কসম করে বলছি, (হযরত) আলী ও (হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বিবাহের সাথে দুনিয়ায় অন্য কারো বিবাহের কোন তুলনা হতে পারে না। আজ তাঁদের বিবাহ উপলক্ষে আশে আল্লাহর কাছে আল্লাহর আদেশে হযরত জিবরাঈল, মীকাঈল ও অন্যান্য ফেরেশতাগণ সমবেত হয়ে উৎসবে রত হয়েছেন।
আজ বেহেশকে অপূর্ব সু করা হয়েছে। জান্নাতের হুর-গেলমানগণ সুবেশ পরিধান করে আনন্দে প্রকা
অন্যদিকে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) বদুল আলামীন জান্নাতের দারোগা রেদওয়ান ফেরেশতাকে আদেশ করেন চতুর্থ আকাশে মা’মুরের তোরনদ্বারে একটি উচ্চাসন নির্মাণের জন্য রইল ফেরেশতাকে ঢেকে আনা হোক।
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের আদেশ পালিত হল। রূপ ফেরেশতা উপ উচ্চাসনে আরোহণ করণের পর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের প্রশংসা বর্ণনার পর উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেন, হে আসমান ও যমীনের অধিবাসীগণ! জেনে রেখ, আজ আল্লাহ পাকের হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) ও হযরত আলী (রা)-এর বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন হচ্ছে।
বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর রাসূল (সাঃ) তাঁর ঘরে গিয়ে দেখতে পেলেন, পুরাতন কাপড় পরিধান করে জান্নাতী রমণীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা (রাঃ) আজকের এ বিবাহের দিনে বসে কাঁদছেন। চোখ দু’টি থেকে অশ্রু ঝরে পড়ছে। সে অশ্রুতে ভিজে গেছে তাঁর গভম্বয়।
হযরত রাসূলে করীম (সাঃ)-এর প্রিয় কন্যার বিয়ে আজ। আজ তাঁর জন্য উত্তম ছিল বিবাহের বেশ। কিন্তু না, এর পরিবর্তে তাঁর দেহ শোভা পাচ্ছে আজ পুরাতন কাপড়। বিবাহের কোন নির্দেশনই তাঁর দেহে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পিতা হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) দরিদ্র। দরিদ্র সে ব্যক্তি, যাঁর হাতে তুলে দিচ্ছেন আজ তাঁকে।
এতই দরিদ্র যে, মোহরের ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে হয়েছে নিজের লৌহবর্ম বিক্রি ব্যতিত। হযরত ফাতিমা (রাঃ) কাঁদছেন। কি তাঁর কান্নার কারণ? কারণ অনেক হতে পারে। হতে পারে পিতার ঘর ছেড়ে চির দিনের জন্য স্বামীর ঘরে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে পিতৃগৃহের বিয়োগব্যাথা। হতে পারে আজকের এ দিনে হয়ত মায়ের কথা মনে পড়েছে। কিন্তু না, রাসূল (সাঃ) এসব কোন কিছুই কারণ হিসেবে ভাবলেন না।
তিনি ভাবলেন, কন্যা ফাতিমা হয়ত হযরত আলী (রা)-এর নিঃসম্বলতা দেখেই কাঁদছেন। তাই তিনি তাঁকে শান্তনা নিয়ে বলেন- মা ফাতিমা! তুমি কি জন্য দুঃখ অনুভব করছ? তুমি কি আলীর দারিদ্রের কথা ভেবে বিষণ্ন হয়েছ? শুন মা! তোমাকে আমি অপাত্রে অর্পণ করিনি। যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে, যাঁর ঈমান সবচেয়ে বেশি অটল, যিনি আমার সাহাবাগণের মাঝে সর্বশ্রেষ্ট বিদ্বান এবং মহত্বে যিনি অতুলনীয়, তোমাকে আমি তাঁর কাছেই অর্পণ করেছি।
না ফাতিমা! তুমি আমার উম্মতের মাঝে সর্বোত্তমা, তোমার মর্যাদা সবার উপরে। আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) উপদেশ বাণী শুনালেন কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে। তাঁর এ অমূল্য উপদেশবাণী শুনে কন্যার হৃদয়-শীতল হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর মনের গ্লানি ও সকল ব্যথা-বেদনা দূর হয়ে গেল।
তিনি এখন পরম শান্তি অনুভব সাইয়িদাতুন-নিসা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বিবাহকালীন বয়স সম্পর্কে অধিকাংশ জীবনীকার বলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল আঠার বছর। তবে কেউ কেউ ঊনিশ বছর বলেও উল্লেখ করেছেন। তখন হযরত আলী (রাঃ)-এর বয়স কত ছিল এ বিষয়েও বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
কেউ বলেছেন একুশ বছর। কেউ বলেছেন চব্বিশ বচর। কেউ বলেছেন, তখন তাঁর বয়স ছিল পঁচিশ বছর। হযরত আলী (রাঃ)-এর বিবাহ কালীন সময় সম্পর্কে মতভেদ থাকলেও সকলেই একথায় একমত যে, তখন বয়স খুব বেশি ছিল না।