ইংল্যান্ডের রানীর ক্ষমতা

ইংল্যান্ডের রানীর ক্ষমতা

রানী প্রথম এলিজাবেথ ১৫৩৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের গ্রিনিচ শহরের প্লাসেন্টিয়া প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করে।  রাজা অষ্টম হেনরি ছিলো তার বাবা। এলিজাবেথের বয়স যখন মাত্র আড়াই বছর তখন তার মা অ্যান বোলিনকে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করা হয় এবং এলিজাবেথকে অবৈধ ঘোষণা করে থাকে। এ অবস্থায় উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে ভাই ষষ্ঠ এডওয়ার্ড সিংহাসনের ভার অর্পণ করেন লেডি জেন গ্রে-এর উপর হয়। ১৫৫৮ সালের ১৭ নভেম্বর এলিজাবেথ সেবান রানী প্রথম মেরির স্থলাভিষিক্ত হয়। প্রোটেস্ট্যান্ট বিদ্রোহীদের সহযোগিতা দানের অভিযোগে এলিজাবেথ ক্যাথলিক অনুসারী মেরির শাসনকালে এক বছর অন্তরীণ ছিলো।

ইংল্যান্ডের রানীর ক্ষমতা

পরবর্তীকালে রানী হিসেবে এলিজাবেথের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ইংলিশ প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ প্রতিষ্ঠা করা, যার সর্বোচ্চ গভর্নর ছিলেন তিনি ছিলো। এলিজাবেথ অবিবাহিত ছিলো। এজন্য বিতর্কও তার পিছু নিয়েছিলো। স্বাভাবিকভাবেই কেন তিনি অবিবাহিত ছিলেন এই নিয়ে হয়েছে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা । যখন স্বামীর ঘর-সংসার করার কথা, যখন ছেলেমেয়ের স্নেহময়ী মা হওয়ার কথা তখন তার রাজ্যাভিষেক ঘটে তার। দিনটি ছিল ১৫৫৯ সালের ১৫ জানুয়ারি মাসে। মাত্র ২৬ বছর বয়সে এলিজাবেথের অভিষেক হয় তিনি।

রানী হয়ে রাজ্য পরিচালনা শুরু করার পরই একটি প্রশ্ন সবার সামনে এসে দাঁড়ায় আর তা হলো- কে হবে রানীর স্বামী নিয়ে কথা? টিউডর রাজবংশের শেষ উত্তরাধিকারিণী রাজত্বের প্রথম দিকেই এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বিয়ে করা। কারণ তার বিয়ের মধ্য দিয়েই উত্তরাধিকার নির্বাচিত করা যেত সহজেই তার। যাতে তার মৃত্যুর পর রাজসিংহাসন নিয়ে গৃহযুদ্ধের সূচনা না হয়।

ইংল্যান্ডের রানীর ক্ষমতা ইংল্যান্ডের টিউডর রাজবংশের পঞ্চম

ইংল্যান্ডের টিউডর রাজবংশের পঞ্চম ও সর্বশেষ  প্রথম রানী এলিজাবেথে। রানী প্রথম এলিজাবেথ ছিলেন অসম্ভব রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারি। ইংল্যান্ডকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন সবার হৃদয়ের। মানব সভ্যতার বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করে গেছেন নারীদের। তাদের অবদান কোনো অংশেই কম ছিলনা। যুগে যুগে তাদের কীর্তি লেখা হয়েছে ইতিহাসের পাতায় তার নাম।

তেমনি একজন মহীয়সী নারী ব্যক্তিত্ব রানী প্রথম এলিজাবেথ এর। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে তার অবদান অপরিসীম নয়। তার সময়েই ইংল্যান্ডের কাছে স্পেনের ‘দ্য ইনভিন্সিবল আর্মাডা’ পরাজিত হয়, ফলে সামরিক ক্ষেত্রেও ইউরোপে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।

রানী প্রথম এলিজাবেথের কাহিনীতে মূলত তার সারা জীবন একা থাকাই বেশি গুরুত্ব পায় ইতিহাসের পাতায়। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেননি বলে তাকে কুমারী রানী বলা হয়েছিলো। রানীর এত ক্ষমতা ছিল কিন্তু কাউকে ভালোবাসা আর তার হয়ে ওঠেছিলো। নারী হয়েও যে রাষ্ট্র শাসনের ভার সফলভাবে পালন করা যায়, সেটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় তার মাধ্যমে। তার শাসনামলে দেশের উন্নতির প্রমাণ পেয়েছেন গবেষ করা। ইতিহাসে তার স্থানটি রয়েছে তাই বিশেষ মর্যাদায় দেয়। রাষ্ট্র পরিচালনার দিক থেকে তার দক্ষতা নিয়ে কখনই প্রশ্ন ওঠেছিলো।

রানী প্রথম এলিজাবেথ আনুমানিক ১৭ নভেম্বর ১৫৫৮ থেকে শুরু করে ২৪ মার্চ ১৬০৩ পর্যন্ত রাজত্ব করে। তার রাজকীয় অভিষেক হয়েছিল ১৫ জানুয়ারি ১৫৫৯ সালে হয়। পূর্বসূরি ছিলেন ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি। তিনি ছোটবেলা থেকেই রাজবংশের রাজকীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠেছিলো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ইংল্যান্ডের রানী, ফ্রান্সের রানী ও আয়ারল্যান্ডের রানীও হয়েছিলো। রানী প্রথম এলিজাবেথ যে নারী নেতৃত্বের আধুনিক উপস্থাপনা রেখে গেছেন সে কারণেই যুগে যুগে আসা আধুনিক নারী নেতৃত্বেরও একজন সফল উদাহরণ  দাতা বা নারী।

মৃত্যুর ২০ বছর পরও সোনালি যুগের শাসক হিসেবে সমাদৃত ছিলেন তার। শেকসপিয়রের নাটকে এলিজাবেথান এরা ঘুরেফিরে এসেছে।তাই রানী এলিজাবেথের বুদ্ধিমত্তার এখনো প্রশংসা করা হয়ে ছিলো। আজ রানী প্রথম এলিজাবেথের ৪১৭তম মৃ্ত্যুবার্ষিকী হয়। ১৬০৩ সালের আজকের দিনে তিনি ইংল্যান্ডের রিচমন্ড প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করে। ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথের মৃ্ত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি হয়।

সেই সময়ে ইউরোপের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত পাত্রী ছিলেন রানী প্রথম এলিজাবেথ এর। গোটা ইউরোপের বিভিন্ন রাজপরিবার থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা রানীকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে গিয়েছিলো। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এলিজাবেথের সৎ বোন রানী মেরির স্বামী স্পেনের রাজা ফিলিপ, তৎকালীন সুইডেনের প্রিন্স এরিক, রোমান হলি এমপেরোর ফার্ডিনান্দের ছেলে আর্চডিউক চার্লস এবং এমন আরও অনেকই। এদের মধ্যে একমাত্র স্পেনের রাজা ফিলিপকে এলিজাবেথ সরাসরি ‘না’ করে থাকেন।

সিংহাসনে আসীন রানীর বিয়ে অনেকটাই জটিল একটা বিষয় তা ইতিহাস উপলব্ধি করে থাকেন। কারণ ভুল কাউকে বিয়ে করা মানে পুরো রাজ্যের ওপর তার প্রভাব পড়ে থাকে। তাই এই বিষয়ে অনেক সাবধানী হওয়া জরুরি ছিলো। আবার রাজনৈতিক কারণগুলোও এ ক্ষেত্রে খুব স্পষ্ট হয়। যেমন ভুলের কারণে রানীর অবস্থা তার সৎ বোন রানী মেরির মতো হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিলো।

এলিজাবেথকে এমন কাউকে স্বামী হিসেবে বেছে নিতে হবে যে ইউরোপের কোনো ক্ষমতাশালী রাজা হবে না, কিন্তু পদমর্যাদা খুব ভালো হবে এবং শুধু রানীর স্বামী হিসেবেই থাকে। সব কিছু মিলিয়ে রানীর মন্ত্রীরা প্রাথমিকভাবে সুইডেনের প্রিন্স এরিককে রানীর স্বামী হিসেবে ভেবে ছিলেন। কারণ, এরিক ছিলেন ইংল্যান্ডের জনগণের মাঝে তুমুল জনপ্রিয় ছিলো। ধর্মমত দিয়েও দুজন একই ধর্মের অনুসারী ছিলো। কিন্তু সুইডেনের রাজপরিবারের খুব বেশি সম্পত্তি না থাকায় এই বিয়ে নাকচ করা হয়েছিলো। এরই মধ্যে রানীর জীবনে প্রেম চলে আসেন।

ফলে তার বিয়ের প্রক্রিয়াটা আরও বেশি জটিল করে তোলেন তিনি প্রেমে পড়ার মধ্য দিয়ে ছিলো। বাল্যবন্ধু লর্ড রবার্ট ডুডলির প্রেমে পড়েছিলেন রানী। অথচ রবার্ট ডুডলি বিবাহিত ছিলো। কিন্তু বাধা হয়ে আসে ডুডলির মৃত বাবা ডিউক অব নর্থাম্বারল্যান্ড হয়। ডিউক বিশ্বাসঘাতকতার জন্য রানী মেরির রাজত্বের সময় মৃত্যুবরণ করে। আবার ডুডলির স্ত্রীও রহস্যজনকভাবে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মারা যাওয়ায় এলিজাবেথকে ডুডলিকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে হয়েছিলো।

যাতে এই রহস্যজনক মৃত্যুর সঙ্গে এলিজাবেথের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকে তার। রবার্ট ডুডলির পর সবচেয়ে ভালো পাত্র ছিলেন ফ্রান্সের রাজার ভাই ডিউক অব এলেনকন, ফ্রান্সিস হয়। ফ্রান্সিস ইংল্যান্ডে আসেন রানী এলিজাবেথকে বিয়ে করেন। রানীও তাকে পছন্দ করেন। কিন্তু আবারও ধর্ম এবং রাজনীতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়া। এভাবেই মধ্যযুগে ইংল্যান্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ রানীকেই আজীবন অবিবাহিত থাকেন।

টিউডর রাজবংশের পঞ্চম ও সর্বশেষ রানী ছিলেন । তার বাবা ছিলেন রাজা অষ্টম হেনরি পর। এলিজাবেথের বয়স যখন মাত্র আড়াই বছর তখন তার মা অ্যান বোলিনকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয় এবং এলিজাবেথকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিলে।

এ অবস্থায় উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা কাটাতে ভাই ষষ্ঠ এডওয়ার্ড সিংহাসনের ভার অর্পণ করেন লেডি জেন গ্রে-এর উপর হয়। ১৫৫৮ সালের ১৭ নভেম্বর এলিজাবেথ সেবান রানী প্রথম মেরির স্থলাভিষিক্ত হয়।

ইংল্যান্ডের রানীর ক্ষমতা

প্রোটেস্ট্যান্ট বিদ্রোহীদের সহযোগিতা দানের অভিযোগে এলিজাবেথ ক্যাথলিক অনুসারী মেরির শাসনকালে এক বছর অন্তরীণ ছিলো। পরবর্তীকালে রানী হিসেবে এলিজাবেথের প্রথম পদক্ষেপ ছিল ইংলিশ প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ প্রতিষ্ঠা করা, যার সর্বোচ্চ গভর্নর ছিলেন তিনি নিজেই। এলিজাবেথ অবিবাহিতা ছিলো। এজন্য বিতর্কও তার পিছু নিয়েছিলেন।

মৃত্যুর ২০ বছর পরও সোনালি যুগের শাসক হিসেবে সমাদৃত ছিলেন । তার শাসনকাল “এলিজাবেথান এরা” বা এলিজাবেথীয় যুগ নামে পরিচিত ছিলো। শেকসপিয়রের নাটকে এলিজাবেথান এরা ঘুরেফিরে । ১৬০৩ সালের ২৪ মার্চ রিচমন্ডে পরলোক গমন করেন ।

ইংল্যান্ডের রানীর ক্ষমতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *