দৈত্য ও মলির গল্প পর্ব ২

দৈত্য ও মলির গল্প পর্ব ২

আংটি। সেটাই এনে দিতে হবে আমাকে।
একমাত্র তুমিই পারবে কাজটা। দৈত্যের আঙুলে আছে একটা সোনার
মলি
সে-ও

image
একমুহূর্ত ভাবল। দৈত্যর বীভৎস চেহারাটা মনে পড়ল তার। পাশাপাশি
ভেসে উঠল ছোট রাজপুত্রের সুন্দর চেহারাটা। তার দুইবোন এখন রাজকন্যা। মলির
মনে হল— তো রাজকন্যা হতে পারে। রাজার কথায় সে রাজি হল।
সেই দিনই মলি রওনা দিল দৈত্যের বাড়ির উদ্দেশে। আগের মতোই এবারও সে
ঘরে ফিরে এসে ঘুমিয়ে
পৃথিবীতে।
লুকিয়ে থাকল দৈত্যের বিছানার তলায়। কিছুক্ষণ পরে দৈত।
পড়ল।
বিকট শব্দে নাক ডাকতে লাগল যেন ভূমিকম্প হচ্ছে
বাইরের আকাশে তখন গোল চাঁদ উঠেছে। চাঁদের জোছনায় ভেসে যাচ্ছে
সবকিছু। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে দৈত্যের একটা হাত ঘুমের তালে ঢলে
পড়েছে খাটের একপাশে। হাতটা ঝুলছে। সোনার আংটিটা জ্বলজ্বল করছে। মণি
সাহস করে হাতটা বাড়িয়ে দিল। আঙুল থেকে আংটিটা খোলার চেষ্টা করতে
লাগল। কিন্তু আঙুলে আংটিটা খুব শক্তভাবে লেগে আছে। একটু একটু করে
আংটিটা খোলার চেষ্টা করছে মলি। হঠাৎ দৈত্যের নাক-ডাকার শব্দে আঁতকে উঠ
বেচারি। আংটিটা যখন সম্পূর্ণ খুলে হাতে নিয়েছে, অমনি বিকট এক শব্দ হল।
দৈত্যটা জেগে উঠেছে। বিশাল থাবা দিয়ে সে ঘুমের ঘোরেই জাপটে ধরেছে
মলিকে। এক থাবায় মলিকে টেনে তুলল বিছানায়। চাঁদের আলোয় দেখা গেলা
চকচক করে দৈত্যর চোখ জ্বলছে। রাগে যেন দাউদাউ করে জ্বলছে দৈত্যটা।
— হায় মলি! শেষ পর্যন্ত তোমাকে আমি ধরতে পেরেছি। তুমি আমার ঘরে
এসেছ। কিন্তু আর ফিরে যেতে পারবে না।

মালি খুব নিচুস্বরে বলল,
সে আমি টের পাচ্ছি দৈত্যরাজ।
আমার ভয়ংকর ক্রোধ তোর উপর । তোকে আমি কচমচ করে খেয়ে ফেলব ।
আমার রাগ সম্পর্কে তোর কোনো ধারণাই নাই।
– জি দৈত্যরাজ !
কণ্ঠস্বর আরও ক্ষীণ হয়ে এল মলির।
এখন বল্ তুই এত সাহস পেলি কী করে?
দৈত্য আদেশের সুরে বলল,
— মলি, তুই এখন আমার বন্দি । ভীষণ চালাকি করেছিস তুই আমার সঙ্গে। তুই
ভীষণ চালাক । তুই-ই বলে দে কী করা উচিত এখন তোকে।
মলি কী আর বলবে?
– যদি আমাকে তুই বন্দি করতে পারতি তবে কী করতি তুই?
– আমি কী করতাম?
জানতে চাইল মলি ।
– হ্যাঁ। কী করতি তুই, জলদি বল্ ।
আপনাকে বন্দি করতে পারলে তেমন কিছু করতাম না আমি। ওই যে বড়
থলেটা দেখা যাচ্ছে, ওই থলের মধ্যে ঢোকাতাম আপনাকে। সঙ্গে দিতাম একটা
কুকুর, একটা বেড়াল, সুঁই-সুতো আর একজোড়া কাঁচি ।
তারপর? হুংকার দিল দৈত্যটা।
– তারপর আমি বনে যেতাম। সবচেয়ে বড় গাছের বড় একটা ডাল খুঁজে বের
করতাম। সেটা হত আমার মুগুর। বস্তায় আপনি বন্দি। সেই মুগুর দিয়ে তারপর
মারতাম আপনাকে। মারতে মারতে আপনাকে অজ্ঞান করে ফেলতাম। কারণ
আপনি অত্যাচারী।
– চুপ । আর কথা নয় । মলি, তুই আমাকে তোর সাহস দেখাচ্ছিস? তোর সাহস
তো কম নয় । আমার সামনে বন্দি হয়ে আমাকেই তুই যা-তা বলছিস । আমাকে তুই
যা করতে চাস আমিই এবার তোকে তাই করব।
বলেই দৈত্যটা মলিকে থলেতে পুরে ফেলল। সঙ্গে দিল একটা কুকুর, একটা
বেড়াল, সুঁই-সুতো আর একজোড়া কাঁচি। শক্ত করে থলের মুখটা বাঁধল । তারপর
থলেটা ঝুলিয়ে রাখল চোখের সামনে। সকালবেলা বনে গিয়ে গাছের ডাল ছিড়ে
আনবে। তারপর আচ্ছা করে শাস্তি দেবে মলিকে ।
দৈত্য তারপর খুশিমনে ঘুমাতে গেল। থলের ভিতরে মলি ততক্ষণে বন্ধুত্ব
পাতিয়ে ফেলেছে কুকুর-বেড়ালের সঙ্গে। ওদের সঙ্গে শুয়ে রইল আরাম করে । মলি
অপেক্ষা করতে লাগল একটি সুন্দর সকালের।
ভোরবেলার আলো ফুটতেই ঘুম ভাঙল দৈত্যের । লাফ দিয়ে সে চলে গেল বনের
ভেতরে। সবচেয়ে বড় গাছের ডাল খুঁজে নিয়ে আসবে সে । থলের ভেতরে নিরাপদে
মলিকে আটকে রাখা হয়েছে।

হঠাৎ করেই সেখানে দৈত্যর বউ এসে উপস্থিত। বাতাসে নাক উঁচু করে শ্বাস
হাঁউমাউ হাউমাউ, মানুষ-মানুষ গন্ধ পাঁউ ।
টানল সে।
থলের ভেতর থেকে মলি তখন চিৎকার করে ডাকতে লাগল,
দৈত্যবউ, দৈত্যবউ, তুমি কি আমার সামনে?
প্রশ্ন ছোড়ে দৈত্যের বউ।
থলের ভেতরে তুমি কী করছ?
– আহা, কী মজার কাণ্ডটাই-না ঘটছে থলের ভেতরে। তুমি যদি দেখতে চাও
তবে শুধু তোমাকেই দেখতে দিতে পারি ।
থলের ভেতরে কী দেখছ তুমি?
অবিশ্বাস্য জিনিস দেখছি আমি। বলে বোঝানো যাবে না। তুমি কি সেটা
2
দেখতে চাও?
. অবশ্যই । তুমি যা দেখছ আমিও তা দেখতে চাই ।
কাঁচি দিয়ে দ্রুত থলের মুখটা কেটে ফেলল মলি ।
হাতে সুঁই-সুতো নিয়ে একলাফে সে বেরিয়ে এল থলে থেকে। তারপর সে
দৈত্যের বউকে থলের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করল । দৈত্যের বউ যখন ঢুকে পড়ল
তখন সুঁই-সুতো দিয়ে দ্রুত থলের মুখ বন্ধ করে দিল। ততক্ষণে দৈত্য ফিরে
এসেছে। পায়ের শব্দে যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। মলি গিয়ে দ্রুত লুকিয়ে পড়ল দরজার
আড়ালে । বনের সবচেয়ে বড় গাছটাকে উপড়ে নিয়ে এসেছে দৈত্যটা ।
বিকট শব্দে সে চেঁচাতে লাগল ।
কই, কোথায় সেই হারামজাদি মেয়েটা? এবারে তোকে মজাটা বোঝাচ্ছি।
আমাকে কিনা থলের মধ্যে ভরে তুই মারতে চাস লাঠি দিয়ে।
রাগে গরগর করে কাঁপছে দৈত্যটা। সেই গাছের ডাল দিয়ে সর্বশক্তিতে দৈত্যটা
বিশাল এক আঘাত করল থলের ওপর । আঘাতের পর আঘাত করেই যেতে লাগল ।
রাগে-ক্ষোভে তখন একাকার অবস্থা দৈত্যের।
– আমাকে-মেরো না। আমি সেই মেয়ে নই। আমি তোমার বউ।
থলের ভেতর থেকে আর্তচিৎকার করতে লাগল দৈত্যের বউ। কিন্তু কে শোনে
কার কথা?
– আমাকে বের কর। আমাকে মেরো না। বের কর আমাকে।
দৈত্যের কানে কোনো কথাই গেল না। কারণ কুকুর আর বেড়ালটাও তখন
সমানে চেঁচাচ্ছে। ওদের চিৎকারে দৈত্যের বউয়ের সব কথা হারিয়ে গেল। মলি
লুকিয়ে লুকিয়ে দৈত্যের কাণ্ড-কারখানা দেখতে লাগল। তার এতটুকু মায়া-দয়া
হল না দৈত্যের বউয়ের জন্য। যদিও একদিন দৈত্যের বউ ওদের তিনবোনকে
খাওয়া-দাওয়া দিয়েছিল। বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল। বেচারা হয়তো,
এতক্ষণে মরেই গিয়েছে।
একটুখানি সুযোগ পেয়ে ফুড়ুৎ করে পালিয়ে এল মলি। একছুটে সে রাজপ্রাসাদে
এসে হাজির ।

58

রাজার হাতে তুলে দিল সেই সোনার আংটি। রাজার খুশি আর ধরে না। এত
আনন্দ রাজা যেন আর কখনও পায় নি। এখন তিনি দৈত্যের মতোই শক্তিশালী
যদিও রাজা এবার ভেবেছিলেন— মলিকে বেশি কঠিন কাজ দেয়া হয়েছে। হয়তো
সে এবার দৈত্যের হাতে ধরাও পড়ে যেতে পারে। রাজা আজ আরও খুশি, কারণ
তার ছোটছেলের জন্য এমন চমৎকার বুদ্ধিমতী একটা মেয়েকে পাওয়া গিয়েছে।
মলির বিয়ের দিন আশ্চর্য-সুন্দর এক উৎসবের আয়োজন করা হল। সবাই
নেমন্তন্ন পেল । সবাই মিলে তিন দিন ধরে আনন্দ করল । রাজ্যের লোকেরা ভারি
পছন্দ করল মলিকে। তার সাহস আর বুদ্ধির গল্প ছড়িয়ে পড়ল সারা রাজ্যে । মলি
এরপর ভাবতে লাগল দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কীভাবে কাজ করা যায়।
আর ওদিকে দৈত্যটা তখন সব শক্তি খুইয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। তার জাদুর
তলোয়ার, ধনসম্পদের থলে আর সোনার আংটি নিয়ে নেয়ার পর দৈত্যের
আর কোনো শক্তিই অবশিষ্ট রইল না। মানুষের রাজ্যে দৈত্যটা আর আসত না।
এ-কারণে নিশ্চিন্ত হয়ে গেল সকলে দৈত্যের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া গেছে।
বাবা-মায়ের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই মলির প্রতি। কারণ এখন দেশের সব
শিশুই আনন্দে-হাসি-গানে বড় হয়ে উঠবে। আর কোনো দৈত্যের ভয় নেই।
সবাই নিরাপদ।

দৈত্য ও মলির গল্প,পুলটার নাম ‘একচুল’,দৈত্য যখন ঘুমে অচেতন,হাঁউ মাঁউ খাঁউ হাঁউ,মহামান্য রাজা,ভরে বলল মলি, আমি যতটুকু,মলি, এই জিনিসটা,আমার ছোটছেলের

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *