আসসালামু আলাইকুম আজকে আমরা জানবো নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সালামের হাদিস অনুসারে দাড়ি চুল এবং নখ কাটার সুন্নত সমূহ:
১. দাড়ি লম্বা করে রাখা (এক মুষ্টি বা তার চেয়েবেশী)। –তিরমিযী
২. দাড়িতে তেল ব্যবহার করা।-তিরমিযী
৩. সাদা দাড়িতে মেহেদী লাগানো । – মুসলিম
৪. দাড়ি একদিন পর একদিন আঁচড়ানো দাড়ি । -তিরমিযী
দাড়ি
উল্লেখ্য যে, দাড়ি লম্বা করতে হবে মর্মে আমরা রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ জানতে সাহাবায়ে কেরামের হাদীস বর্ণনার দ্বারা। রাসূল (সাঃ) এর নিকটতম সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে,
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর।
দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর। আর ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্জ বা উমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। – বুখারী
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল, সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে হাদীস বর্ণনার দ্বারা আমরা জানতে পারলাম, নবী (সাঃ) মুমিন-মুসলমানদের দাড়ি বড় করতে নির্দেশ দিয়েছেন ।
আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশসূচক শব্দ যেখানে আসে, সেক্ষেত্রে উসুলবীদদের মূলনীতি হল, নির্দেশ মানেই উক্ত কাজটি করা ওয়াজিব; যদি ওয়াজিব না হওয়ার অন্য কোন স্পষ্ট দলীল না থাকে দাড়ি ।
দাড়ি
উক্ত হাদীসে রাসূল (সাঃ) দাড়ি বড় রাখার যে আদেশ দিয়েছেন, তা ওয়াজিব না হওয়ার কোন স্পষ্ট দলীল কোথাও বিদ্যমান নেই।
তাই রাসূল (সাঃ) এর আদেশ অনুপাতে দাড়ি বড় রাখা ওয়াজিব। অতএব তা এক মুষ্টির নিচে কাটা ও ছাঁটা হারাম দাড়ি।
চুল রাখা ও চুল সংক্রান্ত সুন্নতসমূহ
১. মাথা মুণ্ডন করা। -বুখারী, মুসলিম
২. বাবরী চুল রাখা। -বুখারী, মুসলিম
৩. বাবরী চুল তিন প্রকারের এক প্রকার রাখা (কানের মাঝখান বরাবর, কানের লতি বরাবর, কাঁধ বরাবর)। -তিরমিযী
৪. চুলে তেল লাগানো। -ইবনে সা’দ
দাড়ি
মাথায় তেল লাগানোর সুন্নত তরীকাঃ বাম হাতে তেল নিয়ে প্রথমে ভ্রু,
অতঃপর চক্ষু তারপর মাথায় লাগানো। -যাদুল মাআদ
৫. চুল একদিন পর একদিন আঁচড়ানো চুল। -আবূ দাউদ
৬. মাথার চুলের ডান দিক থেকে সিঁথি কাঁটা। -তিরমিযী
৭. প্রয়োজনে চুলে খেযাব ব্যবহার করা (কালো রং ব্যতীত)। -তিরমিযী
গোঁপ রাখা ও গোঁপ সংক্রান্ত সুন্নতসমূহ
১. গোপ খুব ছোট করে রাখা। –বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী
২. মুণ্ডন না করা। -বুখারী, মুসলিম
বগল ও নাভীর নিচের চুল সংক্রান্ত সুন্নতসমূহ
১. বগলের চুল উপড়ে ফেলা। -মুসলিম
২. নাভির নিচের চুল মুণ্ডানো (মহিলাদের উপড়ে ফেলা)। -মুসলিম
জ্ঞাতব্য: চল্লিশ দিনের মধ্যে হাজামত না করলে গুনাহগার হবে।
নখ কাটার সুন্নতসমূহ
১. সপ্তাহে একবার নখ কাঁটা। শরহুস সুন্নাহ
২. প্রতি শুক্রবার জুমুআর পূর্বে অথবা বৃহস্পতিবার নখ কাঁটা। -শরহুস সুন্নাহ
৩. প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাতের নখ কাঁটা অতঃপর ডান পা ও বাম পায়ের নখ কাঁটা। -শামী
নখ কাঁটার তরীকাঃ ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল থেকে শুরু করে কনিষ্ঠাঙ্গুল হয়ে বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুল থেকে শুরু করে বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ কেটে সর্বশেষ ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ কাঁটা।
অতঃপর ডান পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুল থেকে ধারাবাহিক কেটে বাম পায়ের কনিষ্ঠাঙ্গুলের নখ কেটে শেষ করা।
৪. মহিলাদের নখে মেহেদি লাগানো। -আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ
জীবনযাত্রা ছোট বড় সকল কাজের জন্য আমাদের নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তারিকা অনুযায়ী চলা উচিত। তাহলে আমরা সবসময় সুস্থ এবং নবীজির সুন্নত পালন করতে পারবো।
নবীজির সুন্নত গুলো পালন করা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব এবং তাকে অনুসরণ করা আমাদের আখেরাতের পথ সহজ করে দেবে।
চৌদ্দশ বছর আগের নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণিত হাদিস গুলো এখন সাইন্সে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে গবেষণা করার পর এই পর্যন্ত পৌঁছেছে যে তার প্রতিটি হাদিস
আমাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত এবং স্বাস্থ্য উপকারি। অবশ্যই আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস অনুসারে চলা উচিত।