প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দাদা ও পিতার ঘটনা।
হযরতের দাদা আবদুল মুত্তালিব
ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে মদিনায় প্রতি বছর এক বিরাট মেলা বসত। একদা হাশেম ব্যবসা উপলক্ষ্যে শামদেশে যাওয়ার পথে সে মেলায় গিয়েছিলেন। তথায় সালমা নাম্নী এক মেয়ে দেখতে পান। মেয়েটির চাল চলন ও নম্রব্যবহারে কৌলীন্য ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে তাঁর খুব পছন্দ হয়। তিনি বিবাহের প্রস্তাব দিলে সালমা সানন্দে সম্মতি প্রদান করেন। হাশেম বিয়ের পর কিছুদিন সেখানে থেকে শামদেশে যান। ঘটমাক্রমে সেখানেই তিনি ইন্তিকাল করেন। এ দিকে কিছুদিন পর সালমা এক ছেলে সন্তান প্রসব করেন এবং তার নাম রাখেন ‘শায়বা’।
এ পিতৃহীন শিশু সন্তান মায়ের কাছেই লালিত পালিত হতে থাকেন । কিছুকাল অতিবাহিত হওয়ার পর হাশেমের ভাই মুত্তালিব খবর পেয়ে মদিনা গিয়ে ভাতিজা শায়বা কে মক্কায় নিয়ে আসেন। অতঃপর পিতৃহীন শায়বা মুত্তালিবের গৃহে লালিত পালিত হতে থাকেন, আর এ কারণেই তিনি আবদুল মুত্তালিব (মুত্তলিবের গোলাম) নামে পরিচিতি লাভ করেন ।
হযরতের পিতা আবদুল্লাহ :
আল্লাহ তার আশা পুরন করেন। সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র আব্দুল্লাহ ছিল পিতার সর্বাধিক প্রিয়, আবদুল মুত্তালিব পুত্র কোরবানীর ব্যাপারে কোরায বা লটারী করলেন । লটারীতে বারে বারে দশবার আবদুল্লাহর নাম উঠল তখন তিনি প্রতিবারের জন্য ১০টি করে উট হিসাব করে ১০০ টি উট আবদুল্লাহর বদলা কোরবানী দিলেন ৷
এতে করে আবদুল্লাহ রক্ষা পেলেন। এ প্রসঙ্গে রাসুলল্লাহ (স) বলেন ‘আমি দুই যবহের সন্তান অর্থাৎ তার বংশে পিতৃ পুরুষের মধ্যে ২টি যবহের উপক্রম ঘটনা ঘটে ছিল। ১টি হল তার পিতা আবদুল্লাহর ঘটনা আর দ্বিতীয়টা ছিল তার বড় দাদা বংশের আদি পুরুষ হযরত ইসমাইল (আ) যিনি যবেহ হচ্ছিলেন হযরত ইব্রাহীমের হাতে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর মেহেরবাণীতে তিনিও রক্ষা পেলেন।
আবদুল্লাহর বিবাহ
(৫৬৯ খৃ:)
হযরতের পিতা আবদুল্লাহ ছিলেন সুন্দর ও ক্লান্তিময় সুপুরুষ। তাঁর চেহারায় এক অভাবনীয় আলোকছটা সবসময় ঝলমল করত। তার ব্যবহার কথাবার্তা চলাফেরা এবং মানুষকে আপন করে নেয়ার অসাধারণ গুণ ছিল। তাই বংশের প্রত্যেকটি লোকের কাছে তিনি ছিলেন অত্যাধিক প্রিয়। অনেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) এর নূর বংশ পরম্পরায় এসেছে। তাই বংশের উপরস্থ প্রত্যেকেই সর্বদা এক অলৌকিক ঔজ্জ্বল্যের অধিকারী ছিলেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর হাবিব (স) বলেন, আমি পবিত্র বংশে জন্মেছি এবং আদম হতে আরম্ভ করে আমার পিতা মাতা পর্যন্ত অন্ধ যুগীয় কোন ব্যভিচার কদাচার আমার বংশকে স্পর্শ করেনি।” (মাওয়াহেদ)
এক সময় আবদুল্লাহ কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পর্দাপন করলে পিতা আবদুল মুত্তালিব ছেলেকে সংসারী করতে চাইলেন।
কিন্তু এ সোনার ছেলেকে কোথায় বিয়ে করাবেন ? অনেক খোঁজা খুজি করে শেষে বনী যোহরার কন্যা আমিনাকে খুব পছন্দ হল। শুনে জ্ঞানে রূপে ও বংশ মর্যাদায় কোরাইশদের সকল গোত্রের মধ্যে আমিনা ছিল অদ্বিতীয়। কিন্তু তিনি ছিলেন পিতৃহীনা। চাচা ওহাব তাঁকে নিজের মেয়ের মত করে প্রতিপালন করেন। আবদুল মুত্তালিব ছেলের বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিলে চাচাসহ পরিবারের সবাই সে প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
কথিত আছে যে, আবদুল মুত্তালিব ছেলে আবদুল্লাহকে নিয়ে বিয়ের জন্য রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে বনী আসাদের ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের বোন আবদুল্লাহর চেহারায় এক অলৌকিক আলোকছটা দেখতে পেয়ে তাকে একশটি উটের প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করতে বলে।
তা না হলে অন্ততঃ একবারের জন্য একত্রিত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। তার প্রস্তাব শুনে আবদুল্লাহ বললঃ না, পিতার সাথে যাচ্ছি তাঁর অবাধ্য হতে পারব না। অবশেষে আমিনার সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল।
কয়েকদিন শ্বশুরালয়ে থাকার পর ফিরার পথে সে মেয়ের সাথে পুনরায় দেখা হলে এবার সে কিছুই বলল না। আবদুল্লাহ জিজ্ঞাস করলেন, কি ব্যাপার! সে দিন এত আগ্রহ দেখালে আর আজ যে কিছুই বলছ না ? মেয়েটি বলল: না, এখন আর তোমার প্রয়োজন নেই। সেইদিন তোমার কপালে যে নূর দেখেছিলাম, আজ আর তা নেই । ঐ নূরই ছিল আমার কাম্য।
যাহোক, সে কুটিলা মেয়েটি তদানীন্তন আরবের জ্ঞানী ব্যক্তি ওরাকা ইবনে নওফেলের বোন হওয়ার ফলে তাকে ক্লেদাক্ত লালসার শিকার হতে হয়নি। ওয়ারাকা ছিলেন তখনকার আরবের ধর্মশাস্ত্রে সুপন্ডিত এবং সমগ্র আরবে ছিল তাঁর সুপরিচিতি।
তাঁর কাছ থেকে তাঁর বোন জানতে পারে যে, দেশের এ অংশে একজন নবীর আগমন ঘটবে। তাঁকে চেনা যাবে উদীপ্ত আলোকের ঔজ্জল্য উদ্ভাসিত মুখমণ্ডল দেখে। এই আলোর চিহ্ন সে দেখে ছিল আবদুল্লাহর ললাটে।
তাই ভাবী নবীর মা হওয়ার উচ্চাভিলাষ তাকে গভীরভাবে তাড়িত করেছিল। তার সে আশা যখন ধুলিষ্যাতে হয়ে গেল তখন থেকে আর আবদুল্লাহর প্রতি কোন মনোযোগ দিল না, যদিও আবদুল্লাহর ছিল দৃষ্টি কাড়া সৌন্দর্য।
আবদুল্লাহ তাকে বিয়ের ঘটনাটা জানালে তখন সে আবদুল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলে আল্লাহর কসম আমি ভুল করিনি, তোমার ললাটে আমি পবিত্র নূর দেখেছি সে নূর আমি অতি আগ্রহ ভরে আমার দেহের মধ্যে নিতে চেয়েছিলাম ।
কিন্তু এখন তা অন্যের মধ্যে চলে গেছে। এখন তোমার মধ্যে কিছু নেই যা দেখে আমি আকৃষ্ট হবো।”
এভাবে এ বিদুষী মহিলার মুখ নি:সৃত বাণী থেকে আবদুল্লাহ জানতে পারল যে, তার স্ত্রীর গর্ভে তার সন্তান আসছে। এর পর আবদুল্লাহ বেশি দিন বাঁচেননি । তাই তিনি তার সন্তান লাভের সুসংবাদ জেনে যেতে পারেননি ।
ঘটনা টি পরার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
আরো নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট টিতে চোখ রাখুন।