একটি অপহরণ এর গল্প। ১৩ পার্ট

একটি অপহরণ এর গল্প।

রূপাকে আলতো করে ধাক্কা দিল দিপা। ঘুমিয়েছো আপু? না ।

তারপর দিপার দিকে পাশ ফিরলো রূপা। কেন? আমার ঘুম আসছে না।

আমারও।

আমার খুব মার কথা মনে পড়ছে।

সে তো আমারও পড়ছে।

মাকে কোথায় যে আটকে রেখেছে ওরা!

দিপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মার কথা মনে হলেই বুকের ভিতরটা কেমন

শুকিয়ে আসছে আমার। খুব ভয় করছে।

ভয়ের কিছু নেই। মামার সঙ্গে আলাপ করে ডিসিসান নিয়েছেন বাবা।

তিনদিনের মধ্যে টাকা জোগাড় করে মাকে ছাড়িয়ে আনবেন।

কিন্তু তিনদিন তো ওদের কাছে থাকতে হবে। তাতো হবেই।

ওই ভেবেই তো ভয় পাচ্ছি আমি। মাস্তানরা কিডন্যাপ করেছে মাকে। ওরা নিশ্চয় ভাল লোক নয়। ভাল লোকরা কখনও মাস্তান হয় না। চরিত্রহীন নোংরা এক ধরনের লোক মাস্তান হয়। মাস্তানরা পারে না এমন কাজ পৃথিবীতে নেই ।

তাছাড়া মা দেখতে অত সুন্দর ।

রূপা গম্ভীর গলায় বলল, চুপ কর।

কেন চুপ করব। বোন বোনের সঙ্গে এসব নিয়ে আলাপ করতে পারে না? মাকে নিয়ে ওরকম আলাপ করতে আমার ভাল লাগছে না। আমারও লাগছে না।

তাহলে করছিস কেন?

আর করব না। শেষ কথাটা এমন কাতর গলায় বলল দিপা, রূপার খুব মায়া হল। দিপার

পিঠে হাত দিয়ে বলল, ঘুমো।

ঘুম আসছে না।

তারপর একটু থেমে দিপা বলল, আপু অন্য একটা কথা জিজ্ঞেস করি। তোমার তো ফাহিম ভাইয়ার সঙ্গে এফেয়ার। তুমি ফাহিম ভাইয়াকে বিয়ে করবে। পুরুষ মানুষরা খুব সন্দেহপ্রবণ হয়, না?

হয়।

অন্য কোনও ছেলের সঙ্গে বেশি কথা বললে কিংবা ঘুরে বেড়ালে ফাহিম ভাইয়া তোমাকে সন্দেহ করে না?

আমি কারও সঙ্গে বেশি কথা বললে কিংবা ঘুরে বেড়ালে তো করবে!

না, আমি বলছি যদি তেমন করো। তাহলে তো সন্দেহ করবেই। কিন্তু এসব কথা তুই জিজ্ঞেস করছিস কেন? তোর কি কারও সঙ্গে কিছু …..

আরে না! আমি বলতে চাইছি, আমি বলতে চাইছি….

দিপা থেমে গেল।

রূপা তীক্ষ্ণ চোখে বোনের মুখের দিকে তাকাল।

ঘরের ভেতর সবুজ ডিমলাইট জ্বলছে। কাক জ্যোৎস্নার মতো পাতলা রূপা। কিন্তু চোখ দেখতে পেল না।

একটা আলো ফুটে আছে চারদিকে। সেই আলোয় দিপার মুখ দেখতে পেল

রূপা বলল, কি বলতে চাইছিস?

দিপা বলল, মা ফিরে আসার পর বাবা তাকে সন্দেহ করবে নাতো!

দিপার কথা শুনে স্তদ্ধ হয়ে গেল রুপা। তারপর বলল, কী জানি! করতে পারে।

তিনটে পুরোদিন পুরোরাত কোথাকার কোন অচেনা বাড়িতে কয়েকজন মাস্তানের সঙ্গে থাকতে হবে মাকে, খুব স্বাভাবিক ভাবেই তো ব্যাপারটা সন্দেহজনক।

শুনতেই গা কেমন কাঁটা দিয়ে ওঠে। তার ওপর মা কোনও হেজিপেজি মহিলা নয় ।

দেখতে অপূর্ব সুন্দর। ফিগারের তুলনা হয় না। এখনও অবিবাহিতা বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। মার সঙ্গে আমি কোথাও বেরুলে

ছেলেরা তো আমার দিকে তাকায় না, মার দিকে তাকায়। এমন একজন মহিলাকে মাস্তানরা তুলে নিয়ে গেছে।

তিনদিন তিনরাত কেন তিনঘণ্টাও যদি মাকে ওরা কোথাও আটকে রাখে তবু তো বাবা তাঁকে সন্দেহ করবে।

বাবা কেন পৃথিবীর যে কোনও পুরুষই করবে। এটাই স্বাভাবিক। সন্দেহ না করলে বরং অবাক হওয়ার কারণ আছে।

রূপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর খুবই মন খারাপ করা পলায় বলল, ওরকম হলে তো সারাক্ষণই অশান্তি লেগে থাকবে সংসারে।

মার অত সুন্দর মুখে হাসি থাকবে না। বাবা যতক্ষণ বাড়ি থাকবে, গম্ভীর হয়ে থাকবে।

আমাদের এমন সুখের সংসার থেকে, আনন্দের সংসার থেকে সুখ আনন্দ সব হাওয়া হয়ে যাবে। সবগুলো মানুষ আমরা একসঙ্গেই হয়তো থাকব কিন্তু আমাদের মাঝখানে থাকবে না কোনও ভালবাসা। মাকে হয়তো আমরাও সন্দেহ করব।

তুই আমি। মাকে ওরা কিডন্যাপ করেছে ঠিকই, সঙ্গে কিডন্যাপ করেছে আমাদের সারা জীবনের বিশ্বাস। ভালবাসা, আনন্দ।

দশ লাখ টাকার বিনিময়ে মাকে ওরা ফিরিয়ে দেবে কিন্তু কোটি টাকার বিনিময়েও সেই বিশ্বাস আমরা আর ফিরে পাব না।

সেই ভালবাসা আর আনন্দ ফিরে পাব না। নিতান্তই সামাজিকতার কারণে মাকে পরিত্যাগ করতে পারবে না বাবা। ছেড়ে দিতে পারবে না।

মাকে সারাজীবন থাকতে হবে আমাদের সঙ্গে। কিন্তু মা আর সেই আগের মা থাকবে না। সেই স্বাভাবিক সুন্দর মানুষটি আর থাকবে না। সে হয়ে যাবে মৃত এক মানুষ।

তার জীবনের যাবতীয় সুখ আনন্দ, সুখের অত সুন্দর হাসি সবই রেখে দেবে অপহরণকারী সেই মাস্তানরা। ফিরিয়ে দেবে শুধু মার জ্যান্ত একখানা লাশ। অথচ, মার কোনও অপরাধ ছিল না।

মার্কেট থেকে ঘুরে এসে দুই মেয়ের সঙ্গে আড্ডা দিতে চেয়েছিল মা। মার জীবনটা কেন এমন হল! কেন !

মাতো কখনও কোনও অন্যায় করেনি। কোন সে পাপের শাস্তি এভাবে সারা জীবন ভোগ করতে হবে মাকে! কথা বলতে বলতে গলা কেমন ধরে এল রূপার। দিপারও এতক্ষণে চোখ ভরে গেছে জলে ।

দুটি অসহায় যুবতী তারপর মুখোমুখি শুয়ে কাঁদতে লাগল ।

পরের অংশ  পেতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট এ নজর রাখতে পারেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *