তাহাজ্জুদ নামাজের সুন্নতসমূহ
১. রাতের শেষ ভাগে এ নামাজ আদায় করা। -বুখারী
২. দুই থেকে আট রাকাত বা বেশী আদায় করা।
৩. রাতে আদায় করতে না পারলে তা দিনে আদায় করে নেওয়া। -বুখারী
ইশরাক নামাজের সুন্নতসমূহ
১. ফযরের নামাজ পড়ে সূর্য উঠার ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর পর্যন্ত নামাজের স্থানে বসে যিকির-আযকার করতে থাকা। এরপর দুই বা চার রাকাত নফল নামাজ পড়া।
২. যদি কোন ব্যস্ততার কারণে নামাজের স্থানে বসে থাকা সম্ভব না হয়।
তাহলে সুযোগ মত অন্য জায়গায় ইশরাক পড়ে নেয়া
জ্ঞাতব্য: ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য উঠার পর পৃথিবী আলোকিত হয় বলে সূর্যোদয়ের পর যে নামাজের ইঙ্গিত বিভিন্ন হাদীসে পাওয়া যায় তাকে ইশরাকের নামাজ বলা হয়। কেউ কেউ চাত ও ইশরাকের মধ্যে পার্থক্য না করতে পেরে দুটোকে এক করে ফেলেছেন। আসলে ‘যুহা’ ও ইশরাক সম্পর্কে হাদীসগুলোর মধ্যে যেসব বর্ণনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকে সূর্য উঠা পর্যন্ত ঐ জায়গাতেই বসে থেকে সূর্য উঠার ২০মিনিট পর যে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে কেবল সেই বর্ণনাগুলোকেই মুহাদ্দিছগণ ইশরাক বলে অভিহিত করেছেন।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করার পর ওখানেই বসে বসে আল্লাহ্র যিকির করে যতক্ষণ না সূর্য উঠে। তারপর সে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। তার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ হজ্জ ও উমরার সমান নেকী হয় । -তিরমিযী, ইমাম তিরমিযী
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, এক নামাজের সমাপ্তির পরে অপর এক নামাজ (ধারাবাহিক নামাজ) যার মাঝখানে কোন গুনাহ হয়নি, তা ইল্লীয়্যুন (উচ্চ মর্যাদায়) লিপিবদ্ধ হয়। -আবূ দাউদ
চাশতের নামাজের সুন্নতসমূহ
১.দুই থেকে আট রাকাত আদায় করা।
২. একই সাথে দুই রাকাত বা চার রাকাতের নিয়ত করা।
৩. দ্বিপ্রহরের আগেই তা আদায় করা।
জ্ঞাতব্য: চাশত ফারসী শব্দ। হাদীসে বর্ণিত সালাতুয যুহা এ উপমহাদেশে চাশতের নামাজ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। আরবী যুহা শব্দের অর্থ সূর্যের ঔজ্জ্বল্য খুব ভালোভাবে পরিস্ফুটিত হওয়া। যা সূর্যোদয়ের ৩ ঘন্টা পর প্রকাশ পায় এবং যাকে প্রথম প্রহরও বলা হয়। এ নামাজ প্রথম প্রহরের পর থেকে দ্বিপ্রহরের আগে পর্যন্ত আদায় করা হয় বলে এর নাম যুহা রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সময় অনুযায়ী চাশতের নামাজের মোটামুটি সময় হলো: গরম কালে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং শীতকালে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। (আইনী তুহফা সলাতে মুস্তফা)
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের শরীরের প্রত্যেকটি গ্রন্থির সংযোগস্থল বাবদ প্রতিদিন সদকা করা উচিত। প্রত্যেক ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করা একটি সদকা, প্রত্যেক ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলা একটি সদকা, প্রতিটি ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা একটি সদকা, প্রতিটি তাকবীর পাঠ একটি সদকা, সৎ কাজের আদেশ একটি সদকা, অসৎ কাজে নিষেধ করা একটি সদকা, আর চাশতের (অর্থাৎ পূর্বাহ্ন) দুই রাকাত নামাজ এসব কিছুর পরিপূরক হতে পারে। -মুসলিম।
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, মানুষের দেহে তিনশত ষাটটি গ্রন্থি রয়েছে। কাজেই প্রত্যেকটি গ্রন্থির জন্য সদকা করা ওয়াজিব। উপস্থিত সাহাবীগণ বললেন, এমনটি করা কি কারো পক্ষে সম্ভব? জবাবে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, মসজিদে কোন ময়লা দেখলে তা পুঁতে ফেলো, রাস্তায় কোন আবর্জনা দেখলে তা সরিয়ে ফেলো। এটাও যদি না পারো তাহলে সালাতুষ যুহার (দুপুরের পূর্বের) দুই রাকাত নামাজ তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আহমাদ, আবূ দাউদ
রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই রাকাত যুহার (চাশতের) নামাজ আদায় করবে তাকে গাফেল লোকদের মধ্যে গণ্য করা হবে না। আর যে ব্যক্তি চার রাকাত আদায় করবে তাকে আবেদ (ইবাদত গুজারীদের অন্যতম) হিসাবে গণ্য করা হবে। আর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে, তা তার ঐ দিনের জন্য যথেষ্ট হবে। আর যে ব্যক্তি আট রাকাত আদায় করবে, আল্লাহ্ তাকে অনুগত বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে গণ্য করবেন। আর যে ব্যক্তি বার রাকাত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। -তাবারানী কাবীর
আওয়াবীনের নামাজের সুন্নতসমূহ
১. মাগরীবের সুন্নত নামাজের পর এ নামাজ আদায় করা। -ইবনে মাজাহ ২. দুই থেকে ছয় রাকাত আদায় করা।
৩. এই নামাজ দিনেও আদায় করা যায়, যাকে আমরা চাত বলে থাকি। অর্থাৎ এই নামাজ (সালাতুল আওয়াবীন), যা দিনে আদায় করলে চাত রা যুহা বলা হয়। হাদীসে একেও আওয়াবীনের নামাজ বলা হয়েছে।
তাওবার নামাজের সুন্নতসমূহ ১. ক্ষমা প্রার্থনার নিয়তে নামাজ আদায় করা।
২. দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। -তিরমিযী
-তিরমিযী
জ্ঞাতব্যঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে। অতঃপর উঠে দাঁড়ায় ও পবিত্রতা অর্জন করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। অতঃপর আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেন। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন: (অর্থ) “যারা কোন পাপ কাজ করার পর অথবা নিজেদের উপর জুলুম করার পর আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের কৃত গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আল্লাহ্ ছাড়া কে
আছে তাদের গুনাহ ক্ষমা করার? অতঃপর তারা জেনে শুনে কৃত গুনাহের পুনরাবৃত্তি করে না।” -তিরমিযী
হাজত নামাজের সুন্নতসমূহ
১. উত্তমরূপে ওজু করা। -আহমাদ
২. দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। -আহমাদ
৩. নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে নিয়ত করা। -তিরমিযী
জ্ঞাতব্য: আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওজু করলো। অতঃপর পূর্ণভাবে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলো। আল্লাহ্ তাকে দান করবেন যা সে প্রার্থনা করবে, দ্রুত অথবা দেরীতে। -আহমাদ
উসমান ইবনে হুনাইফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আল্লাহ্র কাছে দোয়া করুন যেন আমার দৃষ্টি খুলে দেন। তিনি বললেন, তোমার এ বিষয়টা কি আমি বাদ দিবো? (অর্থাৎ তুমি ধৈর্য ধরো)। লোকটি বললো, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার অন্ধ হয়ে যাওয়াটা আমার জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, বেশ, তাহলে যাও এবং ওজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করো। তারপর বলো, (অর্থ) হে আল্লাহ্ ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি এবং রহমতের নবী আমার নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে আপনার দিকে মনোনিবেশ করছি। হে মুহাম্মাদ! আমি আপনার মাধ্যমে আমার প্রতিপালকের দিকে মনোনিবেশ করছি এবং প্রার্থনা করছি, যেন আমার দৃষ্টি খুলে দেন। হে আল্লাহ্! আমার ব্যাপারে তাঁর সুপারিশ গ্রহণ করুন।” অতঃপর সে ফিরে এলো। তখন আল্লাহ্ তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। -তিরমিযী