একটি অপহরণ এর গল্প। ১২ পার্ট

একটি অপহরণ এর গল্প।

বোনের কথা শুনে স্তদ্ধ হয়ে গেলেন নাসের সাহেব। ফ্যাল ফ্যাল করে হায়াত। সাহেবের মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, বল কি 1 এত দেখি সিনেমার মত ব্যাপার। দশ লাখ টাকা চাইছে? দশ লাখ কি চাট্টিখানি টাকা!

কী করব। আপনার বোনকে বাঁচাতে হলে টাকাটা ওদেরকে দিতে হবে। পুলিশ কিংবা আইনের সাহায্য নেওয়া যাবে না?

না।

মগের মুল্লুক নাকি? একটা মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আটকে রাখবে, দশ বিশ লাখ টাকা চাইবে আর সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিতে হবে। নো । এটা হতে পারে না।

কিন্তু কী করব?

ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে ডিসিসান নিতে হবে।

কী ডিসিসান?

গোপনে পুলিশকে জানাও ।

তাতে লাভ কী?

পুলিশ ব্যবস্থা করবে।

সে কথা কানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার বোনকে ওরা মেরে ফেলবে। কিন্তু জানবে কী করে?

আমাদের চারপাশে নাকি ওদের লোক লাগান আছে। নাসের সাহেব বেশ থতমত খেলেন। বল কী?

হ্যা। ওরা যদি কোনও রকমভাবে জেনে যায় আমরা পুলিশের সাহায্য নিচ্ছি তাহলে …. |

এ তো মহা মুশকিলে পড়া গেলো! কোন দেশে বাস করছি আমরা! এসব

কী হচ্ছে দেশে!

দেশ এখন মাস্তানদের হাতে। পুরো জাতি মাস্তানদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। মাস্তানরা যা করবে আমাদের তা মেনে নিতে হবে। কোনও উপায় নেই।

মুখ বুজে এভাবে, দশ লাখ টাকার একটা ব্যাপার, তুমি যা বলছ তাতে তো অন্য কোনও উপায়ও দেখছি না।

তাছাড়া ব্যাপারটির সঙ্গে আমার প্রেস্টিজ জড়িত। লোক জানাজানির ভয় আছে। কেয়া এখনও যথেষ্ট ইয়াং। ওদের কথা মেনে পুরো ব্যাপারটা মুখ বুজে হজম করে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।

আচ্ছা ব্যাপারটা কে কে জেনেছে বল তো?

আমি আপনি আর রূপা দিপা।

শোনো এর বাইরে আর কেউ যেন……. আমার দিক থেকে আর কেউ জানতে পারবে না। আপনিও কাউকে…….

প্রশ্নই ওঠে না ।

এমন কী ভাবী কিংবা ছেলে মেয়েকেও….।

আরে না না। আমার ছোট বোন, আমারও তো প্রেস্টিজের ব্যাপার।

ভাইজান, কী করব এখন?

ক্যাশ অতগুলো টাকা এই মুহূর্তে হবে তোমার কাছে? একটু অসুবিধা হবে। তবে ম্যানেজ করা যাবে।

একটা কাজ কর। ওদের সঙ্গে বার্গেন করো। দুই থেকে স্টার্ট করবে। প্রথম দিন পাঁচ পর্যন্ত যাবে।

একান্তই ম্যানেজ করতে না পারলে কী আর করা দশ লাখই দিতে হবে। হায়াত সাহেব বড় করে একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কথা বললেন না।

কথা বলতে বলতে কোন ফাঁকে যেন নাসের সাহেবও উদাস হয়ে গেছেন। দু’জন মানুষের চেহারায় এখন ফুটে আছে সমগ্র জাতির অসহায়ত্বের ছাপ।

সিগ্রেট ধরিয়ে মন্টু বলল, লিডার এমন করল কেন?

মন্টুর সিগ্রেটের প্যাকেটের দিকে হাত বাড়াল রানা। সিগ্রেট নিয়ে ধরাল।

তারপর বলল, কেমন?

নিজে একা ওপরে, আমাদের তিনজনকে পাঠিয়ে দিল নিচে। বাপি চিৎ হয়ে শুয়ে আছে তার খাটে। সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে কী ভাবছে সে।

ঘরের ভিতর নীল একটা ডিম লাইট জ্বলছে। এ ঘরটা বাপির। নিচ তলায় একদম সিড়ির সঙ্গে।

খানিক আগে ওরা তিনজন এসে এই রুমে ঢুকেছে। রুমি তাদের নামিয়ে দিয়েছে। বলেছে তোরা তিনজন নিচে গিয়ে ঘুমো। বাপির রুমে। আমি এখানেই থাকব।

বাপি অবাক হয়েছিল। এখানে মানে?

এই মাদুরে।

মাদুরে? বালিশ টালিশ কিছু…

লাগবে না। আমি হয়তো ঘুমোব না। বসেই থাকবো ।

কী দরকার? ভদ্রমহিলার রুম তো লক করাই। বাইরে থেকে ফ্ল্যাটের

দরজাও লক করে যাব।

না তোরা যা। সকালে চা ফা নিয়ে চলে আসিস। শেষ কথাটা রুমি বলেছিল এমন স্বরে, ওরা আর কোনও কথা বলার সাহস

পায়নি।

নিচে এসে বাপির রুমে ঢুকেছে।

রানা বলল, লিডারের মতলব বোঝা মুশকিল।

মন্টু বলল, ফোন করতে যাওয়ার আগে, বুঝলি, ভদ্রমহিলার রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই লিডার কেমন গম্ভীর হয়ে আছে।

মন্টু সন্দেহের গলায় বলল, আমাদের যা প্ল্যান ফোনে ঠিকঠাক মতো তা

বলেছে তো?

তা বলেছে।

কাজ হবে? লিডার তো বলল হবেই।

ফোনে কথা টথা বলার পরেও বলল।

হ্যাঁ।

তাহলে হবে।

রানা বলল, লিডার যদি ঠিক থাকে তাহলে হবেই।

বাপি বলল, ঠিক থাকলে মানে? ওর প্ল্যানেই তো এতদূর। নয়তো এতো বড় দান মারার সাহস কিংবা বুদ্ধি কোনওটাই তো আমাদের হতো না।

তা ঠিক। কিন্তু এখন মহিলার মুখ দেখে….. ঝট করে বিছানায় উঠে বসল বাপি। মানে?

রানা কাচুমাচু গলায় বলল, কথাটা বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না।

কী কথা?

রানা মন্টুর দিকে তাকাল ।

মন্টু বলল, যা বলতে চাস বলে ফেল।

লিডারের কানে গেলে আমার লাশ ফেলে দেবে।

বাপি বলল, দেবে না। বল ।

মহিলার মুখ দেখে লিডার আবার গলে টলে যায়নি তো?

মন্টু বলল, এই বয়সেও মহিলা যা সুন্দর, হতে পারে। তারপর লিডার আমাদের সবাইকে নিচে পাঠিয়ে দিয়ে একা ওপরে রয়ে গেল।

মহিলার রুমের একমাত্র চাবিটিও তার কাছে। সকাল থেকে মহিলার যা কিছু কথা লিডার একাই বলেছে।

বাপি বলল, আমার কিন্তু এসব মনে হয় না।

রানা বলল, কী মনে হয় তোর? লিডারের কিন্তু মেয়েমানুষের দোষ নেই। আমি যতদূর জানি মেয়ে মানুষসে খুব ঘৃণা করে।

ওটা লোক দেখানোও হতে পারে।

হ্যাঁ তা পারে। এখন তো আমারও সন্দেহ হচ্ছে।

মন্টু বলল, তবে মহিলার মুখ দেখে দশ লাখ টাকার দান ছেড়ে দেয়ার মতো লোক লিডার নয়।

আমার অবশ্য তাও মনে হচ্ছে।

রানা বলল, লিডার মনে হয় ফূর্তিফার্তা করবে। দশ লাখ টাকাও লুটবে

আবার মহিলাকেও….. বাপি বলল, তাতে তো আমাদের কোনও লস নেই। আমাদের ভাগের

টাকা পেলেই হল।

কিন্তু সবকিছুর ভাগই তো আমাদের পাওয়া উচিত দোস্ত। ইকোয়াল

শেয়ার।

মন্টু বলল, লিডারকে বল।

বাপরে। আমি পারব না। টাকা পয়সা নিয়ে বলতে পারব কিন্তু এই নিয়ে

পারব না।

বাপি বলল, আমিও না।

তারপর একটু হেসে বলল, আমাদের উচিত কী জানিস? রানা এবং মন্টু দু’জন একসঙ্গে বলল, কী?

মহিলার ব্যাপারে লিডারের সঙ্গে কোনও কথাই বলব না। সে মহিলাকে

নিয়ে যা ইচ্ছে করুক গিয়ে। আমরা তার কথামতো শুধু কাজ করে যাব।

আমাদের টাকা পেলেই হল।

মন্টু বলল, ঠিকই বলেছিস।

রানা বলল, কিন্তু অত সুন্দর একটা জিনিস।

বাপি গম্ভীর গলায় বলল, রানা তুই ব্যাসিকেলি একটা খচ্চর। এই বিষয়ে

আর একটিও কথা বলবি না। ঘুমো।

বাপি কাত হয়ে তার বিছানায় শুয়ে পড়ল ।

পরের অংশ টুকু পেতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট এ নজর রাখুন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *