জানুয়ারীতে বাড়লো রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া

বাংলাদেশের ডলারের চাহিদা মেটানোর অন্যতম উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পালে হাওয়া লেগেগেছে । এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছিল , তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে বলা হচ্ছে —গত ডিসেম্বর মাসের পর চলতি জানুয়ারি মাসে ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি বেড়ে গেছে ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেমতে দেখা যায় , চলতি মাসের জানুয়ারির ২০ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ১৩১ কোটি ৫২ লাখ ৫০ হাজার ডলার পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ প্রবাসীরা। আর চলতি অর্থবছরের ছয় মাস ২০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশের ১ হাজার ১৮০ কোটি ৮৫ লাখ ডলার।

আর এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে এসেছে ৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার । রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকগুলো দিচ্ছে ১০৭ টাকা ।

এইসব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের বর্তমান গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বেস্ট অফটুডেকে বলেন , ‘গত বছরে বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গেছেন ।

তাদের অনেকে এখন রেমিট্যান্স পাঠানো শুরুও করেছেন । এছাড়া সামনে আগত রমজান মাস , সে কারণে প্রবাসীরা অনেকেই বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছেন।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যঅনুসারে , ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১৭০ কোটি ডলার বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলেন , যা ছিল আগের চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন ।

আবার সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার । আর অক্টোবর ও নভেম্বরে বাংলাদেশের এসেছিল যথাক্রমে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ও ১৫৯ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

অর্থাৎ সব মিলিয়ে গত চার মাসে প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স এসেছে । আবার জুলাই মাসে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার । এর পরের মাস আগস্টে আসে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার।

বাংলাদেশর ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন , জানুয়ারির প্রথম ২০ দিনে যে হারে রেমিট্যান্স এসেছে , মাসের বাকি ১১ দিনে যদি সেই হারে এলে এই মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ জুলাই ও আগস্ট মাসের মতো ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে তাদের মতামত । আর আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আর ও বাড়তে পারে বলে তাদের দারনা । কারণ , মার্চের শেষের দিকে রমজান মাস শুরু হয়ে যাবে । আর সাধারণত , রোজা এবং ঈদকে সামনে রেখেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়িয়ে দেন বাংলাদেশের প্রবাসীরা ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, প্রবাসীরা গত মাত্র ২০ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন ১৭ কোটি ৫১ লাখ ৪০ হাজার ডলার এ পর্যন্ত । আর বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন ৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার। আর বাকি ৪২টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১১০ কোটি ডলার।এবং বিদেশি ৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫০ লাখ ডলার ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে বলা হচ্ছে , ২০২২ সালে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন দেশে ।আর এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। ২০২১ সালে ২ হাজার ২০৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা বাংলাদেশে । আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই – ডিসেম্বর সময়ে ১ হাজার ৪৯ কোটি ৩২ লাখ ( ১০.৪৯ বিলিয়ন ) ডলার পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ প্রবাসীরা , যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। ২০২১ – ২২ অর্থবছরের প্রথমদিকে ৬ মাসে ১০ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল বাংলাদেশে।

২০২১ – ২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা , আর যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম । ২০২০ -২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল বাংলাদেশে , আর যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি ।

উল্লেখ্য , বিগত বছর রেকর্ড প্রায় সাড়ে ১১ লাখ লোক কাজের জন্য বিভিন্ন দেশে গেছেন বাংলাদেশ থেকে , যা আগের বছরের চেয়ে ৮৬ দশমিক ৩২ শতাংশই বেশি । আর ২০২১ সালে জনশক্তি রফতানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন বাঙালি ।