কালোজিরা : সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার

কালোজিরা : সকালে খালি পেটে কালোজিরা খেলে কি উপকার

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধু-কালোজিরা খেলে কী উপকার হয়?
সারাবছরই মধু দেহের জন্য অনেক উপকারী। মধুতে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো শরীর ভালো রাখতে পারে । এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি থাকে । এছাড়া এনজাইম, বিভিন্ন খনিজ যেমন পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ ও প্রোটিন রয়েছে । মধুতে কোনো কোলেস্টেরল থাকে না । এ জন্য সবাই নিশ্চিন্তে মধু খেতে পারবেন। মধু ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, পেটের আলসার ভালো করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে ।

image

ডায়াবেটিস রোগীদের মধু খাওয়া ঠিক কিনা : বিশেষজ্ঞরা ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি জাতীয় খাবার না খাওয়ার জন্য অনেক পরামর্শ দেন। তবে অনেকে বিকল্প হিসেবে মধু খাওয়ার কথা বলে থাকে। যদি রোগী ইনসুলিন গ্রহণ করেন তাহলে তাকে প্রতিদিনের কার্বোহাইড্রেট সংখ্যার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারের উপাদানের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার । তানা হলে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। আর তা ছাড়া টাইপ-২ রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মতামত ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই বলা যায় না টাইপ-২ রোগীদের জন্য মধু উপকারী কি না।

image

অন্যদিকে কালোজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান রয়েছে ।কালোজিরা খাদ্যাভাসের ফলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্যে করে।কালোজিরা ফুলের মধু উৎকৃষ্ট মধু হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত , কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক ক্যারোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক করে । কালোজিরার মতো এর থেকে তৈরি তেলও আমাদের শরীরের জন্য নানাভাবে বেশ উপকারী। খালি পেটে মধু ও কালোজিরার উপকারিতা নিচে দেয়া হলো-

*কালোজিরা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্যে করে । নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকবে। এটি যে কোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে এবং সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে। তাই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কালোজিরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারবেন ।

*কালোজিরা ও মধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিষেশ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দিতে পারে । ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

*কালোজিরা নিম্ন রক্তচাপ বৃদ্ধি করে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করতে পারে । পাশাপাশি দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে । ফলে শরীরে রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকে। তাই কালোজিরার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন ।

*নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরা ও মধু যাদুর মতো কাজ করে। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে কালোজিরা খেলে পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় প্রতিনিয় ।  তাছাড়া মধু ও কালোজিরা পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে ।

*নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হবে। এতে করে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের বৃদ্ধি ঘটে, যা আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে।

*হাঁপানী বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সমাধানে কালোজিরা ভালো কাজ করে। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা উপশম হতে পারে । তাছাড়া এই সমস্যার উপশমে কালোজিরার সঙ্গে মধুও খেতে পারবেন।

*পিঠে ব্যথায় ভুগছেন? কালোজিরার থেকে তৈরি তেল আমাদের দেহে বাসা বাঁধা দীর্ঘমেয়াদী রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে। এছাড়া সাধারণভাবে কালোজিরা ও মধু খেলেও অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

*শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে কালোজিরা অনেক উপকারী। নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খাওয়ালে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে থাকে । কালোজিরা শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করতে সাহায্যে করে ।

1

কালোজিরার আরও কিছু ব্যবহার: ওষুধি গুণ কালোজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুবিধ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে । মসলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার হলেও ইউনানি মতে নারীদের বিভিন্ন রোগে ও সমস্যায় কালিজিরা অব্যর্থ মহৌষধ হিসেবে কাজ করে ।

এছাড়া প্রসবকালীন ব্যথা কমাতে, প্রসূতির স্তনে দুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য প্রসবোত্তর কালোজিরা বাটা ভর্তা খাওয়ার প্রমাণিত উপকারী বিধান রয়েছে । প্রশ্বাব বাড়ানোর জন্য কালোজিরা খাওয়া হয়ে থাকে । জ্বর, সর্দি, কাশি, কফ, অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ব্যথা ও দাঁতের ব্যথা, বাতের ব্যথা, পেটের বাথা, মাথাব্যথা কমাতে, মাথা ঝিমঝিম করা, মাইগ্রেন নিরাময়ে যথেষ্ট উপকারী বন্ধু হিসেবে কাজ করে থাকে । পেটফাঁফা, চামড়ার ফুসকুরি, ব্রঙ্কাইটিস, এলার্জি, একজিমা, এজমা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ; ডায়রিয়া, আমাশয়, গ্যাসট্রিক আলসার, জন্ডিস, খোসপাঁচড়া, ছুলি বা শ্বেতি, অর্শরোগ, দাদে কালোজিরা অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করতে পারে ।

স্নায়ুবিক উত্তেজনা; উরুসদ্ধি প্রদাহ; আঁচিল; স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে; শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে, স্ট্রোক, স্থূলতা নিরাময়ে ভালো কাজ করে কালোজিরা। গায়ের ব্যথা দূর করতে কালোজিরা বিশেষভাবে উপকার করতে পারে । ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কালোজিরা বেশ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরারোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, বহুমূত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় ইনসুলিন সমন্বয় করে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করে। হার্টের বিভিন্ন সমস্যা, হাইপারটেনশন, নিম্ন রক্তচাপকে বাড়ায় আর উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিকতা রক্ষা করতেপারে । এছাড়া মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে ।

কালোজিরার বিশেষত্ব কালোজিরার তেলের উপকার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, করতে সাহায্যে করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *