জাতীয় জাদুঘরে একদিন
জাদুঘর যেকোনো জাতির জন্য এক মূল্যবান সম্পদ সাধারণত প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত প্রায় সকল কিছুই জাদুঘরে প্ররক্ষিত থাকে সেই অর্থে জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানাবিধ নিদর্শন রয়েছে অনেক দিন ধরে আমরা তিন বন্ধু জাতীয় জাদুঘরে যাওয়ার জন্য কথা বলছিলাম;
কিন্তু পড়াশোনার চাপে তা সহজেই হয়ে ওঠেনি তাই কী যেন একটা ছুটিতে আমরা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম জাদুঘরে যাবই। আজও মনে পড়ে সে দিনটির কথা। আমরা তিনজন অনেকটা শখ করে শাহবাগের মোড়ে এসে একসঙ্গে নাশতা করলাম। এরপর প্রবেশ করলাম জাতীয় জাদুঘরে।
এখানে অসংখ্য জিনিসের আয়োজন: অনেক পুরানো আমলের নানা প্রকার খাট, বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত মুদ্রা, নানা প্রকারের নৌকা, বৌদ্ধযুগের নানা ধরনের মূর্তি, নানা প্রকারের আরবি ক্যালিওগ্রাফি, নানারকমের অস্ত্র, চীনামাটির শিল্পকর্ম, পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যবহৃত নানা ধরনের নির্যাতনের অস্ত্র, কত নাম না জানা শহিদের মাথার খুলি- সত্যি এখনো গা শিউরে ওঠে হানাদার বাহিনী কী নির্মমভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে।
তারপরেও আমাদের প্রিয় জন্মভূমির মাটি ও মানুষের চিত্র আমরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলাম। আরও দেখলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত চেয়ার, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এম এ জি ওসমানী, বেগম রোকেয়ার হাতে লেখা ডায়ারি। তবে সবচেয়ে যে বিষয়টি আমার মন আকৃষ্ট করল তা হলো চাল কুমড়া; এর গায়ের সাদা রং যেন অবিকল এখনই গাছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
আবার, আমাদের গ্রামীণ জীবনে যে কামার অনেক কষ্টে আর শক্তিতে লোহাকে আগুনে পুড়িয়ে নানা ধরনের জিনিস তৈরি করে। জাদুঘরে একেবারে পোড়া লোহাটি যেন আস্ত আগুনে পোড়া রঙে এখানে সংরক্ষিত- এগুলো যেন আবহমান বাংলারই চিরন্তন প্রতিচ্ছবি।
তবে তৃতীয় তলায় আসাদের রক্তমাখা শার্টটি দেখে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। মনের অজান্তে যেন চোখ ঝাপসা হয়ে উঠল। হৃদয়ের তারে বেজে চলল সেই বিখ্যাত গানটির সুর সালাম সালাম হাজার সালাম… ।
তুহিন বলল- সময় শেষ হয়েছে। কাজেই বিদায় নিতে হলো। তবে জাদুঘরের এ অভিজ্ঞতা ছাড়া এতদিন জীবনটা যে অপূর্ণ ছিল, তা মর্মে মর্মে অনুভব করলাম।