ইসলাম এ নারীর মর্যাদা

ইসলামে নারীর মর্যাদা

567697-188

হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আবির্ভাবের পূর্বে নারীদের অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয় যা বলতে গেলেও লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে। ইসলাম পূর্ব যুগে নারীদেরকে শুধু ভোগের সামগ্রী হিসাবে ব্যবহার করা হত। তারা ছিল সমাজে : পরিবারে নিতান্ত নিকৃষ্ট। তাদের কোন অধিকার ছিল না। এমন কি মেয়ের জন্ম হলে পিতা কন্যা সন্তানকে জীবন্ত মাটির নীচে পুতে দিত এ কলঙ্ক ঢাকার জন্য ।

প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে এমন বর্ননা আছে : ‘মৃত্যু, নরক, আগুন, বিষ, সর্প : এর কোনটিই নারী অপেক্ষা মারাত্মক নয়।’ যুবতী নারীকে প্রতিমার উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হত দেবতার সন্তুষ্টির জন্য, বৃষ্টি ধন-দৌলত লাভের জন্য। স্বামীর মৃত্যুর সাথে স্ত্রী সহ মৃত্যুবরণ বা ‘সতীদাহ’ পালন হিন্দু সমাজের রীতি । নারীকে সকল পাপ অন্যায় ও অপবিত্রতার কেন্দ্র বা উৎস বলে ঘৃণা করা হত। তারা বলতো : নারীরা হচ্ছে শয়তানের বাহন। নারীরা হচ্ছে এমন বিষধর সাপ যা পুরুষকে দংশন করতে কখনো কসুর করেন না।

৫৮৬ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতের বহু চিন্তা-ভাবনা আলোচনা গবেষণা ও তর্ক-বিতর্কের পর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে নারী জন্তু নয় মানুষ। তবে সে এমন মানুষ যে পুরুষদের কাজে নিরন্তর সেবিকা হয়ে থাকারই যোগ্য। এগুলো ছিল তাদের স্থির বিশ্বাস ও মজ্জাগত আকীদা।

গ্রীকদের দৃষ্টিতে নারীর কি মর্যাদা ছিল তাদের একটা কথা থেকেই তা স্পষ্ট বোঝা যায় ‘আগুনে জ্বলে গেলে কিংবা দংশন করলে তার প্রতিবিধান সম্ভব কিন্তু নারীর দুষ্কৃতির প্রতিবিধান অসম্ভব।’

পারস্যবাসীদের মতে : দুনিয়ার সব অনিষ্টের মূল উৎস হচ্ছে দু’টি (১) নারী (২) ধন-সম্পদ।

প্রাচীন ভারতে নারীর অবস্থা অন্যান্য সমাজের তুলনায় অধিক নিকৃষ্ট ছিল। প্রাচীন ভারতের প্রখ্যাত আইন রচায়িতা মনুমহারাজ নারী সম্পর্কে বলেছেন: ‘নারী না-বালিগা হোক যুবতী হোক আর বৃদ্ধা হোক নিজ ঘরেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।

মিথ্যাবলা নারীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য। চিন্তা না করে কাজ করা ধোকা-প্রতারণা নির্বুদ্ধিতা, লোভ-পংকিলতা, নির্মমতা ইত্যাদি হচ্ছে নারীর স্বভাব গত দোষ ।

যে মহা মানবের আবির্ভাবের ফলে নারী জাতির এ সকল অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে, তিনিই মানবতার মুক্তির দিশারী রাহমাতুল লিল ‘আলামীন’, নবীগণের সরদার হযরত মুহাম্মদ (সা)।

হযরত মুহাম্মদ (সা) ধরায় আগমন করে মানবতার মুক্তি ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় যে বিপ্লবী বাণী শুনিয়েছেন, তাতে যুগান্তকালের পংকিলতা ও পাশবিকতা দূরীভূত হয়ে, জুলুম ও অমানুষিক নির্যাতনের প্রবণতা নি:শেষ হয়ে, মানব সমাজে যথাযথ সম্মানবোধ ও যথাযোগ্য মর্যাদাবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নারী মানবতা ও অধিকারের পর্যায়ে পুরুষদের সমান বলে গণ্য হয়েছে । বরং অনেক ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষদের তুলনায় বেশী অধিকার দেয়া হয়েছে।

Islam-20210318100043

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পর্দা

বলাবাহুল্য-কুরআন-হাদীছই একমাত্র কিতাব, যা নারীদেরকে যুগ যুগ কালের অপমান, লাঞ্ছনা ও হীনতা-নীচতার পুঞ্জীকৃত স্তূপের জঞ্জাল থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তিদান করেছে এবং সঠিক ও যথোপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুছে দিয়েছে তার ললাটস্থ দীর্ঘকালের অসহায়ত্বের মলিন রেখা। ইসলামই নারীকে সঠিক মানবতার মূল্য দান করেছে।

হযরত মুহাম্মদ (সা) আরো ইরশাদ করেন : ‘যে ব্যক্তি দু’টি মাত্র মেয়েরও সুন্দররূপে ভরন-পোষণ ও প্রতিপালন করবে, সে বেহেশতে আমার এত নিকটবর্তী হবে, যেরূপ হাতের আঙ্গুল সমূহ পরস্পর নিকটবর্তী।’ (মুসলিম শরীফ)

হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন: ‘যে ব্যক্তি তিনটি মেয়ে বা তিনজন ভগ্নির প্রতিপালন ও শিক্ষাদান (ইসলামী শিক্ষা) সুচারুরূপে আ াম দিবে যাবৎ না তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থা হয়, তার জন্য বেহেশত অবধারিত হয়ে যাবে। দু’জন সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে, নবী (সা) বললেন : দু’জনের প্রতিপালনেও এ ছাওয়াব পাবে। একজনের প্রতিপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, নবীজী (সা) তা-ই বললেন। (মিশকাত শরীফ)

হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর বহু হাদীছ আছে নারীর মর্যাদা এবং তাদের প্রতি সদ্বব্যবহার সম্পর্কে। যে রাহমাতুললিল আলামীন (সা)-এর ওসীলায় নারী জাতি মুক্তি পেয়ে তাদের নারীত্বের মর্যাদা পেয়েছিল, সত্যিকার ভাবে, আজ তাঁর আদর্শ পরিত্যাগ করে নারী সমাজ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকতার নামে, প্রগতির নামে দূর্গতি ডেকে নিজেদের পায়ে নিজেরা কুঠারাঘাত করত: সমান অধিকারের নামে রাস্তায় নেমে যে চিৎকার করছে, তাতে কি লাভ হচ্ছে?

অতীত ভুলে গেলে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায় ৷ তাই আধুনিক সভ্যতা নারী মুক্তি নামে নারীদেরকে নির্যাতন ও লালসা বৃত্তির গাভীর ফাঁদে নিক্ষেপ করছে। নারী স্বাধীনতার নামে আজ তাদেরকে লাগামহীন ভাবে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। আজ সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শিল্পের নামে নারীর লজ্জা, শরম-আবরু ও পবিত্রতার মহামূল্য সম্পদকে প্রকাশ্য বাজারে নগণ্য পাশের মত ক্রয়-বিক্রয় ও ভোগ করা হচ্ছে। স্বার্থপূজারী পুরুষরা আধুনিকতা, সংস্কৃতি ও শিল্পে অগ্রগতির মোহনীয় নামে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে ঘরের বাহিরে নিয়ে এসেছে এবং ক্লাবে নাচ গানের আসরে বা অভিনয় মঞ্চে পৌছিয়ে দিয়ে তাদেরকে নিজেদের পাশবিক লালসার ইন্ধন বানিয়ে নিয়েছে। এভাবে নারীর অমূল্য সম্পদকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে নির্মমভাবে।

ইসলাম বিদ্বেষী চক্র চতুর্দিকে প্রচারণা চালাচ্ছে, ইসলাম নারীকে কোন মর্যদা প্রদান করেনি; বরং মর্যাদার পরিবর্তে ঘরের কোণে আবদ্ধ করে তার ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সামাজিক অধিকার হরণ করেছে। এই প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে ইসলামী জ্ঞানশূন্য কিছু সরল প্রাণ মহিলা মাঠে-ময়দানে অধিকার আদায়ের নামে মিছিল-মিটিংয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে। কিন্তু মূলত: ইসলাম নারীকে যে মর্যাদা ও অধিকার প্রদান করেছে, পৃথিবীর কোন ধর্ম বা মতবাদ তার একটি অংশও প্রদান করতে পারেনি। একমাত্র ইসলামই নারীকে সকল ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকার প্রদান করে সকল ধরনের নির্যাতন থেকে মুক্ত করে মাতৃত্বের শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন করেছে। প্রাক ইসলামী যুগে নারীকে পুরুষের দাসী মনে করা হত, মেয়ে সন্তান জন্মকে অভিশাপ মনে করা হত এবং মেয়ে সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া হত । রোমান আইন অনুসারে নারী দীর্ঘদিন ছিল চরম অধঃপতিত। নারীর জীবন লক্ষ্য সেবা ও চাকরানীর কাজ বলে মনে করা হত। নারীর সাম্য গ্রহণযোগ্য ছিল না, এমনকি রোমান সাম্রাজ্যে নারীর কোন আইনগত অধিকারও স্বীকৃত ছিল না ।

একমাত্র ইসলামই নারীকে মর্যাদার সুমহান আসনে আসীন করেছে। ইসলাম কিভাবে নারীকে মর্যাদা প্রদান করেছে মহান আল্লাহ পাকের ঘোষণাই তার প্রমাণ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন : “তারা তোমাদের পোষাক এবং তোমরা তাদের পোষাক”।

(সূরাহ : বাকারা, আয়াত : ১৮৭) এক্ষেত্রে আল্লাহ পাক নারী পুরুষকে সমমর্যাদায় ভূষিত করেছেন। কেউ কারো থেকে কম নয়। অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন : “হে মানুষ জাতি । তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর : যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে

সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার অর্ধাঙ্গিনী (হাওয়া আলাইতাস সালাম) কে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের দু’জন থেকে অসংখ্য নর-নারী পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে।” (সূরা নিসা, আয়াত : ১)

সূরাহ আলে ইমরানের ১৯৫নং আয়াতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন : (“হে নারী-পুরুষ)। তোমরা পরস্পর এক।” অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন, “ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার রমণীগণ একে অপরের সহায়ক ও বন্ধু । তারা একে অপরকে সৎ কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজের নিষেধ করবে।” (সূরাহ তওবাহ, আয়াত : ৭১)

অনুরূপভাবে রাসূল (সা) বলেন : “নিশ্চয়ই রমণীগণ নরদের অর্ধেক।” কুরআন শরীফের উপরোক্ত আয়াতগুলো ও রাসূল (সা)-এর হাদীস সমূহের আলোকে এটা স্পষ্ট যে, মর্যাদা ও অধিকারের দিক থেকে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোন তারতম্য নেই ।

আসসালামুয়ালাইকুম  মমিন ভাই ও বোনেরা  আমাদের  পাশেই থাকুন  আমারা ইসলামধর্ম নারীর  ও তার  মর্যাদা  ইসলামিক  দৃষ্টিতে তুলে দরবো ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *