***বইপোকা***
আজ আমি আপনাদের এমন একটি গল্প শোনাবো যা আপনারা হয়তো আগে কখনো শোনেননি। আমি যে কলেজে লেখাপড়া করেছি, সে কলেজের প্রিন্সিপালের পক্ষ থেকে একদিন আমার কাছে একটি চিঠি।
এলো। চিঠিতে লেখা ছিলো—‘অমুক তারিখে কলেজে বড়ো একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সে অনুষ্ঠানে কলেজের কৃতী ছাত্রদের সম্মাননা প্রদান করা হবে।
আর তুমি তাদের মধ্যে অন্যতম। তাই তোমাকে Roll of Honour অর্থাৎ বিষেশ সম্মাননা প্রদান করা হবে। এ সম্মাননা প্রদানের জন্য পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নোবেল বিজয়ী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুস সালাম খুরশীদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’ তিনি যদিও ছিলেন কাদিয়ানি তবুও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এবং এ কলেজের প্রাক্তনছাত্র হিসেবে তাকে কানাডা থেকে আনা হচ্ছে। আমি নির্ধারিত তারিখে আমার ইউনিভার্সিটি থেকে ছুটি নিয়ে কলেজে। পৌঁছে যাই। আসলেই অনুষ্ঠানটি ছিলো অনেক জমজমাট।
প্রিন্সিপাল সাহেবের ভাষ্য ছিলো আমার মাধ্যমে যেহেতু কলেজের ব্যাপক সুনাম
ও খ্যাতি হয়েছে তাই অনুষ্ঠানটিও তিনি সে রকম আড়ম্বরপূর্ণ করতে চান। যাহোক, এ অনুষ্ঠানে আমাকে আবদুস সালাম Roll of Honour প্রদান করেন। এরপর আমরা বসে চা খাচ্ছিলাম, এমন সময় আমাদের এক প্রফেসর আবদুস সালাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘জনাব! আপনি কীভাবে নোবেল বিজয় করলেন?’ জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি কঠোর পরিশ্রমী।
জবাবে প্রফেসর সাহেব বললেন, ‘বিজ্ঞানের সকল ছাত্র-ছাত্রীরাই পরিশ্রমী ও বইপোকা হয়ে থাকে।’ এরপর তিনি বললেন, ‘আমি সবার থেকে একটু বেশিই পরিশ্রমী।’ প্রফেসর সাহেব আবার বললেন, ‘বিজ্ঞানের সকল ছাত্ররাই তো পরিশ্রমী হয়ে থাকে, কিন্তু সকলেই তো আর নোবেল অর্জন করতে পারে না। কিন্তু আপনি তো নোবেল লরিয়ট অর্জন করেছেন।
তাই আমার জানার আগ্রহ হলো, আপনার পরিশ্রমের ধরনটা কী?’ জবাবে আবদুস সালাম সাহেব বললেন, ‘আমি খুব বেশি মেধাবী নই, কিন্তু বেশি পরিশ্রম করতাম।’ একবার আমি রাসায়নের একটি বই পড়লাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম না। ফলে একবার, দু’বার, তিনবার এভাবে ৬৩ বার পুরো বইটি অধ্যয়ন করলাম।
একসময় গ্রন্থটি আমার মুখস্থ হয়ে গেলো। তার এ কথা শুনে আমরা থ বনে গেলাম। এমন ব্যক্তি কী খুঁজে পাওয়া যাবে, যে বুঝতে না পারার কারণে পুরো বইটি ৬৩ বার পড়েন? আসলে যিনি এমন বিদ্যানুরাগী তিনি তো নোবেল লরিয়ট হবেনই।