বৈরীপ্রিয়া: ৬

বৈরীপ্রিয়া: ৬

ছেলে ইরফানকে সাথে নিয়েই তিনি পাত্রী দেখতে চলে এসেছেন। তাতে বারবার
দেখার ঝামেলাটাও এড়ানো যাবে। এমনিতে মেয়েটার ছবি মিলির মোবাইলে দেখে।
তাকে বেশ পছন্দ হয়েছে শিলার। মেয়েটা তার ইরফানের জন্য একদম পারফেক্ট
হবে বলে মনে হয়েছে তার। আর চঞ্চল হলেই বা সমস্যা কী! ইরফান তো পুরাই
ঠাণ্ডা। ওদের দু’জনের কম্বিনেশন মিলবে ভালো।
শিলা আজ আগেভাগেই চলে এলেন। খানসারা এলো তার কিছুক্ষণ পরেই। মিলি
খানসা আর লিলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন শিলাকে। খানসাকে দেখে শিলার।
চট করেই পছন্দ হয়ে গেল। মেয়েটা ছবির চেয়ে বহুগুণে বেশি সুন্দর। তার শান্তশিষ্ট
ছেলের জন্য এরকম একটি পুতুল হলে মন্দ হয় না। তিনি খানসার থুতনিতে হাত
রেখে মিষ্টি করে নাম জিজ্ঞেস করলে খানসাও বিনা জড়তায় হেসে উত্তর দিলো।
শিলার কাছে বেশ শান্তই মনে হলো খানসাকে। যদিও এক দেখায় কাউকে বোঝা
যায় না। তবে মেয়েটা যেহেতু ভদ্র পরিবার থেকে, মন্দ হবে না। হালকা দু’চারটে
কথার পরে তিন রমনীর রমনীয় কৌশলে খানসা মুখোমুখি হলো ইরফানের।
খানসা তখন একুরিয়ামে মাছেদের ছোটাছুটি দেখছিল। পেছন থেকে সালাম শুনে সে
চমকে ফিরে তাকাল। তাকিয়ে ইরফানকে আপাদমস্তক দেখল। তারপর দৃষ্টি স্থির
হলো ইরফানের চোখে। কপালের কুঁচকানো অংশে বোধহয় সামান্য টান পড়ে
‘কী দেখছেন

1
থাকবে। সালামের জবাব দিলো নির্লিপ্ত মুখে। ইরফান সহাস্যে বলল,
অত মনোযোগ দিয়ে?
‘এই তো। দেখছিলাম বন্দী জীবনেও ওরা কত সুখী! ওদের ধারণা ওরা স্বাধীন,
আসলে তা নয়!’
‘বাহ্, কী সুন্দর ভাবনা তো! কোনো কলেজে পড়েন আপনি?’ ইরফানের কপালে
ভাঁজ বাড়ল। খানসা তাকাল।
‘আমাকে এতটা বড় দেখায়?’ খানসা ফের ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল।
‘উঁহু! আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বড় ম্যাচিওরড!’
‘অহ্, ক্লাস টেন!’ খানসা মুখ ফিরিয়ে অ্যাকোরিয়ামের গ্লাসে টোকা দিয়ে একটা
গোল্ড ফিশকে ভয় দেখাল।
‘কী বলেন? রিয়েলি?’
‘ঠাট্টা করার তো কোনো কারণ দেখছি না। আপনি তো আর আমার দুলাভাই নন।’
খানসার কথা শেষ হবার আগেই ইরফান হেসে উঠল শব্দ করে। খানসা ভ্রু কুঁচকে
তাকাল।
‘হাসির কী হলো!’
‘কিছু না। চলুন না বসে কথা বলি।’

1

“কেনো? আপনাকে কে বলল আমি আপনার সাথে বসে গ্যাজাবো?’
‘কেউ না! ধরে নিন আমারই ইচ্ছে হচ্ছে। কারণ আপনি খুব মজা করে কথা
‘আমার আর কী কী মজাদার বলে মনে হচ্ছে আপনার শুনি?’
‘হঠাৎ রেগে গেলেন মনে হচ্ছে! আমি কি আপনাকে বিরক্ত করছি?’
‘রেগে যাইনি। আমি এভাবেই কথা বলি।’ খানসা উদাস চোখে বাইরে তাকাল।
ভেবেছিল লোকটা সরে যাবে। কারণ মেয়েদের এ ধরনের কর্কশতার সাথে নির্লিপ্ততা
ছেলেদের নিরুৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট যদি না সে বেহায়া ধরনের হয়ে থাকে।
কিন্তু একে তো মনে হচ্ছে ধৈর্য অপরিসীম। অথবা সে খানসাতে মজেছে। লোকটা
এবার হাসিমুখে একুরিয়ামের সামনে এসে দাঁড়াল। খানসাকে এবার সচেতন হতেই
হলো। তিক্ত কিছু অভিজ্ঞতা থেকে জানে ছেলেরা খাতির পাতায় বিশেষ মতলবে
থাকলে। এই ব্যাটার মতলবটা কী এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটা ঠিক, এর
চোখে ইরেশ বা হায়দার আঙ্কেলের লালসা নেই। আছে কায়সার ভাইয়ের মতো কিছু
বোঝাতে চাওয়ার চেষ্টা। কিন্তু তার সে আশার গুড়ে বালি। যদি বাজে মতলবে এসে
থাকে তো খানসা স্থান, কাল, পাত্র দেখবে না। নাক বরাবর মুক্কা ঝেড়ে দেবে আর
যদি হয় প্রেম নিবেদনের চেষ্টা তবে তার উচিত হবে আর কষ্ট না করা।
‘আমি ইরফান। পুরো নাম ইরফান জিম। ফ্রম নিউ জার্সি। নামের একটা ছোট্ট
ইতিহাস আছে। যদি শুনতে চান তো বলি!
‘বলার আগ্রহটা আমার ওপর চাপাচ্ছেন কেনো! আচ্ছা বলেন শুনি।’
‘আমার মা আর তার এক বান্ধবী দু’জনই ওয়েস্টার্ন বুক এর বিশাল ফ্যান। দু’জনে
টাকা জমিয়ে ওয়েস্টার্ন বই কিনত আর অদল-বদল করে পড়ত। ওখানকার একটা
চরিত্র নাকি তাদের দু’জনেরই ভীষণ পছন্দ। তারা ঠিক করলেন তাদের ছেলে হলে
নাম রাখবেন জিম। তারপরই আম্মু আমার নাম রাখলেন ইরফান জিম আর মারিয়াম
আন্টি মানে আম্মুর ওই বান্ধবী তার একমাত্র ছেলের নাম রাখলেন আরাফাত জিম।
ওদের পরিবারের সাথে আমাদের বন্ধুত্বও বহুদিনের। আরাফাত আমার খুব ভালো
একজন বন্ধু। ও আবার খুব ভালো ট্রেকিং জানে বুঝলেন!’
‘আরাফাত জিমের কিসসা আমাকে কেনো শুনতে হচ্ছে ঠিক বুঝিনি!’ ইরফানের
কথাটাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল খানসা। ইরফান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে স্যরি বলে
নিজের কথাই বলতে লাগল আবার।
‘যাই হোক, ওখানে আমার নিজস্ব একটা মেকানিকাল শপ আছে। এক ভারতীয় বন্ধু
আছে, অরবিন্দ। ওর সাথে পার্টনারশিপে চালাই। অবশ্য আমাদের পারিবারিক
ব্যবসা অন্যটা। গত কয়েক বছর যাবৎ প্যাটারসনে আছি।’]

3

“বুঝলাম। কিন্তু এসব আমাকে বলছেন কেনো? আপনার জীবন বৃত্তান্ত জেনে আমি
কী করব? খানসা বিরক্ত ও বিস্মিত।
“কিছু করবেন তা তো বলিনি তবে আপনার বন্ধু হতে পারলে খুশি হব। আপনার
সাথে কথা বলে আমার মনে হলো আপনি খুব ব্রাইট ধরনের মেয়ে। সেই হিসেবে
আপনার এতক্ষণে বুঝে যাবার কথা আমি কেনো আপনাকে আমার জীবনবৃত্তান্ত
বলছি। বাইরে আমাদের মায়েরা আমাদের সম্মতির অপেক্ষা করছেন। আমি তাদের
জানিয়ে দেবো যে আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। এ কারণে নয় যে আপনি
সুন্দরী। এটা একারণে যে আপনি সত্যবাদী। কারণ ভণিতাবাজ মেয়েদের আমি
এড়িয়ে চলি। এবার আপনি আপনার মতামতটা জানাতে পারেন। তবে আমার
ব্যাপারে আরেকটু ইনফো দেই। আমি ভ্রমণ করতে খুব ভালোবাসি। যদি কখনো
প্যাটারসনে আসেন তবে দাওয়াত রইল। আপনাকে বন-পাহাড়ে বেড়াতে নিয়ে যাব।
হাইকিং বোঝেন তো! আমার ওই ঘনিষ্ট বন্ধু আরাফাত জিম, যদিও আমি ওকে
বেয়ার গ্রিলস বলে ডাকি। কারণ প্রকৃতিজগৎ সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান তার। তাই ঘুরতে
মন চাইলে বছরে দু’একবার ওর সাথে বেরিয়ে পড়ি। চমৎকার লাগে। আপনি গেলে
আপনাকেও নিয়ে যাব। যাবেন আমাদের সাথে??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *