বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সরকারকে হুঁশিয়ারি

সোনালী ব্যাংক চত্বর, খুলনা, ২২ অক্টোবর
খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোনালী ব্যাংক চত্বর, খুলনা, ২২ অক্টোবর

image

বাস, লঞ্চ, ট্রেন—সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করার পরও খুলনার সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীর উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন বাংলা , ‘দেখেন, হামলা, মামলা, গ্রেফতার, হয়রানি করে এবং পথ আটকে গণপরিবহন বন্ধ করেও জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখা যায় না। তাই প্রমাণ করে দিয়েছেন আজকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা।’

আজ শনিবার বিকেলে খুলনা শহরের ডাকবাংলা এলাকার সোনালী ব্যাংক চত্বরে দলের বিভাগীয় গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম জাতী ও সরকারের উদ্দেশে এসব কথা বলেন

এ সমাবেশ ঘিরে গত দুই দিনে খুলনার বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার, মামলা ও বাসা-বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। সমাবেশে নেতা– কর্মীদের উপস্থিতি ঠেকাতে দুই দিন ধরে খুলনা অভিমুখী দূর পাল্লার সব ধরনের গণপরিবহনও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিস্তারিত পড়ুন :

বিভিন্ন এলাকায় আ.লীগের অবস্থান, রেলস্টেশনে পুলিশ-বিএনপি মধ্যে সংঘর্ষ

বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের লাঠিসোঁটা বাস- স্টিক নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। শনিবার দুপুরে এসব ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন :মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘সীমাহীন বাধা দিয়েছে।

6

আমি পুলিশ প্রশাসনের ভাইদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনাদের ফোন করলে বলেন , না সব ঠিক আছে। আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা তো বিএনপির সমাবেশে কোন রকমের বাধা দিই না ; বরং সহযোগিতা করি।’ কী সহযোগিতা করেছেন ভাই আপনারা ?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলেন মির্জা ফখরুল বলেন , ‘স্টেশনে নামার পরে আমাদের ছেলেদের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে । আমাদের চোখের সামনে আমাদের ছেলে মেয়েদের কুপিয়েছে , আপনারা মুখ বুজে ছিলেন কিছুই বলেননি।

বরং খেয়াঘাটে গ্রেপ্তার করেছেন , আহত করেছেন লাঠিপেটা করেছেন । যাতে সমাবেশে যোগ দিতে না পারে , তার সুব্যবস্থা করেছেন । তারপরও তারা পারেনি। আবার আপনারা বলেন আমাদেরকে সাহায্য করেছেন।

নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আরো বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর , ‘আপনারা অসাধ্যকে সাধন করেছেন। তিন দিন ধরে জলে–স্থলে সব গণ পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। দুই দিন ধরে বাস বন্ধ , লঞ্চ বন্ধ করেছে , নৌকা বন্ধ করেছে ,ও খেয়াঘাট বন্ধ করেছে। কিছুই চলতে দেয়নি তারা । তারপরও কি আপনাদের গণতন্ত্রের যে আকাঙক্ষা , যা ইচ্ছা অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই , সে লড়াইয়ে বাধা দিতে সক্ষম হয়েছে ?

ইতিহাস সাতক্ষী আছে , কোনো দিন জনগণের ন্যায়সংগত দাবি উপেক্ষা করে শুধু শক্তি আর বল দিয়ে ,

রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করে মানুষকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না। সেটিই আপনারা সবাই মিলে আবার প্রমাণ করেছেন।’

বিএনপির মহাসচিব জানান, গত দু-তিন দিনে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজারো নেতা-কর্মীকে আহত জখম করেছে।

রূপনগরে ২০ জন গুলিবিদ্ধ আহত , কেশবপুরে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে , মোংলায় ট্রলারে আসা প্রায় ১০০ নেতা-কর্মীকে আহত মারধর করে ট্রলার ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। রূপসা , তেরখাদা ও দিঘলিয়ায় ১০০ নেতা – কর্মীকে আহত রক্তাক্ত করেছে। বাগেরহাটের মিছিলে ৭০ নেতা-কর্মীকে আহত লাঠিপেটা করেছে।

গ্রেপ্তার করেছে ৫০ জনকে। নগরের ৫ ও ৭ নম্বর ঘাটে আসা ট্রলার জোর করে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। একজন কর্মীকে এখনো নিখোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। খুলনা রেলস্টেশনে নেতা-কর্মীদের মারধর নির্যাতন করা হয়েছে , গত দুই দিনে মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়েছে হকিস্টিক উঁচিয়ে উঁচিয়ে ।

রামপাল- কাটাখালীতেও হামলা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন , এই যে এত মানুষ আহত হলো , এত মানুষ গ্রেপ্তার হলো , তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হইরানি করা হচ্ছে ।

এটা কেন ? এ প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন , ‘আজকের এই সভা একটা নির্দেশনার প্রতীক মাত্র।

এই প্রতীক হচ্ছে আমাদের ভোটের অধিকার , ভাতের অধিকার , বাসস্থানের অধিকার । সেই অধিকারকে একেবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই সভা।’

চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের মতো খুলনার সমাবেশের মঞ্চেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্মানে ও শ্রদ্ধায় একটি চেয়ার খালি রাখা হয়।

এর উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তিনি ( বেগম খালেদা জিয়া) আমাদের বলেছেন যে তোমরা সঠিক পথে আছ , এভাবে আন্দোলন – সংগ্রাম চালিয়ে যাও।

জনগণের অধিকারকে আদায় করে নিয়ে আনতে হবে । সে জন্যই তাঁর সম্মানে এ চেয়ার সেখানে খালি রাখা হয়েছে।’

সরকারের উদ্দেশে বলেন :এই ‘অবৈধ’

সরকার আজ দেশকে একটা জাহান্নামের নরকে পরিণত করেছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব, ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন ‘আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে ,

সব অর্জনকে সম্পদ কে ধ্বংস করেছে , আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলোকে ধ্বংস করেছে , শুধু একটা কারণে—তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ ও চিরস্থায়ী করার জন্য।

তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায় সব সময় । তারা বিনা ভোটে জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’

এ সময় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : উপস্থিত নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চান , ২০১৪ সালে ভোট দিতে পেরেছিলেন আপনারা ?

২০১৮ সলে ভোট দিতে পেরেছিলেন আপনারা ?

উপস্থিত জনতা না না ধ্বনি উচ্চারণ করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন , ‘আবার ২০২৩ সালে নির্বাচন আসছে। সেই নির্বাচনকে আবার ও একই কায়দায় তারা ক্ষমতা নিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা শুরু করেছে। তারা একটা নির্বাচন কমিশন করেছে। সেই কমিশন আপনারা কি মানেন?’

এই নির্বাচন কমিশন নিজেদের ভালো দেখানোর জন্য বিভিন্ন রকমের ছলা কৌশল অবলম্বন করছে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন বলছে, ইভিএমে নির্বাচন করা হবে। গাইবান্ধায় নির্বাচন স্থগিত করে বলছেন, আমরা ভালো করেছি। আরে তোমাকে তো ওই ডিসি – এসপিরাই ভাইয়ের আই মানতে চায় না।

তোমার বিরুদ্ধে এখন আওয়ামী লীগইরাই বলছে , তুমিই নাকি ভোট চুরি করে বন্ধ করে দিয়েছ। তো সেই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোনো নির্বাচন করে লাভ হবে?’

9

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপির মহাসচিব ,মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন ‘আমরা পরিষ্কার করে বলছি, এ দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না আমরা মানি না। সুতরাং আর কোনো কথাই নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার না দিলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

সে জন্য এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবেই। অনেক অনেক ক্ষতি করেছেন। অনেক ক্ষতি করেছেন এই ১৫ বছরে—আমাদের যা কিছু অর্জন করেছি , সব কেড়ে নিয়েছেন আপনারা , অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন আপনারা , মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা লুট করেছেন আপনারা ।

ব্যাংকিং , শেয়ার বাজার, বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন আপনারা পস্ক রেসুলট । বিদ্যুতের উন্নয়নের নামে প্রতিবছর ২৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছেন। তারপরও দিনে ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,

কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কেন?

আপনি তো ঘোষণা দিয়েছেন যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। তারা জাতির সামনে এই মিথ্যা কথাই প্রচার করে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, এখন বলছে, দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে একবার দুর্ভিক্ষ হয়েছিল মনে পরে সবার , তখন অমর্ত্য সেন দুর্ভিক্ষের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে উনি যখন বই লিখলেন, ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার জন্য, তাদের করা দুঃশাসনের জন্য , লুটপাটের কারণে।

আজকে আবারও সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে, আবার সেই আগের মতো সারা বাংলা দেশকে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। ঠিক বর্গিদের মতো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *