“পরিবেশ দূষণের কারণ ও তার প্রতিকার “
এই পৃথিবীটাই একটি বড় পরিবেশ। আর আমরা এবং আমাদের চারপাশটা তার ক্ষুদ্র অংশ। সুতারং পরিবেশ দূষণ মানেই সমগ্র পৃথিবীর অসুখ। বর্তমানে পরিবেশ দূষণই হলো বিশ্বের সবচেয়ে উদ্বেগজনক সমস্যা। পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বাতাস, মাটি ও পানি।কলকারখান, গাড়ির দোয়া এবং কয়লা ও তেলের দহন বাতাসে কার্বন- ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।রাসায়নিক সার, শহরের নোংরা আবর্জনা মাটিকে বিষাক্ত করছে। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীর পানিকে দূষিত করে তুলছে।এই দূষণের ফলে বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতিতে নানা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, দুই মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে,বৃষ্টিপাত অনিয়মিত হয়ে পড়ছে।অনেক পশু- পাখির বিলুপ্ত ঘটছে, ফসলের ফলন কমছে,গাছের ফল ধরছে না।এর সঙ্গে মানুষের দেহে বাসা বাঁধছে নানা ধরনের রোগ।
পরিবেশ দূষণ কি?
ক্ষতিকর পদার্থ পরিবেশের উপাদান সমূহের সাথে যুক্ত হলে তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণ বিভিন্ন ভাবে হয়ে থাকে। বায়ু দূষ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ ও মৃওিকা দূষণ এর মধ্যে অন্যতম। এইসব শব্দ দূষণ মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
পরিবেশ দূষণের পাঁচটি কারণ –
আকাশ, বাতাস, পানি, উদ্ভিদজগত, প্রাণীজগত সবকিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ তৈরি । এগুলো কোনোটিকে বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না । মানুষ তার বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে এবং পরিশ্রমে করে তার চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে তুলচ্ছে । প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বেশি মণিমানিক্য সংগ্রহ করে মানুষ উষর মরুভূমির বুকেও ফুটিয়েছে সোনালী ফসল । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানান ভাবে দূষিত হচ্ছে । যেমন বায়ু, জল, মাটি, শব্দ প্রভৃতি দুষণের ফলে মানুষের জীবনেও এসেছে নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি।
১) গাছপালা ও ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষিত হয় তাই সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
২) কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার করণে বায়ু দূষিত হয়।
৩) বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস ও ধূলিকণা বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে এদিকে নজর রাখতে হবে।
৪) যেখানে-সেখানে ময়লা, মলমূত্র ত্যাগের ফলে দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।
৫) যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ফলে বায়ু দূষিত হয়।
পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ পরােক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে নিম্নোক্ত নানা শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেঃ
কলকারখানা থেকে নির্গত হওয়া দূষিত জল,শহরের মল,আবর্জনা,যাতে নদী কিংবা হ্রদের জলকে দূষণ না করে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার আমাদের প্রত্যেক জনের। কীটনাশক, পলিথিন পুরনো যানবহন ব্যবহার কমাতে হবে সেই সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সচেতন হওয়া দরকার।
পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। দূষণ রোধের সহজতম উপায় বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ সংরক্ষণ করা দরকার। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ পেতে দেশের প্রতিটি নাগরিককে বেশি করে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবেশ দুষণ কমাতে প্রত্যেকটি দেশের আয়তনের ২৫% বনভূমি নিশ্চিত করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে গাছকাটা নিষিদ্ধ করতে হবে।
কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। কীটনাশকের পরিবর্তে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশ দূষণের সম্পর্কে জনগণকে সচেতন হতে হবে।গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে, শহরের আবর্জনা ও নোংরা জল নদীতে ফেলা যাবে না।প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে রক্ষা করা যায়।কারণ গাছ হলো বিষহরি।গাছ বাতাসের বিষ হরন করে।দেশকে বাচাতে না পারলে এক সময় মানুষেই বিলুপ্ত ঘটবে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যেকোনো মূল্যে পরিবেশ দূষণ রোধ করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আমরাই আমাদের পরিচ্ছন্ন পরিবেশের রক্ষী। আমাদের সকলের সক্রিয় প্রচেষ্টায় দূষণের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চই সম্ভব।