এক ‘বিনিময়’ দিয়ে সহজ হবে অনেক কিছু
মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএসে একটা থেকে অন্যটায় টাকা স্থানান্তর করা যায় না বলে জানান । অথচ বিষয়টা খুবই জরুরি একটা বিষয় । এই জরুরি বিষয়টা এখন বড় এক সমস্যার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে । সেই সমস্যার সমাধান হয়ে সহজ হতে যাচ্ছে বিষয়টি আরো । এখন চাইলেই বিকাশ থেকে রকেটে বা রকেটে থেকে বিকাশে টাকা পাঠানো যাবে এখন শিগগিরই অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে রয়েছে নগদে ও এই সেবা যুক্ত হবে বলে জানা গেছে ।
শুধু তাই নয় , বিকাশ বা বিভিন্ন এমএফএস সেবা থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে ও টাকা পাঠানো সম্ভব হবে । যে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কাজটি করা সম্ভব – সেটা হলো বিনিময় । এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এক এমএফএস থেকে অন্যটায় বা ব্যাংকে লেনদেন করা সম্ভব হবে বিনিময় থেকে ।আগামী রবিবার (১৩ নভেম্বর) এই প্ল্যাটফর্মটির উদ্বোধন করা হবে ইনশাল্লাহ । প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু – তে বিনিময়ের উদ্বোধন করবে বলে জানা গেছে ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বেষ্ট অফ টু ডেকে জানান , ‘প্রযুক্তি গত উন্নয়নের সুফল বাংলা দেশের জনগণ পেতে শুরু করেছেন ইতিমধ্য । ইতোমধ্যে আমরা মোবাইল ফাইন্যান্সিংসহ আর ও অনেক ডিজিটাল সেবা দেশের মানুষকে উপহার দিতে পারছি আমরা , যা সম্ভব হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা বেগম শেখ হাসিনা , আধুনিক বাংলা দেশের স্থপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হচ্ছে । কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই ডিজিটাল বাংলা দেশের আর্কিটেক্ট , প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের প্রতি।
যিনি তথ্য – প্রযুক্তিগত উন্নয়নের লক্ষ্যে সুপরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে বাংলা দেশকে একটি জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় দিক – নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে । যিনি একই সঙ্গে প্রাইভেট এবং গভর্নমেন্ট সেক্টরকে একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্যে ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আমাদের ।
ডিজিটাল এবং স্মার্ট অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সব ক্ষেত্রে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল পেমেন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আন্তঃবিনিময় যোগ্যতা,কম খরচ,নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিনিময় (ইন্টার অপারেবল ডিজিটাল ট্র্যানজেকশন প্ল্যাটফর্ম আইডিটিপি) সিস্টেমের বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকার।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১৩ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে বিনিময়, যেখানে ধাপে ধাপে যুক্ত হবে সরকারি পরিষেবা বিল , মেট্রোরেলের টিকিট কাটার সুবিধাসহ আরো নানা সেবা।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বিনিময় সেবা । এই বিষয়ে পলক বলেন , ‘বিভিন্ন পেমেন্ট সার্ভিস অংশ গ্রহণকারীদের যেমন: গ্রাহক,মার্চেন্ট,অর্থ প্রদান ও গ্রহণকারী, ই – ওয়ালেট,ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান , পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর এবং সরকারি – বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের চমৎকার একটি সেতুবন্ধন তৈরি করবে বিনিময় সেবা , যার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি সামগ্রিক ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা হবে বিনিময় ।’ এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন , ‘এতে দেশের একটি সুশৃঙ্খল লেনদেন ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি ও জন সাধারণের ব্যয় সাশ্রয়সহ প্রান্তিক জন গোষ্ঠীর ব্যাপক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতি আর ও সমৃদ্ধ হবে আমাদের ।
বিনিময় কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্যাশলেস সোসাইটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ।
ফলে অর্থ জালিয়াতি , মানি লন্ডারিং , সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নসহ অন্যান্য সব অর্থনৈতিক অপরাধ রোধ সহজতর হবে বলে জানান । এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএস – সহ পুরো তথ্য প্রযুক্তি খাতে বড় মাইলফলক অর্জিত হবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে । সত্যিকার অর্থে আমরা বিনিময়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে না দেখে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছি আমরা , যা আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে সামনের দিকে ।’জানা গেছে , বিনিময় প্ল্যাটফর্ম হলো একটি অ্যাপ মাত্র। অ্যাপটি বাংলা দেশ ব্যাংকের উদ্যোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন অ্যাকাডেমি (আইডিয়া) প্রকল্প এটি তৈরি করেছে বলে জানান । এই অ্যাপস এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। যদি ও এটির জন্য বাজেট ধরা হয়ে ছিল ৫৫ কোটি টাকা।
পরবর্তী সময়ে ব্যবধানে খরচ বেড়ে যায়। অ্যাপটি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য রয়েছে ওরিয়ন ইনফরমেটিকস লিমিটেড , মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড , ফিনটেক সলিউশন লিমিটেড এবং সেইন ভেঞ্চারার্স লিমিটেড। বিনিময়ের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন অ্যাকাডেমি (আইডিয়া) প্রকল্পের পরিচালক আলতাফ হোসেন বেস্ট অফ টু ডেকে বলেন, ‘এটা ইন্টারঅপারেবল একটি সিস্টেম। এরমাধ্যমে ব্যাংক থেকে এমএফএসে, এমএফএস থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠানো যাবে সহজে । এই মাধ্যমে টাকা পাঠানোর বিষয়ে যে জটিলতা ছিল সেটা দূর হবে গ্রাহকের ।’ নগদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘নগদের জন্য আমরা বাংলা দেশ ব্যাংকে রেফার করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক যেদিন অনুমোদন দেবে , সেদিন নগদ এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে বিনিময়ের সাথে ।
একইসঙ্গে পর্যায়ক্রমে দেশে যত এমএফএস সেবা আছে , সবই এই নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে সামনের দিকে । নতুন নতুন ফিচারও আসবে সামনে ।’ তিনি আরো জানান, এই মুহূর্তে বিকাশ , রকেট ও এটুআইয়ের এমএফএস সেবা একপে সেবা বিনিময়ে যুক্ত হবে । জানা গেছে, বিনিময়ে যুক্ত হচ্ছে না সব ব্যাংক সাথে । সোনালী ব্যাংক , ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক।
বিনিময় যেভাবে কাজ করবে
বিনিময় ওয়েব বেজড একটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে সকলের । এই প্ল্যাটফর্মে বিনিময় একটি সেবা হিসেবে ব্যাংক , এমএফএ’র অ্যাপে যুক্ত হবে স্মার্টফোনে । এটি ব্যবহার করতে হলে গ্রাহককে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন হলে গ্রাহকের নামের পর পর যুক্ত হয়ে একটি আইডি তৈরি হবে। এরপরে গ্রাহক দুটি অপশন দেখতে পারবেন সেন্ড মানি ও রিসিভ মানিতে।
কাউকে টাকা পাঠাতে চাইলে সেন্ড মানি অপশনে গিয়ে নিজের যেসব এমএফএস অ্যাকাউন্ট (বিকাশ, রকেট) অ্যাকাউন্ট আছে, তা থেকে একটি বেছে নিতে পারবেন । যাকে টাকা পাঠানো হবে তার মোবাইল নম্বরে বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যদি বিনিময় আইডি থাকে , তাহলে সেই নম্বর দিয়ে টাকা পাঠানো যাবে সবসময় । যাকে পাঠানো হয়েছে তিনি রিসিভ মানি অপশনে গিয়ে নিজের অ্যাকাউন্টে থাকা যেকোন ও এমএফএস আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নম্বরে টাকা গ্রহণ করতে পারবে ।
বাংলা দেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , বিকাশ থেকে রকেটে টাকা পাঠাতে (প্রতি হাজারে) খরচ হবে ৫ টাকা মাত্র । আর এমএফএস সেবা (বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠাতে (প্রতি হাজারে) খরচ হবে ১০ টাকা মাত্র । অপরদিকে এমএফএস থেকে পেমেন্টে সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিএসপি) অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে খরচ হবে হাজারে ৫ টাকা মাত্র । বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) এক প্রজ্ঞাপনে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে ।
এতে আর ও জানানো হয়েছে – ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্র্যানজেকশন প্ল্যাটফর্ম – আইডিটিপি রবিবার থেকে (১৩ নভেম্বর) চালু হবে এবং সোমবার (১৪ নভেম্বর) থেকে লেনদেন করা যাবে। কোন সেবা পেতে কত খরচ হবে, তা প্রজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ।