গোলাপবাগ মাঠে সকাল ১১টায় সমাবেশ শুরু: খন্দকার মোশাররফ
সারা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি না পেলেও অনেক নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত পুরনো ঢাকা সায়েদাবাদ এলাকার গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ । তাই সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর পর বিকেল থেকেই দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সেখানে জড়ো হতে শুরু করেছিলেন । ৮ই ডিসেম্বর আটক হয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঢাকার সমাবেশের দায়িত্বে থাকা স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসসহ। আটক কৃত নেতাকর্মীদের আদালতে থেকে জামিন না হওয়ায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মিস্টার ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আজ শনিবারের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার কথা ছিলো। তবে সব আটককৃত নেতাদের মুক্তি দাবি করে বিএনপির নেতারা বলেছেন গোলাপবাগের মাঠ থেকেই তারা ১০ দফার ‘ চার্টার্ড অফ ডিমান্ড ’ এর ঘোষণা করবেন, যার মূল লক্ষ্য হবে বর্তমান সরকারের ‘পতন ঘটানো’।
মূল উদ্দেশ্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে দেশজুড়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ধারাবাহিক সমাবেশের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছিলো বিরোধীদলীয় প্রধান এই দলটি। কিন্তু সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে দলটির সাথে পুলিশ কর্তৃপক্ষের সাথে সমঝোতা আগে হয়নি।
এর মধ্যে দলটি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে -এমন ঘোষণা দিলে কয়েকদিন ধরে সেখানে দলীয় কার্যালয়ে ক্রমান্বয়ে নেতা কর্মীদের ভিড় বাড়ছিলো। তাই এ অবস্থায় বুধবার নয়াপল্টন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ বিএনপি সমর্থকদের সরাতে গেলে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং প্রায় দুঘণ্টার ব্যাপক সংঘর্ষে এক জন মারা যায় , আর আহত হয় অনেকে নেতা কর্মী । এরপর থেকেই বিএনপি কার্যালয় ও সংলগ্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নয়াপল্টনে সমাবেশ করা যাবে না বলে বিএনপিকে জানিয়ে দেয় পুলিশ কর্মকর্তারা । গত বৃহস্পতিবার দিনভর বিএনপির কাউকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশে পাশে দাঁড়াতেও দেয়নি পুলিশ । এরপর সন্ধ্যার বিএনপির সঙ্গে ভেন্যু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। খন আলোচনায় বিএনপির দিক থেকে কমলাপুর স্টেডিয়াম এর কথা ও পুলিশের দিক থেকে মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠের কথা বলা হয় । বৃহস্পতিবার রাতেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা থাকলে ও মধ্যরাতে পুলিশ বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাসকে আটক করেন এবং পরে সহিংসতার মামলায় গ্রেফতার দেখায় তাদের । শুক্রবার বিকেলে আদালত তাদের জামিনে আবেদন করলেও আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন এবং গোলাপবাগ মাঠ
বৃহস্পতিবার দুপুরে গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ কার্যালয়ে যায়। তার আগেই সকালে গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ জানিয়ে ছিলেন যে বিএনপিকে বাংলা কলেজ মাঠেই সভা করতে হবে। কিন্তু পরে বিএনপির ওই প্রতিনিধি দলটির সাথে আলোচনার পর মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠের পরিবর্তন করে গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেয় পুলিশ কর্মকর্তারা ।পুলিশের দিক থেকে গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়ার পরপর বেলা তিনটার দিকেনাগাদ গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যাল থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র নেতা খন্দকার
মোশাররফ হোসেন বলেন, যে ওই মাঠেই তারা শনিবার সকাল এগারটা থেকে সমাবেশ শুরু করবেন । আজ গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ আমরা সকাল এগারটা থেকে শুরু করবো আমরা। আমরা নেতাকর্মী ও সমর্থক এবং ভবিষ্যতে অন্য যেসব দল আমাদের সাথে থাকবে তাদের সকলকে শান্তিপূর্ণ ভাবে উপস্থিত হবার আহবান জানাই বলছিলেন মিস্টার খন্দকার হোসেন হোসেন। বর্তমান বিএনপির এ মূহুর্তের শীর্ষ এই নেতা বলেন ‘সরকারের পতন ঘটাতে’ সমাবেশ থেকে আজ তারাতাদের চার্টার অফ ডিমান্ড ঘোষণা করবেন । তাই এই সমাবেশ থেকে এই সরকারের বিদায়ের জন্য আমরা চার্টার্ড অব ডিমান্ড ঘোষণা করবো আজ । আশা করি দশ দফার এই চার্টার অফ ডিমান্ড যুগপৎভাবে সাথে অন্যরা ও ঘোষণা করবেন । তবে যদি ওই দাবিনামায় কী থাকবে সে সম্পর্কে তিনি আর কোনো মন্তব্য করেননি এখনো ।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মীর্জা আব্বাসসহ আটক সহ সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করা হয়েছে। সাথে তারা বলেছেন পরিস্থিতি যাই হোক না কেন শনিবারের সমাবেশ থেকে তারা কোনোভাবেই কোনমতে পিছিয়ে যাবেন না। ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন শনিবার তার দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারায় থাকবে যদি তিনি মনে করেন তার আগেই নয়াপল্টন থেকে সরে আসার মধ্য দিয়ে বিএনপির ইতিমধ্যে পরাজয় হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন । পল্টন ময়দানে সমাবেশ করবো আমরা সকলে – একথা যারা যারা বলেছেন তারা এখন গোলাপবাগে । তাদের পরাজয় হয়ে গেছে তখনই । পল্টনে সমাবেশ তারা আর করতে পারেনি। ওবায়দুল কাদের তার ভাষণে আরো বলেন রাজনৈতিক ইস্যুতে বিদেশী কূটনীতিকদের কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন আপনাদের চাইতে আমরা ভালো আছি। আপনারা নিজেদের দেখুন আমরা আমাদেরটা সামলে নেব। আমরা আপনাদের ব্যাপারে বলি না। আপনারা আমাদের ব্যাপারে বলতে আসবেন না। এর আগে বুধবারের সংঘর্ষের পর পর বিবৃতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এছাড়া ও সম্প্রতি আর ও কিছু বিদেশী কূটনৈতিকও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছিলেন যার সমালোচনাও এসেছিলো সরকার দল আওয়ামী লীগ থেকে।