ভয়ংকর : সুন্দরবন এ ৭ যুবকের হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি

সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ৭কিশোরের শ্বাসরুদ্ধকর ভ্রমণ
ভ্রমণ কাহিনী।

সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ৭ কিশোরের শ্বাসরুদ্ধকর ভ্রমণ।

সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ৭ কিশোরের শ্বাসরুদ্ধকর ভ্রমণ কাহিনী। শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলিং সিনেমার চিত্রনাট্য বা গা শিউরে ওঠার মতো কিশোর উপন্যাসের কাহিনীর চেয়ে কোনো অংশেই কম বা বরং ঘটনাটি নতুন ও প্রাণবন্তও।

সময়: বুধবার সকাল ১০:৩০ টা

image

স্থান: সুন্দরবন।

পরিচ্ছেদসমূহ ঃ লুকিয়ে রাখুন
1 সুন্দরবন এর ভ্রমণ কাহিনি।
2 সুন্দরবনের মাঝে হারীয়ে যাওয়ার কাহিনি।
3 ৯৯৯ নাম্বারে পুলিশের কাছে কল করে সহযোগিতা চাওয়ার কাহিনি।
4 পুলিশের উদ্ধার অভিযানের কাহিনি।
5 সুন্দরবনের প্রবল বৃষ্টির কাহিনি।
6 বাঘের ভয়ে আতংক।
7 মসজিদের মাইক দিয়ে অবস্থান নির্ণয় করার কাহিনি।
8 খুঁজে পেতে অভিনব পদ্ধতি ব্যবহার।
9 বাঘের মুখ থেকে বেঁচে ফেরার কাহিনি।
10 ৭ কিশোরের শ্বাসরুদ্ধকর ভ্রমণ কাহিনী।
11 পরিবারের আনন্দ ফিরে পেয়ে।

image

সুন্দরবন ভ্রমণের

বনরক্ষীদের দৃষ্টির অগচরে যেয়ে তারা মজা করতে সুন্দরবনে “প্রবেশ নিষেধ” ও “বিপদজনক” এলাকায় চলে যায়। একদল দুর-দূরন্ত কিশোরেরা। কিন্তু তাদের সেই মজা তাদের জন্যই বিপদ হয়ে উঠতে বেশি সময় নেয়নি

সংখ্যায় ওরা ৭ জন: জয়, সাইমুন, জুবায়ের, মাঈনুল, রহিম ও ইমরান ও আশিক। বয়স ১৭-১৮ বছর হবে। দুজন ঢাকায় থাকে। পাঁচজন গ্রামে। ঈদ উপলক্ষে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে তারা সকলে যেই ভাবনা, সেই কাজ তাদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বুধবার সকালেই সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগরে বেড়াতে চলে যায়।

ধানসাগরের লাগোয়া এলাকায় বনরক্ষীদের অফিস রয়েছে। পাশেই একটি ছোট খালের মতো আছে। খালের ওপর ওপাড়ে যাওয়ার জন্য একটি বাশের পুল রয়েছে। পুলটি সাধারণ মানুষের জন্য না বরং এই সুন্দরবন পাহারা দিতে যে বনরক্ষীরা যায়, কেবল তাঁরাই এটি ব্যবহার করে।

সাত কিশোর লোক চক্ষুর অন্তরালে পুলটা অতিক্রম করে খালের ওপারে চলে যায়। এরপর গল্প করতে করতে তারা সুন্দরবনের ভেতরে হাঁটা শুরু করতে থাকে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়,দুপুর গড়িয়ে বিকেল। কিশোরেরা ভুলেই গেলো তাদের যে ঘরে ফিরতে হবে। ততক্ষণে সুন্দরবনের বিপদসংকুল গহীনে ঢুকে পড়েছে উদ্দাম কিশোরের দলটি।

বিকেলে বহু দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসলো আসরের আজানের ধ্বনি । তাদের হুশ ফেরে! তবে ঘরে ফেরার কথা মনে হলো! কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনের কাঁদা-জলে বেড়ে ওঠা শ্বাসমূলের ফাঁকেফাঁকে অপার্থিব রহস্য রয়েছে। সুন্দরী, কেওড়া, গরান পরতে পরতে আনন্দ ও মৃত্যু দুটোই আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে কাছে ডাকবে।

সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি

যে পথে ঢুকেছিলো সুন্দরবনে, সে পথ তারা খুঁজে না পেয়ে এদিকে-ওদিকে এলেমেলো হাটাহাটি করে চূড়ান্তভাবেই পথ হারিয়ে ফেলে তারা। বন থেকে বেরিয়ে আসার বদলে উল্টো বনের গহীনে যেতে লাগলো। পথের মাঝে পথ হারানো দূরন্ত কিশোরের দল। এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। বেরুনোর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না তাদের দল। এবার ওনারা রীতিমতো ভীত, বিচলিত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে।

সাত কিশোরের সাথে ছিলো চারটি মোবাইল। কিন্তু এই বিশাল বন তার বুক দিয়ে আইলা, সিডর, আম্ফানের মতো প্রলয়ঙ্করী ঝড় আটকে দিয়েছে বারংবার, সেই সুন্দরবনে ইন্টারনেটের বাধাগ্রস্ত হবে সেটা অস্বাভাবিক কিছুই নাহ। মোবাইলে নেটওয়ার্ক আসে যায়, আসে যায়। একসময় তারা সমর্থ হয়। কল দিয়ে বাড়িতে জানায় তারা বনের গহীনে হারিয়ে গিয়েছে।

৯৯৯ নাম্বারে পুলিশের কাছে কল করে সহযোগিতা চাওয়ার কাহিনি।

কৈশোররা বাঁধা মানে না। হারিয়ে যাওয়াদের একজন মমে করে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে। নিজেদের বিপদ জানিয়ে বনের মধ্যে পথ হারানো কিশোরেরা তাদেরকে উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে অনুরোধ করে। পুলিশ কন্ট্রোলরুম থেকে সঙ্গে সঙ্গে শরনখোলা থানার সাথে তাকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। এদিকে নৌ-পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলে।

6

পুলিশের উদ্ধার অভিযানের কাহিনি

খবর পাওয়া সংঙ্গেই শুরু হয়ে যায় পুলিশের উদ্ধার অভিযান। তবে এই সুন্দরবনে কারো অবস্থান জানা তো চারচারটি খানি কথা নয়। এটাতো খড়ের গাদায় সুই খোজা? নাহ! এটা তারচেয়েও কঠিন ও ভয়াবহও কাজও বটে।

তারপরও কিশোরদের সাথে থাকা দুটি ফোনের চার্জের ওভাবে ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি থাকলো একজন। সেটির মধ্যই তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলো পুলিশ কর্মকর্তা বাহিনি

পুলিশের খবর পেয়ে কিশোরের দল অনেকটা ধাতস্থ হলো এবং অনেকটা নিশ্চিন্ত হলো যে এ যাত্রায় হয়তো বেঁচে ফেরা যাবে। তাদের সেই আশাও নিভে যাওয়ার উপক্রম হলো যখন পুলিশের উদ্ধারকারী দলটি তাদের জানালো ওনারা যে এলাকায় হারিয়ে গেছে সে চাঁদপাই রেঞ্জের ওই অংশে বাঘের চলাচল আছে অনেক! সুতরাং হাটাহাটি করা নিরাপদ নয়।

সুন্দরবনে প্রবল বৃষ্টির কাহিনি

কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত পোহায় ! কিন্তু কিছু সময় পরই শুরু হলো প্রবল বৃষ্টির আনাগোনা। গহীন অরন্যে গুমোট অন্ধকারের সৃষ্টি হয়। এতে আরও ভড়কে গেলো কিশোরে দল।

এই রকম মুশলধারে বৃষ্টি নামলো যে আর সাথে থাকা মুঠোফোনগুলো সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সমতলের যেকোনো অপরিচিত জায়গায়ও রীতিমতো ভয় পেতে পারতো আমাদের এই কিশোরের দলটি। জলে কুমির, ডাঙ্গায় বাঘ.।

ইতোমধ্যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এসেছে। পৃথিবীর অন্যতম ভয়ংকর এই বনে। বাচ্চাদের খুঁজে বের করতে পুলিশও মরিয়া হয়ে উঠেছে জঙ্গল। পুলিশের সদস্যদের নির্ভিক কদম। বন্দুকের ম্যাগাজিন ফুললি লোডেড অবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছেন মোবাইলে বলা ওদের সম্ভাব্য অবস্থানের দিক। যেকোন মুহূর্তে তাঁদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে সুন্দরবনের বেরসিক রাজকীয় পাহারাদার!

বাঘের ভয়ের কাহিনি
ওদিকে গহীন সুন্দরবনে ঘুটঘুটে অন্ধকারে পথ চলা কঠিন হয়ে পড়ে। পুলিশের লোকজন হারিয়ে যাওয়াদের মোবাইলে কলের পরে কল দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। বহু চেষ্টার পর পুলিশ তাদের সাথে পুনঃরায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ স্থাপন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *