ইসলাম এ নারির অধিকার

ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

প্রশ্ন : লোকেরা মনে করে, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে মহিলাদেরকে সমান অধিকার ও সমমর্যাদা প্রদান করা হবেনা। তাদেরকে শুধু পুরুষদের অধীন করে রাখা হবে। এই প্রগতির যুগে নারীদেরকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রাখার ধারণা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে? বোরকা পরিধান করলে তো নারীরা দেশের উন্নয়নে সহযোগী হবার পরিবর্তে প্রতিবন্ধক প্রতিপন্ন হতে বাধ্য। বড় বড় ঘরের নারীরা মনে করে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে তাদেরকে জোর-জবরদস্তি করে ধরে ধরে বোরকা পরিয়ে দেয়া হবে। পুরুষদের দাঁড়ি রাখতে বাধ্য করা হবে। এসব ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি? বিশেষ করে উচু শ্রেণীর নারীদের মধ্যে এখন প্রোপাগান্ডা শুরু হয়েছে যে, এরা চারচারটি বিয়ে করবে।

1

উত্তর : আপনার প্রশ্নের জন্যে দীর্ঘ জবাব প্রয়োজন। তবে, আমি সংক্ষিপ্ত ক’টি কথাই বলবো। এই সমাজের অনেক কিছুই আমি দীর্ঘদিন থেকে দেখে আসছি। সেগুলো সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করেছি। সেগুলোর পূর্ণ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে অনেক কিছু লিখেছি। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো মহিলাদের সমস্যা। এ প্রসংগে আমার ‘পর্দা ও ইসলাম’ এবং ‘স্বামী-স্ত্রীর অধিকার’ গ্রন্থ দু’টি অনেক আগেই প্রকাশ হয়েছে। পাঠাগার ও বাজারে গ্রন্থ দু’টি সহজলভ্য। শিক্ষিতদের প্রতি আমার অনুরোধ, অনুগ্রহ করে গ্রন্থ দু’টি পড়ে দেখুন। শিক্ষিত লোকদের ব্যাপারে আমি এ আশা করিনা যে, তারা পড়ালেখা না করে এবং না জেনে-শুনেই কোনো বিষয়ে মত প্রতিষ্ঠা করতে পছন্দ করবেন। অশিক্ষিত লোকেরা এমনটি করলে আফসোসের কিছু ছিলনা। কিন্তু শিক্ষিত লোকদের এমনটি করা খুবই দুঃখজনক ।

মহিলাদের সম্মান ও অধিকার

এ প্রশ্নের জবাব হলো, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে নারীরা ঠিক সেই অধিকার এবং মর্যাদাই লাভ করবে, ইসলাম তাদের জন্যে যে অধিকার এবং মর্যাদা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি চিন্তা ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার ১১ নরীদেরকে মন্ত্রীত্ব প্রদান করা উচিত কিনা? এ ব্যাপারে কয়েক বছর আগে ফ্রান্সে জনমত যাচাই করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত না করার পক্ষে রায় দেয় ।

image

আসল কথা হলো, প্রকৃতিগতভাবে নারীদের যে মর্যাদা হওয়া উচিত আপনি যদি তাদেরকে সেখান থেকে বিচ্যুত করে দেন আর যে ময়দান তাদের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল নয় সেখানে নিয়ে তাদের বসিয়ে দেন, তবে তো তারা পুরুষদের পিছে পড়ে যেতে বাধ্য। একই ময়দানের প্রতিযোগিতায় পুরুষরা অবশ্যি তাদের ছাড়িয়ে যাবে। এমতাবস্থায় কিছুতেই সমতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনা। (যুগ জিজ্ঞাসার জবাব : ২য় খন্ড)

সন্তান পালনে নারীর অধিকার

প্রশ্ন : কাওসার পত্রিকার ৩০ জুলাই ১৯৫২ সংখ্যার ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে, “শরীয়তের বিধান অনুসারে তালাক সংঘটিত হলে সকল সন্তানকে নিজের কাছে রেখে দেয়া পিতার শুধু অধিকার নয়, বরং তার জন্য অপরিহার্য। মায়ের কোনো অধিকার নেই সন্তান কাছে রাখার।” অথচ হাদীসে এর বিপরীত কথা বলা হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা যাচ্ছে :

১. জনৈক মহিলা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বললো : “এ আমার ছেলে । একে আমি পেটে ধারণ করেছি, দুধ খাইয়েছি এবং কোলে পিঠে করে লালন পালন করেছি। এখন ওর বাপ আমাকে তালাক দিয়েছে এবং একে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চায়।” রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ “যতোদিন তুমি অন্য কোথাও বিয়ে না করবে, ততোদিন শিশুর উপর তোমার অধিকার বেশি।” (মিশকাত, শিশুর লালন পালন ও বয়োপ্রাপ্তি অধ্যায়)

একবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ছেলেকে বললেন, তুমি ইচ্ছে করলে পিতার কাছে থাকতে পারো আবার ইচ্ছে করলে মাতার কাছে থাকতে পারো।” (ঐ)

এক মহিলা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাযির হয়ে বললো : আমার স্বামী আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চায়। অথচ এই ছেলে আমাকে পানি এনে দেয় এবং আমার অনেক কাজে লাগে।” রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লম ছেলেটিকে বললেন : এই তোমার পিতা আর এই তোমার মাতা। যার হাত ধরতে চাও, ধর।” ছেলেটি মায়ের হাত ধরলো এবং সে তাকে নিয়ে গেলো । (ঐ)

৪. হযরত আবু হুরাইরার রা. কাছে জনৈক ইরানী ১০ আধুনিক নারী ও ইসলামী শরীয়ত যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসুল নারীদের অধিকার ও মর্যাদা নির্ধারণের ক্ষেত্রে অবিচার করেছেন, আর সুবিচার করেছে পাশ্চাত্যবাসী, তবে প্রথমে তার ঈমানের ব্যাপারেই তাকে পূর্ণ চিন্তা করে দেখতে হবে।

আপনাদের জানা দরকার, পাশ্চাত্যবাসী নারীদের যে ‘সমমর্যাদা’ দিয়েছে তা তাদেরকে নারীর অবস্থানে রেখে দেয়নি, দিয়েছে অর্ধ পুরুষ বানিয়ে। তারা চায় পুরুষরা যতো কাজ করে, নারীদেরকেও সেসব কাজ করতে হবে। কিন্তু একথা সবারই জানা, নারীরা যেসব কাজ সম্পাদন করে, পুরুষরা সেগুলো করতে সক্ষম নয়।

6

সুতরাং এই ‘সম’ দাবির অর্থ হলো, প্রকৃতি নারীদের উপর যেসব বাড়তি দায়িত্ব অর্পণ করেছে, একদিকে তাদেরকে সেগুলোও সম্পাদন করতে হবে যা পুরুষরা সম্পাদন করতে সক্ষম নয়। অপরদিকে, পুরুষদের সাথে সমভাবে ঐসব দায়িত্বও তাদের পালন করতে হবে, প্রকৃতি যেগুলোর দায়িত্ব পুরুষের উপর ন্যস্ত করেছে। অর্থাৎ ব্যাপারটা যেনো এমন যে, তারা নারীদের দ্বারা দেড়গুণ বেশি কাজ করিয়ে নিতে চায়, আর নিজেরা করতে চায় অর্ধেক । এরি নাম দিয়েছে তারা নারী-পুরুষের সমতার বিধান।

নারীদের প্রকৃতিগত মর্যাদা

সমতার দাবি করে পাশ্চাত্যে নারীরা প্রতারিত হয়েছে। এর ফলে তারা তাদের অনেক অধিকার ও মর্যাদা খুইয়ে বসেছে। Ladies first এর সেই কাহিনী এখন সেখানে অচল। আমি স্বচোখে ইংল্যান্ডে দেখেছি, যানবাহনে নারীরা অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে সীটে বসে থাকা পুরুষরা তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র পরোয়া করেনা। অথচ আমাদের দেশে এখনো নারীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে পুরুষরা তাদের জন্যে সীট ছেড়ে দেয়। বলে, আপনি বসুন। কিন্তু পাশ্চাত্যের পুরুষরা বলে, তোমরা আমরা সমান। সুতরাং যে আগে সুযোগ পায় সে বসবে, নতুবা দাঁড়িয়ে থাকবে। এভাবে নারীরা সর্বত্র বঞ্চিত ও প্রতারিত হচ্ছে। কেউ তাদের জিজ্ঞেসও করেনা । তবে বিশেষ কোনো কারণ থাকলে সেটা আলাদা কথা ।

সমতার দাবি সত্ত্বেও পাশ্চাত্যের নারীরা পুরুষদের সাথে একই ধরনের কাজ করে সমান বেতন পায়না। এজন্য নারীরা হৈ-চৈও করে যাচ্ছে। তাছাড়া যেসব কর্মক্ষেত্রে নারী এবং পুরুষ উভয়কে একই সমতলে নিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে যেহেতু আল্লাহ তায়ালা প্রকৃতিগত ভাবেই নারীদেরকে পুরুষদের সমকক্ষ বানাননি, তাই লাখো চেষ্টা করেও সেসব ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের সমকক্ষ হতে পারেনা। পাশ্চাত্য হোক কিংবা প্রাচ্য, কোথাও সাধারণ নারীদেরকে তেমন একটা উচ্চ প্রশাসনিক নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত করা হয়না, বরং পুরুষদেরকে১২ আধুনিক নারী ও ইসলামী শরীয়ত

সাথে ছিলো তার ছেলে। তার স্বামী তাকে তালাক দিয়েছিল স্বামী-স্ত্রী হযরত আবু হুরাইরার নিকট নিজেদের ঘটনা বর্ণনা করলো! স্ত্রী বললো, “আমার স্বামী আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চায়” হযরত আবু হুরাইরা বললেন : “সন্তানের ব্যাপারে লটারী করো।” স্বামী এসে বললো : “আমার ছেলের ওপর আমার অগ্রাধিকার নিয়ে কে বিতর্কে লিপ্ত হতে পারে?” তিনি বললেন : “আমি কথাটি বলেছি এই জন্য, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত থাকা অবস্থায় এক মহিলা এসেছিল। সে বললো, আমার স্বামী আমার ছেলেকে নিয়ে যেতে চায়! অথচ ছেলেটি আমার অনেক কাজ করে দেয় এবং পানি এনে দেয়। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম বললেন : তোমরা লটারী দ্বারা নিষ্পত্তি করে নাও। পিতা বললো : আমার ছেলেকে নিয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেকে বললেন : তোমার পিতা মাতা উভয়ে এখানে রয়েছে। যার হাত ধরতে চাও ধরো। ছেলেটি তার মায়ের হাত ধরলো।” (ঐ) 1

৫. রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি মা ও তার সন্তানের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর ও তার প্রিয়জনদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দেবেন।

অনুগ্রহপূর্বক উল্লিখিত হাদীস কয়টির আলোকে কাওসারের উক্তিটি শুধরে

নেবেন।

জবাব : মনোযোগ আকর্ষণের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । আলোচ্য প্রশ্নোত্তরটি যেভাবে কাওসারে ছাপা হয়েছে, তাতে আপনার মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। প্রশ্নকর্তা নিজের বৃত্তান্ত অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে লিখেও জানিয়েছিলেন, আবার মুখেও বলেছিলেন। তিনি বিশদ বিবরণ ও যুক্তিপ্রমাণের উল্লেখ ছাড়াই একটা সংক্ষিপ্ত ও অকাট্য জবাব দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এই প্রশ্নোত্তর প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিলোনা। কিন্তু এক অজ্ঞাত কারণে তিনি প্রশ্নের একটা খাপছাড়া সারসংক্ষেপ এবং আমার সংক্ষিপ্ত জবাব ছাপানোর ব্যবস্থা করে ফেলেন। যেভাবেই হোক, ছাপা যখন হয়েই গেছে এবং আপনি তার ওপর আপত্তি তুলেছেন, তখন আমি পুনরায় নিজের বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছি।

আপনি যে পাঁচটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন তার পঞ্চম হাদীসটিতো স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ও শিশু সন্তান পালনের সাথে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়। হাদীসে মা ও সন্তান বলতে মূলত দাসী ও তার সন্তানকে বুঝানো হয়েছে। ঐ সেখানে মা ও সন্তানের বিচ্ছেদ দ্বারা সন্তানকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে পিতার কাছে সমর্পণ করা বুঝানো হয়নি, বরং দাসী ও ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার ১৩ আলাদা আলাদা দুই ব্যক্তির হাতে সোপর্দ করা বা বিক্রি করা বুঝানো হয়েছে। এ কাজটা যে নিষিদ্ধ, তা আরো বহু হাদীস থেকেও প্রমাণিত। আর প্রথম চারটি হাদীস থেকে শরীয়তের নিম্নোক্ত বিধিসমূহ রচিত হয় :

১. শিশু সন্তানধারী দম্পতির বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটলে দেখতে হবে সন্তান একেবারে অবোধ ও মাতৃস্নেহের মুখাপেক্ষী কিনা? যদি তাই হয়, তবে সন্তানকে লালন পালনে মায়ের অধিকার অগ্রগণ্য, যদি সে পুনরায় স্বামী গ্রহণে বিরত থাকে।

২. শিশুর যদি মা বাবার একজনকে বেছে নেয়ার মতো বয়স হয়ে থাকে, তাহলে লটারী করা হবে। আর যদি স্বামী স্ত্রী উভয়ে অথবা কোনো একজন লটারী মানতে অসম্মত হয়, তাহলে শিশুকে স্বাধীনতা দেয়া হবে পিতামাতার মধ্যে যার সাথে সে থাকতে চায় তাকে বেছে নিতে ।

উপরোক্ত বিধিসমূহ স্বয়ং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। এতে দ্বিমত পোষণ কোনো মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আলোচ্য হাদীসগুচ্ছ এবং এ ধরনের অন্যান্য হাদীসের পটভূমি ও প্রেক্ষিত বিবেচনা করে এবং পিতামাতা ও সন্তানদের পারস্পারিক শরীয়তসম্মত অধিকার ও দায় দায়িত্ব সামগ্রিকভাবে দৃষ্টিতে রেখে প্রাচীন ইমামগণ মায়ের সন্তান পালনের আগ্রাধিকারের ওপর আরো কতিপয় শর্ত ও বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, চার মযহাবের আলেমগণ নিম্নলিখিত দোষগুলোর উল্লেখ করে বলেছেন যে, এগুলো যদি মায়ের মধ্যে বর্তমান থাকে এবং পিতা এগুলো থেকে মুক্ত থাকে, তাহলে মায়ের সন্তান পালনের অগ্রাধিকার রহিত হয়ে যাবে :

দোষগুলো হলো :

ক. ইসলাম পরিত্যাগ করা।

খ. পাগল হয়ে যাওয়া।

গ. নামায রোযা ত্যাগ করা বা অনুরূপ কোনো প্রকাশ্য গুনাহে লিপ্ত হওয়া।

ঘ. চরিত্র নষ্ট হওয়ার আশংকা থাকে এমন পরিবেশে সন্তানকে নিয়ে বাস করা বা এতো দূরবর্তী স্থানে বসবাস করা, যেখানে সন্তানের লেখাপড়া তদারক করা পিতার পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে।

ঙ. পিতার অক্ষমতা সত্ত্বেও তার কাছে সন্তানের ভরণপোষণের অর্থ দাবি

করা, চ. সন্তানের লালন পালনে চরম উদাসীনতা।

অনুরূপভাবে ফেকাহবিদগণের মতে শিশু সন্তানের মায়ের কাছে লালিত পালিত হওয়ার সর্বোচ্চ মেয়াদ ৭ থেকে ৯ ১৪ আধুনিক নারী ও ইসলামী শরীয়ত থাকবে সন্তানকে নিজ দায়িত্বে নিয়ে আশা। চিন্তা করলে বুঝা যাবে, উল্লেখিত শর্তগুলোর কোনো একটিও উপরোক্ত

হাদীসসমূহ বা শরীয়তের সাধারণ নীতিমালার পরিপন্থী নয়। একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, সন্তানদের ভরণপোষণ, বৈষয়িক ও নৈতিক লালন, তাদের শিক্ষাদীক্ষা, পেশাগত প্রশিক্ষণ এবং তাদের বিয়ে শাদী ইত্যাদির আসল দায়িত্ব পিতার ওপরই বর্তে, মাতার উপর নয়। পরিবারের প্রধান হিসেবে “নিজেদেরকে ও পরিবার পরিজনকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করার” যে নির্দেশ কুরআনে রয়েছে, সে নির্দেশ প্রাথমিকভাবে পুরুষকেই দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় এটা কিভাবে যুক্তিসঙ্গত হতে পারে যে, মাতাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বোতভাবে ও শর্তহীনভাবে সন্তান লালন পালনের অধিকার দেয়া হবে, পিতার ইচ্ছের তোয়াক্কা না করে সে সন্তানকে যেভাবে ইচ্ছে গড়ে তুলবে, অতঃপর তার পরিণাম ভোগ করার জন্য সন্তানদেরকে পিতার হাতে সোপর্দ করা হবে?

এ জন্য সন্তান লালন পালনের মেয়াদ যৌবন প্রাপ্তিরকাল পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করার পক্ষে মত দেয়া সঠিক বলে মনে হয়না। কারণ সন্তানরা যৌবনে পদার্পণ করা ও স্বনির্ভর হয়ে যাওয়ার পর পিতার অভিভাবকত্বে আসার কোনো অর্থ থাকেনা। তখন আপন লাভক্ষতি ও ভালোমন্দের দায়দায়িত্ব অনেকটা তাদের নিজেদের ঘাড়েই এসে পড়ে।

তাই শরীয়তের অন্তর্নিহিত সুগভীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার দাবি হলো, একদিকে লালন পালনের মেয়াদের একটা যুক্তিসঙ্গত সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দিতে হবে, অপরদিকে লালন পালনে মায়ের অধিকারের উপরও যুক্তিসঙ্গত শর্ত ও বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। মায়ের ইসলাম থেকে খারিজ না হওয়া এবং পুনরায় বিয়ে না করার শর্ত হাদীসেই উল্লিখিত হয়েছে। এই বিধিনিষেধ ও শর্তারোপের আলোকে আরো নতুন শর্ত ও বিধিনিষেধ উদ্ভাবন করা যেতে পারে।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি উল্লিখিত দুটো শর্তের অতিরিক্ত আর কোনো শর্তের উল্লেখ না করে থাকেন, তবে তার কারণ সম্ভবত এই যে, তাঁর কাছে যেসব বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য এসেছিল, তাতে মায়ের দিক থেকে এসব আশংকা দেখা দেয়ার কোনো অবকাশ ছিলোনা। নচেত পিতা চুপ থাকতোনা, বরং মায়ের কাছে লালতি পালিত হলে সন্তানের সম্ভাব্য ক্ষতির কথা ব্যক্ত করতো। সেক্ষেত্রে নিজের অগ্রাধিকার প্রমাণ করার জন্য পিতা শুধু একথা বলেই ক্ষান্ত থাকতোনা যে, পুত্রের ব্যাপারে পিতার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় এমন কে আছে? বরং সেই সাথে এটাও বলতো যে, সন্তানের মা ওর লালন পালন সুস্পষ্টভাবে করতে পারবেনা।

হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে মনে হয়, এসব ঘটনায় পিতা মাতার কোনো একজনের যোগ্যতা ও অপর ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকার ১৫ অযোগ্যতা নিরূপণের প্রশ্নই ওঠেনি। কেননা যোগ্যতা ও আন্তরিকতার দিক দিয়ে পিতা মাতা উভয়েই সমান। আসল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল মাতৃস্নেহ ও তার মুখাপেক্ষিতার সাথে পিতৃস্নেহের।

এক্ষেত্রে মাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, আর তা নিশ্চতভাবে এখনও দেয়া হবে। কিন্তু তা দ্বারা একথা প্রমাণ করা যায়না যে, মা যদি সন্তান পালনের গুরুদায়িত্ব পালনে একেবারেই অযোগ্য ও অক্ষম হয়, তবুও তার সন্তান পালনের অগ্রাধিকার বহাল থাকবে এবং সন্তানকে তার কাছেই রাখা হবে।

আমার পূর্ববর্তী জবাবে কোনো ত্রুটি, অসম্পূর্ণতা বা অস্পষ্টতা থেকে থাকলে তা এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় দূর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এখানেও আমি বিস্তারিত আলোচনা থেকে বিরত থেকেছি।

আমার জ্ঞানের অসম্পূর্ণতা সম্পর্কে আমি পুরোপুরি সচেতন এবং তা যে নির্ভুল, সে দাবিও আমি করিনা। প্রকৃত ও নির্ভুল জ্ঞানের আধার একমাত্র আল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *