জান্নাতি রমনি রহিমা পর্ব : ১৫

জান্নাতি রমনি রহিমা 

*****মিথ্যা অপবাদ****

রহিন যখন মুত খাদ্য দ্রব্যাদি নিয়ে স্বামীর কাছে ফিরছিলেন ইবলীস তখন আর এক
হিণীর কাছে উপস্থিত হবে। কেশ রাশি নিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর রহিমা এর নামে মিথ্যা দুর্নাম ও অপবাদ দিয়ে স্বামীর মনকে বিষিয়ে দিয়ে স্বামীর কাছ থেকে রহিমাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার দূরভিসন্ধি করে ছদ্মবেশ ধারণ করে হযরত আইউব আপনাকে বড়ই একটা কেলেংকারীর কথা বলতে এসেছি। আপনি আল্লাহর নবী হয়েও (আঃ)-এর কাছে উপস্থিত হল।

এরপর ইবলীস হযরত আইউব-কে বলল, “হে নবী বর।” আপনার এমন দুর্ভাগ্য! আপনি তো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন, কোন কিছুর খোঁজ – কলংকের সাগরে ডুবিয়ে মারল। আপনার স্ত্রী রহিমা অন্যের ঘরে চুরি করতে গিয়ে ধরা রাখতে পারছেন না। কিন্তু আপনার স্ত্রী রহিমা যে নিজেরও সর্বনাশ করল, আপনাকেও পড়েছে। হযরত আইউব (আঃ) বলেন, এটা অসম্ভব কথা, এটা আমি বিশ্বাস করি না।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা কখনই হতে পারে না। রহিমার মত উত্তম চরিত্রের মেয়ে কখনও এমন কাজ করতে পারে না। ইবলীস বলল, আপনিতো বিশ্বাস করছেন না, কিন্তু এ দেখুন স্ত্রীর মাথার চুল! আপনার স্ত্রী গৃহস্থের ঘরে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ায়, লোকগণ শাস্তি স্বরূপ আপনার স্ত্রীর মস্তক মুণ্ডন করে তবে ছেড়ে দিয়েছ।

আমার একথা সত্য না মিথ্যা তা আপনার স্ত্রী এলেই তার মুণ্ডিত মস্তক দেখেই বুঝতে পারবেন। এ কথা বলে ইবলীস শয়তান বিদায় হয়ে যায়। শয়তানের কথায় হযরত আইউব (আঃ) ব্যথিতচিত্তে ভাবলেন,
“হায়! রহিমা স্বামীর সেবার নামে শেষ পর্যন্ত চুরি করল?

এমন অধপতন রহিমার কেমন করে ঘটল? আমার যে আর কিছুই রইল না।” ঠিক এমনি সময়ে খাদ্য সম্ভার নিয়ে রহিমা স্বামীর কাছে উপস্থিত হলেন। কিন্তু রহিমার মুণ্ডিত মাথার দিকে চেয়ে নবীবরের চোখ দিয়ে অশ্রুর ধারা নামল । তিনি অপেক্ষাকৃত উচ্চকণ্ঠে বললেন, রহীমা! তুমি আমাকে স্পর্শ করও
না। দূরে থাক। রহিমা দীর্ঘ আঠার বছর ধরে স্বামীর কাছে থেকে এমন কর্কশ ব্যবহার কখনও লাভ করেন নি। তাই তিনি অধীর হয়ে ব্যথিতচিত্তে বলেন, স্বামী! আমি আপনার কাছে কি অপরাধ করেছি, কি জন্য আমার প্রতি এমন নাখোশ হয়েছেন? কোন অপরাধে অপরাধিনী এ দাসী ।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

অভাগিনীর উপর এত নির্মম হলেন কোন অপরাধে বলুন ! স্বামীন ! আমি এত দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে আপনার এ সব খাদ্যদ্রব্য যোগাড় করে এনেছি। কিন্তু তাও
আপনি গ্রহণ করছেন না। ব্যাপার কি? বলুন স্বামী! আপনি আমার কি অপরাধ শুনেছেন। স্বামী! আমি অপরাধ করে থাকলে আমার মার্জনা করুন। হযরত আইউব (আঃ) বলেন,রহিমা! আমি যতই বিপন্ন হই না কেন, পাপের প্রশ্রয় আমি কখনই দিতে পারি না। তুমি আমার কাছে এসও না। তোমার সংগৃহীত খাদ্য-দ্রব্যাদি নিয়ে এ মুহূর্তেই আমার কাছ থেকে প্রস্থান কর। আমাকে বিরক্ত করও না।

তুমি চুরি করে এনে আমাকে খানা খাওয়াচ্ছ। এটা
তোমাকে কে বলেছে? এত বড় অধপতন তোমার কি করে হল। তুমি কি অপরাধ করেছ তা বুঝতে পারছ না? কিন্তু তুমি যে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এবং শাস্তি স্বরূপ তোমার চুল কেটে রাখা হয়েছে, সে প্রমাণ তো তোমার মস্তকেই বিদ্যমান। রহিমা! তুমি নিজে পাপ করলে আমাকেও কলঙ্কিত করলে।

এ পাপের জন্য তোমাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই স্বামীর কথা শুনে রহিমা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তিনি বুঝতেই পারছেন না। কে এসে তাঁর স্বামীর কাছে এভাবে তাঁর নামে মিথ্যা দুর্ণাম অপবাদ রটিয়ে গেল। তিনি স্বামীর কাছে
সত্য ঘটনাটি খুলে বলেন। কিন্তু স্বামী তাঁর কথা বিশ্বাসই করলেন না। রহিমা স্বামীর এরুপ নিষ্ঠুর আচরণে বিস্মিত হয়ে গেলেন। স্বামীর নির্মম কঠোর কথার আঘাতে রহিমার কোমল হৃদয় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। তিনি কাঁদতে আরম্ভ করলেন। চোখের পানিতে তাঁর বুক ভেসে গেল।

তিনি সারা রাত শুধু কেদে কাটালেন আর আল্লাহর কাছে মুনাজাত করে বলতে লাগলেন, ওহে দয়াময় প্রভু! আপনি অন্তর্যামী। আপনি সব কিছুই দেখেন, সব কিছুই এতটুকু শান্তির জন্য নিজের জীবনকে বিসর্জন দিতে পারি, তার অন্তরে কি করে এমন মিথ্যা। ভ্রান্ত ধারণার সৃষ্টি হল। কে আমার নামে এমন মিথ্যা দুর্নাম রটনা করল? প্রভু! আপনি তো জানেন।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

আপনি আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আপনি আমার স্বামীকে সত্য ঘটনা জানিয়ে দিন । প্রভু! আমার স্বামী যদি আমাকে অবিশ্বাস করেন তবে আমার জীবন ধারণ করে কি লাভ হবে? তার চেয়ে মৃত্যুও অনেক ভাল। মা’বুদ আমার স্বামী যদি আমাকে বিশ্বাস না
করেন তবে এ পৃথিবীতে থেকে আপনি আমাকে আপনার কাছে তুলে নিন। আর এদিকে হযরত আইউব (আঃ) ও অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যে, যদি আল্লাহ্আমায়দেখুনমাকে কোনদিন রোগমুক্ত করেন তাহলে আমি রহিমার পিঠে একশত দোররা মেরে শাস্তি প্রদান করব।

এরপর সারা রাত তিনি আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়ে দিলেন। ভোর বেলা তিনি দেখলেন, তার ক্ষতস্থান থেকে দুটি কীট ঝরে পড়েছে, নবী তখন হাত দিয়ে কীটদ্বয়কে
উঠিয়ে আবার তার শরীরে স্থাপন করে বলেন, আল্লাহ্ তোমাদেরকে আমার শরীরে আহার দিয়াছেন। তোমরা চলে যাচ্ছ কেন? এবার কীটদ্বয় তার দেহের ভিতরে ঢুকে খুব জোরে কামড়াতে লাগল। পোকার কাপড়ে অস্থির হয়ে নবী বললেন, “মাবুদ! গত আঠার বছর পর্যন্ত কীটে আমাকে কামড়িয়েছে কিন্তু এমন তীব্র যন্ত্রণা কখনও অনুভব করি নি।”

*****পরিস্থিতির পরিবর্তন****

সারা রাত ধরে রহিমার হৃদয় নিংড়ান করুণ মিনতি শ্রবণ করে আল্লাহ্ পাকের আরশ
পর্যন্ত কেঁপে উঠল । আল্লাহ তাঁর প্রিয় দাসীর এ করুণ কান্না আর সহ্য করতে পারলেন না। আল্লাহ্ পাক জিব্রাাঈল ফেরেশতাকে ডেকে বলেন, জিবরাঈল! তুমি এখনই দুনিয়াতে গিয়ে আমার প্রিয় দোস্ত আইউব নবীর ভুল সংশোধন করে এস। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের আদেশের সাথে সাথে ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) হযরত আইউব (আঃ)-এর কাছে আগমন
করে বললেন, ওহে আল্লাহর নবী! আপনি দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠা নির্মল পবিত্র চরিত্রের রমণী রহিমাকে কে অযথা দোষারোপ করে তার হৃদয়ে আঘাত দিয়েছেন। যে আপনার কাছে এসে রহিমার নামে মিথ্যা দুর্নাম রটিয়ে গিয়েছে সে মহাপাপী অভিশপ্ত ইবলীস। আপনাদের কাছে রহিমা যা বলেছে তাই সত্য ঘটনা।

এ কথা বলে জিব্রাঈল (আঃ) চলে গেলেন। জিবরাঈল (আঃ)-এর কাছে সত্য কথা জানতে পেরে হযরত আইউব (আঃ)-এর অন্তর থেকে সকল
বেদনা দূর হয়ে আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠল। তিনি রহিমাকে ডেকে বলেন, রহিমা! আমি না বুঝে তোমার মনে কষ্ট দিয়েছি। অভিশপ্ত ইবলীসই এ কান্ড ঘটিয়েছিল। ইবলীস ছদ্মবেশে আমার কাছে এ মিথ্যা ঘটনা রটনা করেছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পূর্বে আল্লাহ্ পাক জিবরাঈল
(আঃ)-কে পাঠিয়ে আমাকে সত্য ঘটনা জানিয়ে দিয়েছেন। স্বামীর কথা শুনে রহিমার হৃদয় থেকে পাহাড় সমান ব্যথার পাথর নেমে গেল। তিনি পুনরায় স্বামীর খিদমতে নিয়োজিত হলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *