কবর বাসির জন্য দোয়া ও কবরে ৯৯ সাপ এর ঘটনা
কবরবাসীর জন্য দোয়া
হযরত ওসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, নবী করীম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুর্দাকে দাফন করে অবসর গ্রহন করতেন,
সেখানে দাঁড়াতেন এবং উপস্থিত সকলকে বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জন্য আল্লাহ্র নিকট মাগফেরাত চাও এবং দো’আ কর, যেন আল্লাহ্ এখন তাকে (ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তরে) ঈমানের উপর সুদৃঢ় রাখেন। কেননা, এখনই তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে। -আবু দাউদ শরীফ ।
স্মর্তব্য ঃ (“তখন সেখানে দাঁড়াতেন।) বাক্য দ্বার প্রমান হয় যে, দাফনকার্য শেষ হওয়া পর্যন্ত কবরস্থানে অপেক্ষা করা চাই। অতঃপর মুর্দার জন্য এরূপ দো’আ করা -“আল্লাহ্ তুমি তাকে মাফ করে দাও এবং এ সময় মুনকার-নাকীরের প্রশ্নে তাকে ঈমানের উপর দৃঢ় রাখ।” -এটা রাসূলের তরীকা এবং মুর্দার পক্ষে উপকারী। এছাড়া সেখানে দাঁড়িয়ে কিছু কুরআন পাঠ করাও ভাল।
অপর হাদীসে সূরা বাকারার
الم ذلك الكتاب لا ريب فيه هدى للمتقين الذين يؤمنون بالغيب و يقيمون الصلواة ومما رزقناهم ينفقون – والذين يؤمنون بما انزل اليك ومـا أنـزل مـن قـبـلـك وبالأخـرة هـم يـوقـنـون – أولئك على هدى من ربهم ここ – Jani পর্যন্ত এবং উক্ত সূরার শেষের নিম্নোক্ত আয়াতগুলি পড়ার কথাও আছে :
أمن الرسول بما أنزل إليه من ربه والمومنون كل أمن بالله وملائكة وكتبه ورسله لالفرق بين أحد من رسله و قالوا سمعنا واطعنا غفرانك ربنا وإليك المصير- لا يكلف الله نفسا إلا وسعها لها ما كسبت وعليها ما اكتسبت ربنا لا تؤاخذنا ان نسينا أو أخطأنا – ربنا ولا تحمل علينا إصرا كما حملته على الذين من قبلنا – ربنا ولا تحملنا مالا طاقة لنا به واعف عنا و اغفرلنا – وارحمنا أنت مولانا فانصرنا على القوم الكافرين – সেখানে পুর্ণ কুরআন পড়া গেলে আরও ভাল ।
এতদব্যতীত অনেকের মতে দাফনের পর মুর্দাকে নিম্নরূপ ‘তালকীন’ করাও মুস্তাহাব। মুর্দার শিয়রে দাঁড়িয়ে তার মাতার নাম করে বলবেঃ
হে অমুকের পুত্র অমুক, তুমি যে অংগীকার ও কালিমায়ে শাহাদাতেসহ দুনিয়া হতে গিয়েছ তা স্মরন কর। আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই।
তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ্র বান্দা ও তাঁর রাসূল । কিয়ামত নিশ্চয়ই হবে তাতে সন্দেহ নেই। যারা কবরে আছে অবশ্য আল্লাহ্ তাদেরকে পুনঃ উঠাবেন।
তুমি বল, আল্লাহকে রব্ব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে নবী ও রাসূল হিসেবে, কাবাকে কেবলা হিসেবে, কুরআনকে ইমাম হিসেবে এবং মুসলমানদেরকে ভাই হিসেবে পেয়ে আমি খুশী হয়েছি।
আল্লাহ্ আমার রব্ব, তিনি ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই। তিনি মহান আরশের ও রব্ব।”-আশি’অ্যা ও তা’লীকুস সাবীহ।
কাফিরের কবরে নিরানব্বইটি সাপ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কাফেরের জন্য তার কবরে নিরানব্বইটা সাপ নির্ধারণ করা হয়, সেগুলো তাকে কিয়ামত কয়েম হওয়া পর্যন্ত কামড়াতে ও দংশন করতে থাকে যদি সেসবের একটা সাপ জমিনে নিঃশ্বাস ফেলে, তা হলে যমীনে কখনো তৃণ জন্মাবে না। -দারামী শরীফ।
তিরমিযী ও এ অর্থের একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি “নিরানব্বই” এর পরিবর্তে সত্তর বলেছেন। উপকারিতা : ‘নিরানব্বই’ ‘সত্তর’ এখানে ‘বহু’ অর্থেই ব্যবহৃত
হয়েছে। আর কেউ কেউ এটার অন্যরূপ অর্থও করেছেন।
কবরে সংকীর্ণতা
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, হযরত সা’দ ইবনে মুআয (রাঃ) যখন ইন্তেকাল করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর জানাযায় হাযির হলাম।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় (দীর্ঘ সময়) আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করলেন; আমরাও তাঁর সাথে দীর্ঘ সময় তাসবীহ পাঠ করলাম।
অতঃপর তিনি তাকবীর বললেন। আমরাও (তার সাথে) তাকবীর বললাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেন আপনি এরূপ তাসবীহ ও তাকবীর বললেন? নবী করীম (সাঃ) বললেনঃ এই নেক ব্যক্তির উপর তার কবর অভ্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
(অতএব, আমি এরূপ করলাম,) এতে আল্লাহ্ তা’আলা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন। মুসনাদে আহমদ।
উল্লেখ্য, ‘তাসবীহ’ অর্থ পবিত্রতা বর্ণনা করা। ‘তাকবীর’ অর্থ মহত্ত্ব প্রকাশ করা। আল্লাহ্র দরবারে কোন ত্রুটি থাকার দরুনই তাঁর প্রতি এরূপ করা হয়েছিল।
অথবা সকলের প্রতিই আল্লাহ্র এই বিধান রয়েছে। এটা হতে এ কথাও বুঝা গেল যে, কবরের সংকোচন বড় নেককার ব্যক্তির ক্ষেত্রেও হতে পারে। হযরত সা’দ (রাঃ) নেককার ব্যক্তি ছিলেন, তা পরবর্তী হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
নেককারের মৃতুতে আরশে কম্পন
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ এই (সা’দ) সে ব্যক্তি, যার মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপেছিল,
তার জন্য আসমানের দরওয়াজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছিল এবং যার জানাযায় সত্তর হাজার য়েরেশতা হাযির হয়েছিলেন; কিন্তু তাঁর কবরও অতিশয় সংকীর্ণ করা হয়েছিল; অবশ্য পরে তা প্রশস্ত হয় । -নাসাঈ শরীফ।
স্মর্তব্য : ‘আরশ কেঁপেছিল’ -এটার অর্থ এও হতে পারে যে, আরশের ফেরেশতাগন হযরত সা’দের মোলাকাতের খুশীতে নেচে উঠেছিলেন।
অথবা এ ঘটনার গুরুত্ব প্রকাশ করার জন্যই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এরূপ বলেছেন। যথা- আমরা বলে থাকি, অমুকের মৃত্যুতে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গিয়েছে বা কিয়ামত স্বরূপ হয়ে গেছে।
কবর আযাবের কথা শুনে কান্নার রোল
হযরত আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দেয়ার উদ্দেশ্যে আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং মানুষ যে কবরে ফিতনায় পড়ে থাকে,
সে সম্পর্কে নবী করীম (সাঃ) যখন অবস্থা বর্ণনা করলেন, মুসলমানরা ভয়ে চীৎকার করে কাঁদতে লাগল। বুখারী এ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন।
কিন্তু নাসাঈ এ কথাগুলোও বাড়িয়েছেনঃ (অতঃপর হযরত আসমা বলেন,) তাদের চীৎকার আমার পক্ষে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কথা বুঝতে বাধা জন্মিয়েছিল। যখন তাদের চীৎকার থেমে গেল, আমি আমার নিকটস্থ এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম,
ওহে! আল্লাহ্ তোমার মঙ্গল করুন –রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষের দিকে কি বলেছেন? সে উত্তরে বলল, তিনি বলেছেনঃ আমার উপর আল্লাহর ওহী এসেছে যে, তোমরা কবরে ফিতনায় পড়বে, প্রায় দাজ্জালের ফিতনার ন্যায়।
উল্লেখ্যঃ ‘কবরে ফিতনা’ অর্থে ফেরেশতাদের দর্শন ভয় ও তাঁদের প্রশ্নকেই বুঝান হয়েছে। কবরে শয়তানের কোন ফিতনা ফেরেব হবে না।
জনৈক আলেম হাকেম তিরমিযীর বরাতে লিখেছেন যে, কবরেও শয়তানের ফিতনা হবে। মাওঃ নূর মুহাম্মদ আজমী (রঃ) বলেন, আমি এ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমদের নিকট তাহকীক করে জানতে পেরেছি যে, এটা সহীহ নয়। কারণ, তা হলে কবরেও নবীর প্রয়োজন হবে।
ঘটনাটি সম্পুর্ন পরার জন্য ধন্যবাদ।
নতুন নতুন আরো আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট এ নজর রাখুন।