জান্নাতি রমনি রহিমা পর্ব : ৩

জান্নাতি রমনি রহিমা

পুণ্যবতী রহিমা ধর্মী পিতার একমাত্র আদরের দুলালী। জন্মবধি পিতার প্রাচুর্যের সংসরে লালিত পালিত তিনি। জীবনে এক মুহূর্তের জন্যও কখনও তাঁকে দুঃখের মুখ দেখতে হয়নি। পিতার গৃহের চেয়েও স্বামীর ঘরে প্রাচুর্য ও সুখ-সমৃদ্ধি তাঁর আরও অধিক। তিনি এখন ধবল পরাক্রমশালী বাদশাহর সর্বাধিক প্রিয় বেগম।

স্বামী ঘরে তাঁর আদেশ পালনের জন জাতি মুহূর্তেই নিয়োজিত থাকে অসংখ্য দাসী ও সেবিকা। কিন্তু এরূপ বিলাস বহুল জীবনরে তিনি ঘৃণা করেন। রহিমা এত বড় বাদশাহর বেগম এবং নবী-পত্নী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মান এতটুকু অহঙ্কার বা গর্বের লেশ মাত্র নেই।

image

ঘরের সমস্ত কাজ-কর্ম, স্বামীর খিদমত ও পরিচর্যার তার তিনি নিজের হাতেই তুলে নিলেন। তিনি এত সুখ-শান্তি ও সম্পদশালিনী
হয়েও কখনও ধর্ম বিমুখ বা অলস ছিলেন না। রাজ-প্রাসাদের অন্দর মহলের সকল দায়িত্ব এবং সকল বিষয়ের তদারক, পরিচারিকাদের আদেশ নির্দেশ এমনকি স্বামী ও জোর পতিসদের আহার-বিহার, আরাম-আয়েশ ও সেবা-যত্নের ভার নিজের হাতে গ্রহণ করেন।

রহিমা রাজ প্রাসাদের সুখ-শান্তি, ঐশ্বর্গ এবং প্রাচুর্যের মাঝে বাস করেও তিনি সদা সর্বদ আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। তিনি যে বাদশাহর বেগম সে কথা ভুলে গিয়ে অতি দীন। ন্য মহাপ্রভু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ধ্যান মগ্ন ও অচৈতন্য স্বামীর সেবারই নিয়োজিত থাকেন।

হযরত আইউব (আঃ)-কে আল্লাহ যত সময় অতিবাহিত করেন। দিনরাত সর্বক্ষণ তিনি আল্লাহর ধ্যানে এবং প্রাণ প্রিয়। সুখ-শান্তি আল্লাহ খুব কম লোককেই দান করেছেন।

কিন্তু তিনি এত বড় দেশের বাদশাহ করেছিলেন, তাকে যে বিরাট বাদশাহী দান করেছিলেন এবং তাঁর মত হয়ে কিংবা এত বিশাল অতুলনীয় অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েও এক মুহূর্তের জন্যও তিনি।আল্লাহকে ভুলে থাকেন নি। দিনরাত সবসময় তিনি আল্লাহর ইবাদতেই ডুবে থাকেন। মানুষ তার ইবাদতের কথা শুনে বিস্ময় হয়ে যেতো।

*********রহিমার মর্যাদা*******
হযরত আইউব (আঃ)-এর পত্নীদের মধ্যে রহিমাই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠা এবং সর্বাধিক প্রিয় পত্নী। রহিমার মত সুন্দরী ও রূপবতী নারী তৎকালীন জগতে দ্বিতীয় আর কেউই ছিল না। তিনি যেমন রূপবতী ছিলেন তেমনি তিনি গুণবতীও ছিলেন। তাঁর স্বভাব-চরিত্র এবং গুণ পরিমার এত বেশি সুখ্যাতি ছিল যে শাম দেশের জনগণ সদা-সর্বদা তাঁর গুণ চর্চায় মুখর থাকত।

image

আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের প্রতি হযরত রহীমার ছিল অগাধ বিশ্বাস এবং ভক্তি। বিশাল শাম রাজ্যের রাজরাণী হয়েও তিনি দিনরাতে সুদীর্ঘ সময় আল্লাহর ধ্যান এবংইবাদতে নিমগ্ন থাকতেন। রাজপ্রাসাদে শত শত দাসী ও সেবিকা থাকা সত্ত্বেও স্বামীর সকল সেবা ও পরিচর্যা রহিমা নিজের হাতেই করতেন।

স্বামীর আহার্য নিজের হাতে রান্না না করে, স্বামীকে নিজ হাতে খাওয়াতে না পারলে তিনি মনে শান্তি পেতেন না। নিজের আহারেও মন বসত না স্বামীর সেবায় সপত্নীদেরও অধিকার আছে, কিন্তু রহিমা মধুর ব্যবহারে তাঁদের মন জয় করে তাঁদের দায়িত্বও নিজের হাতে গ্রহণ করতেন। রহিমা প্রাণ ভরে তৃপ্তির সাথে স্বামীর সেবায় দেহ-মন উৎসর্গ করতে পেরে নিজেকে ধন্য এবং সার্থক মনে করতেন।

সপত্নীর জ্বালা সংসারে বড় জ্বালা, সপত্নীকে ঈর্ষা করে না এমন নারী দুনিয়াতে বিরল কিন্তু হযরত আইউব (আঃ)-এর সংসারের অবস্থা ছিল ব্যতিক্রম। রহিমা তাঁর মধুর ব্যবহার দ্বারা জ্যোষ্ঠা সপত্নীত্রয়কে এমনভাবে মুগ্ধ করেন যে, তাঁরা ভুলেই গেলেন রহিমা তাঁদেরসপত্নী।

image

বরং ছোট বোনের মত মনে করে স্নেহের বাঁধনে আবদ্ধ করেন। কারও মনে কোন কালিমা কলুষ কিংবা কোন হিংসা, বিদ্বেষ বা ঈর্ষা নেই। সবার মনেই যেন আনন্দ অনুভব রহিমা যেমন মন-প্রাণ উৎসর্গ করে স্বামীর সেবা করেন তেমনি সপত্নীদের সেবা যত্ন ও পরিচর্যার ভার শুধুমাত্র দাসীদের হাতে ন্যস্ত না করে অধিকাংশই নিজের হাতে সম্পন্ন করেন।

তাঁর কাজে তাঁর সপত্নীগণ আপত্তি জানালে তিনি হেসে মধুর কণ্ঠে বলেন, আপনারা আমার জোষ্ঠা ভগ্নী হয়ে কনিষ্ঠা ভগ্নী দ্বারা খিদমত নিবেন না তো কার খিদমত নিবেন? যদি আপনারা আমাকে ছোট বোনের মত ভালইবাসেন তা আপনাদের সেবা করে একটু পূণ্য সঞ্চয় করব তাতে বাধা দিবেন কেন?

রহিমার কথা শুনে তাঁরা আনন্দে হয়ে উত্তর দিলেন, তুমি নারী জগতের গৌরব। আল্লাহ তোমাকে মহাসম্মানে ভূষিতা করবেন।” তাঁদের কথার উত্তরে রহিমা বলেন, ভগ্নীগণ! আমার কোন মান-সম্মানের প্রয়োজন নেই। দোয়া করুন যেন আমি শুধু আমাদের স্বামীর ও আপনাদের শাস্তির কারণ হয়ে থাকতে পারি।

সপত্নীগণ খুশি। হয়ে বলেন, আল্লাহ তোমার নেক মনোবাঞ্ছনা পূর্ণ করুন। এমনি করে আনন্দের মাঝেই রহিমা ও তাঁর সপত্নীগণের দিন চলতে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *