“কঙ্কাল” ভুতের গল্প

“কঙ্কাল” ভুতের গল্প

ঘটনাটা ২০০৬ সালের। সদ্য মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। তাই মনে অনেক উত্তেজনা। ক্লাস শুরু হতে আরও দেরি আছে, এর মাঝেই সব বই কিনে ফেললাম। শুধু কঙ্কাল কিনা বাকি। একদিন তাও কিনা হল। যার কঙ্কাল সে যে কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছে তাকে দেখে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল।

বিশাল আকৃতির বক্স টা বাসায় আনতেই বিশাল হইচই পরে গেল।আম্মু তো দেখেই চিৎকার শুরু করল যে এই  বক্স অন্য কোথাও রাখা হোক। আমি বললাম এটা আমার রুমেই থাকবে। আমার মধ্যে কোন ভয় কাজ করেনি। বিপুল উৎসাহে সব খুলে খুলে দেখলাম তারপর বিছানার নিচে যত্ন করে রাখলাম।

ঐদিন কিছু হয়নি। পরদিন বাসায় ফুফুরা আসল। ওদের খুব আনন্দ নিয়ে  সব দেখালাম। সারাদিন অনেক মজা
করলাম। রাতে ঘুমানোর আয়োজন হল। বাসায় রুম কম থাকায়  আমার ছোট ভাইয়ের রুমে গেস্টদের থাকতে দেয়া হল। আর আমার ছোট ভাইকে পাঠানো হল আমার রুমে।

বিছানা ছিল দুইটি ও একটাতে শুয়ে ঘুমিয়ে পরল আর মেঝেতে আমাদের কাজের মেয়ে। আমি ঠিক একটা বাজে রুমের লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। পাঁচ মিনিটও হয়নি হঠাৎ অনুভব করলাম কে যেন আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।

ভাবলাম আম্মু হয়তো, কারণ আম্মু প্রায় আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো। ধীরে ধীরে চাপ বাড়তে আর ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ ঠিক আমার কানের পাশে পরতে লাগলো। তখুনি বুঝলাম এটা আর যেই হোক আম্মু না। আমি পাশ ফিরতে চাইলাম কিন্তু আমার হাত পা যেন অচল হয়ে  ছিল। কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না শরীরে।

আমার চোখ খোলাই ছিল। তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছিলাম হাল্কা ডিম লাইটের আলোয় ঐ তো আমার ভাই শুয়ে আছে,  মেঝেতে কাজের মেয়েটা। আমার পাশে আমার মোবাইল সেট, সবই। কিন্তু আমি নড়তে পারছিলাম না । কথাও বলতে
পারছিলাম না। উপায় না দেখে সূরা পড়া শুরু করলাম এভাবে ৫-৭ মিনিট যাওয়ার পর যেন আমার শক্তি আসলো। উঠেই আমার ভাইয়ের বিছানায় গেলাম। সারারাত নির্ঘুম কাটল।

পরদিন সকালে আব্বু আম্মুকে জানালাম এই বিষয় টা । আব্বু বলল যে এটা  হেলুসিনেসন আম্মু একেবারে উড়িয়ে না দিলেও বিশ্বাস করেনি তা বেশ বুঝা যাচ্ছিল কিছুটা। আমিও তাই ভেবে হাল্কা হলাম যে নতুন কেনা কঙ্কালটা হয়তো আমার মনে প্রভাব ফেলেছে, আর তাই হয়তো এইরকম লেগেছে। পরেরদিন আম্মু সহ ছিলাম।

আম্মু শুয়েই ঘুমিয়ে পরেছে আর আমি ঘুমাব বলে লাইট অফ করে পরলাম  চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে আবার
সেই অনুভূতি। আর কানের কাছে ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ। আবার সূরা পড়া শুরু করলাম। এভাবে কতক্ষন ছিলাম জানিনা। অনেক কষ্টে মা মা বলে চিৎকার দিলাম।

আম্মু তাড়াতাড়ি উঠে লাইট অন করে আমাকে এসে ধরল আমি কাঁদতে শুরু করলাম, বললাম, ঐ লোকটা আবার এসেছিল।
সারারাত আমি আর আম্মু জেগে কাটালাম।আমার রুমে  কুরআন শরীফ রাখা হল যাতে এরকম কিছু আর না ঘটে।
কয়েকদিন ঠিক ছিল সবকিছু তবে একদিন দুপুরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। মনে হচ্ছিল কেও একজন খুব কাছ থেকে ঝুকে আমাকে দেখছে। চোখ খুলতে পারছিলাম না।

অনেক পরে চোখ খুলে দেখি কিছু নেই। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা বাসায় থাকতে  আশা কাওকেই জানাতাম না। হয়তো ভয় পাবে এই ভেবে
বলতামনা। তবুও আমার রুমে ছিল এরকম কয়েকজন বন্ধু একি ঘটনার শিকার। তারা যাওয়ার আগে বলেও গিয়েছে যে এই রুমে কিছু একটা আছে। আরেকবার আমার দাদি ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ জোরে চিৎকার করে উঠেছিল। উনার মনে হয়েছিল কে জানি উনার হাত ধরে আছে।

এইরকম ধারাবাহিক কিছু ঘটনার পর বাসায় মিলাদ পরানো হয়। আল্লাহর রহমতে এখন সব ঠিক, তবুও মাঝেমাঝে মনে প্রশ্ন জাগে, আসলেই মৃত মানুষের আত্মা কি পৃথিবীতে থাকে? পড়াশুনার খাতিরে পরে কঙ্কালের হাড় পাশে নিয়েও ঘুমাতে হয়েছিল। কিন্তু এরকম কিছু কখনো আর হয়নি

তবে প্রথমেই কেন এত কিছু হয়ে গিয়েছিলো তা আজো ভেবে পাইনা। শিক্ষা জীবনের শেষের দিকে এসে শুরুর দিকের সেই কথা খুব বেশি মনে পরছে।তাই আজ এটা সবার সাথে শেয়ার করলাম। হয়তো আপনাদের পড়ে বিরক্ত লাগতে পারে তবুও মেডিকেল এ যারা পড়েন তারা কঙ্কাল নিয়ে অনেক গল্প শোনার সুযোগ পেয়ে থাকেন সবসময় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *