বাদশার মসজিদ

****বাদশাহর মসজিদ****

এক বাদশাহর খেয়াল চাপলো একটা মসজিদ বানাবেন। এই মসজিদটা হবে।
সম্পূর্ণ তার খরচে। আর কারও কোনরকমের আর্থিক সহযোগিতা থাকবে না। সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হলো, কেউ যেন কোন রকমের সাহায্য- সহযোগিতা না করে।

180px-Faisal-Masjid-From-Damn-e-koh

মসজিদ নির্মাণ শেষ হলো। মসজিদের শাহী গেইটের সামনে বাদশাহর নামাঙ্কিত নামফলকও বসানো হলো। রাতে বাদশাহ স্বপ্নে দেখলেন, আকাশ থেকে ফেরেশতা নেমে এসেছে। ফেরেশতা মসজিদের
সামনে রাখা নামফলকে উৎকীর্ণ তার নামটা মুছে এক মহিলার নাম লিখে রাখলো। বাদশাই হতভম্ব হয়ে ঘুম থেকে জাগলেন। এটা আবার কেমনতরো স্বপ্ন?

একজন সেপাই পাঠিয়ে যাচাই করলেন। নাহ! তার নামটা আগের মতোই লেখা আছে। সবাই বললো, এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছুই নেই। এটা অলীক স্বপ্ন। দুঃস্বপ্ন। বাদশাহ মেনে নিলেন। কিন্তু পরের রাতে আবার একই স্বপ্ন দেখলেন। ধড়মড় করে উঠে বসলেন। সাথে সাথে এই মাঝরাতেই একজনকে পাঠালেন। লোকটা দেখে এসে জানালো, বাদশাহর নাম ঠিকমতই আছে। বাদশাহ কিছুটা আশ্বস্ত হলেন।

180px-Faisal-Masjid-From-Damn-e-koh

পরের রাতে আবারও একই স্বপ্ন। আজ ফেরেশতা যখন মহিলার নাম লিখছিলো, বাদশাহ গভীরভাবে নামটা লক্ষ করলেন। সকালে উঠেই এই নামের মহিলাকে দরবারে হাজির করতে বললেন। দরবারে হাজির করার পর
দেখা গেলো একজন বৃদ্ধ মহিলা।

বৃদ্ধা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। বাদশাহ অভয় দিয়ে বললেন, -বুড়ি মা! তুমি কি আমার মসজিদটা নির্মাণের কাজে কোন সহযোগিতা করেছিলে? -হুযুর! আমি একজন গরীব অসহায় মহিলা। আমার সাহায্য করার সামর্থ্য কোথায়? । শুনেছি, আপনি সহযোগিতার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এরপরও কি কারো সাহায্য করার সায়ন হবে? -বুড়ি মা! ভালো করে চিন্তা করে বলো।

তুমি কি কোন সাহায্যই করোনি? একেবারেই না? -আল্লাহর কসম! হুযুর, আমি কিছুই করিনি। তবে
-তবে কি? -এটাকে সাহায্য বলা হবে কিনা বুঝতে পারছি না। একদিন আমি মসজিদের
পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম, একটা গাধা রশি দিয়ে বাঁধা।

পিঠে বিভিন্ন সরঞ্জাম। বোঝার চাপে গাধাটা খুবই কষ্ট পাচ্ছিলো। গাধাটার অদূরেই রাখা ছিলো একটা পানির ছোট্ট গামলা। গাধাটা গলা
বাড়িয়ে গামলা থেকে পানি পান করতে চাইছিলো। কিন্তু রশির কারণে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। বেশি টানটানি করায় গাধাটার গলায় ক্ষত হয়ে রক্ত ঝরছিলো। আমি তখন পানির গামলাটা অনেক কষ্টে গাধার মুখের কাছে এনে দিয়েছিলাম। আমি শুধু এটুকুই করেছিলাম।

180px-Faisal-Masjid-From-Damn-e-koh

-হুমম! তুমি এ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছিলে। আল্লাহ তোমার কাজ কবুল করে নিয়েছেন। আর আমি মসজিদটা নির্মাণ করেছিলাম আমার নামের জন্য। তাই আমার এই আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হয়নি। বাদশাহ নয়া ফরমান জারি করলেন, মসজিদের নাম এখন থেকে এই বুড়ি মার নামেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *