একটি অপহরণ এর গল্প। ১১ পার্ট

অপহরণ এর ১১তম পার্ট।

রুমে ঢুকেই লাইট জ্বালাল রুমি। তারপর তীক্ষ্ণ চোখে কেয়ার দিকে তাকাল । দেয়ালে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে কেয়া। দরজা খোলার শব্দে লাইট জ্বলে উঠবার পর মুহূর্তের জন্যে চোখ তুলে রুমির দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর আবার মাথা নিচু করেছে।

কেয়া যেখানে বসে আছে তার একপাশে মেঝেতে টিফিন কেরিয়ারটা যেমন করে রাখা ছিল তেমনি রাখা আছে। পাশে একটা প্লেট একটা গ্লাস আর একটা পানির বোতল।

বোতলটা ফ্রিজ থেকে বের করে আনা হয়েছিল বলে, ভেতরের পানিটা তীব্র ঠাণ্ডা ছিল বলে বোতলের গায়ে কুয়াশার মতো জমেছিল যে শীতলতা সেটুকু ঝরে বোতলের তলায়, মেঝেতে জমেছে সামান্য জল ।

দৃশ্যটি এক পলকের জন্যে দেখে রুমি বলল, খাননি কেন?

কেয়া কথা বলল না । দরজা ভেতরে থেকে বন্ধ করে রুমের মাঝখানে এসে দাঁড়াল রুমি ।

বেশ রুক্ষ্ম গলায় বলল, না খেয়ে কষ্ট করছেন কেন? তাছাড়া না খেয়ে ক’দিনই বা থাকতে পারবেন আপনি; এখানে এভাবে ক’দিন আপনাকে থাকতে হবে আপনি তো তা জানেন না?

কেয়া চোখ তুলে রুমির দিকে তাকাল। আপনি জানেন?

কেয়ার মুখ দেখে থতমত খেয়ে গেলো রুমি। চোখ ফোলা ফোলা কেয়ার।

লালচে । দেখে বোঝা যায় অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছে কেয়া।

কেয়ার মুখ দেখে ভেতরে ভেতরে বেশ একটা ধাক্কা খেলো রুমি। কী যেন কী মনে পড়তে চাইলো তার। মনে পড়ল না কার যেন এ রকম একটি মুখ, বহুকাল আগে…..

না মনে পড়ল না রুমির।

কেয়ার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিল রুমি কেঁদেছেন কেন? কান্নাকাটি করবার মতো কিছু তো হয়নি।

কেয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এরচে বেশি আর কী হতে পারে। ঝট করে কেয়ার দিকে মুখ ফেরাল রুমি। মানে?

আমাকে কিডন্যাপ করে এখানে এনে আটকে রেখেছেন। জানি না কেন! আমার স্বামী সংসার আছে, মেয়েরা আছে, তারা কেউ জানে না কোথায় আমি।

বাড়ি থেকে বেরুবার সময় বলে এসেছিলাম দুপুরবেলা ফিরে মেয়েদের সঙ্গে খাব। মায়ের জন্যে অপেক্ষা করে মেয়ে দুটো আমার  সঙ্গে সঙ্গে তীক্ষ্ণ গলায় থমকে উঠল রুমি।

চুপ করুন। সন্তানের জন্যে আজকালকার মাদের কী দরদ আমি জানি! এসব ফালতু কথা আমার সামনে কখনও বলবেন না। এগুলো লোক দেখানো।

ভান। আজকালকার মায়েরা সব ভানে ভর্তি। সন্তানের স্নেহ মমতার নামে ভান করে তারা, চালাকি করে। কেয়া থতমত খেয়ে রুমির দিকে তাকাল মানে?

মানে মায়েরা এখন আর মা নেই। যে রকম মায়ের কথা আমরা বইতে পড়েছি, সিনেমায় দেখেছি, আজকালকার মায়েরা তেমন নয়। সন্তানের জন্যে অতীতকালের মায়েদের যেমন ভালবাসা মমতা দরদ এসব ছিল, আজকাল ওসব নেই। কথাটা ঠিক নয়।

ঠিক নয় কিনা আমি জানি।

কী করে জানলেন?

আমার নিজেকে দিয়ে জানি।

আপনার মা আছেন?

চুপ করুন। আপনার সঙ্গে পারিবারিক গল্প করার উদ্দেশ্যে আমি আসিনি। রুমি ধপ করে ফোমের এক পাশে বসল।

অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, আপনাকে আমি এখন যা যা বলতে বলব কথাগুলো সরাসরি বলবেন। আমি টেপ করব। কেয়া খুবই অবাক হল কেন?

কেন তা আপনার জানবার দরকার নেই। আপনি এখন বলবেন আমাকে ওরা আটকে রেখেছে। আমাকে যদি জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাও ওদের শর্তে রাজি হয়ে যাও।

পুলিশ কিংবা আইনের সাহায্য নিয়ে লাভ নেই। কোনও রকম চালাকি করতে যাওয়াও ঠিক হবে না। চালাকি করছ জানতে পারলেই

ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে রুমির মুখের দিকে

তাকিয়ে রইল। তাকিয়ে এই প্রথম কেন যে তার বিশ্বেস হল না এরকম আপাত

রুক্ষ্ম কিন্তু মায়াবি মুখের যুবকটিই তাকে রাস্তা থেকে ওভাবে তুলে এনেছে ।

এখন এসব কথা বলতে বলছে! কিডন্যাপ হওয়ার প্রথম মুহূর্তের মতো কেয়ার আবার মনে হল পুরো ব্যাপারটাই ঘটছে স্বপ্নের মধ্যে। মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটে স্বপ্নময় এক

হাসি ফুটে উঠল কেয়ার। অদ্ভুত ঘোর লাগা গলায় টেনে টেনে যুবকের শিখিয়ে

দেয়া কথাগুলো হুবহু বলে গেল সে।

টেপ রেকর্ডারের বাটন পুস করে রেখেছিল রুমি। কেয়ার কথা টেপ হয়ে গেল। কথা শেষ হওয়ার পর টেপ রেকর্ডার অফ করলো রুমি। তারপর মুগ্ধ চোখে কেয়ার দিকে তাকাল আপনি খুব সার্ফ।

কেয়া বলল, কী রকম?

আমি যা যা শিখিয়ে দিলাম হুবহু তাই বললেন। একটি শব্দও উল্টোপাল্টা হল না। ভুল হল না।

কেয়া কথা বলল না। মুখে সেই স্বপ্নময় হাসি আবার ফুঠে উঠল তার।

কেয়ার হাসি দেখে বুকের ভেতর কী রকম একটা ধাক্কা লাগল রুমির। কী

যেন মনে পড়তে চাইলো। মনে পড়ল না। কার মুখে যেন এরকম এক হাসি,

কবে যেন দেখেছিল! কোন শৈশবে যেন! মনে পড়ল না। কী রকম ঘোর লাগা চোখে কেয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল রুমি।

কেয়া বেশ অবাক হল। তারপর ভয় পেয়ে গেল। অকারণে আঁচল টানলো। জড়োসড়ো হয়ে বসল। বুকের ভেতর ধূগবুগ যুগযুগ করতে লাগল তার। রাত হয়ে গেছে।

এরকম নির্জন এক কক্ষে অচেনা যুবক, যারা চারজন মিলে তাকে কিডন্যাপ করেছে, কী উদ্দেশ্যে যুবকের।

অমন করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কেন? যদি ভয়ংকর কোনও উদ্দেশ্য থাকে, নিজেকে কেমন করে ওদের হাত থেকে সেভ করবে কেয়া!

এসব ভাবতে ভাবতে মুখে প্রচণ্ড ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠল কেয়ার। গলা শুকিয়ে এল। পর পর দু’বার ঢোক গিলল সে। কেয়াকে ঢোক গিলতে দেখে বাস্তবে ফিরে এল রুমি।

নরম উদাস গলায় বলল আপনি অতো ভয় পাচ্ছেন কেন?

রুমির কথা শুনে কী যে হল কেয়ার, হঠাৎ করে হাত বাড়িয়ে রুমির একটা হাত জড়িয়ে ধরল সে। বাবা, আমার ছেলেটি বেঁচে থাকলে আজ তোমার বয়সী হতো ।

তোমার মায়ের সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান কোনও হবে না। আমাকে তুমি, আমাকে তুমি কোনও অপমান করো না

মা শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে রাগ হয় রুমির, মাথায় লাফিয়ে ওঠে শরীরের যাবতীয় রক্ত, চেহারা হয়ে যায় নৃশংস, মুহূর্তে হাত চলে যায় অস্ত্রে,

যে কারও লাশ ফেলে দিতে পারে রুমি, কিন্তু আজ এই মুহূর্তে প্রথমবারের মতো ওসবের কিছুই হল না রুমির। কী রকম কাতর হয়ে গেল সে।

কেয়ার মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে রইল সে তারপর আলতো করে কেয়ার হাত ছাড়িয়ে দিল। আপনি যে ভয় পাচ্ছেন, ভয়টা পাবেন না। রুমি বেঁচে থাকতে তেমন অপমান আপনাকে কেউ করতে পারবে না।

আপনি নিশ্চিত থাকুন। আপনার রুমের একমাত্র চাবিটি আমার কাছে। আমি ছাড়া এই রুমে আর কেউ ঢুকবে না। আপনি বাথরুমে যান। হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নিন।

তারপর ঘুমিয়ে থাকুন। আমার যা প্ল্যান তাতে আপনাকে এখানে তিনদিন থাকতে হবে। আপনার হাজব্যান্ডের কাছে দশ লাখ টাকা চাইবো আমরা। টাকাটা তিনদিনের মধ্যে চাইবো। দিলেই ছেড়ে দেবো আপনাকে।

আমি বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরে থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দেবেন। তাছাড়া আপনাকে আমি গ্যারান্টি দিতে পারি আপনার অন্যরকমের কোনও ক্ষতি এখানে কেউ করবে না।

আমরা যে চারজন গ্রুপে আছি, টাকাটা আমাদের দরকার, অন্য কিছু না। আমরা মাস্তান কিন্তু ইতর নই। দশ লাখ টাকার ব্যাপারটাই খুব বড় ব্যাপার।

কিন্তু এত বড় একটি ব্যাপার একদমই পাত্তা দিল না কেয়া। রুমির কথা শুনতে শুনতে ছেলেটির জন্যে বুকের ভেতর কোথায় যেন লুকিয়ে আছে বিশাল এক দুঃখ বোধ।

নয়তো এরকম অন্ধকার পথে চলে এসেছে কেন সে! চেহারা দেখে, কথা শুনে বোঝা যায় ভদ্রঘরের ছেলে, লেখাপড়া জানা ছেলে। এই যুবকটির জীবন তাহলে এরকম হয়েছে কেন?

কেয়া বলল, তিনদিনের মধ্যে টাকাটা না পেলে কী করবে তোমরা? আবার কেয়ার মুখের দিকে তাকাল রুমি। তারপর হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়াল। আপনি হাত মুখ ধোন।

তারপর খেয়ে শুয়ে পড়ুন। রুম বাইরে থেকে লক করা থাকবে। চাবি থাকবে আমার কাছে। তবু ভেতর থেকে ছিটকিনি

লাগিয়ে রাখবেন আপনি। আপনার দরজার বাইরের রুমটিতেই থাকব আমি।

ছোট্ট টেপ রেকের্ডরটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল রুমি। কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে রুমির দিকে তাকিয়ে রইল। বুঝে গেল টাকা না পেলে তিনদিন পরে কী করে কেয়াকে ওরা তা জানতে দেবে না।

কিন্তু কেয়ার জন্যে দশ লাখ টাকা কী তার স্বামী ব্যয় করবে!

পরের অংশ টুকু পরতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট এ নজর রাখতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *