আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব
আজান ও ইকামতের সুন্নত দুই প্রকার। কোনো কোনো সুন্নত মুআজ্জিনের সাথে সংশ্লিষ্ট,
আর কোনোটি আজান ও ইকামতের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব প্রথমে ৫ নং পর্যন্ত
মুআজ্জিনের সুন্নত বর্ণনা করা হবে, তারপর আজানের সুন্নত বর্ণনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
১. মাসআলা : মুআজ্জিন পুরুষ হওয়া চাই, মহিলাদের আজান মাকরূহে তাহরীমী । মহিলা আজান দিলে তা পুনরায় দিতে হবে। কিন্তু ইকামত পুনরায় দিতে হবে না, কারণ শরিয়তে ইকামত পুনরায় দেওয়ার কোনো হুকুম নেই । তবে আজান পুনরায় দেওয়ার বিধান রয়েছে।
২. মাসআলা : মুআজ্জিন সজ্ঞান পুরুষ হতে হবে। পাগল, মাথা খারাপ বা অবুঝ শিশুর আজান মাকরূহ । তাদের আজান পুনরায় দিতে হবে ইকামত পুনরায় দিতে হবে না । ৩. মাসআলা : মুআজ্জিনের জরুরি মাসআলা-মাসায়েল এবং নামাজের ওয়াক্তগুলো জানা থাকা চাই । অন্যথায় সে আজানের পূর্ণ ছওয়াব পাবে না । ৪. মাসআলা : মুআজ্জিনকে দীনদার পরহেজগার হতে হবে এবং কে জামাতে আসল কে না আসল, সে বিষয়ে তার তদন্ত ও তাম্বীহ রাখা চাই- যদি ফেতনার আশঙ্কা না থাকে । আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব)
মাসআলা যার আওয়াজ বড় তাকেই মুআজ্জিন নিযুক্ত করা উচিত ।
৬. মাসআলা : মসজিদের বাইরে উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে আজান দিবে, ইকামত মসজিদের ভিতরে দিবে । মসজিদের ভিতরে আজান দেওয়া মাকরূহে তানযীহী। কিন্তু জুমার দ্বিতীয় আজান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেওয়া মাকরূহ নয়। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীনদের সময় হতে বরাবর সমস্ত ইসলামি শহরে মসজিদের ভিতর মিম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে জুমার দ্বিতীয় আজান হয়ে আসছে। (অধুনা ইলমে দীন কমে যাওয়ায় কোনো কোনো লোক না বুঝে বলছে যে, জুমার দ্বিতীয় আজান মসজিদের ভিতরে দেওয়া বিদআত। তাদের কথার দিকে ভ্রুক্ষেপও করার প্রয়োজন নেই ।আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব)
৭.মাসআলা : আজান দাঁড়িয়ে দিতে হবে। বসে আজান দেওয়া মাকরূহ। বসে আজান দিলে পুনরায় আজান দিতে হবে। (তবে যদি কোনো মাজুর, রুগ্ন লোক শুধু নিজের নামাজের জন্য বসে বসে আজান দেয়, তাতে কোনো দোষ নেই ।) অবশ্য যদি কোনো মুসাফির আরোহী কিংবা মুকিম ব্যক্তি শুধু নিজের নামাজের জন্য বসে আজান দেয়, তবে পুনরায় আজান দেওয়ার প্রয়োজন নেই ।আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব)
আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব
৮. মাসআলা : আজান যথাসম্ভব উচ্চৈঃস্বরে দেওয়া দরকার। যদি কেউ শুধু নিজের নামাজের জন্য আজান দেয়, তবে সে আস্তে আস্তে আজান দিতে পারে, কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আজান দিলে বেশি ছওয়াব হবে।
৯. মাসআলা : আজান দেওয়ার সময় দুই শাহাদাত আঙ্গুলের দ্বারা দুই কারেন ছিদ্র বন্ধ করা মোস্তাহাব যেহেতু কানের ছিদ্র বন্ধ করলে আওয়াজ বড় করা সহজ হয়।)
১০. মাসআলা : আজানের শব্দগুলো টেনে ও থেমে থেমে বলা এবং ইকামতের শব্দগুলো তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি বলা সুন্নত অর্থাৎ আজানে তাকবীরের মধ্যে প্রত্যেক দুই তাকবীরের পর এতটুকু সময় চুপ করে থাকবে যেন শ্রোতা তার জওয়াব দিতে পারে । তাকবীর ব্যতীত অন্যান্য শব্দের প্রত্যেক শব্দের পর এ পরিমাণ চুপ থেকে পরে অপর শব্দ বলবে, যদি কোনো কারণবশত আজানের শব্দগুলো থেমে থেমে না বলে, তবে পুনরায় আজান দেওয়া মোস্তাহাব, আর যদি ইকামতের শব্দগুলো তাড়াতাড়ি না বলে থেমে থেমে বলে, তবে পুনরায় ইকামত বলা মোস্তাহাব নয় ।
১১. মাসআলা : আজানের মধ্যে হাইয়া আলাস সালাহ বলার সময় ডান দিকে এবং হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় বাম দিকে মুখ ফিরানো সুন্নত তা নামাজের আজান হোক বা অন্য আজান হোক, কিন্তু বুক এবং পা ঘুরাবে না ।
১২. মাসআলা : (যদি আরোহী না হয়, তবে) আজান এবং ইকামত বলার সময় কিবলার দিকে মুখ রাখা সুন্নত। অন্য দিকে মুখ করা মাকরূহে তানযীহী।
আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব
১৩. মাসআলা : আজান দেওয়র সময় হৃদসে আকবর হতে পবিত্র হওয়া সুন্নত। উভয় হৃদস হতে পবিত্র হওয়া মোস্তাহাব, গোসলবিহীন অবস্থায় আজান দেওয়া মাকরূহে তাহরীমী। যদি কেউ গোসলবিহীন অবস্থায় আজান দেয়, তবে আজান পুনরায় দেওয়া উচিত। কিন্তু অজুবিহীন অবস্থায় আজান দিলে তা পুনরায় দিতে হবে না। গোসলবিহীন ও অজুবিহীন অবস্থায় ইকামত বলা মাকরূহে তাহরীমী।আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব)
১৫. মাসআলা : আজান বা ইকামত বলার সময় মুআজ্জিন তো কথা বলবেই না, (যারা আজান ইকামত শুনে তাদেরও সব কাজ কর্ম পরিত্যাগ করে আজান ইকামত শ্রবণ এবং আজান ও ইকামতের জওয়াব দেওয়া উচিত। এমনকি সালাম দেওয়া নেওয়াও অনুচিত । যদি মুআজ্জিন আজান ও ইকামতের মাঝখানে অধিক কথা বলে, তবে পুনরায় আজান দিবে, পুনরায় ইকামত বলবে না ।
বিভিন্ন মাসায়েল
১. মাসআলা যদি কেউ আজানের জওয়াব ভুলবশত কিংবা স্বেচ্ছায় সাথে সাথে না দেয়, তবে স্মরণ হলে কিংবা ইচ্ছা করলে আজান শেষ হওয়ার পর অনেক সময় অতিবাহিত না হলে জওয়াব দিতে পারবে, অন্যথায় নয় ।
২ . মাসআলা : ইকামত বলার পর যদি অনেক সময় চলে যায় অথচ জামাত শুরু না হয়, তবে পুনরায় ইকামত বলতে হবে; কিন্তু অল্প সময় দেরি করলে কোনো ক্ষতি নেই, যদি ফজরের ইকামত হয়ে যায় এবং ইমাম সুন্নত পড়া শুরু করে, তবে এ ব্যবধান ধরা হবে। না এবং ইকামত পুনরায় দিতে হবে না; কিন্তু যদি নামাজ ব্যতীত খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি অন্য কোনো কাজ করে, তবে তাকে বেশি ব্যবধান ধরা হবে এবং ইকামত পুনরায় দিতে হবে। আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব)
৩. মাসআলা : আজান দেওয়ার সময় আজান পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যদি মুআজ্জিন ইন্তেকাল করে, বা বেহুঁশ হয়ে যায়, বা আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়, বা এমনভাবে ভুলে যায়, নিজেরও মনে না আসে এবং অন্য কেউও বলে না দেয়, বা প্রস্রাব পায়খানার চাপে বা গোসলের প্রয়োজনে আজান মাঝখানে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়, তবে এসব অবস্থায় পুনরায় আজান দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা ৪. মাসআলা : আজান বা ইকামত বলার সময় ঘটনাক্রমে যদি অজু ভেঙ্গে যায়, তবে
আজান ইকামত পূর্ণ করেই অজু করতে যাওয়া উত্তম ।আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব )
৫. মাসআলা : এক মুআজ্জিনের দুই মসজিদে আজান দেওয়া মাকরূহ; যে মসজিদে ফরজ
নামাজ পড়বে সে মসজিদেই আজান দিবে। মাসআলা : যে আজান দিবে ইকামত বলার (ছওয়াব হাসিল করা)-ও তারই হক (প্রাপ্য) অবশ্য সে যদি উপস্থিত না থাকে বা অন্য কাউকেও ইকামত বলার অনুমতি দেয়, তবে অন্য লোকেও বলতে পারবে।
আজান ও ইকামতের সুন্নত ও মোস্তাহাব
৭. মাসআলা এক মসজিদে এক সময়ে কয়েকজনে মিলে আজান দেওয়াও জায়েজ আছে।
৮. মাসআলা: ইকামত যে জায়গায় দাঁড়িয়ে শুরু করবে সেখানেই শেষ করবে ।
৯. মাসআলা : আজান বা ইকামত সহীহ হওয়ার জন্য নিয়ত শর্ত নয় বটে, কিন্তু নিয়ত
ব্যতীত ছওয়াব পাবে না। নিয়ত হলো- অন্তরে চিন্তা করবে যে, আমি এ আজান বা
ইকামত শুধু ছওয়াবের নিয়তে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই বলছি, এতদ্ব্যতীত
আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। [গাওহার
(মাসআলা) ইমাম এবং মুআজ্জিন যদি বেতন বা পারিশ্রমিক না নেয়, তবে অতি উত্তম কিন্তু যদি বিনা বেতনে না পাওয়া যায়, তবে বেতন দিয়ে ভরণ-পোষণ দিয়ে ইমাম মুআজ্জিন রাখা মহল্লাবাসী সকলের কর্তব্য। [অনুবাদক]