জান্নাতি রমনি রহিমা
ধুয়ে মুছে ছাফ করতে বসে হঠাৎ ক্ষত স্থানগুলোতে পোকা দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে
ভাবতে লাগলেন, হায়রে এ পোকার তার জ্বালাতন কি তাঁর স্বামী সইতে পারবেন। তিনি তখন দুই হাতে স্বামীর দেহের ক্ষত হতে পোকা বাছতে লাগলেন। কিন্তু পোকা যত বেছে।
কমান, পোকা ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে। অসংখ্য পোকার কামড়ে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে হযরত আইউব (আঃ) হাত পাও আছড়িয়ে সদ্য জবেহকৃত জন্তুর ন্যায় ছটফট করতে থাকেন । স্বামীর এমন নিদারুণ কষ্ট রহিমা আর সহ্য করতে পারেন না দুঃখ কষ্টে তাঁর কলিজা ফেটে যেতে চায়। স্বামীকে এ অবস্থায় একা ফেলে এখন আর রোজ গ্রমের দিকে যাওয়া সম্ভব নয় । স্বামীর পাশে বসে সব সময়ই পোকা বাছতে হয়।
কয়েকদিন শুধু পানি পান করেই তারা কাটিয়ে দেন। কিন্তু শুধু পানি পান করে আর কয়দিন চলে। তাই সাতদিন অভুক্ত থেকে আবার একদিন কাজের সন্ধানে গ্রামে বের হন। যদি কাজ করে বিনিময়ে কিছু খাবার জোটে।একদিন গ্রামে গিয়ে ভিক্ষা কিংবা কাজ করে যা পান তা আহার করে এরপর শুধু পানি পান করে সাত দিন কাটিয়ে দেন। এমনি করে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেটে যায়। কিন্তু ইবলীস শয়তান তো পিছনে লেগেই ছিল। সে এবার নতুন শত্রুতা শুরু করল।
রহিমা যে সব গ্রাম ভিক্ষা কাজের জন্য গমন করতেন ইবলীস একটি বৃদ্ধার বেশ ধরে সে সব গ্রামে গিয়ে সে এবার অপবাদ রটাতে লাগল। মহা পাপীষ্ঠ ইবলীস ঘরে ঘরে গমন করে দুনিয়ার সেরা সতী নারী রহিমার নামে অপবাদ রটাল যে, নারীটি তোমাদের গ্রামে এসে ভিক্ষা ও কাজ কর্ম করে, তা তাঁর বাইরের রূপ।আসলে সে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায় আর তথাকার ছেলে পেলেদের নষ্ট করে। একে যদি তোমাদের গ্রাম থেকে তাড়িয়ে না দাও
তাহলে তোমরা মহাবিপদে পড়বে। তোমাদের গ্রামের সব ছেলে পেলেদের নষ্ট হবে তোমাদের গ্রামের সব ছেলে এবং পুরুষেরা দুশ্চরিত্র হয়ে পড়বে।
বৃদ্ধা রূপী ইবলীস শয়তানের প্ররোচনায় গ্রামের সব গৃহিণীই প্ররোচিত হয়ে পড়ল। পরদিন রহিমা যখন গ্রামে এল তখন সকলেই তাঁকে দেখে ছি, ছি, করে উঠল এবং অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে তাড়িয়ে দিল। গ্রামে গৃহিণীদের মুখে এসব নিকৃষ্ট বাক্য শুনে লজ্জায় ঘৃণায়, দুঃখে রহিমার হৃদয় ফেটে যেতে চাইল। মনে মনে বলেন, হায়রে! দুনিয়ার মানুষ এত নিষ্ঠুর নির্দয়। এরূপ কলঙ্ক অপবাদ এরা আমাকে দিল। রহিমা এখন কি করবেন
ভেবে পান না। তাঁর অনাহারী ক্ষুধার্ত স্বামীকে তিনি কি খেতে দিয়ে প্রাণ রক্ষা করবেন।
সে চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন। তিনি শূন্য হাতে গিয়ে কি করে স্বামীর সামনে দাঁড়াবেন এমনি ভাবতে ভাবতে তিনি পথ চলতে লাগলেন। চলতে চলতে তার সামনে ভেসে উঠল রুগ্ন স্বামীর অনাহারক্লিষ্ট শুষ্ক মুখ।
মুহূর্তে তিনি নিজের প্রতি দুর্নাম ও অপবাদ আরোপের কথা ভুলে গেলেন। স্বামীর জন্য কিছু খাবার যোগাড় করার আশায় আবারও ধীরে ধীরে একটি বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলেন। বাড়ির গৃহকর্ত্রী দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল । রহিমার নিজের দুঃখের কথা বলে তার কাছে স্বামীর জন্য কিছু খাবার চাইলেন।
গৃহিণী রুক্ষ মেজাজে বলল,স্বামীর জন্য যখন এতই দরদ তখন গায়ে খেটে কাজ করে স্বামীকে খাওয়াতে পার না ভিক্ষা চাইতে এসেছে কেন? কাজ করতে পার না? গৃহিণীর কথায় রহিমার মনে বড়ই ব্যথা লাগল। স্বামীকে খাইয়ে তারপর আবার ফিরে আসবি। চালাকির আর জায়গা পাওনি। যাও,একখানি दूঠার এনে তা রহিমার হাতে দিয়ে একও दृহৎ কाঠ দেখে कঠ गाনা । বলল। গৃহিণী যে রহিমাকে কাঠ চিড়াবার মত কঠিন কাজ করতে বলবেন া তিনি কন।। কঠিন কাজ করা সম্ভব নয়।
এত দুর্বল শরীর নিয়ে তিনি এমন কঠিন কাজ করবেন করে। দুর্বলতায় রহিমার শরীর কাঁপছিল। কিন্তু তবু স্বামীর খোরাক আজ তাকে যোগার করতে হবে। হায়রে আদৃষ্ট। যার সেবার জন্য শত সহস্র দাসী পরিচারিকা প্রতি মুহূর্তে মোতায়েন থাকত, আজ সিরিয়ার সে সম্রাজ্ঞী কে পরগৃহের কাঠ চিড়ে স্বামীর ও নিজের ক্ষুধার
যোগাড় করতে হচ্ছে। আল্লাহর নাম নিয়ে কুঠার থানা হাতে নিয়ে পরম প্রভুকে বলেন, মাবুদ। আপনিতো সবই জানেন, সবই দেখছেন। প্রভু! আপনি আমার শরীরে শক্তি দান করুন।
এরপর বিসমিল্লাহ বলে তিনি কাঠ চিড়তে আরম্ভ করলেন। কাঠ থানা চিড়তে দীর্ঘ সময় লেগে গেল। বিনিময়ে গৃহিণী তাঁকে কিছু খাদ্য দিল। রহিমার শরীরে হাঁটবার মত আর শক্তি ছিল। না। কিন্তু তবু তাকে তো বসে থাকলে চলবে না। খাবার নিয়ে তাড়াতাড়ি তাঁকে স্বামীর কাছে যেতে হবে। তাই কষ্টকে উপেক্ষা করে তিনি দ্রুত বেগে স্বামীর কাছে ছুটতে লাগলেন।
রহিমা খাবার নিয়ে যখন স্বামীর কাছে এসে পৌঁছলেন তখন রোগ যন্ত্রণায় এবং পোকার কামড়ে তিনি ছটফট করছিলেন। রহিমা দ্রুত দুই হাতে স্বামীর শরীরের পোকা বাছতে লাগলেন, কিছুক্ষণ পোকা বেছে এরপর পরিষ্কার করে স্বামীকে খেতে দিলেন। কত দিন অনাহারী থাকার পর আজ তারা আবার তৃপ্তি সহকারে আহার করলেন। এরপর একদিন দুদিন করে আবার কয়েকদিন, চলে গেল কিন্তু ভিক্ষা বা কাজ কোন কিছুই কোথাও জুটল না। দিনের পর দিন শুধু পানি পান করেই জীবন ধারণ চলতে লাগলেন।
এরূপে কয়েকদিন চলার পর রোগাক্রান্ত হযরত আইউব (আঃ) ক্ষুধার কাতরতায় একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়লেন। কথা বলার মত শক্তিও আর তাঁর রইল না। স্বামীর অবস্থা দেখে রাহিমা যেতে তাঁর মন চায় না তবুও কিন্তু অন্নের যোগাড় করার জন্য তিনি স্বামীর কাছে অনুমতি কিন্তু অনুনিতে রাজী হল না।
সকলেই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। অনাহারক্লিষ্ট। নিয়তি। সিরিয়ার বাদশাহ বেগমের আজ কি মহা করুণ দুঃখের জীবন। ক্ষুধার্ত স্বামীর কাছে এভাবে শূন্য হাতে ফিরে রহিমার হৃদয় ফেটে যেতে চাইল। হায়রে নিয়তি সিরিয়ার বাদশাহ বেগমের আজ কি মহা করুন দুঃখের জীবন।