নবীজীর প্রথম বিবি হযরত খাদীজা (রাযি.)

নবীজীর প্রথম বিবি হযরত খাদীজা (রাযি.)

হযরত খাদীজা (রাযি.) বিনতে খুওয়াইলিদ হলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম স্ত্রী, রাসূলের জীবনের প্রথম জীবনসঙ্গিনী মহান মর্যাদাবান মহীয়সী নারী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিবাহের পূর্বে তাঁর আরও দুটি বিবাহ হয়েছিল । প্রথম বিবাহ হয়েছিল আবু হালা-র সাথে।

দ্বিতীয় বিবাহ হয়েছিল আতীক ইবনে আয়ে মাখযুমী-এর সাথে । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ২৫ বৎসর বয়সে হযরত খাদীজা (রাযি.) কে বিবাহ করেন ।

তখন হযরত খাদীজা (রাযি.)-এর বয়স হয়েছিল ৪০ বৎসর। হযরত খাদীজা (রাযি.)-এর জীবদ্দশায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আর কোন বিবাহ করেননি।

হযরত খাদীজা (রাযি.)

একমাত্র ইবরাহীম ব্যতীত হযরত খাদীজা (রাযি.)-এর গর্ভেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব সন্তান জন্মগ্রহণ করেন । এ গর্ভে চার কন্যা এবং দুই পুত্র জন্মগ্রহণ করেন ।

হযরত খাদীজা (রাযি.) মহিলাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপদ-আপদে তিনি শরীক ছিলেন।

হযরত খাদীজা (রাযি.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অত্যন্ত আনুগত্যকারিণী এবং বিপদ-আপদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সান্ত্বনাদাত্রী ছিলেন তার অতি ভালোবাসার মানুষ।

কাফেরদের আচরণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দুঃখ-কষ্ট পেতেন তা তিনি ঘরে এসে স্ত্রী খাদীজার কাছে বর্ণনা করতেন । আর হযরত খাদীজা (রাযি.) সব শুনে নবীজীকে সান্ত্বনা দিতেন ।

হযরত খাদীজা (রাযি.)

বিবি হযরত খাদীজা

স্ত্রী খাদীজার সান্ত্বনামূলক কথায় নবীজীর দুঃখ-কষ্ট অনেকটা লাঘব হত। নবীজীর জন্য তিনি তার ধন-সম্পদ সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিলেন। নবীজীর প্রতি প্রত্যেকটা পদে পদে তিনি খেয়াল রাখতেন ।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও খাদীজার প্রতি খুব লক্ষ্য রাখতেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজার কথা কখনও ভুলতে পারতেন না ।

তাঁর ইন্তেকালের পরও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে কোন বকরী যবাই হলে তা থেকে তিনি খাদীজার বান্ধবীদের কাছে গোশত হাদিয়া পাঠাতেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ।

হযরত খাদীজা (রাযি.)

হযরত খাদীজা (রাযি.)-এর অনেক ফযীলতের কথা হাদীছে বর্ণিত আছে । তিনি চারজন কামেল নারীর একজন। এক হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :

সারা পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা চারজন । ১. মারইয়াম । ২. আসিয়া । ৩. খাদীজা ও ৪. ফাতেমা অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে—এই চার জন মহিলা জান্নাতে নারীদের সরদার থাকবেন । আল্লাহ্র কাছেও হযরত খাদীজা (রাযি.)-এর অনেক মর্যাদা ছিল।

হযরত খাদীজা (রাযি.)

একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, খাদীজা!

আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাইলের মাধ্যমে তোমাকে সালাম বলেছেন । হযরত খাদীজা (রাযি.) রাসূল র সাথে ২৫ বৎসর বৈবাহিক জীবন যাপন করার পর হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে ১০ম নববী সনের রমযান মাসে ৬৫ বৎসর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

হযরত খাদীজা (রাযি.)

ফায়দা : নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত খাদীজাকে খুব কদর করতেন তাঁর আনুগত্য ও ঈমানদারীর কারণে। নতুবা খাদীজা ছিলেন এক বৃদ্ধা নারী, নবীজীর চেয়ে অনেক বেশী বয়স্কা । হযরত খাদীজার ইতিহাস থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে  হলো নারীদের উচিত স্বামীর বিপদে পেরেশানীতে তাকে সান্ত্বনা দেয়া এবং স্বামীর আনুগত্যে নিজেদেরকে নিবেদিত করে দেয়া তার দুখের সময়। এটা স্ত্রীর জন্য উত্তম স্বভাবের কথা হলো  কাজ । অনেক নারী স্বামীর পেরেশানীর দিকে খেয়াল না করে নিজের দাবী-দাওয়ার কথা বলে স্বামীকে আরও অস্থির করে তোলে । এটা উত্তম চরিত্রের কথা নয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *