কিয়ামত কাকে বলে
হায়রে সেদিন!
‘যেদিন আল্লাহতায়ালা সাবাইকে পুনরুজ্জীবিত করবেন, সেদিন সবাইকে তাদের কর্মফল জানিয়ে দেয়া হবে। আল্লাহ তো ওইগুলা সংরক্ষণ করে রেখেছেন অথচ তারা নিজেরাই ভুলে গেছে।’ (আয়াত : ৬)
কেউ জানে না আল্লাহ ছাড়া
কিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। নবীজী (সা.) কে কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কেউ কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় জানে না।’ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত কখন হবে। তুমি বলে দাও, এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকে কাছেই আছে। ঠিক সময়েই তিনি তা ঘটাবেন। তা হবে আকাশ ও পৃথিবীতের একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। হঠাৎ তোমাদের ওপর তা নেমে আসবে।’ (সূরা আরাফ : ১৮৭)
হজরত জিবরাঈল (আ.) নবীজীকে প্রশ্ন করলেন, কিয়ামত কখন হবে? উত্তরে নবীজী (সা.) বললেন, ‘এ ব্যাপারে আপনার চেয়ে আমি খুব কমই জানি।’ (বুখারি)
কোরআন-হাদিস কী বলে
যদিও আল্লাহ কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় মানুষকে বলে দেননি, কিন্তু পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এর বিভিন্ন নিদর্শন বা আলামত বলে দেয়া হয়েছে। এই নিদর্শনগুলো দুই ভাগে বিভক্ত ।
১. আলামতে সুগরা বা ছোট আলামত ।
২. আলামতে কুবরা বা বড় আলামত ।
দুনিয়া হাঁটছে কিয়ামতের পথে
কিয়ামতের ছোট ছোট আলামতগুলোর অন্যতম হলো ১. এমন কিছু ঘটবে যা কেউ ভাবেনি আগে ।
২. অমুসলিমরা প্রচুর খনিজসম্পদ লাভ করবে।
৩. মানুষ তার বাসস্থানকে কারুশিল্পে সাজিয়ে তোলবে।
৫. শিক্ষার প্রসার ঘটবে, ধর্মভীরুতা কমে যাবে।
৬. মানুষ অশ্লীলতায় ডুবে যাবে।
৭. নারী পুরুষের আর পুরুষ নারীর বেশ ধরবে।
৮. মানুষ মদ পান করবে অন্য নামে।
৯. সুদ ছড়িয়ে পড়বে।
১০. অভিনন্দন ও অভিবাদন মানুষের জীবনে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
১১. ভূমিকম্প বেড়ে যাবে।
১২. হঠাৎ মৃত্যু বেড়ে যাবে।
১৩. মানুষ কথায় বড় হবে, কাজে নয়।
১৪. সন্তান তার মাকে শাসন করবে।
১৫. ধর্মহীনরা সমাজের নেতৃত্ব দেবে ।
১৬. গরীব লোকগুলো বড় বড় বিল্ডিংয়ের মালিক হবে।
১৭. প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে ।
১৮. সন্তানের চেয়ে মানুষ কুকুরকে বেশি আদর করবে। ১৯. নারীরা উটের পিঠের উঁচু কুঁজের মতো খোপা বাঁধবে।
২০. যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজ হবে। ২১. সময় খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবে।
২২. দাসী ও নিকৃষ্ট মেয়েদের সন্তানেরা সমাজের নেতা হবে।
২৩. অবৈধ সন্তানের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ২৪. ভালো মানুষের মর্যাদা কমে যাবে।
২৫. বড়কে সম্মান এবং ছোটকে স্নেহ করা হবে না।
২৬. নেতার সংখ্যা বাড়বে, বিশ্বস্ততা কমে যাবে।
২৭. উলঙ্গ ও বেহায়াপনায় নারীরা এগিয়ে থাকবে।
২৮. জেনা-ব্যভিচার আর মদ্যপের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ২৯. আত্মীয়দের ভুলে বন্ধুর আতিথেয়তা বেড়ে যাবে।
৩০. সমাজে ফ্যাসাদ-দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
৩১. অযোগ্য ও অসৎ ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতা হবে।
৩২. মসজিদগুলো চাকচিক্য ও জাঁকজমকপূর্ণ হবে।
৩৩. প্রতারকদের কদর বেড়ে যাবে। ৩৪. দুনিয়াবী স্বার্থে ধর্ম ও কোরআনকে ব্যবহার করা হবে।
৩৫. আখেরাতের পরিবর্তে মুসলমানরা দুনিয়া কিনে নিবে।
ফুরিয়ে যাবে দুনিয়ার দম
বড় বড় আলামতগুলো প্রকাশ পেলেই কিয়ামত কায়েম হয়ে যাবে। কিয়ামতের বড় আলামতগুলো হল
১. সাদা ও রক্তিম ধোঁয়া এসে পৃথিবীকে ঢেকে ফেলবে। এর প্রভাবে মুমিনদের সামান্য সর্দি-কাশি হবে। আর কাফেরদের পেয়ে বসবে নাম না
২. দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ হবে।
৩. হজরত ঈসা (আ.) ফের দুনিয়ায় আসবেন।
৪. আসবে ইয়াজুজ-মাজুজ ।
৫. পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় হবে।
৬. মাটি ফুঁড়ে বেরুবে আজব প্রাণী।
৭. তিনটি ভূমিধস হবে। একটি পূর্বে, অন্যটি পশ্চিমে আর তৃতীয়টি হবে আরব ভূখন্ডে।
৮. সর্বশেষ ইয়ামেন থেকে একটি ভয়াবহ আগুন ধেয়ে আসবে। যা মানুষকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে।
আল্লাহ বলেন, ‘আর জালেমরা যা কিছু করছে তা সম্পর্কে আল্লাহ বেখবর নন। তাদের শুধু ওই দিন পর্যন্ত অবকাশ দেয়া হয়েছে, যেদিন তাদের দৃষ্টি খুলে যাবে। তারা ভয়ে দৌড়াতে থাকবে। তারা কোন আশার আলো খুঁজে পাবে না।’ (সূরা ইবরাহিম, আয়াত : ৪২-৪৯)। কবর থেকে বের হয়ে খুব পেরেশানি ও বিস্ময়ে তারা হাশরের মাঠের দিকে দৌড়াতে থাকবে। ভয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়বে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা অবাধ্য হও, তবে ওই দিন কেমন করে রক্ষা পাবে যেদিন ভয়ে শিশুও বৃদ্ধ হয়ে যাবে?