বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ড: কিলিং মিশনে ১৫ জন

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ড: কিলিং মিশনে ১৫ জন

বেস্ট আপ টুডে
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন হত্যাকাণ্ড: কিলিং মিশনে ১৫ জন
পানসি আক্তার
১৬ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০

বামদিকে ফারদিন নুর পরশ ডানে সিসিটিভির ফুটেজ।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মানুষ ছিল কমপক্ষে ১৫ জন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকার মাদক ব্যবসায়ী রায়হানের ইন্ধনেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানা যায় ।

তবে কি কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হলো , কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে ফারদিন সেখানে যায় , নাকি তাকে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেখানে , এসব বিষয়ে খোঁজ করছে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিভাগ ।

ঘটনা সূত্র বলছে, চনপাড়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাদক ব্যবসায়ী রায়হানের নেতৃত্বে ওই এলাকায় রাস্তার একপাশে ৪ নম্বর এবং আরেকপাশে ৬ নম্বর ওয়ার্ড এ পাহারা বসানো হয়ছিল ।

গত ৪ নভেম্বর রাতে ফারদিনের উপস্থিতি টের পাওয়ার পর রায়হানের তিনতলা বাসার সামনে রায়হানসহ ৫ জন ফারদিনকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে শুরু করে । এ সময় তাদের আওয়াজ শুনে পাশে থাকা রায়হানের আর ও ছয় সহযোগী এসে তো হয় বুয়েটের শিক্ষার্থী ফারদিনকে আঘাত করে তারা ও।
হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর পর রায়হান যোগাযোগ করে শাওনের সঙ্গে। এ সময় আর ও তিনজন এসে ঘটনাস্থলে এদিক ওদিক পায়চারি করেতে লাগে । শাওন রাতেই নিজে গাড়ি চালিয়ে সাদা প্রাইভেট কারে (এক্সিও) রায়হানের বাসার সামনে চলে আসে। মরদেহ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে পরে রাতেই শীতলক্ষ্যায় কোন এক সময় লাশটি ফেলে যায় সেটি দেখতে ।

image

গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানায়, রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকায় আলোর জ্যোতি ফার্নিচারের দোকান ও একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার গ্যারেজের মাঝামাঝি জায়গায় এসে ফারদিনের মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, ফারদিন নিজে সিএনজি করে ওই এলাকায় যেতে পারে হয়তো বা, নয়তো কেউ তাকে জোরপূর্বক নিয়ে গেছে। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে (৭ নভেম্বর) যখন মরদেহ উদ্ধার করা হয় তখন তার পকেট থেকে তার মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়। মানিব্যাগে পাওয়া যায় থেকে ৩৫ টাকা মাত্র ।

তবে বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে , কোন ও সিসিটিভিতেই শিক্ষার্থী ফারদিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি কোথাও । আর ঘটনাস্থলে সিসিটিভি থাকলে ও উল্টোদিক করা ছিল সেখানে । সিসিটিভিতে ফারদিনের চনপাড়ায় যাওয়ার ফুটেজ ধরা পড়েনি কোন , আবার তার মোবাইল চনপাড়া এলাকায়ই বন্ধ হয়ে যায় ।

তার সেখানে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অনেকটাই সুনিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা । আবার সেখানে রায়হান গ্যাংয়ের সঙ্গে কি কারণে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে , এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান । হত্যার পর তার মরদেহ প্রাইভেট কারে করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে ।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা আর ও দেখা দেখা যায়, ৪ নভেম্বর রাতে ঘটনাস্থলের আশে পাশে ওই সময় ১৫ জন এদিক ওদিক আসা যাওয়া করে ঘটনা স্থানে । একে অপরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের বিষয় গুলো নিয়ে ও কাজ করছে তদন্ত কর্মকর্তারা গোয়েন্দা বিভাগের । রাত দেড়টার পর থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে ফারদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে তদন্ত কর্মকর্তারা।

3

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান , ‘আমরা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি আমরা এবং একাধিক ফুটপ্রিন্ট পেয়েছি সেখানে । বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারদিনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী রায়হানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা জানতে পেয়েছি। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এখন । তাদেরকে গ্রেফতার করা গেলে এই ঘটনা কি কারণে ঘটেছে বিষয়টি বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে।’

উল্লেখ্য রয়েছে , গত চার নভেম্বর রাজধানীর রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে বান্ধবী বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর পর নিখোঁজ হয় ফারদিন নুর পরশ। এ নিখোঁজের ঘটনায় সন্তানের দাবিতে রামপুরা থানায় একটি নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীতে তার লাশ পায় নৌ পুলিশ বাহিনী । ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ,তার পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি ,ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে বলেন ।

6

ছেলেকে হত্যা এবং লাশ গুমের অভিযোগে জড়িত থাকার অভিযোগে এনে রামপুরা থানায় ছেলের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন ফারদিনের বাবা নুর উদ্দিন রানা। লাশ উদ্ধারের পর থেকেই ফারদিনের বাবা দাবি করে আসছেন , তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে হলে তার দাবি ।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরাও জানান, আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। মাথায় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন ছিল অনেক ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *