জান্নাতি রমনি রহিমা পর্ব : ২

জান্নাতি রমনি রহিমা

হযরত আইউব (আঃ) একদিকে যেমন আদর্শ বাদশাহ, মহান শাসক এবং অন্যদিকে তাঁর আদর্শ ও সুন্দর শাসন এবং ন্যায়পরায়ণ বিচারে দেশের জনগণ সুখেই বাস করে ছিলেন। মহান শাসক দেশের স্বার্থে, প্রজার স্বার্থে জনসাধারণের উপকারার্থে সরকারী অর্থসমূহ ব্যয় করেও মনে আনন্দ পান না।

তাই নিজের ব্যক্তিগত অর্থ-ভাণ্ডার থেকে জনসাধারণের কল্যাণার্থে অর্থ ব্যয় করে থাকেন। শ্যাম দেশের জনগণ এমন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক পেয়ে তারা যেমন সুখী তেমনি ধন্য এবং সার্থক । আল্লাহ্ হযরত আইউব (আঃ)-কে যেমন অতুলনীয় ঐশ্বর্য এবং ধন-সম্পদ দান করেছেন, তেমনি তিনিও সে ধন সঞ্চয় না করে মুক্তহস্তে জনসাধারণের উপকারার্থে খরচ করে থাকেন।

কিন্তু আল্লাহ্ যাকে মুক্তহস্তে অতুল সম্পদ দান করেন, তিনি আর কত খরচ করবেন কত আর দান করবেন। তাই তাঁর ব্যক্তিগত ধনভাণ্ডার থেকে রাশি রাশি অর্থ ব্যয় করেও তার ধন-ভাণ্ডার শূন্য হচ্ছে না। তিনি যতই খরচ করেন তাঁর ব্যক্তিগত ধনভাণ্ডার ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই এ অগণিত ও অপরিমিত ধন-সম্পদে গড়ে উঠেছে বাদশাহ আইউব (আঃ)-এর সৌধমালা।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

তিনি যে রাজপ্রাসাদে বাস করেন তা কারুকার্য খচিত নয়নাভিরাম দৃশ্যসমূহ দর্শকের চোখে এবং মনে শান্তির ধারা বর্ষণ করে। প্রাসাদের চারদিকে মূল্যবান পাথরে গড়া চারি দেয়াল সুউচ্চ তোরণ চতুষ্টয় সবার মনে অনাবিল। প্রাসাদের প্রতিটি তোরণে শত শত সৈনিক ও দ্বার রক্ষক দণ্ডায়মান। তাদের অনুমতি ছাড়া কারও ভিতরে প্রবেশ করার সাধ্য নেই। রাজ প্রাসাদের মধ্যে বেগমের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত পৃথক পৃথক কক্ষ।

এ সব কক্ষের ও সৌন্দর্য রক্ষা করতে অসংখ্য দাসী ও পরিচারিকা সদা নিয়োজিত। তা ছাড়া প্রাসাদের ভিতর আরো রয়েছে মণি-মুক্তা খচিত রংমহল, খাসমহল, রত্নাগার ও মনোমুগ্ধকর ইবাদতখানা। তা তৈরি হয়েছে বাদশাহর বেগমের জন্য, যথা সময়ে এখানে এসে তাঁরা মহাপ্রভু আল্লাহ্ তায়ালার ইবাদত করেন। বাদশাহ আইউব (আঃ)-এর রাজদরবারটিও অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

এ বৃহৎ প্রাসাদের ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে বাদশাহর পাত্র-মিত্র ও অমাত্যগণ অবস্থান করেন। বাদশাহের দরবারে শুধু তাঁর পাত্র-মিত্র ও অমাত্যগণই পূর্ণ করে তোলেন তাই নয়। তাছাড়াও বিভিন্ন জ্ঞানী-গুণী ও সুধীবৃন্দ এসে রাজ দরবারকে শোভিত করে তোলেন। বাদশাহ যখন দরবারে প্রবেশ করেন তখন উপস্থিত সভাসদগণ তাঁকে সম্মান করে সম্ভাষণ জানান। এরপর শুরু হয় দরবারের কাজ।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

তিনি করেন বিচার আচার, শোনেন বাদী-বিবাদীর ফরিয়াদ। তাছাড়াও রাজদরবারে আলোচিত হয় জ্ঞানী, গুণী ও সুধবৃিন্দের বিভিন্ন বিষয়ের তত্ত্ব ও তথ্য বিষয়ক আলোচনা। হযরত আইউব (আঃ)-এর রাজদরবার ছিল একটি আদর্শ রাজদরবার। দেশের জনগণ এ রাজদরবারের প্রতি যেমন ছিল খুশি তেমনি শ্রদ্ধাশীল।

হযরত আইউব (আঃ) এত সুখ-শান্তি, এত সুনাম, যশ, সমৃদ্ধি এবং এত সব কাজ কর্মের মধ্যে ডুবে থেকেও এক মুহূর্তের জন্যও তিনি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কথা ভুলে থাকতে পারেন না। দিনরাত সদা-সর্বদা তিনি পরম প্রভুর স্মরণ করেন।

তিনি যখন ইবাদতখানায় প্রভুর ইবাদতে নিমগ্ন হন, তখন তাঁর ভাব দর্শন করে মনেই হয় না যে তিনি ইবাদতে কিংবা এ দুনিয়ায় বর্তমান রয়েছেন। তিনি যখন প্রিয় মা’বুদের ইবাদত করেন সে সময় তাঁর পার্থিব জগতের কোন লক্ষ্য থাকে না। এ সময় কেউ তাঁকে ডেকে কিংবা তাঁর শরীরে আঘাত করলেও তার কোন সাড়া পাওয়া যায় না। হযরত আইউব (আঃ) শুধু একজন আদর্শ বাদশাহই নন, তিনি একজন নবীও। তাই তিনি শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, নবী হিসেবে তিনি তাঁর দায়িত্ব এবং কর্তব্য প্রাণপণভাবেই পালন করেন।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

তিনি সদা-সর্বদা পথভ্রষ্ট মানুষকে আল্লাহ্র তৌহীদের বাণী শিক্ষা দিয়ে সরল সঠিক পথে চালিত করতে চেষ্টা করেন। তিনি দুনিয়ার বাদশাহী কার্যাদির চেয়ে নবুয়তের দায়িত্বকেই সর্বদা অধিক গুরুত্ব দেন। তিনি প্রজাদের পারলৌকিক মঙ্গল বিধানের জন্য ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি বর্জন করে। একজন সদা-সর্বদা আল্লাহর দ্বীন প্রচার কাজেই ব্যস্ত থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *