ফেরেশতা সালাম দেবেন যাদের

ফেরেশতা সালাম দেবেন যাদের

কবরে বন্ধু হবে আমল

নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয় এবং দাফন সম্পন্ন করে স্বজনরা চলে যায়, মৃতব্যক্তি তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। সে মুমিন হলে, নামাজ তার মাথার পাশে এসে দাঁড়ায়। রোজা দাঁড়ায় ডান পাশে। জাকাত দাঁড়ায় বাম পাশে। নফল আমলগুলো দাঁড়িয়ে যায় পা বরাবর। যদি মাথার দিক দিয়ে আজাব আসে তবে নামাজ বলে, আমার দিক দিয়ে যেতে পারবে না। এরপর ডান পাশে আজাব এলে রোজা বলে, আমার এদিক দিয়ে যেতে পারবে না। এরপর বাম দিক দিয়ে আজাব এলে জাকাত বলে, আমার দিক দিয়েও তুমি সফল হবে না। এরপর পায়ের দিক থেকে এলে নফল আমলগুলো বলে ওঠে, আমিও তোমাকে সুযোগ দেব না।” (আততারগিব)

কবর আলোকিত হবে কল্যাণকর কাজে

হজরত আবু উসামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, *জেনে রেখ মৃত্যুর পর মুমিনের যেসব নেক আমল তার কাছে পৌঁছে তার মধ্যে একটি হল ইলম, যা সে প্রচার করেছে। আরেকটি হল, কোনো নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করবে। শেষটি হল, এমন কোন কাজ যা মানুষের কল্যাণে বয়ে আনে। যেমন, মসজিদ-মাদরাসা তৈরি করে যাওয়া। খাল-পুকুর কেটে মানুষের জন্য পানির ব্যবস্থা করে দেয়া। স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষায় অবদান রাখা ইত্যাদি। এ ধরণের কাজের সওয়াব সে কবরে থেকেও পাবে।’ (মিশকাত)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা নেক বান্দার মর্যাদা জান্নাতে বৃদ্ধি করবেন। সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি তো এত আমল করিনি। তাহলে এত মর্যাদা কেন দেয়া হল? তখন বলবেন, তোমার সন্তানরা তোমার জন্য ইস্তেগফার করছে, তাই তোমার মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে।’ (মিশকাত) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, “কিয়ামতের দিন কেউ কেউ নিজের আমলনামায় পাহাড় পরিমাণ নেকি দেখবে। সে আশ্চর্য হয়ে বলবে, এত নেকি কোথা থেকে এলো? আমি তো এসব করেছি বলে মনে পড়ছে না। তখন বলা হবে, তোমার সন্তানদের দোয়ার কারণে তোমাকে তোমার আমলনামায় এসব নেকি যোগ হয়েছে।’ (শওকে ওয়াতান)

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃত ব্যক্তি কবরে অসহায় থাকে যেমন অসহায় থাকে কোনো ডুবে যাওয়া মানুষ। সে দোয়ার জন্য অপেক্ষা করে। যখন তার কাছে কারও দোয়া পৌঁছে, তখন সে পুরো দুনিয়ার মালিক হওয়ার চেয়েও বেশি আনন্দ অনুভব করে। (মিশকাত)

ফেরেশতা সালাম দেবেন যাদের

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত,

নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘যখন মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহর প্রিয় বান্দার কাছে আসেন, তখন তাকে সালাম করে বলেন, হে আল্লাহর বন্ধু! তোমার প্রতি সালাম। ওঠ! এমন ঘর থেকে বেরিয়ে এসো যাকে তুমি কুপ্রবৃত্তি বিসর্জনের মাধ্যমে নষ্ট করেছ। ওই ঘরের দিকে চলো! যাকে তুমি ইবাদতের মাধ্যমে গড়ে তুলেছ।

একদিন রাসূল (সা.) আম্মাজান আয়েশা (রা.)কে বলেন, ‘মুমিন বান্দা মরণের সময় ফেরেশতাদের দেখতে পায়। ফেরেশতারা তাকে বলে, আমরা কি তোমাকে দুনিয়াতে রেখেই চলে যাবো? উত্তরে মুমিন বান্দা বলেন, আপনার কি আমাকে দুঃখ-বেদনার ঘরে রেখে যেতে চান? এখন আর আমি থাকতে চাই না। আমাকে প্রিয় আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে চলুন।’ (ইবনে জারির) হজরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) বলেন, ‘মৃত্যুর সময় মুমিন বান্দার কাছে ফেরেশতারা এসে সুসংবাদ দেয়। তারা বলে, তুমি যেখানে যাচ্ছ, সেখানে যেতে ভয় করো না। এতে তার ভয় কেটে যায়। ফেরেশতারা আরো বলে, দুনিয়া এবং দুনিয়বাসীদের ছেড়ে যেতে দুঃখ করো না। তোমার জন্য নয়নাভিরাম জান্নাত পথ চেয়ে আছে।

আল্লাহর সম্ভাষণ কারা পাবেন

হজরত মাসরূক (রা.) বলেন, ‘আমরা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এর কাছে এই আয়াতের তাফসির জিজ্ঞেস করলাম ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত। আল্লাহর সান্নিধ্যে আছেন এবং রিজকপ্রাপ্ত হচ্ছেন।’ (ইবরাহিম : ১৬৯)। তিনি বললেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, শহীদদের আত্মা সবুজ পাখি হয়ে উড়ে বেড়ায়। তাদের জন্য আল্লাহর আরশের নিচে একধরণের ঝুলন্ত ফানুস রয়েছে। তারা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াতে পারে।

আল্লাহতায়ালা তাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের কিছু চাওয়ার আছে কী? তারা বলে, আমরা আর কী চাইব; আমরা তো জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানেই বেড়াতে পারি। এরপর তিনবার আল্লাহ এবং তাদের মাঝে এমন প্রশ্নোত্তর হয়। যখন তারা বোঝে যে, যতক্ষণ আমরা কিছু না চাইব, এমন প্রশ্ন হতেই থাকবে, তখন তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমরা চাই আমাদের আবার পৃথিবীতে পাঠানো হোক। আমরা আবার আপনার পথে শহীদ হতে চাই। আল্লাহ বলবেন, এটা হবার নয়। তোমরা জান্নাতেই উড়ে বেড়াও। (মুসলিম)

কবরে পাহারা দিবে কোরআন

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবি একটি কবরের ওপর তাঁবু গাড়লেন। এখানে যে কবর আছে তা তিনি জানতেন না। একটু পর তিনি শোনেন, কে যেন সূরা মূলক তেলাওয়াত করছে। নবীজী (সা.)কে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এই সূরা আজাবে বাধা দানকারী। আল্লাহর আজাব থেকে কবরবাসীকে বাঁচিয়ে রাখে।’ (মিশকাত) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরআনে একটি সূরা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করল। আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন। তোমরা কি জানতে চাও সূরাটির নাম কী? সেটি হল সূরা মুলক। (মিশকাত) তাবেয়ি হজরত খালেদ ইবনে মাদান (রহ.) সূরা মুলক এবং সূরা আলিফ লাম মীম সেজদা সম্পর্কে বলেন, ‘এ দুটি সূরা তেলাওয়াতকারীর পক্ষ নিয়ে কবরে ঝগড়া করবে। তারা বলবে, হে আল্লাহ! যদি আমি তোমার কালামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকি তবে তার জন্য আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। আর যদি আমি তোমার কিতাবের অংশ না হয়ে থাকি, তবে তোমার কিতাব থেকে আমাকে মুছে ফেল।’ (মিশকাত)

হে মরণ! শুক্রবার এসো

ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলমান জুমার দিন বা জুমার রাতে মারা গেলে, আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন।’ (মুসনাদে আহমদ)

অসুস্থ আত্মার শহীদি মরণ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোগে ভুগে মারা যায়, সে শহীদি দরজা লাভ করে। কবরের বিপদাপদ থেকে সে বেঁচে যায়। সকাল-বিকেল তাকে জান্নাত থেকে খাবার পরিবেশন করা হয়। (মিশকাত ) হজরত সুলায়মান ইবনে সুরাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লা (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি পেটের রোগে মারা যায়, তাকে কবরে আজাব দেয়া হয় না।’ (মুসনাদে আহমদ)।

মর্যাদার মুকুট যারা পড়বেন

হজরত মিকদাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে শহীদদের জন্য ছয়টি পুরস্কার রয়েছে। (১) রক্তের প্রথম ফোঁটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, আর তার ঠিকানা-জান্নাত তাকে দেখিয়ে দেয়া হয়। (২) তাকে কবরের আজাব থেকে নিরাপদে রাখা হয়। (৩) কিয়ামতের চরম ভয়ার্ত দিনে সে নির্ভয় থাকে। (৪) তার মাথায় মর্যাদার মুকুট পড়ানো হবে, যার একেকটি পাথর দুনিয়া এবং দুনিয়ার সবকিছু থেকে মূল্যবান। (৫) বাহাত্তরজন পবিত্র হুরকে তার সঙ্গে বিবাহ দেয়া হবে। (৬) সত্তরজন আত্মীয়-স্বজন তার সুপারিশে বিনা হিসেবে জান্নাত লাভ করবে। (ইবনে মাজাহ)

হতে চাই সীমান্তের সৈনিক

হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর রাহে ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত একদিন একরাত পাহারা দেয়া, এক মাস নফল রোজা এবং রাতে নফল নামাজ আদায়ের চেয়ে উত্তম। আর কেউ যদি পাহারা দেয়া অবস্থায় মারা যায়, তবে তার আমল নামায় কিয়ামত পর্যন্ত নফল। ইবাদতের সওয়াব জারি থাকবে।’ (মিশকাত)

যাদের জন্য কবরের আজাব নেই।

হজরত আবু আইয়ুব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের শত্রুর মুখোমুখি হয়ে মারা যায় কিংবা জয় লাভ করে, তাকে কবরের জীবনে বিপদে ফেলা হবে না।’ (নাসাঈ)

হায় অভাগা। মাটিও গ্রহণ করেনি তোকে

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাতেব লেখক ছিল। সে ইসলাম ছেড়ে মোশরেকদের দলে যোগ দেয়। এতে রাসূলুল্লাহ (সা.) খুব কষ্ট পেলেন। তার জন্য বদদোয়া করে বললেন, তোকে যেন মাটি গ্রহণ না কড়ে। তার মৃত্যুর পর আবু তালহা (রা.) কবরস্থানে গিয়ে দেখেন, বেইমানটি কবরের বাইরে পরে আছে। তিনি সেখানকার লোকদের

জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? তাকে কবর দাওনা কেন? লোকজন বলল, আমরা তাকে কয়েকবার দাফন করেছি। প্রতিবারই কবর তাকে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা তাকে বাইরেই রেখেছি।’ (বুখারি)

নবীজি জানেন উম্মতের খবর

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার ইন্তেকালের পর তোমাদের আমল আমাকে দেখানো হবে। তোমাদের আমলনামা ভাল দেখলে আমার আনন্দ বেড়ে যাবে। আমি শোকরিয়া আদায় করব। আর তোমাদের আমলনামা মন্দ দেখলে আমার কষ্ট হবে। আমি তোমাদের জন্য ইস্তেগফার করব।’ (ফাওয়াইদ)

তোমাকে সালাম হে প্রিয় নবী!

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেউ যদি আমার রওজার সামনে দাঁড়িয়ে দরূদ-সালাম বলে, আমি তা শুনতে পাব। আর কেউ যদি দূর থেকে দরূদ-সালাম বলে, ফেরেশতাদের মাধ্যমে আমার কাছে তা পৌঁছে দেয়া হবে।’ (বায়হাকি)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *