে আমরা বেশ মজা পেলাম। ভুতে বিশ্বাস আমাদের কখনোই ছিলো না। কিন্তু বাড়িটা যেহেতু শহর থেকে অনেক দুরে, গ্রামেরও অনেক ভেতরে নির্জন একটা জায়গায় রয়েছে সেহেতু এই বাড়ি সম্পর্কে একটু কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা এইকোথায় কোন কান দিলাম না। এরপর আমরা সেই বাড়িতে গিয়ে উঠি। বাড়িটা আসলেই অনেক বড় ছিলো। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিলো যে বাড়ি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয়নি। তাই পুরো বাড়িতেই ময়লা দিয়ে ভরা ছিলো। এরপর আমি আর আসিফ মিলে পুরো বাড়ি পরিষ্কারের কাজে লেগে পড়ি। আমাদের মেয়ে রাত্রিও যতটুকু পারে আমাদের সাহায্য করছিলো। এছাড়াও আমাদের প্রয়োজনীয় সব আসবাব পত্র আসিফ বাজার থেকে কিনে এনেছিলো। আমরা পুরো এক সপ্তাহ কঠোর পরিশ্রম করে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে গুছাতে পেরে ছিলাম। কিন্তু এতো পরিশ্রমের পরেও আমরা অনেক খুশি ছিলাম। কারণ আমরা যে জন্য বাংলাদেশে আসি সেটা হলো এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। আর আমাদের বাড়িটা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটা রুপ।
চারিপাশে গাছে ঘেরা একটা বাড়ি আমাদের। বাড়ির উঠানেও নানান প্রজাতির গাছ লাগালাম আমরা। এতো সুন্দর একটা বাড়িকে মানুষ ভূতের বাড়ি কিভাবে বলে এটাই জানা নেই আমাদের! আমরা খুব আনন্দের সাথেই দিন কাটাতে লাগলাম সেখানে। কিন্তু আমাদের ভালো দিন বেশিদিন থাকলো না। এক রাতে হঠাৎ বাহিরে প্রচুর বাতাস হচ্ছিলো। মনে হয়েছিলো বড় কোনো ঝড় হবে। তাই আমি দ্রুত ঘরের জানালা আটকাতে গেলাম। জানালা আটকাতে গিয়ে যেই জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম দেখলাম আমাদের বাড়ির উঠানে একটা সাদা কাপড় পড়া বৃদ্ধা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বৃদ্ধার দৃষ্টিটা অনেক ভয়ংকর ছিলো। সে যেনো তার চোখের ইশারায় আমায় কিছু বলতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আমি হঠাৎ বৃদ্ধাকে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। ভয় পেয়ে চিৎকার করে আসিফকে ডাকতে লাগলাম, – আসিফ!!কোথায় তুমি ?? তাড়াতাড়ি এইদিকে আসো!! আমার চিৎকার শুনে আসিফ দ্রুত আমার কাছে এসে জানতে চাইলো যে, আমি কেনো চিৎকার দিলাম!! যেই আসিফকে সেই বৃদ্ধাকে দেখাতে বাহিরে তাকালাম। দেখলাম সেখানে কেউ নেই। আমি আসিফকে বৃদ্ধাটার কথা বললাম। আসিফ আমাকে বললো যে এটা হয়তো আমার মনের ভুল ছিলো। আমিও তাই এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম। এরপরে যখন রাতে ঘুমাতে যাবো ঠিক তখনি আমি আর আসিফ দুজনেই ঘরের বাহির থেকে একটা বৃদ্ধার কান্নার আওয়াজ পেলাম। একেই রাত ছিলো। এরপর আবার নির্জন একটা বাড়িতে শুধু আমরা ৩ জন ছিলাম। তারউপর চারিদিকে ঝড়বাতাস বইছিলো। সেই বৃদ্ধার কান্নার শব্দও যেনো আমাদের কাছে বেশ ভয়ংকর লাগছিলো। রাত্রি তখন ঘুমিয়ে ছিলো।
না হলে সে হয়তো আরো বেশি ভয় পেয়ে যেতো। এরপর আমি আসিফকে বলি যে, এতোরাতে এখানে কোন ভালো মানুষ আসবে না। আর আমাদের আশেপাশেও তো কোন বাড়িও নেই। তাহলে নিশ্চই এখানে খারাপ কেউ এসেছে। .
কিন্তু আসিফ আমার কথা শুনলো না। সে বললো, আর যেই হোক না কেনো! কোন ভুত তো আর আসবে না। হয়তো কোন বৃদ্ধা বিপদে পরেই এখানে এসেছে। আমাদের তাকে সাহায্য করা উচিত। এরপর আসিফ ধীরে ধীরে দরজাটা খুলতে যায়। আমি বেশ ভয় পেয়েই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার চোখে শুধু ভেসে আসছিলো জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা সেই বৃদ্ধাটার মুখ আর তার ভয়ানক দৃষ্টি। এরপর আসিফ দরজাটা খুলে যা দেখলো,,”
নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের সাথে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন দেখুন…..