আদর্শ স্ত্রীর গুণাবলি
রাসূলে পাক (সা) ইরশাদ করেন : “সম্ভ্রান্ত নারীরা ঘরের শোভা, আর ক্রীতদাসীরা ঘরের শান্তি বিনষ্টকারিণী।”
উত্তম স্বভাব ও অভিজাত বংশীয়া নারীরা : যারা সুশিক্ষা ও শিষ্টাচারিতায় গড়ে উঠে, তারা ঘরের শোভা ও কল্যাণের উৎস। অপরদিকে যে নারী অশিক্ষা-কুশিক্ষার কারণে বাদীর মত গড়ে উঠে, তারা বদস্বভাব ও উগ্র চাল-চলনের কারণে ঘরের পরিবেশ অপবিত্র করে এবং নানা কুআচরণে ঘরের শান্তি বিনষ্ট করে।
এজন্য মেয়েদের জন্য অল্প বয়সেই প্রয়োজন যে, সৎ চরিত্র ধ্যান-ধারণা পোষণকারিণী ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে মহল্লার ভাল ও আদর্শ চরিত্রের মহিলাগণকে সঙ্গিনী নির্বাচন করা এবং একমাত্র তাদের সাথেই সখ্যতা স্থাপন ও মেলামেশা করা।
অনুরূপ আদর্শ সংগিনীদের সাথেই যেন লোকেরা নিজেদের মেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করেন, যাতে তাদের মেয়েদের স্বভাবও ভাল থাকে। ভাল শিক্ষা-দ্বীনী শিক্ষা ও দ্বীনী পরিবেশে দ্বারাই সাধারণত: মেয়েরা সদ্ভাবে গড়ে উঠতে পার
সত্যবাদীতা ও কোমলতা :
সত্যবাদী ও মিষ্টভাষী মানুষ সর্বত্রই সমাদৃত। একজন সত্যবাদী ও মিষ্টভাষী স্ত্রী পরিবারের জন্য নেয়ামত স্বরূপ। পক্ষান্তরে কর্কভাষী স্ত্রী দ্বারা। কেউই শান্তি পায় না, তাই সে সকলের কাছেই অসহনীয় ও ঘৃণিত।
হাদীস অনুসারে সত্যবাদী ও উত্তম আচরণকারী আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট খুবই প্রিয়। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : “নিশ্চয়ই অহংকারী ও ককৰ্ষভাষী কখনো বেহেশতে প্রবেশাধিকার লাভে সক্ষম হবে না।” (আবু দাউদ)
রাসূল (সা) মি’রাজের রাত্রে কিছু সংখ্যক মহিলাকে জিহ্বার সাথে লটকানো দেখতে পেয়ে হযরত জিব্রাইল (আ:)-এর মাধ্যমে জানতে পারলেন এরা ঐ সকল মহিলা যারা কথাবার্তায় সংযত ছিল না। এরা কথাবার্তায় স্বামীসহ আশে-পাশের লোকদেরকে কষ্ট দিত।
পর্দাশীলতা ও লজ্জাশীলতা :
আল্লাহ পাক মুমিন নারী-পুরুষের প্রতি পর্দা ফরজ করেছেন। পর্দা হল একজন আদর্শ ও সম্ভ্রান্ত মহিলার প্রতীক । মহান আল্লাহ মহিলাদের আপদ মস্তক ঢেকে রাখাকে ফরজ করেছেন। পর্দা মানুষের মধ্যে লজ্জা সৃষ্টি করে এবং যৌন অপকর্ম থেকে দূরে রাখে। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : লজ্জা হল ঈমানের অঙ্গ।
একজন পর্দানশীল নারী যার তার সাথে মেলামেশা করতে পারে না, তার পর্দা ও লজ্জা তাকে হেফাজত করে। রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : মিরাজের রাত্রে পর্দাহীনতার কারণে কিছু মহিলাকে মাথার চুল দ্বারা লটকানো দেখা গেছে। হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা) ইরশাদ করেন প্রত্যেক ধর্মেরই একটি বৈশিষ্ট রয়েছে ইসলামের বৈশিষ্ট্য হল শালীনতা তাই সহজ অনেক ।
চোগলখোরী পরিহার করা :
চোগলখোরী একটি মারাত্মক ব্যাধি রোগ ও বলতে পারেন। এর জন্য কেয়ামতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে আজীবন । চোগলখোর সমাজের পরম শত্রু এবং খারপ মানুষ বটে । এদের কারণে সমাজে বিশৃংখলা ও অরাজকতার সৃষ্টি হয় সব সময় । বিশেষ করে স্ত্রীর যদি এ দোষ থাকে তাহলে উক্ত পরিবারে কোন শান্তি থাকে না কোনো পরিবারে।
অল্পেতুষ্টি :
যদিও ইসলামী বিধান মোতাবেক স্ত্রীর যাবতীয় ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর অর্পিত, তথাপিও স্ত্রীকে স্বামীর সমার্থের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা তার দায়িত্ব। স্বামীর নিকট কোন কিছুর দাবী করতে হলে স্বামীর সামর্থ বিচেনা করতে হবে।
স্বামীর পক্ষে প্রদান করা অসম্ভব এমন কিছু দাবী করা আদর্শ স্ত্রীর গুণ নয়। স্বামী সামর্থানুযায়ী কম-বেশী এবং ভাল-মন্দ যাই প্রদান করবে, একজন আদর্শ স্ত্রী সন্তুষ্টিচিত্তে তাই গ্রহণ করবে। মোটকথা, অল্পে তুষ্টি একজন আদর্শ স্ত্রীর অন্যতম গুণ ।
স্বামীর আনুগত্য :
স্বামী-স্ত্রী একই দেহের দু’টি অঙ্গ। দু’জনের সমন্বয়ে একটি নতুন সংসারের সূত্রপাত হয়। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের নিকট অধিকার প্রাপ্য । তবুও স্বামী স্ত্রীর উপর কর্তৃত্বশীল। কুরআনের ভাষায় : “পুরুষ নারীর উপর কর্তৃত্বশীল।” (সূরাহ নিসা : ৩৪) আল্লাহপাকের এ নির্দেশ স্ত্রীর নতশীরে মেনে নিতে হবে। তার বিপরীত কাজ করলে পারিবারিক শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।
যদি কোন মহিরা অহংকার বশত: স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করে তাহলে এই পরিবারে কোন দিন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। স্বামীর কর্তৃত্বের ব্যাপারে রাসূল (সা) ইরশাদ করেন : “যদি নির্দেশ দিতাম তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম স্বামীকে সিজদা করতে।” (তিরমিযী) রাসূল (সা) অন্যত্র ইরশাদ করেন : “কোন মহিলা যেন তার স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত ফরজ রোযা ছাড়া অন্য কোন রোযা না রাখে।’ (তিরমিযী শরীফ)
স্বামীর সাথে কথা বলার আদব :
হযরত আবু দারদা (রা:)-এর স্ত্রী যখন স্বীয় স্বামী থেকে কোন হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন বলতেন, আমাকে আমার সরদার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আরবী ভাষায় শব্দটি অনেক আদব ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়। আর যখন সাইয়িদ শব্দটি নিজের প্রতি সম্বন্ধযুক্ত হয়, তখন হৃদয় গভীরে স্বামীর প্রতি এক প্রকার শ্রদ্ধা বিজড়িত প্রেমের ঝলক বিচ্ছুরিত হয় এবং মনের মণি কোঠায় এক ধরনের অত্যন্ত স্নিগ্ধ শিহরণ অনুভূত হয় ।
আমার কর্তা, আমার প্রভু, আমার নেতা, আমার সরদার, আমার মহোদয়, আমার মনিব। বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন : স্বামীর কথা খুব গুরুত্ব সহকারে এবং ধ্যান দিয়ে শ্রবণ করবেন। তার কথার মাঝে কথা বলবেন না। যখন তার কথা পূর্ণ হয়ে যাবে এবং কোন কথা বোধগম্য না হয়, তখন জিজ্ঞাসা করবেন ।
ইনশাআল্লাহ যদি নীরবে তার কথাগুলো শ্রবণ করা হয়, তাহলে মনের মধ্যে জমাট বাঁধা প্রশ্নগুলো এমনিতেই নি:শেষ হয়ে যাবে। কথার মধ্যে কথা বললে অধিকাংশ সময় মেজাজ গরম হয়ে যায় অথবা কথার গতি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়ে কথার উদ্দেশ্য বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ওপরে হাদীসগুলো দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে ও নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস অনুসারে আমরা যদি চলি তাহলে আমরা অবশ্যই নিজেদেরকে একজন আদর্শ স্ত্রী হিসেবে তৈরি করতে পারব।
এবং প্রতিটি মুসলিম নারীর দায়িত্ব আমরা নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস অনুসারে স্বামীর অনুগত করি এবং স্বামীদেরকে সম্মান করি এবং তার কথা এবং তাদের সাথে নর্ম ভদ্র হয়ে চলি।আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুক আর এই নিয়ম কানুন মেনে আমরা চলতে পারি যেন।
আমীন সুম্মা আমীন