এখান থেকে অপহরণ এর ৪থ পার্ট সুরু হলো।
দিপা বলল, আর কতক্ষণ ওয়েট করবে আপু?
রূপা একটু আনমনা ছিল। দিপার কথা শুনে শুনে চোখ তুলে তার দিকে
তাকাল ।
আর একটু দেখি।
একটা বাজে?
কথাটা বলে দেয়ালের দিকে তাকাল দিপা। রূপাও তাকাল।
দেয়ালে বনেদি ধরনের কালো একটি দেয়াল ঘড়ি। পেতলের ঝকঝকে পেন্ডুলামটা একবার এদিক যাচ্ছে আরেকবার ওদিক। সাদা জমিনের ওপর কালো রোমান হরফগুলো বেশ ফুটে আছে।
দু’বোন একসঙ্গে দেখতে পেল সোয়া দুটো বাজে।
ওরা ডাইনিংরুমে এসে ঢুকেছে বিশ মিনিটের মতো হয়ে গেল। ডাইনিং টেবিলে বসে মার জন্যে অপেক্ষা করছে।
এর মধ্যে বুয়া এবং খানসামা রমজান এসে দু-তিনবার ঘুরে গেছে। টেবিলে খাবার লাগাবে কিনা জানতে চেয়েছে।
দিপা কোনও কথা বলেনি। রূপা বলেছে, পরে লাগাও। মা আসুক । বুয়া কোনও কথা বলেনি। রমজান বলেছিল, বেগম সাব কখন ফিরবেন
তার ঠিক আছে। আপনেরা খেয়ে নেন।
এখন সেই কথাটা দিপাও বলল। সোয়া দুটো বাজে । মা কখন ফিরবে তার
কী ঠিক আছে!
রূপা আবার চোখ তুলে দিপার দিকে তাকাল, হাসল। আছে। তোর জন্য কলেজে গাড়ি পাঠাল।
বলল দেড়টার মধ্যে চলে আসবে। এসে তিনজন একসঙ্গে খাবে। তারপর আড্ডা দেবে।
হঠা?
এমনিতেই। আমি ইউনিভার্সিটিতে যাব না জানত না তো। জানলে বেরু
আমিও জানতাম না জানলে কলেজে যেতাম না।
না।
কী করতি?
খাড়ি থাকতাম। তোমার সঙ্গে গল্প করে সময় কাটাতাম।
তারপর একটু থেমে দিপা বলল, মাকে তুমি তাহলে বেরুতে দিলে কেন? মা যখন বেরুবার জন্যে রেডি হয়ে গেছে তখন আমি তার রুমে এসে ঢুকেছি। ওই অবস্থায় কী করে বলি তুমি এখন বেরিও না।
কেন? বললে কি হত?
কিছুই হত না । বলতে ইচ্ছে করল না। মাকে এত সুন্দর লাগছিল। আমিও চাইছিলাম মা একটু বাইরে ঘুরে আসুক।
কী পরেছে?
তেমন কিছু না। সাদা সুতি শাড়ি। সাদা শাড়িতে মাকে খুব মানায়।
চেহারা ফিগার সুন্দর হলে সব কিছুতেই মানায় ।
মার কিছুই আমরা পাইনি, না? তুই খানিকটা পেয়েছিস। আমি একেবারেই কিছু পাইনি।
তবু তুমি খুব সুইট আপু।
রূপা হাসল ।
দিপা বলল, আমার বন্ধুরা মার যে কী প্রশংসা করে বলে তোর মা এত
সুন্দর আর তোরা দুটি বোন……. কথাটা শেষ করল না দিপা।
রূপা বলল, কী?
মানে আমরা মার মতো হইনি আর কি!
যেটুকু হয়েছি সেটুকু ম্যানটেইন করতে পারলেই হয়।
মানে?
মার বয়স জানিস?
বেয়াল্লিশ।
হ্যাঁ। বেয়াল্লিশ বছর বয়সে বাঙালি মহিলাদের পক্ষে এরকম থাকা খুব
কঠিন। মার মেয়ে হয়ে আমরা তা পারব না। এই বয়সেই আমাদের ফিগারের ঠিক নেই।
আমি মোটা হয়ে গেছি। তুই আবার বেশি রোগা। এভাবে না খেয়ে বসে থাকলে আমি আরও রোগা হয়ে যাব।
আশ্চর্য ব্যাপার। মা নিজে বলে গেল! কোথায় যে এত দেরি করছে।
কোথায় গেছে তোমাকে বলে গেছে?
বলল মার্কেটে যাবে। কোন মার্কেটে?
এই তো আমাদের গুলশান মার্কেটে।
দেখো গিয়ে ঘুরে ঘুরে টুকটাক জিনিসপত্র কিনছে। আমাদের কথা মনেই নেই, ভুলে গেছে।
আরে না।
নয়তো নিশ্চয় তার কোনও বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হয়েছে। আড্ডা ফাড্ডা
দিতে চলে গেছে।
আড্ডা দিতে কোথায় যাবে?
বান্ধবীদের বাড়ি।
কোন বান্ধবী?
মার কি বান্ধবীর অভাব আছে। ধানমণ্ডির কোন এক হেলথ সেন্টারে যায় না, ওই যেখানে মোটা হোৎকা মহিলারা ফিগার ঠিক করতে আসে।
সেখানে তো মার প্রচুর বান্ধবী। সেগুলোর কোনওটার সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে নিশ্চয়।
আমার মনে হয় না।
তাহলে কী মনে হয় তোমার? কোথায় গেছে মা?
মার্কেটেই আছে।
একসঙ্গে খাবে বলে মার্কেটে গিয়ে ঘুরছে। আমি কলেজ থেকে ফিরেছি। আমার খুবি খিদে পেয়েছে।
রূপা চিন্তিত গলায় বলল, আমার খুব অবাক লাগছে। যেমন আগ্রহ করে তোর জন্যে গাড়ি পাঠাল তারপর তো এত দেরি করার কথা না মার! দিপা হঠাৎ করে হাসল।
মাকে কেউ কিডন্যাপ করেনি তো? রূপাও হাসল। ধুৎ কী যে বলিস। আজকাল নাকি এমন হচ্ছে! বড় লোকদের ছেলেমেয়ে কিংবা বউ কিংবা
কাছের কোনও লোককে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়। প্রচুর টাকা দাবি করে। সেই টাকা দেয়ার পর ছাড়ে। টাকা না দিলে মেরে ফেলে।
রূপা বিরক্ত গলায় বলল, মাস্তানে দেশ একেবারে ভরে গেছে। যা ইচ্ছে তাই করছে মাস্তানরা। ওপেন রাস্তায় ছিনতাই করছে। মেয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
গুলি করে মানুষ মেরে ফেলছে। তার ওপর মা অত সুন্দর মহিলা।
মা সুন্দর হয়েছে তো কী? মাকে কিডন্যাপ করলে তো টাকা পয়সা ছাড়া অন্য ভয়ও আছে। রূপা ধমকে উঠল।
কী বাজে কথা বলছিস! দিপা হাসল । এসব একসাইটিং কথা ভেবে খিদে ভুলতে চাচ্ছি।
তারপর একটু থেমে বলল, তবে মা যে রকম গয়নাগাটি পরে রাস্তায় বেরোয়, আপু দেখবে একদিন ঠিক ছিনতাই হবে।
মা যে সময় বাড়ি থেকে বেরোয় ওসময় এমনিতেই চারদিক নির্জন হয়ে থাকে।
আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটায়ই তো কোনও লোক থাকে না। যে কেউ ছিনতাই করতে পারে।
ওসব ছিনতাই ফিনতাইয়ের কথা ভেবে লাভ নেই। চল খেয়ে ফেলি। পৌনে তিনটা বাজে।
আমার খুব খিদে পেয়েছে। মা নিশ্চয়ই আমাদের কথা ভুলে গেছে।
রমজানকে ডেকে রূপা বলল, খাবার লাগাও।
বাকি অংশ পরতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট এ নজর রাখুন। ধন্যবাদ।