এক রাতের অশরীলের ছায়া
অসুভ ছায়া
আমরা অনেকেই ভূত এ বিশ্বাসী না। যা আমরা ভূত ভাবি আসলেই কি ভূত?
ঘটনাটা ঘটে খুলনা জে লার এক ছোট গ্রামে। গ্রামটা অকেনটাই রহস্যজনক। গ্রামটার নাম লস্কর। সন্ধা ৭টা বাজলেই গ্রামটা অন্ধকার এ চারদিক ডেকে যায়।
আলি হোসেন এর বাড়িটা পশ্চিম দিকে। আলি হোসেন এর বাবার মৃত্যু হওয়ার ১ বছর এর মাথায় আলি হোসেন রংপুরের মালেকা নামে এক কণ্যাকে বিয়ে করে।
তাদের বিয়ে হয়েছে ১ বছর হয়ে গেছে। মালেকা ৫ মাস এর গর্বভতী। মালেকা ভীতু প্রকৃতির মেয়ে। তাই সন্ধার পর সে একা থাকতো না। মালেকার শাশুরি ঘরে থাকতো যতোক্ষণ আলি বাসায় না আসতো। আলির মাছের আরদ আছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে ১২-১টা বাজতো। আলি রাগি ধরনের মানুষ।
তার রাগ এর কারণে মালেকা কে মারও খেতে হয় অনেক সময়। আলির চাচাতো ভাই সালাম। সালাম আলির থেকে বয়সে ২ বছরের বড়। আলির বাবার সম্পতি সবটাই ছিলো আলির নাম এ।
কিন্তু সালাম এর দাবি সম্পতিতে তারও ভাগ আছে। এই নিয়ে একদিন বিকেলে বাড়িতে তুমুল অশান্তি। রাত এ বাড়ি ফিরলো আলি।
আলি হোসেনঃ এই মালেকা, মালেকা,,,, কই গিয়া মরছোত?
মালেকাঃ আপনি বাসায় আসছে ? বসে ভাত দিতাছি।
আলি হোসেনঃ তারাতারি দে
মালেকা ভয়ে ভয়ে ভাত নিয়ে আলির কাছে গেলো।
মালেকাঃএএই যে আপনার খাবার।
আলি খাবার খেতে লাগলো । মালেকা বললো,,,
মালেকাঃ ভাই জান এর লগে কোনও জামেলায় যাইয়েন না। ভাইজান এর অনেক ক্ষমতা তার লগে পারবেন না।
আলি হোসেনঃ তোর এতো বড় সাহস আমি পারমু না,,, তুই এই কথা বলার সাহস পালি কইত থেকা।
বলেই আলি ‘মালেকা’কে মারতে লাগলো। তখন রাত ১ টা বাজে। আলি ঘরে শুয়ে আছে আর মালেকা উঠানে বসে কাঁদছিলো। এমনে তে অন্ধকার এ মালেকা ভয় পায়। কিন্তু সেদিন মালেকার ভয় এর কোন আবাস ছিলো না।
মালেকা আনমোনা হয়ে কাদতে লাগে।
গ্রাম এর বাড়ি, চারিপাশ ঘন অন্ধকার, উঠান জুরে নানা গাছ ছিলো। হঠাৎ,,,মালেকা দেখতে লাগলো তার সামনে দিয়ে একটা কুকুর যাচ্ছে। কুকুরটা ছিলো কালো, চোখ দুটি ছিলো অদ্ভুত ভয়ংকর।
জিবহাটা মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। খুব বড় ছিলো কুকুরটা। মালেকা কাঁদতে লাগলো। কুকুরটা কে দেখে মালেকা কাঁদতে কাঁদতে বললো,,,
মালেকাঃ কুত্তারে কুত্তা আমারে খাইয়ালা আমি এই জীবন আর চাই না।
মালেকা কথাটা বলতে না বলতে কুকুরটা সামনে তাল গাছটার সাথে মিশে গেলো। মালেকা এ দেখে এক চিক্কার দিয়ে জ্ঞান হারায়। আলি মালেকার চিক্কার শুনে তার মনে পরলো,,, মালেকা তো গর্বভতী।
আলি দোওরে বাহিরে গিয়ে দেখে মালেকা উঠান এর মাঝে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। আলি তারাতারি মালেকা ঘরে নিয়ে যায়। আলিও তার মা মালেকার জ্ঞান ফিরানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কোনও লাভ হয় না।
ভোর হতেই এ দেখা যায় মালেকার জ্ঞান ফিরলো কিন্তু তার পেটে অসম্ভব ব্যাথা ছিলো। কিছুক্ষণ পর এ মালেকার বিল্ডিং হতে থাকে আর অসম্ভব ভাবে তার বাচ্চাটা মারা যায়।
অদ্ভুত বিষয় হলো বাচ্চাটা সাভাবিক ভাবে মারা যায়নি। বাচ্চাটা ছিরে ছিরে পরেছে। কখনো হাত, কখনো পা, কখনো মাথা দেখা গেছে। মালেকার কোনও জ্ঞান ছিলো না।
আলি গ্রাম এর সবচেয়ে বড় আলেম কে বাড়ি নিয়ে আসে। আলেম এর না ছিল সফিকউল্লা আলেম। মালেকাকে ভালো করে দেখে বললো,,,,
আলেম হোসেনঃ আলি কালকে রাতরে মালেকার উপর এমন কিছুর ছায়া পরেছে যে তোমাদের সন্তানকে নষ্ট করে দিয়েছে।
আলি হোসেনঃ হুজুর এখন কি করমু? বউটা তো নিজের মধ্যে নাই
আলেমঃ এই তাবিজটা মালেকার হাত এ বাইন্দা দাও। আর ওরে ডাক্তার দেখাও
তারপর আলি মালেকাকে ডাক্তার দেখায়। ৩ দিন হয়ে গেলো মালেকা কথা বলে না।
নিজের ভিতর কেমন যানি হারায় গেছে সে। মালেকা সেদিন এর দৃশ্যটা দেখে এক রকম শান্ত হয়ে গেছে। আলি কোনও উপায় না পেয়ে আবারও আলেম এর কাছে যায়।
আলি হোসেনঃ হুজুর হুজুর মালেকা তো ঠিক হইলো না।
আলেমঃ আলি তোমার বাড়িতে যাবো আমি। তোমার বাড়িতেই সমাধান আছে।
আলি হোসেনঃ জি হুজুর
এই বলে আলি বাড়ি চলে গেলো। হুজুর দুপুরে বাড়ি এলো। বাড়িটা চারপাশ ভালো করে দেখলো। তারপর আলেম আলির মার কাছে গেলো। বললো,,,
আলেমঃ আপনার তো বাড়ি খালা,আপনার তো বোঝার কথা আপনার বাড়িতে কি হচ্ছে।
মাঃ এএ বাবা আসলে বয়স হয়েছে তো তাই কিছু বুঝতে পারি না।
আলি হোসেনঃ আপনি মাকে এই কথা কেন ও বলতাসেন হুজুর।
আলেমঃ সেটা তোমার মাকে জিজ্ঞাসা করো।
এই বলে আলেম ঘরে চলে যায় মালেকাকে দেখতে।
মালেকা ৪ ঘন্টা যাবত একিভাবে শুয়ে আছে। আলেম সাহেব মালেকার মাথায় হাত দিতেই মালেকা অদ্ভুত ভাবে চোখ মেলে।
আলি তো অবাক কোনও ডাক না দিতেই মালেকা চোখ খুললো। আলেম মালেকার ডান কানটা ধরে কি যেনো পরতে লাগলো হঠাৎ মালেকা অদ্ভুত কন্ঠে বলতে লাগলো,,,
মালেকাঃ তোর তো কোনও ক্ষতি করি নাই তাইলে আমার পিছে কেন পইরা আছোছ।
আলেমঃ ঠান্ডা শুরে বললো,,,,, কে তুমি কি চাও?
মালেকাঃ বলমু না।
আলেমঃ তাহলে তুমি যেতেও পারবে না।
মালেকাঃ অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,,,,, তুই কি যেতে দিবি না আমিই তো এই দেহো ছারমু না।
আলেমঃ মালেকার সন্তান কে কেন মেরেছো?
মালেকাঃ আমি তো মারি নাই ওয় তো নিজেই কইলো,,,, আমারে খাইয়ালা। তাই আমি আগে ওর সন্তান খাইছি এখন ওরে,,,,
এই বলে মালেকা হাসতে লাগলো। হুজুর কি যেনো পরতেই থাকলো। হঠাৎ মালেকা জ্ঞান হারায়। আলির বাবা ২ বিয়ে করে ছিলো। প্রথম বউ এর নাম ছিলো জলেখা আর আলির মা ছিলো ছোট বউ খাদিজা।
জলেখা থাকা মুহুততে খাদিজাকে বিয়ে করে আলির বাবা। ৩ মাস এর মাথায় জলেখার মৃত্যু হয়। গ্রাম বাসির দাবি জলেখার মৃত্যুটা সাবাভিক না। আর জলেখা তার সংসারের মায়া কাটাতে পরেনি তাই সে এই বাড়িতে আজও আছে ছায়ার মতো।
আলেমঃ কি চাও তুমি সেটা বলো?
মালেকাঃ এই বাড়িটা আমার, এই সংসার আমার, আমি তো কোনও ক্ষতি করি নি তাও আমাকে বাঁচতে দিলো না। আমাকে মারা হয়েছে। খাদিজা শুধু তা সবার সামনে শিকার করুক। আমি মালেকাকে ছেড়ে দিবো।
আলি মা তারপর নিজের ভুল শিকার করলো এবং ছেলে আলির কাছে মাফ চাইলো। জলেখা মালেকার দেহ ছেড়ে দিলো কিন্তু হ্যাঁ আজও জলেখার ছাড়া এই বাড়িতেই আছে।