জান্নাতি রমনি রহিমা পর্ব : ১১

জান্নাতি রমনি রহিমা পর্ব : ১১

এরপর স্বামীর কাছে থেকে বিদায় নিয়ে খাদ্যের সন্ধানে আবার গ্রামের দিকে ছুটতে লাগলেন। গ্রামে থেকে গ্রামে এ বাড়ি সে বাড়ি অনেক ঘুরলেন কিন্তু কোথায়ও এতটুকু খাবারও মিলল না। এমনি করে ঘুরতে ঘুরতে এক বাড়ির
। সামনে এসে উপস্থিত হলেন। সে গৃহের স্ত্রী লোকটির কাছে নিজের দুঃখের কথা বর্ণনা করে। কিছু খাদ্য চাইলেন। কিন্তু স্ত্রী লোকটি বলল, এরূপ সাহায্য অনেক করেছি।

কোন লাভ হয় নি তাই আর করতে চাই না। যদি কিছু কাজ করতে পার তবে সে কাজের বিনিময়ে কিছু
খাবার পেতে পার। স্ত্রী লোকটির কথা শুনে রহিমা বলেন, বোন! কয়েক দিনের অনাহারে আমার শরীর খুবই দুর্বল। এ দুর্বল শরীরে কিভাবে কাজ করব? স্ত্রী লোকটি বলল কাজ করতে না পারলে পথ দেখতে পার। এরূপ ভিখারীকে ভিক্ষা দেয়া হবে না। স্ত্রী লোকটির কথা শুনে তার মনে ভাষণ আঘাত লাগল কিন্তু কি করবেন, কিছু খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারলে স্বামীকে বাঁচাবেন কি করে?

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

তাই বলেন, আচ্ছা বোন বলুন কি কাজ করতে হবে। স্ত্রী
লোকটি বলল, যাতায় আটা ভেঙে দিবে। তার বিনিময়ে মজুরি পাবে। রহিমা তাতেই সম্মত হল। এরপর দীর্ঘ সময় আটা পিষে বিনিময়ে কোন রকমে দুই জনের একবেলা পরিমাণ বাবার পেলেন। খাবার পেয়ে দ্রুত তিনি স্বামীর কাছে ছুটতে লাগলেন। আজ রহিমার পরম আনন্দ, তিনি যেন আজ এক বিরাট অসাধ্য সাধন করেছেন। অনাহারি স্বামীকে আজ খাবার খাওয়াতে পারবেন।।

এটা আজ তাঁর কাছে বড়ই আনন্দের কথা। দ্রুত পায়ে হেঁটে স্বামীর
কাছে এসে পৌঁছেই তিনি স্বামীকে খেতে দিলেন। আজ পরের ঘরে আটা পিষে মজুরির বিনিময়ে সামান্য আহার খাবার এনে তাই স্বামীকে নিয়ে পরম তৃপ্তিতে আহার করলেন। এরপর স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সারা রাত আল্লাহ্র ইবাদাতে নিমগ্ন হয়ে রইলেন। সারারাত আল্লাহর ইবাদাত মগ্ন থেকে ভোর বেলা আবার স্বামীর কাছে বিদায় নিয়ে গ্রামের দিকে
রওয়ানা করলেন।

মনে মনে ঠিক করলেন এখন আর কারও কাছে খাবার ভিক্ষা না চেয়ে গৃহিণীদেরকে কিছু কাজ করে বিনিময়ে যে মজুরি পাব তা দ্বারা জীবন চালাব। গ্রামে এসে কিছু না কিছু কাজ জুটে গেল। এরপর রহিমা প্রতিদিন গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে একটা না একটা
কাজ যোগাড় করে নিতেন। তবে যে কাজ যত কষ্ট সাধ্যই হোক না কেন তিনি তার সমাধা করে তার বিনিময়ে মজুরি পেয়ে কোন রকমে স্বামীর এবং নিজের জীবন চালাতে লাগলেন। একদিন হযরত আইউব (আঃ) বলেন, রহিমা আল্লাহ্ আমাদের প্রতি বড়ই মেহেরবান,
দুনিয়ার সব ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে এ নির্জন নীরব বনভূমিতে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন । যাতে আমরা নির্ঝঞ্জাটে তাঁর ইবাদত করতে পারি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই যে দুনিয়ার নিয়ম, নারীগণ হয় পুরুষের প্রতি নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের বেলায় হয়েছে এর বিপরীত।

স্বামীর কথা শুনে রহিমা বলেন, প্রিয়তম স্বামী!আপনি এ কথা বলে আমার ব্যথিত হৃদয়কে আর ব্যথা দিবেন না। দীর্ঘ পঁচিশ বছর আপনি আমাকে সুখ, শান্তি, ঐশ্বর্য, বিভিন্ন আরাম আয়েশে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠা নারীর সুখে সুখী রেখেছিলেন। আজ আপনার এ মহা দুঃখের দুর্দিনে আপনার পাশে থেকে আপনার সামান্যতম খিদমত করে আমার জীবনকে ধন্য এবং সার্থক করতে চাই।

স্বদেশ ছেড়ে এ নির্জন প্রান্তরে এসেও এক মুহূর্তের জন্যও স্বামী-স্ত্রী আল্লাহর নামকে ভুললেন না। দিবানিশি তাঁরা আল্লাহর নাম স্মরণ করেন। এ মহাব্যাধির তীব্র যাতনার মাঝেও হযরত আইউব (আঃ) সদা-সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকেন। আর রহিমা সারাদিন গ্রামে গিয়ে এ বাড়িতে সে বাড়িতে কাজ করে ভরন পোষণের
ব্যবস্থা করেন, আর সারা রাত ধরে স্বামীর খিদমত এবং আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকেন।

এটা দেখে ইবলীসের মনে আগুন জ্বলে উঠল। যেমন করেই হোক এদেরকে জব্দ করতেই হবে, এ পণ করে ইবলীস শয়তান এক বৃদ্ধার বেশ ধরে গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে জানিয়ে
দিল, যে স্ত্রীলোকটি তোমাদের কাজ করছে, তার স্বামী মহা সংক্রামক ব্যাধি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত। তাঁর সমস্ত শরীর পচে গিয়েছে এবং তা থেকে ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্ত্রীলোকটি তার যে হাত দিয়ে তাঁর কুষ্ঠ রোগী স্বামীর গলিত দেহ ধরছে আবার সে হাত দিয়ে তোমাদের কাজ করছে।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

কুষ্ঠ রোগের মত এমন সংক্রামক ছোয়াচে ব্যাধি আর নেই।অতএব তোমাদের যদি জীবনের মায়া থাকে তবে সে মহিলার দ্বারা আর কাজ করাবে না। এরপর পরদিন ভোরে রহিমা যখন গ্রামে কাজ করতে এলেন তখন সকল গৃহিণীই তাঁকে তাঁর স্বামীর রোগের কথা জিজ্ঞেসা করলেন।

তিনি গৃহিণীদের কাছে অকপটে সভা কথা খুলে বলেন। তাঁর কাছে তাঁর স্বামীর রোগের কথা শুনে তারা তাঁকে ভীষণ তিরস্কার করল । তার দ্বারা আর কোন কাজ করাবেনা বলে তাড়িয়ে দিল। গ্রামের কোন ঘরেই আর কাজ মিলিল না, সকল ঘর থেকেই তাকে দুর দুর করে তাড়িয়ে দিল ।

গ্রাম থেকে শূন্য হাতে ফিরে এসে শুধু পানি পান করে স্বামী-স্ত্রী রাত কাটিয়ে দিলেন। ক্লান্ত দুর্বল শরীরে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে করতেই রাত্রি ভোর হয়ে গেল। ভোর বেলা রহিমা বসে বসে ভাবছিলেন এখন কি করবেন। মনে মনে ভাবলেন, আজ দূরের কোন গ্রামে যাবেন।

কিন্তু এমন সময় কয়েকজন লোক এসে বলল, এমন ছোঁয়াচে কুষ্ঠ ব্যাধি নিয়ে তোমরা এখানের আলো বাতাসকে বিষাক্ত করে গ্রামবাসীকে বিপদে ফেলতে চাও? এখানে আর তোমরা
থাকতে পারবে না। এখনই এ মুহূর্তে তোমরা এখান থেকে দূরে চলে যাও। গ্রামের ধারে কাছেও যেন তোমাদের কখনও দেখা না যায়। আবার তাঁরা নতুন বিপদে পড়লেন। কিন্তু কি করবেন। তাই আল্লাহর উপর ভরসা করে রহিমা আবার স্বামীকে স্কন্ধে তুলে নিরুদ্দেশের পানে চললেন।

image

এরপর অজানা অচেনা পথে চলতে চলতে অবশেষে একটি পার্বত্য অঞ্চলে এসে পৌঁছলেন। দুই দিকে প্রসারিত সুদীর্ঘ পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে ঘন ঘোর অরণ্য ভূমি। এরই মধ্যে একটু খোলা ও পরিষ্কার জায়গা দেখে সেখানেই থাকবেন ঠিক করলেন। এরপর বৃক্ষ-শাখা পত্র দ্বারা একটি চালার মত তৈরি করে তার নিচে স্বামীকে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন । কিন্তু এ পার্বত্য অঞ্চলে থাকবার ব্যবস্থা হলেও খাদ্যের সন্ধানে গ্রামে যেতেই হবে ।

জান্নাতি রমনি রহিমা পর্ব

পাহাড়ের দুই পাশে অনতিদূরেই লোকালয় ও বসতি এলাকা। স্বামীর কাছে বিদায় নিয়ে রহিমা আবার লোকালয়ের দিকে চললেন। আল্লাহর কুদরত বুঝবার সাধ্য কারও নেই। আজ যে অগাধ ধন-রত্নে অধিকারী কাল
সে নিঃসহায় পথের কাঙাল। আজ যে বাদশাহ, কাল সে ভিখারি।

ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি হযরত আইউব (আঃ)-এর অবস্থাও তাই হয়েছে। একদিন তিনি ছিলেন বিপুল ঐশ্বর্যের অধিকারী।
আর আজ তিনি পথের ভিখারি। অর্ধাহারে অনাহারে মহাব্যাধির তীব্র যন্ত্রণায় জর্জরিত হযরত আইউব (আঃ)-এর জীবন আজ অবর্ণনীয় দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত।

এতদিন হযরত আইউব (আঃ)-এর দেহের ক্ষত পঁচে তাতে পুঁজ ঝরত ঠিকই কিন্তু এবার তাঁর দেহ থেকে গোশতও খসে পড়তে আরম্ভ করল । প্রত্যেকটি ক্ষতে পোকা জন্ম নিল  স্বামীর দেহের রক্ত ও পুঁজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *