তেলাপোকার গল্প

তেলাপোকার গল্প

*****তেলাপোকার গল্প *******
মাহমুদ শায়ের। একজন পেশাদার বক্তা। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল আছে। আরব বিশ্বের বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে তিনি বক্তব্য দিয়ে বেড়ান। তিনি মূলতঃ কর্মশক্তি, প্রাণশক্তি, উদ্যম এসব বিষয় নিয়েই কথা বলেন। যাতে কর্মীদের মধ্যে কাজের স্পৃহা বৃদ্ধি পায়।

তিনি সম্প্রতি এক বক্তব্যে একটা ঘটনা বলে তারা বক্তব্য শুরু করেছিলেন, -গত মাসের শেষদিকে আমি বেলজিয়াম গিয়েছিলাম। ‘আন নাফত’ কোম্পানীর একটা এসাইনমেন্ট নিয়ে। বিকেলে নাস্তা করতে গেলাম একটা ক্যাফেতে। আমরা কোম্পানীর কয়েকজন মিলে একটা টেবিল আগেই বুক করে রেখেছিলাম। সেখানেই বসলাম।

images-4

বিপরীত পাশেও একদল মেয়ে বসেছিল। তারা বোধহয় অন্য শহর থেকে ট্যুরে এসেছে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ। দেখে তাই মনে হচ্ছিল। ওয়েটার তাদেরকে খাবার দিয়ে গেল। তারা খাবার খেতে শুরু করে দিল
হঠাৎ একটা তেলাপোকা উড়ে এসে একজনের গায়ে পড়লো। মেয়েটা লাফিয়ে উঠে হৈ চৈ শুরু করে দিল। কাপড় ঝাড়া দিয়ে তেলাপোকাটা ফেলে দিল ।

তেলাপোকা উড়ে গিয়ে আরেক জনের ওপর পড়লো। তারপর আরেক জনের ওপর। পুরো ক্যাফেতেই হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে গেল। সব শেষে তেলাপোকাটা উড়ে গিয়ে পড়লো একজন ওয়েটারের ওপর। ওয়েটার একটুও চমকাল না। খানিক চেয়ে থেকে তেলাপোকটার গতিবিধি লক্ষ করলো। তারপর দুই আঙুলে ধরে সেটাকে জানালার বাইরে ছুঁড়ে ফেলল ।

পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেল। যে যার টেবিলে গিয়ে বসল। আমি এতক্ষণ চেয়ে চেয়ে পুরো দৃশ্যটা দেখছিলাম। সবকিছু থিতিয়ে আসার পর আমার মনে কয়েকটা চিন্তা এলো।

এক: এতক্ষণ যে ঘটনা ঘটে গেল, মেয়েগুলো যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে
ফেলল, সেটার জন্যে দায়ী কে? তেলাপোকা? যদি তাই হয় তাহলে তেলাপোকা তো ওয়েটারের ওপরও পড়েছে, কই সে তো লাফায়নি? বরং শান্তভাবে পুরো পরিস্থিতিটাকেই সামলেছে।
=তাহলে বোঝা গেলো, এই সমস্যার জন্যে দায়ী তেলাপোকা নয়। বরং মহিলারা। কারণ তারা এই পুঁচকে পোকাকে দক্ষ হাতে সামলাতে পারেনি।

images-4

দুই: আমার আরও মনে হল, পিতা, বস বা অন্য কেউ যে আমাকে বকা দেয়,
সে বকাটা আমাকে বিরক্ত করে না। বরং তাদের বকা শুনে নিজের মধ্যে সৃষ্টি
হওয়া বিরক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটাই আমাকে বিরক্ত করে।

তিন: রাস্তার যানজট আমাকে বিরক্ত করে না, বরং যানজটে আটকে থাকার
ফলে সৃষ্টি হওয়া বিরক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার অক্ষমতাই আমাকে
বিরক্ত করে।

চার: জীবন চলার পথে, বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঝামেলা পাকায় না। দুর্ঘটনায় পড়ে
আমার বেসামাল প্রতিক্রিয়াই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঝামেলা পাকায়।

পাঁচ: আমি সেদিন, ক্যাফেতে বসে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম:
আমি এবার থেকে কোনও দুর্ঘট পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, সাথে সাথে
তেতে উঠেই প্রতিক্রিয়া দেখাবো না। বরং সমস্যার সমাধানে কিভাবে
ইতিবাচক সাড়া দেয়া যায় তা নিয়ে ভাববো।

images-4

ছয়: মহিলারা সেদিন তেলাপোকার কারণে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। আর
ওয়েটার ব্যতিব্যস্ত না হয়ে সমাধানের জন্যে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিল।

সাত: প্রতিক্রিয়া দেখানোটা সব সময়ই তাৎক্ষণিক তড়িৎ আবেগ থেকে
আসে, আর যুক্তিসঙ্গত সাড়া দানটা আসে সুচিন্তিত পরিকল্পনা থেকে।

আট: একজন সুখী মানুষ ঠিক এজন্য সুখী নয় যে, তার সবকিছু ঠিক আছে।
সে সুখী, কারণ তার সুখী হওয়ার মতো দৃষ্টিভঙ্গি আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *