জান্নাতি রমনি রহিমা শেষ পর্ব

জান্নাতি রমনি রহিমা শেষ পর্ব

****মহাপরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল****

হযরত আইউব (আঃ) এবং রহিমা-এর প্রতি আল্লাহ্র মহা কঠিন পরীক্ষার যখন আঠার দিলেন। এত কঠিন রোগেও কোনদিন তিনি আল্লাহ্‌কে ভুলে নি। কিন্তু এবার পোকার বছর পূর্ণ হল। সবুর ও শোকরে নির্ভর করে হযরত আইউব (আঃ) আঠার বছর কাটিয়ে দরবারে কি গোনাই করেছি বুঝতে পারছি না, হে দয়াময় প্রভু! আপনি ক্ষমাকারী এবং পরম কামড়ে অধীর হয়ে তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন, ওহে মা’বুদ! আমি আপনার
দয়ালু। দয়া করে আমায় মাফ করে দিন।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় বান্দা হযরত আইউব (আঃ)-এর এ আরয কবুল করলেন। হযরত আইউব (আঃ) আল্লাহর দরবারে এরূপ প্রার্থনা করার সাথে সাথে আল্লাহর আদেশে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) নবীর কাছে আগমন করে। বলেন, “হে আল্লাহ্ নবী। আপনি কিসের জন্য এত অস্থির। হযরত আইউব (আঃ) বললেন,
“আমি পোকার কামড়ে ভীষণ যাতনা ভোগ করছি, আর সহ্য করতে পারছি না।

গত আঠার বছর আমি যত কষ্ট পেয়েছি এখন তার দ্বিগুণ অনুভব করছি।” জিব্রাঈল (আঃ) বলেন, আপনি নিজেইতো আপনার এ দুঃখ নিয়ে ছিলেন আঠার বছর যাবত এত দুঃখ-যাতনা পাওয়া সত্ত্বেও কেন আপনি আবার তা শরীরে ধারণ করলেন। এখন কেন এত অস্থির হলেন। আল্লাহ
কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে দুঃখ দিতে চান না।

আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে যে যা চাইবে আল্লাহ তাকে তাই দান করবেন।” হে আল্লাহ্র নবী! আল্লাহর নির্দেশে বলছি, আপনি আপনার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহ্র দরবারে মুনাজাত করুন। এ বলে হযরত জিবরাঈল (আঃ) অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হযরত আইউব (আঃ) জিব্রাঈল (আঃ)-এর নির্দেশ শুনে করুণ ভাবে প্রিয়
মা’বুদের কাছে প্রার্থনা করলেন-আয় মা’বুদ! ওহে দয়াময় প্রভু! তুমি জান আমি তোমার দরবারে কি গুনাহ করেছি। তুমি ব্যতীত তা আর কেউই ভাল জানে না। প্রভু! তুমি তোমার বান্দার প্রতি যত মেহেরবান তেমন মেহেরবানী করার মত দুই জাহানে আর কেউই নেই।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

”হযরত আইউব (আঃ) আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করার সাথে সাথে আকাশ থেকে অদৃশ্য আওয়াজ এল-ওহে নবী! আপনি এ সবকে দুঃখ বলে মনে না করে আল্লাহ্র রহমত বলে
মনে করুন। আল্লাহ্ যাকে আপন বন্ধু বলে মনে করেন তার প্রতিই তিনি এরূপ বিপদ নাযিল করেন। হে নবী! আপনি আল্লাহর এক মহা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। তজ্জন্য আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র পুরস্কার পাবেন।
পবিত্র আল-কুরআনে আছে;

আল্লাহ্ বলেছেন—“আমি আইউব নবীকে তামিল করেছি ও দুঃখ যাতনা দিয়েছি। কিন্তু যখন হযরত আইউব নবী কাতর হয়ে আমার দরবারে ফরিয়াদ হে আল্লাহ্! তুমি তোমার বান্দার প্রতি যত মেহেরবান তেমন মেহেরবানী করার মত দুই জাহানে আর কেউ নেই।” নবীর এ কথাগুলোর আওয়াজ যখনই আমি শুনলাম তখনই আমি তার যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দিলাম। এরপর তাঁকেও রহমত দানকরলেন,করলাম।
হযরত আইউব (আঃ)-এর ধৈর্যের পরীক্ষা হয়ে গেল।

আল্লাহ্ তাঁর প্রার্থনা কবুল করলেন। পুনরায় আল্লাহ্ পাকের নির্দেশে জিব্রাঈল (আঃ) নবীর কাছে বললেন, ওহে নবী। আল্লাহ্ আপনার প্রতি মেহেরবান হয়েছেন। আল্লাহ্ আপনাকে বলেছেন—
—আপনি আপনার পদযুগল দ্বারা মৃত্তিকায় আঘাত করুন— দেখবেন যমিনের নিম্নস্থান থেকে অতি পরিষ্কার আপনার শরীরের সমুদয় ব্যাধি নিমিষেই নিরাময় হবে। জিবরাঈল (আঃ) মারফত হযরত
আমি নির্গত হয়ে আসবে।

এ পানি দ্বারা আপনি গোসল ও পান করুন, তবেই দেখবেন।ই (আঃ) আল্লাহ্ তায়ালার এ আদেশ পেয়ে যমীনে পদদ্বারা দুবার আঘাত করলেন।জয়া কুদরতে আঘাত করা মাত্র সাথে সাথে একটি সামান্য গরম আর একটি শীতল পানির ঝরণা সৃষ্টি হয়ে গেল। জিব্রাঈল (আঃ) নিজ হাতে গরম পানির দ্বারা হযরত আইউব (আঃ)-কে গোসল করিয়ে দিলেন এবং শীতল পানির ঝরণা থেকে কিছু পানি তুলে পান করালেন।

com-islamicstory-Jannatiromoniislamicstory-1

গরম পানি দ্বারা গোসল এবং ঠাণ্ডা পানি পান করার সাথে সাথেই হযরত আইউব (আঃ)-এর দীর্ঘ আঠার বছরের দুরারোগ্য ব্যাধি মহা কঠিন কুষ্ঠ রোগ দূর হল এবং দেহের সৌন্দর্য পূর্বাপেক্ষা দশগুণ বেড়ে গেল। এ ঘটনা যখন ঘটল তখন রহিমা স্বামীর কাছে ছিলেন না।

তিনি এ সময় খাদ্য সংগ্রহের জন্য গ্রামে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে স্বামীর সে পূর্বের মত সুন্দর লাবণ্যময় উজ্জ্বল চেহারা দেখে তিনি নিজের চক্ষুকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। স্বামীর দেহে কোন রোগ বাহির চিহ্ন মাত্র নেই। এটা কিরূপে সম্ভব হল, তিনি ভেবেই পেলেন না। হযরত আইউব(আঃ) তখন রহিমা-কে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। সব কথা শুনে আনন্দে রহিমার হৃদয় পুলাকিত হয়ে উঠল।

হযরত আইউব (আঃ)রহীমাকেও ঐ ঝর্ণার উষ্ণ পানিতে গোসল করতে বলেন এবং শীতল পানি পান করতে বললেন। রহিমা উষ্ণ পানিতে গোসল এবং শীতল পানি পান করার সাথে সাথেই তার চেহারার শীর্ণতা ও ক্লান্তির ছায়া দূরীভূত হয়ে পূর্বের উজ্জ্বল ও সুন্দর চেহারা ফিরে এল। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রীতে আনন্দাতিশয্যে আল্লাহর দরবারে শোকরানা সিজদাহ জ্ঞাপন করলেন। আল্লাহর এ মহা কঠিন পরীক্ষায় তাঁরা উত্তীর্ণ হলেন।

এবার হযরত আইউব (আঃ) নিজ শপথ অনুসারে রহিমাকে একশত দোররা মেরে নিজ শপথ পূর্ণ করতে মনস্থ করলেন। তখনই আল্লাহ্র অহী অবতীর্ণ হল। জিব্রাঈল (আঃ) আল্লাহর বাণী নিয়ে আগমন করে বললেন হে আইউব! ক্ষান্ত হউন! আপনি কেন আপনার স্ত্রী মহাপ্রাণা রহিমাকে দোররা মারতে চাচ্ছেন, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে অক্লান্ত পরিশ্রম আর খাটনি খেটে আপনার খিদমত করেছেন। আপনার প্রাণ বাঁচিয়েছেন।

আপনার স্ত্রী রহিমার ন্যায় মহৎ ও প্রতিপরায়ণা স্বামী ভক্ত নারী পৃথিবীতে বিরল। আপনি বৃথাই রহিমাকে অপরাধিনী সাব্যস্ত করেছেন। রহিমা সম্পূর্ণ নির্দোষ। তিনি আপনার জীবন রক্ষার জন্য নিজের বিনিময়ে খাদ্য দ্রব্য সংগ্রহ করেছেন। আর আপনি ইবলীস শয়তানের ছলনায় ভুলে পুণ্যবতী রহিমার মনে দারুণ আঘাত হেনেছেন। শয়তান যা বলেছিল তা সবই মিথ্যা। হযরত আইউব (আঃ) এটা শুনে নিরতিশয় লজ্জিত হয়ে বলেন, তা হলে আমি এখন কি করব? তবে কি আমার শপথ মিথ্যা হয়ে যাবে?

জিব্রাঈল (আঃ) বলেন— না, তা মিথ্যা হয়ে যাবে কেন? নবীবর! আল্লাহর নির্দেশ, আপনি একশত শস্য শীষ একত্রে বেঁধে তা দ্বারা রহিমার অঙ্গে একবার মৃদু স্পর্শ করুন। এতেই আপনার শপথ পালন হয়ে যাবে। নবী
জিব্রাঈল (আঃ)-এর কথা মত একশত শস্য শীষের একটি ঝাড়ন দ্বারা রহিমার দেহে মৃদু স্পর্শ করে নিজের প্রতিজ্ঞা পালন করলেন। এভাবে তিনি এক মহাসংকট থেকে মুক্তি প্রাপ্ত হয়ে গেলেন ।

আল্লাহ্ তায়ালা নবীকে সবরের মেওয়া দান করলেন। দুনিয়াতে যে ব্যক্তির সবর করে আল্লাহর কাছে শোকরানা করে সে ব্যক্তিই আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয়পাত্র হন। বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন—আইউব নবী যা ধৈর্য ও সবর করেছেন, হযরত আইউব (আঃ)-এর সবরের যত প্রশংসা আছে পবিত্র কুরআনেই আল্লাহ্ তা
বাস্তবিকই তা প্রশংসিত। পুনরায় শান্তি সুখের জীবন দীর্ঘ আঠার বছর পর ধৈর্যের ও সবরের প্রতীক হযরত আইউব (আঃ) বিশ্বের শ্রেষ্ঠা রমনী হযরত রহিমা কে নিয়ে স্বদেশে ফিরে এলেন।

এরপর তিনি বহু বছর জীবিত ছিলেন। ১৪০ বছর বয়সে তাঁর ওফাত হয়। তাঁর কবর কোন স্থানে কোন ঐতিহাসিক বিবরণ থেকে জানা যায় না। হযরত আইউব (আঃ) ও হযরত রহিমার জীবন বৃত্তান্ত থেকে এ শিক্ষাই আমরা পাই যে বিপদে-আপদে সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকর গোযার করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর হতে হবে নির্ভরশীল। আর নিজকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর সম্পূর্ণ রূপে সপে দেয়ার নামই ইসলাম। ইসলাম মানুষকে এ শিক্ষাই দিয়ে অনুপ্রাণিত করে ধন্য করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *