নাফরমান এর মৃত্যু ও মৃত্যুরহস্য।
যখন আল্লাহ্ তা’আলার কোন নাফরমান-অবাধ্য বান্দার মৃত্যুর সময় আসে, তখন আল্লাহ্ তা’আলা মালাকুল মউত হযরত আযরাঈল (আঃ) কে বলেন, আমার দুশমনের নিকট যাও।
তার জান বের করে আন। আমি তাকে সব ধরনের সুযোগ দান করেছি, চতুর্দিক থেকে নেয়ামতের বৃষ্টি তার উপর বর্ষন করেছি, কিন্তু সে আমার অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসেনি।
অতএব আজকে তাকে ধরে নিয়ে এস। আমি তাকে শাস্তি দিব, নাফরমানীর অবস্বাদ গ্রহণ করাবো। এতদশ্রবণে মৃত্যুদূত হযরত আযরাঈল (আঃ) অত্যন্ত কৃশ্ৰী কদাকার অবস্থায় তার সামনে উপস্থিত হন। তখন তার চক্ষু থাকে ১২টি।
তাঁর কাছে একটি লোহার মোটা ডান্ডা থাকে যেটি জাহান্নামের আগুনের তৈরী। তাঁর সাথে থাকে ৫০০ ফেরেশতা। তাদের সাথে থাকে তামার টুকরা, হাতে থাকে জাহান্নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আগুনের উত্তপ্ত বেত।
মালাকুল মউত এসেই সে বান্দার উপর তার অর্থ দ্বারা মারতে আরম্ভ করে। ওর্থের কাঁটাগুলো তার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরায় বিদ্ধ হয় ।
অতঃপর সে গুর্য হযরত আযরাঈল (আঃ) টেনে বের করেন। অন্যান্য ফেরেশতারা তাদের বেত দ্বারা তার মুখে ও নীচে অন্যান্য অংশে আঘাত করতে আরম্ভ করে। ফলে সে বেহুশ হয়ে পড়ে।
আযরাঈল (আঃ) তার রূহকে পায়ের আঙ্গুল থেকে বের করে পায়ের গোড়ালিতে আটকে রাখে এবং পেটাতে থাকে। অতঃপর রূহকে পায়ের গোড়ালি থেকে বের করে হাটুতে আটকে ধরে। সেখান থেকে বের করে স্থানে স্থানে আটকে রাখে।
অতঃপর তাদের রূহ বের করে সিনার মধ্যে চেপে ধরে। তারপর ফেরেশতারা সে তামা এবং জাহান্নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলোকে থুতনীর নীচে রেখে দেয়।
অতঃপর মালাকুল মউত তাকে সম্বোধন করে বলে : হে অভিশপ্ত আত্মা! বেরিয়ে আস এবং সে জাহান্নামের দিকে চল যার সর্ম্পকে মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন :
সেদিন নাফরমানরা আগুনে এবং উত্তপ্ত গরম পানিতে এবং এরূপ কালো ধোঁয়ার ছায়ায় থাকবে যেটি ঠান্ডাও হবেনা, হবেনা আরমদায়ক। (বরং মারাত্মক কষ্টদায়ক হবে।) যখন তার রূহ শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে তখন আত্মা দেহকে বলে, আল্লাহ্ তাআলা তোমাকে নিকৃষ্ট বদলা দিন।
কারণ, তুমি আল্লাহর নাফরমানী কাজে দ্রুত অগ্রসর হতে, আর বাধ্যতার কাজে অলসতা করতে। তুমি নিজেও ধ্বংস হলে আর আমাকেও ধ্বংস করলে।
এরূপভাবে দেহও রূহকে বলে থাকে। জমিনের যে অংশে সে নাফরমানী করত সেগুলো তার প্রতি অভিশম্পাত করে। শয়তানের চেলারা দৌড়ে যেয়ে ইবলিসকে সুসংবাদ শুনায় যে, একজনকে জাহান্নামে পৌঁছিয়েছি
أعاذنا الله من عذاب جهنم
মৃত্যুরহস্য
জীবনের মূলে রয়েছে আত্মা আত্মার সাথে রয়েছে দেহের সম্পর্ক। আত্মা পুরাতন জীর্ণদেহ ত্যাগ করে নতুন দেহের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দেহে যতক্ষণ আত্মা আছে ততক্ষণ দুনিয়াতে মানুষটির রয়েছে জ্ঞান, গৌরব, মান-সম্মান, সমাজ তথা সে একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ মানুষ। দেহ থেকে আত্মার বিদায়ই হল মৃত্যু।
খ্রীষ্টজন্মের অন্ততঃ তিন হাজার বছর আগেই মৃত দেহকে মমি করে কবরে পাঠান হত।
এ ব্যাপারে গ্রীকরা ছিল সর্বাগ্রে। তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করত দেহ থেকে যে আত্মা বের হয়ে যায়, তা আবার দেহে ভর করতে পারে। সে জন্য তারা মৃতদেহকে অন্তত তিন দিন ফেলে রাখত ।
যদি তিন দিনের মধ্যে আত্মা ফিরে না আসত তবে কবর দেয়া হত। এ ব্যাপারে নাকি তাদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারও ভরপুর। একবার নাকি মৃত বলে ঘোষিত এক ব্যক্তি এভাবে বেঁচে ওঠে।
ভিন্ন ভিন্নমতও এসেছে এই মৃত্যু রহস্যকে নিয়ে । এদের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে বিজ্ঞানী ও দার্শনিক প্লিনি । মধ্যযুগে এ নিয়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়তেই থাকে।
বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক দার্শনিক মৃত্যু সম্পর্কে নানা তথ্য প্রদান করলেও তখন কেউ কেউ এই ভ্রান্ত ধারণায় বদ্ধমূল ছিল যে, আত্মার পুনর্জন্ম বা ফিরে আসার ঘটনা বাস্তবসম্মত।
এই ধারণার উপর ভর করে মৃত ব্যক্তির হাতে দড়ি বেঁধে তাকে কবর দেয়া হত। দড়ির অপর প্রান্ত কবরের বাইরে রেখে তার সাথে ঘন্টা ঝুলিয়ে দেয়া হত, যাতে কবরে মৃত ব্যক্তির আত্মা ফিরে এলে বা নড়ে উঠলে বাইরের লোকজন জানতে পারে।
মৃত্যু রহস্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক ধারণা মূলতঃ বিংশ শতাব্দীতেই আলোচনা ও সমালোচনায় আসে। নানা বিচার-বিশ্লেষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা এই মত পোষণ করেন যে,
মানবদেহে অক্সিজেন চলাচল ব্যাহত হলেই মানুষ আত্মা হারায়। আবার অনেক বিজ্ঞানী এর বিরোধিতা করে বলেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধই হল মৃত্যুর মূল কারণ।
বিতর্কের পাল্লা শেষ হতে না হতেই এই ধারণায় কুঠারাঘাত করা হয়। শ্বাসক্রিয়া চালু রাখার জন্য আবিষ্কৃত হল রেসমিটার এবং হৃদয়ন্ত্রের জন্য পাম্প।
এর ফলে অনেক অর্ধমৃত, মৃতপ্রায় ব্যক্তি মৃত্যুর কোল থেকে ফিরে এসেছে। আত্মাকে সনাক্ত করণও জটিল ব্যাপার। এ ব্যাপারে অনেকেই চেষ্টা চালিয়েছে।
মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এমন ব্যক্তিকে নিশ্ছিদ্র কাচের বাক্সে রাখা হল। মৃত্যুর পর এই বাক্সে আত্মার কোন আলামত লক্ষ্য করা যায়নি।
মৃত্যুর আগে ও পরে বাক্সের মধ্যে বিদ্যমান উপাদানগুলো পরীক্ষা করেও কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
মৃত্যুর রহস্য মোটামুটি বিংশ শতাব্দীর ষাট এর দশকে ব্যাপক আলোচনায় আসে। মৃত্যু সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা, অনুসন্ধান চালিয়ে ‘জার্নাল অব আমেরিকান মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন’ ১৯৬৮ সালে এই ধারণায় একমত পোষণ করে যে, “মস্তিষ্ক অকেজোই হল মৃতুর কারণ। ১৯৭৩ সালে দুই মার্কিন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, মস্তিষ্কের যে অংশ দ্বারা চেতনা জাগে সে অংশটুকু (ব্রেনস্টোন) অকেজো হলেই মানুষের জৈবনির যাবতীয় কাজ ব্যাহত হয়। তখনই হয় সে মানুষের মৃত্যু । এসব হল মানব মস্তিষ্কের প্রসূত বিভিন্ন প্রকার ধারনা। সুত্রঃ দৈনিক ইনকিলাব : ২৬-৮-৯৮ইং।
“জন্মিলে মরিতে হয়” এটা চিরসত্য। মৃত্যুর স্বাদ প্রতিটি প্রাণীকেই আস্বাদন করতে হয়। মৃত্যুর হাত থেকে কেউ রেহাই পাবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞ বা ভ্রান্ত ধারণার শিকার। পৃথিবীর অনেকেরই ধারণা হচ্ছে মৃত্যুর সাথে সাথে সবকিছুর সমাপ্তি ঘটে।
একটি মৃত জীব যেভাবে মাটিতে মিশে একাকার হয়ে যায়, একটি জবাইকৃত পশুর গোশত যেমন পাকস্থলীতে হজম হয়ে যায়, পরবর্তীতে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা, ঠিক তেমনি একজন মানুষের অবস্থাও তাই। একজন মানুষের মৃত্যু হওয়া মানে সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যাওয়া।
পূর্বেই বলেছি কেউ কেউ মনে করেন মৃত্যুর পর পুনরায় মানুষ দুনিয়াতে ফিরে আসে, তার পুনর্জন্ম হয়। পার্থিব জগতে যদি মানুষ ভাল কাজ করে, তাহলে পুনর্জন্মে সে ভাল মানুষের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আগমন করে। অন্যথায় শৃগাল, কুকুর ইত্যাদির ছুরতে তার পুনর্জন্ম হয়।
আসলে এগুলো সবই মানুষের ভ্রান্ত ধারণা বা অনুমান ভিত্তিক বিশ্বাস। নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিয়েছেন।
প্রকৃত সেই ধারণাটি হল, মৃত্যু একটি দীর্ঘনিদ্রা, যেমন নিদ্রা একটি সংক্ষিপ্ত মৃত্যু। আল-কুরআনুল করীমে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন :
الله يتولى الأنفس حين موتها واللتي لم تمت في منامها نيمسك اللتى قضى عليها الموت ويرسل الأخرى إلى أجل مسمى
যাবে না। অন্ততঃ আমি পাইনি। আধুনিক পাশ্চাত্যের ধর্ম-বিমুখতার এটাও একটা মৌলিক কারণ।
হিন্দু প্রচারকরা বৃটেন এবং আমেরিকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু তাদের বক্তব্য যেহেতু বুদ্ধিবৃত্তিকে মোটেও প্রভাবিত করে না ।
তাই তাদের ধর্মপ্রচার বিজ্ঞানমনস্ক পাশ্চাত্যবাসীকে ধর্ম থেকে আরও একধাপ সরিয়ে দেওয়ার কাজটাই শুধু করতে পারছে।
ডঃ এলিসনের বক্তব্য : মুসলমানদের মধ্যে এখন বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত লোকের অভাব নেই, কিন্তু বেদনার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, তাঁরা কুরআন পাঠ করে তা পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানপ্রিয় জনগণের কাছে ব্যক্ত করতে মোটেও উৎসাহী নয়।
অথচ, তাঁদের অনুধাবন করা উচিত ছিল যে, পাশ্চাত্যজগত আজ আত্মিক দিক দিয়ে দেউলিয়া হয়ে রয়েছে। তাদের সামনে যদি বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা তুলে ধরা হয়, তবে তারা আগ্রহকরে কুরআনকে বুকে তুলে নিবে। আর এর দ্বারা মুসলিম জাহানই বিপুলভাবে উপকৃত হবে।”
সুত্র : ইসলাম ও সমকালিন বিস্ময়কর কয়েকটি ঘটনাঃ মাওঃ মুহিউদ্দিন খান – পৃষ্ঠা ৩২-৩৩।
ঘটনাটি পরার জন্য ধন্যবাদ।
আরো নতুন নতুন ঘটনা পরতে ওয়েবসাইট টিতে চোখ রাখুন।
আসসালামু আলাইকুম।