*★**প্রতিবেশি চোর**★**
ছোট্ট একটা মাটির ঘর। এক পৌঢ় দম্পতি বাস করে এই ঘরে। দীর্ঘদিন নিঃসন্তান থাকার পর আল্লাহ তা’আলা শেষ বয়েসে তাদেরকে একটা পুত্র ছোট ছেলেটার জন্য স্বামী-স্ত্রীর চিন্তার শেষ নেই। বেশি বয়েসের সন্তান। তাদের পর সন্তানের দেখাশোনা কে করবে, এ ভাবনা দু জনকে সারক্ষণ করে।
লালনপালনের বন্দোবস্তও তিনিই করবেন।
কুরে খায়। দু’জনেরই বিশ্বাস, আল্লাহ যেহেতু এত পরে সন্তান দিয়েছেন, এক রাতে, বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। ঝড়-তুফানে গাছের ডালপালা মটমট করে ভাঙছে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো।
স্বামী উঠে দরজাটা খুলে দিলেন। দেখলেন, পাশের বাড়ির রমিজ মিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। পুরো শরীর কাদা-পানিতে লেপ্টানো।
-চাচাজি! আমার ঘরটা ঝড়-তুফানে ধ্বসে পড়েছে। আজকের রাতটুকু আপনার ঘরে থাকার জায়গা হবে
-কেন হবে না, অবশ্যই হবে। এসো, ভেতরে এসো। রমিজ মিয়াকে রাতের মত থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। শোয়ার সময় স্ত্রী বললো,
-রমিজ মিয়ার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। সে তো সুবিধের লোক নয়।
-থাক, বেচারা বিপদে পড়ে এসেছে।
পরদিন সকালে রমিজ মিয়া বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে
সামনে এসে বললো,
– চাচাজান, আমার কাছে ঘরদোর ঠিক করার মতো কোন টাকা পয়সা নেই। যদি কিছু দিতেন? বালিশের নীচে রাখা থলে থেকে টাকা বের করে দিলেন। রমিজ মিয়া টাকা নিয়ে চলে গেলো।
কয়েক দিন পর, মাঝরাতের দিকে স্ত্রীর হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। অন্ধকারে হাতড়ে দেখলো, পাশে বাচ্চাটা নেই। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। দূর থেকে বাচ্চাটার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। স্বামীকে ডেকে তুলল।
ওগো শুনছো!
খোকাকে ঘরে দেখছি না। দূর থেকে খোকার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। কান্নার আওয়াজটা বৃষ্টির কারণে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না। স্বামী বললেন,
-তুমি গিয়ে নিয়ে আসো না।
-আপনিও সাথে চলুন। খোকা তো কেউ না নিয়ে গেলে একা একা বাইরে যেতে পারবে না। আমার কেমন যেন লাগছে।
-আচ্ছা চলো। দু’জন বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে শুনে গিয়ে দেখলেন, বাচ্চাটা ঘরের পুবকোণে খড়ের গাদার কাছে মাটিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। বৃষ্টির পানি আর
কাদায় পরনের কাপড় কালো হয়ে আছে। ছোট্ট বাচ্চাটা শীতে ঠকঠক করে কাঁপছে।
ঠাণ্ডায় দু’ঠোঁট নীল হয়ে আছে। মা পাগলিনীর মতো ছুটে গিয়ে বাচ্চাকে কোলে তুলে নিলেন। বাচ্চা নিয়ে ফিরে আসার সময়, অর্ধেক পথ আসার পর এক দমকা বাতাসে তাদের ছোট্ট ঘরটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়লো।
দু’জনে কোনরকমে রাতটুকু কাটিয়ে দিলো। পরদিন ভোরে ঘরের জিনিসপত্র বের করতে গিয়ে মানুষজন দেখলো, ভাঙা ঘরের ভেতরে রমিজ মিয়ার নিথর লাশ পড়ে আছে। তার হাতে একটা টাকার থলে শক্ত করে ধরা।