কসমের কাফফারা
কসমের কাফফারা
১. মাসআলা : কসম ভঙ্গ করলে তার কাফফারা হলো হয় দশজন মিসকিনকে দুই ওয়াক্ত পেট ভরে খাইয়ে দিবে, না হয় প্রত্যেক মিসকিনকে ৮০ তোলা সেরের এক সের সাড়ে বার ছটাক গম বা তার মূল্য দিবে । পূর্ণ দুই সের গম বা তার মূল্য দেওয়া উত্তম। আর যদি যব দেয়, তবে গমের দ্বিগুণ দিবে। (আর চাউল ধান দিলে গম বা যবের মূল্যের হিসেবে দিবে) তা না হলে দশজন মিসকিনকে কাপড় দিবে অর্থাৎ লুঙ্গি, জামা, (টুপি) দিবে । প্রত্যেক মিসকিনকে এত পরিমাণ কাপড় দিবে, যা দ্বারা তার শরীরের অধিকাংশ ঢাকতে পারে, যেমন, হয়তো বড় একটি চাদর অথবা বড় একটি জামা । কিন্তু কাপড় যদি বেশি পুরাতন হয়, তবে কাফ্ফারা দিতে হবে না। আর যদি প্রত্যেক মিসকিনকে এক একটি করে লুঙ্গি বা এক একটি করে পায়জামা দেয়, তবে কাফফারা আদায় হবে না। লুঙ্গি বা পায়জামা দিলে তার সাথে জামাও দিতে হবে। পুরুষকে কাপড় দেওয়ার হুকুম হলো এই। আর যদি কোনো গরীব মহিলাকে কাপড় দেয়, তবে এত পরিমাণ কাপড় দিবে, যা দ্বারা সমস্ত শরীর ঢাকতে পারে, এর কম হলে কাফফারা আদায় হবে না। খাওয়ানো এবং কাপড় দেওয়া এ দুটি বিষয়ের মধ্যে সুযোগ আছে, যেটি ইচ্ছা দিতে পারবে ।
২. মাসআলা :যদি কেউ এমন গরীব হয় যে, ১০ জন মিসকিনকে খাওয়াতে বা কাপড় দিতে পারে না, তবে সে একসাথে তিনটি রোজা রাখবে। পৃথক পৃথকভাবে তিনটি রোজা রাখলে কাফফারা আদায় হবে না। তিনটি রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখা প্রয়োজন। এমনকি, যদি দুটি রোজা রাখার পর কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারে, তবে পুনরায় নতুনভাবে তিনটি রোজা একত্রে রাখতে হবে ।
৩. মাসআলা :কসম ভঙ্গ করার পূর্বেই কাফফারা আদায় হবে না। কসম ভঙ্গ করার পর আবার কাফফারা দিতে হবে। কিন্তু পূর্বে মিসকিনকে যা কিছু দান করেছে, তা ফেরত নেওয়া ঠিক নয় ।
৪. মাসআলা :যদি কেউ কয়েকবার কসম খায়, যেমন একবার বলল, খোদার কসম অমুক
কাজ করব না, তারপর ঐ দিন বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন আবার বলল, খোদার কসম,
আমি অমুক কাজ করব না। মোটকথা এরূপে কয়েকবার বলল, অথবা এরূপে বলল,।
আল্লাহর কসম, খোদার কসম, কালামুল্লাহর কসম, অমুক কাজ নিশ্চয় করব, পরে ঐ কসম ভেঙ্গে ফেলল । তবে এসব কসমের কাফফারা দিবে। যদি কেউ কোনো কাজ করার কসম খায়, যেমন বলল, খোদার কসম আমি কিছুতেই মিথ্যা কথা বলব না, তবে যতবার মিথ্যা কথা বলবে ততটি কাফফারা দিতে হবে।
৫. মাসআলা :যদি কারো জিম্মায় কয়েকটি কসমের কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়, তবে সব কাফফারাই পৃথক পৃথক আদায় করতে হবে । যদি জীবিত অবস্থায় শেষ করতে না পারে, তবে মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করে যাওয়া ওয়াজিব। ৬. মাসআলা : যারা জাকাত গ্রহণ করার উপযুক্ত, কাফফারা শুধু তাদেরকেই দেওয়া যাবে, (
কেননা সম্পদশালীকে বা কোনো সাইয়্যেদকে দেওয়া ঠিক নয় ।)
বাড়ি ঘরে না যাওয়ার কসম
১. মাসআলা :যদি কেউ বলে যে, খোদার কসম! আমি কখনো তোমার বাড়িতে যাব না, তবে শুধু বাড়ি দেউড়িতে গেলে, বাড়ির ভিতর প্রবেশ না করলে কসম ভঙ্গ হবে না। এরূপে যদি কেউ বলে যে, খোদার কসম আমি তাদের ঘরে যাব না, তবে যদি শুধু আঙ্গিনায় বা উঠানে যায়, বা ঘরের কিনারায় দাঁড়ায়, তাতে কসম ভঙ্গ হবে না দরজার ভিতরে গেলে কসম ভেঙ্গে যাবে।
২.৩ মাসআলা :যদি কেউ কসম খায় যে, খোদার কসম এ বাড়িতে আমি কিছুতেই যাব না, তবে যতক্ষণ সে বাড়িতে ঘর দরজা থাকবে, যদি ভগ্নাবস্থায়ও থাকে, তবুও সেখানে গেলে কসম ভেঙ্গে যাবে। (এমনকি, ঘর ভেঙ্গে যাওয়ার পর নতুন ঘর উঠাতে গেলেও কসম ভেঙ্গে যাবে।) অবশ্য যদি বাড়ির ভগ্নাবশেষও না থাকে, জমিন সমান হয়ে যায় বা ময়দান হয়ে যায়, মসজিদ বা বাগিচা বানিয়ে নেওয়া হয়, তবে সেখানে গেলে কসম ভঙ্গ হবে না
৪. মাসআলা :যদি কেউ কসম খায় যে, খোদার কসম তোমার বাড়িতে আমি কিছুতেই যাব
না এবং পরে বাড়ির দরজা দিয়ে না গিয়ে ছাদ টপকিয়ে ঘরের ছাদের উপর যায়, তবুও
কসম ভঙ্গ হয়ে যাবে, যদিও নিচে না নামে।
৫. মাসআলা :যদি কেউ কারো বাড়ির মধ্যে বা ঘরের মধ্যে বসে বলে যে, খোদার কসম এখানে কখনো আসব না এবং পরে তথায় অল্পক্ষণ থাকে, তবে কসম ভঙ্গ হবে না, যে কত দিনই তথায় থাকুক । বের হয়ে আসলে তখন কসম ভঙ্গ হবে। এটা বাড়িতে বা ঘরে আসা সম্পর্কের হুকুম। কিন্তু যদি কেউ বলে যে, খোদার কসম এ কাপড় পরিধান করব না, এ বলে যদি তৎক্ষণাৎ খুলে ফেলে, তবে কসম ভঙ্গ হবে না। আর যদি তৎক্ষণাৎ না খুলে কিছুক্ষণ পরে থাকে, তবে কসম ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৬. মাসআলা :যদি কেউ কসম খায় যে, এ ঘরে আমি থাকব না, তবে যদি এ কথা বলার
সাথে সাথে ঘর হতে আসবাব পত্র সরানো আরম্ভ করে, ত েকসম ভঙ্গ হবে না। কিন্তু যদি কিছুক্ষণ দেরি করে তবে কসম ভেঙ্গে যাবে ।
৭. মাসআলা :যদি কেউ কসম খায় যে, তোর বাড়িতে আর পা রাখব না, অর্থ এই যে, তোর বাড়িতে আর আসব না। এরূপ কসম খেয়ে পরে যদি পালকিতে বা ভুলিতে চড়ে ঐ বাড়িতে আসে এবং মাটিতে পা না রেখে পালকিতে বা ভুলিতে বসে থাকে, তবুও কসম ভেঙ্গে যাবে।
৮. মাসআলা :কেউ বলল, খোদার কসম তোমাদের বাড়িতে কোনো না কোনো সময় যাব । পরে যদি আর সে বাড়িতে না যায়, তবে যতদিন জীবিত থাকবে, ততদিন কসম ভঙ্গ হবে না। অবশ্য যখন মরে যাবে, তখন কসম ভঙ্গ হবে। এরূপ অবস্থা হলে মৃত্যুকালে তার অসিয়ত করে যাওয়া উচিত যে, আমার মাল হতে একটি কসমেমর কাফফারা দিয়ে দিও ।
৯. মাসআলা : যদি কেউ বলে, খোদার কসম অমুকের বাড়িতে যাব না, তবে সে ব্যক্তি যে বাড়িতে বাস করে, সেখানে না যাওয়া চাই, তা তার নিজস্ব বাড়ি হোক বা ভাড়াটিয়া বাড়ি হোক বা পরের বাড়ি ধার করে থাকুক ।
১০. মাসআলা : যদি কেউ কসম খায় যে, আমি তোমাদের বাড়িতে যাব না এবং তারপর কাউকেও বলে যে, তুমি আমাকে কোলে করে সে বাড়ি পৌঁছে দাও এবং সে পৌঁছে দেয়,তবে কসম ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য সে বলা ব্যতীত অন্য কেউ যদি সে বাড়িতে বয়ে নিয়ে যায়, তবে কসম ভাঙ্গবে না। অর্থাৎ যদি কসম খায় যে, আমি কখনো এ বাড়িতে যাব না, তারপর যদি কাউকেও বলে- আমাকে কোলে করে বাইরে নিয়ে যাও, আর সে যদি নিয়ে যায়, তবে কসম ভঙ্গ হবে । না বলা সত্ত্বেও যদি বাইরে নিয়ে যায়, তখন কসম ভাঙ্গবে না।
আল্লাহ আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুন ।