একটি অপহরণ এর গল্প। ৭পার্ট

অপহরণ এর ৭ম পার্ট এখান থেকে সুরু হলো।

দরজা খোলার শব্দে মাথা তুলল কেয়া। আবার সেই চার যুবককে দেখতে পেল। একজনের হাতে ঝকঝকে স্টিলের টিফিন ক্যারিয়ার,

আরেকজনের হাতে একটা প্লেট। তৃতীয়জনের হাতে পানির বোতল আর গ্লাস। বোতলটা দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজে ছিল বলে বেশ কুয়াশাচ্ছন্ন।

কেয়ার একপাশে জিনিসগুলো নামিয়ে রেখে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল তিন যুবক। ঘটনা ঘটার পর থেকে যে যুবকটি প্রধান ভূমিকা পালন করছে সে রয়ে গেল।

image

হাতে আর রিভলবার নেই তার। মুখটা কী রকম থমথমে হয়ে আছে। চোখ দুটো লালচে ।

প্যান্টের একদিককার পকেট ভারি এবং ঝুলে আছে। কেয়া বুঝে গেল রিভলবারটা এখন তার পকেটে।

ফ্যাল ফ্যাল করে যুবকের মুখের দিকে তাকাল কেয়া। ঠিক তখুনি বাইরে থেকে টেনে দরজা বন্ধ করে দিল কেউ সে শব্দে বুকটা ধক করে উঠল কেয়ার।

দরজা যদি বাইরে থেকে লক করে দেয় এবং যুবকটি যদি সারাক্ষণ তার সঙ্গে এই রুমে থাকে! যুবকের পকেটে রিভলবার। মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে পাতলা নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

কেয়া আর ভাবতে পারল না। হঠাৎ করে শরীরের ভেতর কেমন যেন করে উঠল তার, মুহূর্তে ঘেমে গেল কেয়া। মনে হল সে আর বেঁচে নেই।

এই রকম ফাঁকা শূন্য একটা ঘরে, একপাশে ফেলে রাখা ফোমের বিছানার ওপর হাত পা ভেঙে বসে থাকা মানুষটি সে নয়, তার লাশ। রাজপড়া লাশ।

যে কেউ হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই একপাশে ঢলে পড়বে।

যুবক শীতল গম্ভীর গলায় বলল, টিফিন ক্যারিয়ারে আপনার খাবার আছে, খেয়ে নেবেন।

আমরা খানিকক্ষণ আগে খেয়েছি, খাবারটা খুব একটা খারাপ নয়। বাড়ির কেয়ারটেকারের রান্না। লোকটি হিন্দু।

তবে রান্না ভাল করে কিন্তু আপনার পছন্দ হবে কিনা জানি না। পছন্দ না হলেও খেতে হবে। এছাড়া অন্য কোনও ব্যবস্থা আপনার জন্যে করা যাবে না।

যুবকের কথা শুনতে শুনতে নিজের ভেতর কী রকম একটু সাহস ফিরে এ কেয়ার। ছোট্ট করে একটা গলা খাঁকারি দিল সে। তারপর ধীর শান্ত বলল, আপনার নামটা কী বলা যাবে?

যুবক একটু থতমত খেল। তারপর বুক পকেট থেকে সিগ্রেটের প্যাকেট আর লাইটার বের করল।

কিন্তু সে সিগ্রেট ধরাবার আগেই কেয়া টের পেল খানিক আগে যুবক যখন কথা বলছিল তখন তার মুখ থেকে ঝাঁঝালো একটা গন্ধ বেরিয়ে ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে গিয়েছিল।

গন্ধটা বুঝতে পারেনি কেয়া। এখন বুঝতে পারল। বেশ খানিকটা নীট হুইস্কি খেলে মুখ থেকে এমন গন্ধ বেরোয়। যুবক ক’ পেগ হুইস্কি খেয়েছে? কতটা নেশা হয়েছে তার?

ভেতরে ভেতরে আবার সেই ভয়টা হল কেয়ার। রুম যদি বাইরে থেকে লক করা থাকে, যুবক যদি সারাক্ষণ থাকে এই রুমে,

নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে সে কেয়ার ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই যুবক বলল, আপনি ভাবলেন কী করে আমি আমার নাম আপনাকে বলব!

kidnape-1

কেয়া ঢোক গিলল। আমি ভাবিনি আপনি আপনার নামটা আমাকে বলবেন। বলা যাবে কিনা জানতে চেয়েছি।

যুবক সিগ্রেটে টান দিল। বলা যাবে না।

তারপর একটু থেমে বলল, আমাদের যা প্ল্যান তাতে খুব সম্ভব কয়েকদিনের মধ্যেই আপনাকে আমরা ছেড়ে দেব।

আপনার হাজব্যান্ড বোধহয় আমাদের কথা শুনবেন। যদি ব্যাপারটা এমন হত যে আপনাকে আমরা কখনও ছাড়ব না,

ঘটনাটা অন্যরকম, আপনাকে আমাদের মেরে ফেলতে হবে, তাহলে আমাদের প্রত্যেকের নাম আপনাকে আমি বলে দিতাম। কোনও ভয় থাকত না।

যুবক আবার সিগ্রেটে টান দিল।

কেয়া ততক্ষণে কী রকম একটু সাহসী হয়ে উঠেছে। আর যাই হোক যুবকটি অভদ্র নয় এবং সে কথা বলে বেশ সুন্দর করে। গুছিয়ে। সুন্দর কথা বলা মানুষ কেয়া খুব পছন্দ করে।

কেয়া বলল, আপনাদের উদ্দেশ্যটা আমাকে তাহলে বলুন।

এত তাড়াহুড়োর কিছু নেই। পরে বলব। আপনি খেয়ে নিন। আমার খিদে নেই।

কেন?

খিদে নেই, কেন নেই আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।

বুঝতে পারছি না।

আমাকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটে গেছে, যে অবস্থায় আমি এখন আছি এ অবস্থায় খিদে থাকতে পারে না মানুষের। আমার অবস্থায় আপনি থাকলে আপনার কী খিদে পেত?

কিন্তু আমরা তো আপনাকে খারাপ অবস্থার মধ্যে রাখিনি।

এরচে খারাপ অবস্থা আর কী হতে পারে মানুষের! একজন মহিলাকে রিভলবার ঠেকিয়ে রাস্তা থেকে তুলে এনে এরকম নির্জন একটি বাড়ির চারতলার একটি রুমে আটকে রেখেছেন, এরচে খারাপ অবস্থা মহিলাটির আর কী হতে পারে।

যুবক তীক্ষ্ণ চোখে কেয়ার দিকে তাকাল।

kidnape-1

কেয়া টের পেল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে সে। ঘটনা শুরুর পর থেকে যে ধরনের আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল সেই অবস্থাটি আস্তে আস্তে কাটছে। তাছাড়া জীবনে এই প্রথম আর একটি ব্যাপার টের পেল কেয়া,

মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃত্যুদূতের সঙ্গেও যদি বেশ খানিকক্ষণ কথা বলা যায় তাহলে মৃত্যু ভয় কমে আসে মানুষের। মানুষ স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। কেয়ার এখন সেই অবস্থা।

যুবক বলল, ব্যাপারটিকে আপনি স্পোর্টিংলি নিন।

কেয়া অবাক হল। মানে?

এত সিরিয়াসলি নিচ্ছেন কেন?

কেয়া সামান্য রেগে উঠতে চাইল । তারপর সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলান। আচরণ যত ভাল হোক, কথা যত ভাল করেই বলুক, যুবকটি তো আসলে মাস্তান। খুনী।

এই ধরনের মানুষ কোন কথায় ক্ষেপে যাবে, কোন মুহূর্তে কী করবে বোঝা মুশকিল। সুতরাং সাবধানে কথা বলা ভাল ।

কেয়া হাসি হাসি মুখ করে বলল, আমার জায়গায় আপনি হলে কী পারতেন। কেয়ার হাসি হাসি মুখ দেখে কী রকম একটু থতমত খেল যুবক ।

অদ্ভুত অচেনা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কেয়ার মুখের দিকে। চোখে কী র ঘোর লেগে গেল তার। পুরুষ মানুষদের নানা রকম দৃষ্টি দেখার অভ্যেস সুন্দরী মহিলাদের থাকে।

কেয়ারও আছে। হাজব্যান্ড বিশাল বড়লোক হাজব্যান্ডের সঙ্গে বড়লোকদের নানা রকমের সামাজিকতায় গিয়ে অভ্যন্ত কেয়া।

পুরুষ মানুষদের বহুরকমের দৃষ্টি বেয়াল্লিশ বছর বয়সের জীবনে দেখেছে সে। কিন্তু এ রকম দৃষ্টি কখনও দেখেনি।

বুকের ভেতরে কি রকম একটা স্পর্শ লাগল কেয়ার। কেয়াও তাকিয়ে ছিল যুবকের দিকে । খানিক তাকিয়ে রইল। চোখ ফেরাতে পারল না।

তারপর নিজেকে সামলে আবার আগের মতো হাসার চেষ্টা করল। কী হল? সঙ্গে সঙ্গে নড়েচড়ে উঠল যুবক। মুহূর্তে চোখ ফিরিয়ে নিল কেয়ার মুখ থেকে।

পর পর দু’বার সিগ্রেটে টান দিল। গলার স্বর হঠাৎ করে কেমন রুক্ষ হয়ে গেল তার। প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করাটা আমি পছন্দ করি না। আপনার ইচ্ছে হলে খাবেন, ইচ্ছে না হলে খাবেন না।

তবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে টাইমলি আপনার খাবার পৌঁছে দেয়া। আমরা দায়িত্ব পালন করব। টাইমলি আপনার খাবার পৌঁছে দেব। খেলে খাবেন না খেলে না খাবেন।

হাতের সিগ্রেট শেষ হয়ে আসছিল। শেষ টান দিয়ে সিগ্রেটটা ঘরের এককোণে ছুঁড়ে ফেলে দিল যুবক।

দৃশ্যটি ভাল লাগল না কেয়ার। খানিক সিগ্রেটের টুকরোর দিকে তাকিয়ে রইল সে। তখনও নীলচে সরু একটা ধোঁয়ার রেখা উঠছে সিগ্রেট থেকে। ঘরের ভেতর এভাবে কেউ সিগ্রেট ছুঁড়ে ফেলতে পারে কেয়ার জানা ছিল না।

সিগ্রেট ফেলবে এসট্রেতে। যেখানে সেখানে কেন? কেয়ার ইচ্ছে হল উঠে গিয়ে সিগ্রেটের টুকরোটা তোলে। তুলে বাথরুমের ভেতর ফেলে দেয়।

কিন্তু কাজটা সে করল না। বাড়াবাড়ি হয়ে যেতে পারে। যুবক বলল, আপনার কাছে কত টাকা আছে? প্রশ্নটা এমন আচমকা, কেয়া খুবই থতমত খেল।

জ্বী? আড়াই হাজার টাকা হতে পারে। হতে পারে মানে? একজাক্ট ফিগারটা জানেন না?

না।

তাতো বটেই। তাছাড়া আপনারা গয়না না পরলে ছিনতাইকারীদের চলবে

কি করে।

আবার মুখটা হাসি হাসি হল কেয়ার। সঙ্গে সঙ্গে ধমকে উঠল যুবক। আপনি হাসবেন না। আপনি কখনও হাসবেন না। আমার সামনে আপনি কক্ষনও হাসবেন না।

হঠাৎ করে এরকম ধমক, কী যে থতমত খেল কেয়া। মুখটা চুন হয়ে গেল তার। যুবক গম্ভীর গলায় বলল, গয়নাগুলো খুলুন।

পকেট থেকে হালকা নীল রঙের ভাঁজ করা পাতলা ধরনের একটা রুমাল বের করল যুবক। রুমালটি কেয়ার কোলের কাছে ছুঁড়ে ফেলল।

প্রথমে গয়নাগুলো খুলুন তারপর ব্যাগ থেকে টাকাগুলো বের করুন। টাকা এবং গয়না সুন্দর করে এই রুমালে বেঁধে আমাকে দিন ।

কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে যুবকের দিকে তাকাল। যুবক এক পলক তাকিয়ে ফিরিয়ে নিল। তাড়াতাড়ি করুন!

ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল কেয়া। তারপর রুমালের ভাঁজ খুলল।

সঙ্গে সঙ্গে রুমাল থেকে অদ্ভুত মিষ্টি ধরনের একটা ফেব্রিক ডিওডোরাইজারের গন্ধ ভেসে এল। সেই গন্ধে কেয়া একটু আনমনা হল ।

এখানে এই পার্ট সেশ হলো পরের পার্ট পরতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট এ নজর রাখুন। ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *