নারীদের বেহেশত লাভের উপায়
নারীদের বেহেশত লাভের উপায়
হযরত আনাস (রা:) বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন : “মহিলা যদি স্বীয় পাঁচ ওয়াক্ত নামায রীতিমত আদায় করে, রামাজান
মাসের নিয়মিত রোযা রাখে, স্বীয় সতীত্বের হিফাজত করে এবং স্বামীর পূর্ণ আনুগত্য করে, তবে সে বেহেশতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে পারবে।” (মিশকাতুল মাসাবীহ, ২৮১)
পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের বেহেশতে যাওয়া সহজ। কারণ :
পুরুষদের এরূপ অনেক কাজে জড়িত হতে হয়, যে সকল কাজে অসদুপায়
অবলম্বনের কারণে তার পরিণাম অমঙ্গল হয়ে আসে। অথচ মেয়েরা
সেক্ষেত্রে নিরাপদ অবস্থানে থাকে ।
পার্থিব জীবনে মৌলিক চাহিদা হিসেবে ৫টি বিষয় নির্ণয় করা হয়ে থাকে: অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা। এ ৫টির একটিও মেয়েদের জিম্মায় দায়িত্ব হিসেবে অর্পিত নেই। বরং বাপ-মায়ের ঘরে মেয়ের এ সকল বিষয়ের জিম্মাদার হন পিতা, আর স্বামীর কাঁধে বর্তায়। মেয়ে শুধু কেবল ভোগই করে থাকে; ইতিজামের দায়িত্ব পিতা বা স্বামীর উপর ন্যস্ত। তাই পার্থিব জীবনে এ সকল উপকরণ সংগ্রহে পিতা বা স্বামীকেই যাবতীয় পদক্ষে। নিতে হয়। তারা চাকুরী করেন, ব্যবসা করেন, মজদুরী খাটেন, ফসল ফলান ইত্যাদি।
তারা বাজার করেন, দ্রব্যাদি কিনেন, বাড়ী-ঘর-জমি জমার বন্দোবস্ত করেন, শিক্ষা-দীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন প্রভৃতি। আবার এ সকল কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজনে দেন-দরবার, মামলা মুকদ্দমা, শক্তি-কৌশল প্রয়োগ প্রভৃতির ঝামেলা তাদের পোহাতে হয়।
এ সকল ব্যাপারে হক নাহকের বাছ-বিচার হালাল-হারামের ব্যবধান ও সুপথ-বিপথের পার্থক্য নির্ণয় করে সঠিক পথে চলার কঠিন কর্তব্য তাদের উপরই বর্তায়। যদি (আল্লাহ না করুন) এ সকল বিষয় সম্পাদন করতে গিয়ে কোন নাজায়েয, হারাম ও অসদুপায়ের পথে তারা পদক্ষেপন করেন, তার পরিণাম : শাস্তির ভাগী তাদের হতে হয়। কিন্তু মেয়েদের এ সকল দায়িত্ব স্কন্ধে না থাকায় এ জাতীয় বহু গুনাহ ও পাপের রাস্তা থেকে তারা এমনিতেই মাহফুজ থাকতে পারেন ।
আবার যেহেতু পুরুষরা স্থানভেদে ঘরের কর্তা হিসেবে বিবেচিত, তাই ঘরের অভ্যন্তরে কোন পাপের কাজ হতে থাকলে, বা তার অধীনস্থ গরের কোন সদস্য নাজায়েয কোন কাজে লিপ্ত হলে, তার গুনাহের বোঝা সেই কর্তার উপরও পড়ে। মেয়েরা এক্ষেত্রেও নিরাপদ মকামে রয়েছেন ।
উদ্ধৃত হাদীসে বলা হয়েছে : “মহিলা যদি স্বীয় পাঁচ ওয়াক্ত নামায় আদায় করে, স্বীয় মাসের রোযা রাখে।” এখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও রামাজান মাসের রোযাকে মহিলার দিকে (স্বীয় বলে) সম্বন্ধে করার তাৎপর্য এই যে, নামায ও রোযার ক্ষেত্রে মেয়েদের কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে। মেয়েরা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কয়েকদিন ঋতুস্রাবে ভুগে। সে সময় তাদের নামায মাফ। তখনও পড়তে হয়না, পরেও কাজা করতে হয় না। কিন্তু পবিত্র হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোসল পর্ব সেরে সচেতনতার সহিত তার ঋতু পরবর্তী নামাযের ব্যাপারে পূর্ণ যত্নশীলা হতে হয়। তখন অবহেলা করে গোসল করতে দেরী করা ও বিনা গোসলে থেকে নামায কাজা করা মারাত্মক গুনাহ । এমনিভাবে মহিলাদের রামাজানের মাসে যথারীতি সম্পূর্ণ রোযা পূর্ণ করা মাসিক শুরু হয়ে যাওয়ায় সম্ভব হয়ে উঠে না। তখন তো রোযা না রাখার নির্দেশ আছে, কিন্তু পাক-পবিত্র হওয়ার পর ছুটে যাওয়া সবক’টি রোযা তার কাযা করতে হবে। অবহেলা করে পরে আর সেই রোযা কাযা না করে মারা গেলে ফরজ তরককারিণী সাব্যস্ত হবে। তাই রোয়ার বেলাও তার বিশেষ তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়। এসব কারণেই নামায ও রোযার সহিত মেয়েদের বিশেষ অবস্থার সংশ্লিষ্টতা বুঝাবার জন্য এবং মেয়েদের সে সময় পূর্ণ সগাজ দৃষ্টি ও শরয়ী হুকুম পালনে যথা তৎপর হওয়ার জন্য এ দু’ আমলের সম্বন্ধ মেয়েদের দিকে করা হয়েছে : “স্বীয় নামায” : “স্বীয় রোযা” বলার মাধ্যমে।
স্বামীর আনুগত্য করা। স্বামীর সহিত স্ত্রীর যেমনিভাবে মহব্বতের সম্পর্ক আছে, তেমনিভাবে শ্রদ্ধারও সম্পর্ক আছে। স্ত্রী সর্বদা স্বামীর অধীনস্থ থাকবে। স্বামীর কথার বাইরে কোন কাজ করবে না। স্বামীর ইজাযত ছাড়া কোথাও যাওয়া তার জন্য নিষিদ্ধ। স্ত্রী সাধ্যমত স্বামীর সেবা করবে। স্বামীর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ পোষণ করবে। হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদ করেন: “যে মহিলা এ অবস্থায় মারা গেল যে, স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট, সে বেহেশতে যাবে।” (তিরমিজী শরীফ)
হযরত মুহাম্মদ (সা) আরো ইরশাদ করেন: “ (স্বামী স্বীয় স্ত্রীর নিকট এত ভক্তি শ্রদ্ধা পাবার উপযুক্ত যে,) যদি আমি কাউকে কারোর প্রতি সিজদা করার হুকুম দিতাম, তবে মেয়েদেরকে হুকুম করতাম তাদের স্বামীদের প্রতি সিজদা করতে। (কিন্তু যেহেতু একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা জায়েয নয়, তাই স্বামীদেরকে সিজদা করার আদেশ করা হয়নি।) তথাপি স্বামী তদীয় স্ত্রী থেকে এরূপ আনুগত্য প্রাপ্তির হকদার স্বামী যদি স্ত্রীকে কথার কথা হলুদ পর্বত থেকে পাথর বহন করে পর্বতে স্থাপনের আদশে করে এবং কালো পর্বতের পাথরগুলো সাদা
পর্বতে স্থাপনের আদেশ করে, স্ত্রীর জন্য তাও কর্তব্য হয়ে পড়বে। (যদিও সে কাজ অহেতুক হোক, বা কষ্টসাধ্য হোক।) (সুনায়ে আহমদ) হযরত মুহাম্মদ (সা) আরো ইরশাদ করেন: “যে মহিলার প্রতি সঙ্গত
কোন কারণে স্বামী অসন্তুষ্ট, (স্বামীকে সন্তুষ্ট করার পূর্ব পর্যন্ত) সেই
মহিলার ইবাদত কবুল হয় না এবং তার নেক কাজের ছাওয়াব হয় না।”
(বায়হাকী শরীফ)..
হযরত মুহাম্মদ (সা) আরো ইরশাদ করেন : “যদি স্বামী তার স্ত্রীকে স্বীয় চাহিদা পূরণের জন্য ডাকে, স্ত্রীর কর্তব্র : সঙ্গে সঙ্গে তার ডাকে সাড়া দেয়া : যদিও স্ত্রী চুলার ধারে রান্নায় ব্যস্ত থাকে।” (তিরমিজী শরীফ)
রাসূলে কারীম (সা) আরো বলেন : “যদি স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে বিচানায় ডাকে, কিন্তু স্ত্রী প্রত্যাখ্যান করে, আর স্বামী অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত্রিযাপন করে, সারা রাত্রি ফেরেশতাগণ সেই স্ত্রীর প্রতি লা’নত করতে থাকে সকাল পর্যন্ত ।” “এবং আল্লাহ তা’আলা স্বামীকে সন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত স্ত্রীর প্রতি রাগান্বিত থাকেন।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
রাসূলে পাক (সা) আরো বলেন : “যখন কোন মহিলা তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন সেই স্বামীর জান্নাতী হুর ঐ মহিলাকে তিরস্কার করে বলতে থাকে : “আল্লাহ তোর প্রাণ বধ করুন। তুই ওনাকে কষ্ট দিছ না। উনি তো তোর নিকট কয়েকদিনের মেহমান মাত্র। এরপরই উনি তোকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে (তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ) হযরত মুহাম্মদ (সা) ইরশাদর করেন : “যে মহিলা অনর্থকভাবে তার
স্বামী থেকে তালাক চায়, তার উপর বেহেশতের সুঘ্রাণও হারাম হয়ে
যাবে।”
তাই স্ত্রীর কর্তব্য হচ্ছে : স্বামীর হুকুম পালন করা, তার সেবা করা ও তার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ করা। তবে স্বামী যদি কোন নাজায়েয কাজের হুকুম করে, সেক্ষেত্রে স্ত্রী সেই নাজায়েয কাজ করতে পারবে না। তবে স্বামীকে বুজিয়ে বা ধার্মিক লোক মারফত হিদায়াতের ব্যবস্থা করবে। অধিক আরাম-আয়েশে রাখার জন্য যদি স্ত্রী তার স্বামীকে চাপ দেয় এবং স্বামী যদি সেই রকম বন্দোবস্তের খাতিরে কোন নাজায়েয ও গুনাহের উপার্জনে অগ্রসর হয়, তবে সেই গুনাহর অংশীদার স্ত্রীও হবে।
স্বামীর উপরও স্ত্রীর প্রতি সদাচরণের অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এভাবে দু’জনের মধুর সম্পর্কের মাধ্যমেই দুনিয়ার সংসার সুখময় হবে এবং দু’জনের নেক আমলের বদৌলতে বেহেশতে অনন্ত শান্তি লাভ হবে।
শিরোনামের হাদীসের প্রেক্ষিত দৃষ্টিতে উক্ত • আমলের মাধ্যমেই মেয়েরা বেহেশতবাসিনী হতে পারবে।