বদনজর
*******বদ নজর*******
একটু পরেই বরযাত্রীরা এসে পড়বে। কনে সাজানোর সব কাজ প্রায় শেষ। কনের মা একটু আগে এসে মেয়েকে দেখে গেছেন। বারবার দেখে যাচ্ছেন, তবুও আশ মিটছে না। গর্বে বুক ফুলে উঠছে। এমন একটা সুন্দর মেয়েও হঠাৎ হাঁকডাক বেড়ে গেল। বরযাত্রী এসে গেছে। মা ওপরতলায় একে মেয়েকে নিচে নামিয়ে নিতে।
মেয়ে ব্যাকুল হয়ে মাকে কাছে ডেকে বলল,-আম্মু একটু আমার কাছে এসে বসো। আমার কেমন যেন লাগছে। “কেন কী হয়েছে মা?
যা থমকে গেলেন। একজন বয়স্কা মহিলা বললেন, দুআ করবো। তাতে আশা করি ঠিক তার দৃষ্টি ঠিক হয়ে যাবে। মা ছাড়া বাকি সবাই ওযু করে এল। দুআ করলো।
কিন্তু কোনও সমাধান হলো না। খবরটা ভেতরবাড়ি ছাড়িয়ে বাহিবোড়িতে গিয়ে পৌঁছল। শারদক্ষ এমতাবস্থায় বিয়েতে বেঁকে বসলো। তাদের মুরুব্বিরা বিয়েটা স্থগিত করে দিতে বলল। এমন সময় পাত্র শক্ত অবস্থান নিয়ে বললো, যেতে চাই না। আমরা তো আগেই পাত্রী দেখে নিয়েছি।
তখন তো ভালো ছিল। আর এই সমস্যা তো বিয়ের পরেও হতে পারতো, তখন?
বিয়ে হয়ে গেল। স্বামী অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখাল। কিছুতেই কিছু হলো
না। কোনও রোগ ধরা পড়ল না।
স্বামী খোঁজ করতে করতে এক বৃদ্ধ হালিমের সন্ধান পেল। স্ত্রীকে নিয়ে তার কাছে গেল। জ্ঞানবৃদ্ধ আলিম “আমার যতদূর মনে হয়, তোমার স্ত্রী বনবারের শিকার হয়েছে। নযরটা এত বেশি গভীর যে, যার দৃষ্টি পড়েছে, সে মারা যাওয়া ছাড়া এই রোগ সারার এভাবেই চলছিল দিন। একদিন সকালে স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে অবাক হয়ে
গেল। আশেপাশের দৃশ্যটা এখন আর আগের মতো অন্ধকার লাগছে না।
বাড়ির নাম্বারে ডায়াল করলো। রিসিভার ওঠান বড় ভাই। এই সাত সকালে আমাকে ফোন কেন? আম্মু কোথায়? তার সাথে কথা বলতে চাই। তাকে একটা খুশির খবর দিতে চাই!-আম্মুকেই সবার আগে খবরটা দিবো। -শোন, মন খারাপ করিস না। আম্মু আজ ফজরের নামাযের পর, ইন্তেকাল মেয়ের হাত থেকে রিসিভারটা খসে পড়লো।
এক সাথে নানা বিপরীতমুখী অনুভূতি ও চিন্তা মাথায় এসে ভর করলো। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে একটা কথা মনে এল। বৃদ্ধ হুযুর বলেছিলেন,-অনেক সময় অতি আপনজন থেকেও বদনযর লাগতে পারে। অতি মুগ্ধতা থেকেই মাঝে মধ্যে নযর লেগে যায়।
আরও মনে পড়লো, সবাই ওযু করতে গেলেও আম্মু সেদিন ওযু করতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, -তোমাদের কারো যদি নিজের প্রতি, সম্পদের প্রতি, আপন ভাইয়ের প্রতি মুগ্ধতা জাগে, তাহলে বরকতের জন্যে দু’আ করো। কেননা চোখের দৃষ্টি (বদনার) সত্য।