ঠান্ডার ঔষধ কালোজিরা
কালিজিরা, কালোজিরা বা কালঞ্জি হচ্ছে নাইজেলা স্যাটিভা (Nigella sativa) নামের পুষ্পোদ্গম গাছের বীজ হিসেবে পরিচিত । গত ২০০০ বছরের চেয়ে বেশী সময় ধরে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই বীজ বা কালো জিরা । এটা এতই পুরনো যে এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে প্রাচীন মিশরীয় টুটেন খামনের এক সমাধিতে।
দেখতে ছোট ছোট কালো দানা হলেও কালিজিরাতে আছে প্রচুর পরিমানে শক্তি। প্রাচীনকাল থেকে কালিজিরা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে আর এখনো । প্রাচীন কালে এই কালিজিরা মাথা ব্যথা, দাঁত ব্যথা, সর্দি, এজমা, বাত এবং পেটের কৃমি দূর করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । আজকাল এটা মানুষ ব্যবহার করে এজমা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য অনেক রোগ নিরাময়ে খাই কালোজিরা ।
কালিজিরার অসংখ্য উপকারিতার কারণে এটির প্রশংসা করেছেন নবীজি মোহাম্মদ (সাঃ)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করে আসছে , তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্সা-ম’ হলো মৃত্য ছাড়া সকল রোগের উপকার করে এর ‘আল হাব্বাতুস্ সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ কালিজিরা)। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৫৯) থেকে আসছে।
এখন দেখা যাক কালিজিরা আমাদের কি কি উপকার করে থাকে ।
১। কালিজিরায় আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট।
এন্টিঅক্সিডেন্ট হচ্ছে এক ধরণের উপাদান যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে এবং শরীরের কোষকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । গবেষণায় দেখা গেছে এন্টঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্থূলতা রোধ করতে পারে । কালিজিরার শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলীর কারণ হচ্ছে এর উপাদানঃ থাইমোকুইনোন (thymoquinone), কারভাক্রল (carvacrol), টি-এনিথোল (t-anethole) এবং ৪-টারপিনিওল (4-terpineol)। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কালিজিরার তেল এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে ।
২। সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট দূর করে থাকে। কালিজিরা সর্দি-কাশি নিরাময় করতে পারে।
সর্দি-কাশি রোধ করতে কালিজিরা দিয়ে ঘরোয়া চিকিৎসা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। একটি পরিষ্কার কাপড়ে কালিজিরা জড়িয়ে তা নাকের কাছে নিয়ে বড় করে শ্বাস টানুন কিছু সময় ধরে, দেখবেন এর ঝাঁজ বুকে জমে থাকা কফ টেনে বের করছে। নাক বন্ধের সমস্যায়ও ঘরোয়া এই উপায়ের জুড়ি মেলা ভার করে ।
শ্বাসকষ্টের সমস্যা হঠাৎ মুশকিলে ফেললে সব সময় চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অবস্থা থাকে না অনেক সময় । অনেক সময় হাতের কাছে দরকারি ওষুধও পাওয়া যায় না। কালিজিরা কাপড়ে জড়িয়ে রাখবেন ।
৭। ওজন কমাতে কালিজিরা সাহায্য করে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় দেখা গেছে দই ও কালিজিরার মিশ্রণ প্রতিদিন এক মাস ধরে খেলে ১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমানো যাবে । বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই মিশ্রণ শরীরের মেটাবলিজম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে । যার ফলে মেদের পরিমাণ কমতে সাহায্য । সেই সঙ্গে দ্রুত হ্রাস পায় দেহের ওজন কমে ।
সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ৪৪ জন মেদযুক্ত মানুষের ওপর এ মিশ্রণের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে প্রতিদিন যদি দই ও জিরার এই মিশ্রণ খাওয়া যায় তা হলে এক মাসের মধ্যে অন্তত ১৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব হবে । হলুদ কিভাবে ডায়াবেটিস রোধ করতে পারবে
৮। কালিজিরা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
ডায়াবেটিস সারা বিশ্বে একটি বড় সমস্যা হয়ে আসছে । রক্তে ব্লাড সুগার বেড়ে গেলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন, ঘন ঘন তৃষ্ণা, অকারণেই ওজন হ্রাস, ক্লান্তি এবং মনোযোগ হ্রাস। অতিমাত্রায় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে না রাখলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ডেকে আনতে পারবে ।
গবেষণায় দেখা গেছে কালিজিরা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে । ৭টি গবেষণার একটি রিভিউতে দেখা যায়, কালিজিরা সাপ্লিমেন্ট গড় ব্লাড সুগার এবং ফাস্টিং ব্লাড সুগার, এই দু’টোরই উন্নয়ন করে থাকে । অন্য আরেকটি গবেষণা পরিচালিত হয় ৯৪ জন মানুষের উপর নির্ভর করে । এতে দেখা যায় ৩ মাস ধরে প্রতিদিন কালিজিরা খেলে তা ফাস্টিং ব্লাড সুগার, গড় ব্লাড সুগার এবং ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স অনেকাংশেই কমাতে সাহায্য করবে ।
৯। কালিজিরা লিভার ভাল রাখতে সাহায্য করে।
লিভার সুস্থ রাখে কালিজিরা
লিভার বা যকৃৎ আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অংশ এবং এর কাজও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। লিভার আমাদের দেহ থেকে অধিবিষ দূর করে পারে , শরীরের খাদ্যের পরিপোষক প্রক্রিয়াজাত করে, ঔষধ বিপাকিত করে এবং প্রোটিন উৎপন্ন করতে পারে ।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কালিজিরা লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে কালিজিরা লিভারের ক্ষত ভাল করতে পারে । অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে কালিজিরার এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ দূর করতে পারে।
১০। কালিজিরা দাঁত মজবুত ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।
প্রাচীনকাল থেকেই কালিজিরা দাঁতের রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে । গবেষণায় দেখা গেছে কালিজিরা মাড়ির রক্ত পড়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া বন্ধ করতে পারে ।
দই ও কালোজিরার মিশ্রণ প্রতিদিন দুবার দাঁতে ব্যবহার করবেন । এতে দাঁতে শিরশিরে অনুভূতি ও রক্তপাত বন্ধ হতে সাহায্য করে । দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালিজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে যাবে । এছাড়া কালিজিরা জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু নিধন করতে সাহায্য করে।