মাছ এর মুখে আংটি পর্ব ৩

মাছ এর মুখে আংটি পর্ব ৩

কিন্তু মার্গারেট আর ফিরে গেল না সেই জেলে আর জেলে-বউয়ের কাছে। একা
একা হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যে চলল মার্গারেট কে জানে! মন
ভালো নেই |
পালো লাগছে না
আকাশ ভেঙে পড়েছে তার মাথায়। সবকিছু অর্থহীন মনে হচ্ছে
কিছুই । হাঁটতে হাঁটতে এল সে এক প্রাসাদের সামনে। বিশাল এক বাড়ির বিশাল
বাগান। মার্গারেট সেই জমিদারবাড়িতে কাজ নিয়ে নিল। রান্নাবাড়া করার কাজ।
জমিদারবাড়িতে কাজের কোনো শেষ নেই। সেই বাড়িতে কদিন বাদে বাদেই
একটা-না-একটা অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আসেন। উৎসব হয়।
খাওয়া-দাওয়া হয়।
মার্গারেট কয়েকদিনের মধ্যেই সবাইকে সন্তুষ্ট করল কাজ দিয়ে। সে ছাড়া যেন
এখন রান্নাই হয় না। কী রান্না হবে, কোন্ খাবার খেতে ভালো— এ সবকিছুই
তদারক করে মার্গারেট । মার্গারেট ঘরকন্নার কাজে দারুণ পটু । কীভাবে রান্না করতে
হয়— এসব সে শিখে ফেলল অল্পদিনেই। তারপর কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল । কেবল
কাজ আর কাজ। দম ফেলার সময় পায় না মার্গারেট
image
এইভাবে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেল । মার্গারেট কাজের চাপে পড়ে ভুলে গেল
সেই সুপুরুষ জমিদার-পুত্রের কথা যার সঙ্গে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।
একদিন ।
রান্নাঘরে বিশাল এক মাছ কাটাকুটি করতে ব্যস্ত মার্গারেট। আজ এ-বাড়িতে
সেই জমিদার আর তার পুত্রের আগমন ঘটবে। আজ তারা আমন্ত্রিত। গেট দিয়ে
ওদের আসতে দেখেই অবাক হয়ে গেল মার্গারেট। তাহলে ওদের জন্যেই আজ
রান্নার আয়োজন! বুকটা কেঁপে উঠল মার্গারেটের।
বিশাল হলঘরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নানা সুস্বাদু খাবার-দাবার।
মাংস, মিষ্টি, শাকসবজি, নরম রুটি, গরম ভাজি— বহু রকমের খাদ্যে সাজানো
টেবিল । সবকিছুই মার্গারেট রান্না করেছে আজ মন ঢেলে ।নিজের হাতে মাছ রান্নায় ব্যস্ত হয়ে গেল সে। বিশাল এক মাছ। এতবড় মাছ সহজে

Katla Mach 2-3 kg (Catla Fish 2-3 kg) - 1 kg+ - Bazar Mama
পাওয়া যায় না। খুব সাবধানে, যত্ন করে মাছটাকে কাটল মার্গারেট। মাছটা কাটতে
গিয়ে দেখে ভেতরে যেন শক্ত কী একটা জিনিস জ্বলজ্বল করছে। যেন সোনালি কোনো
জিনিস। সেটা রক্তমাখা। পানিতে ঠিকমতো ধুয়েমুছে নিল। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে
মনোযোগ দিয়ে জিনিসটা দেখল মার্গারেট। চকচকে উজ্জ্বল একটা আংটি ।
হ্যাঁ, এই সেই আংটি। জমিদার-পুত্র যে আংটিটা বিয়ের উপহার দিয়েছিল
তাকে। এই সেই আংটি যেটা আঙুল থেকে খুলে নিয়েছিলেন জমিদার। এই সেই
আংটি জমিদার যেটা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন নীল সমুদ্রের গভীরে।
মার্গারেট যত্ন করে আংটিটা ধুয়েমুছে পকেটে রাখল। বিশাল মাছটা যত্ন করে
রান্নাবাড়ার পরে হাতমুখ ধুয়ে নিল সে। তারপর আংটিটা পরল আঙুলে ।
ওদিকে হলঘরে সকলে তখন আড্ডায়, আনন্দে উচ্ছ্বসিত। অপূর্ব সব খাদ্যের
সমাহার আজ । অতিথিরা খাদ্য মুখে নিচ্ছেন। তাদের মুখে প্রশংসার ফুলঝুরি । ভোজ
তখন জমে উঠেছে। জমিদার খাচ্ছেন আর মাঝে মাঝে হালকা রসিকতায় সবাইকে
মাতিয়ে তুলছেন। তাঁর ছেলেও রয়েছে অনুষ্ঠানে।
হায় জমিদার-পুত্র! বেচারার মনে অনেক দুঃখ । বাবা তাকে বিয়ে দিতে চান ধনীর
আদুরে কোনো দুলালীর সঙ্গে। এসব নিয়ে একেবারেই ভাবিত নয় ছেলেটি। তার
শুধু মনে পড়ে, মিষ্টি সেই মেয়েটির কথা। বাবার আদেশ অমান্য করতে পারে নি
বলে তাকে সে জীবনে হারিয়েছে।
সবাই আজ ভোজে মাতোয়ারা। হাসি-আনন্দে, গল্পগুজবে ব্যস্ত। সবার মুখেই
খাবার-দাবারের প্রশংসা । একটি খাবার সবাইকে মুগ্ধ করেছে। কী অপূর্ব স্বাদ! সেটা
হচ্ছে সেই বিশাল মাছের রান্না। নানা ধরনের মশলা দিয়ে মাছটা রান্না করা হয়েছে।
অতিথিরা কেউ আগে এ-রকম মাছ খায়নি। জমিদার বললেন,
এমন অপূর্ব রান্না কে করেছে? কোন্ রন্ধন-শিল্পী? তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই ।
তখন আগমন ঘটল মার্গারেটের। খুবই লাজুকভাবে, শান্ত ধীরস্থিরভাবে মেয়েটি
হলঘরে প্রবেশ করল। হালকা পায়ে যেন নাচতে নাচতে মেয়েটি এসে দাঁড়াল
জমিদারের সামনে। প্রথমে জমিদার চিনতে পারে নি তাকে। মেয়েটির অপূর্ব
রূপলাবণ্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল হলঘরে । হঠাৎ করেই অতিথিরা যেন চুপ মেরে
গেল । কী অপরূপ সুন্দরী একটি মেয়ে! রান্নাঘরের পোশাক যেন মানাচ্ছে না তাকে ।
জমিদার তখন মেয়েটির মুখের দিকে তাকালেন। মেয়েটিকে চিনে ফেললেন
জমিদার । অবাক হয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন তিনি । প্রচণ্ড রাগ হল তাঁর । কিন্তু রাগ প্রকাশ
করবে কীভাবে? কারণ মেয়েটির রূপে-গুণে সকল অতিথি মুগ্ধ।
image
জমিদার তখন শান্তভাবে বলল,
অসাধারণ তোমার রান্না। তোমার রান্নায় রয়েছে জাদু। অপূর্ব, অপূর্ব
রান্না তোমার।
মেয়েটি তখন মাথা নামাল জমিদারের সামনে। জমিদার মেয়েটির হাত টেনে
নিলেন কাছে। কিছু বখশিশ দিতে চান। হাত টান দিতেই আরও অবাক হলেন
জমিদার। তার হাতে সেই হীরের আংটি! জ্বলজ্বল করছে।

আপনার প্রশংসা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। বিনীতভাবে বলল মেয়েটি।
আপনার একটি জিনিস আমার কাছে আবার ফিরে এসেছে। আমি সেটা
ফেরত দিতে চাই মহামান্য জমিদার।
মার্গারেট হাতের আংটিটা খুলে জমিদারকে ফেরত দিল । জমিদার জানেন, এটা
কোন্ আংটি ।
জমিদার আংটির দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবলেন ।
ভাবলেন মানুষের ভাগ্যের কথা! যা ঘটার তা ঘটবেই! মানুষ কি তার ভাগ্যকে
নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? তার মনে পড়ল সমুদ্রের ধারে এই মেয়েটির সামনে তার
প্রতিজ্ঞার কথা।

জমিদার তখন মার্গারেটকে বলল,
– এই জিনিস তো আমার নয়। আমাকে কেন ফেরত দিচ্ছ?
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ভদ্রলোক, যার বাড়িতে আজকের অনুষ্ঠান,
তিনি বললেন,

– দেখা যাচ্ছে আমার খুদে রাঁধুনির রান্নায় সবাই মুগ্ধ। আমার ধারণা—
বলে জমিদারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন সেই ভদ্রলোক,
– নিশ্চয়ই আপনি আমার এই রাঁধুনিকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবেন না?

জমিদার তখন পরিষ্কার কণ্ঠে বললেন,

সে কোনো রাঁধুনি নয় । সে আমার ছেলের বাগদত্তা বউ । ভাগ্য একসূত্রে বাঁধা
রয়েছে ওদের দুজনের। ওরা দুজন দুজনার।
জমিদার এই কথা বলেই তার ছেলেকে সামনে ডাকলেন । ছেলেটির হাতে তুলে
দিলেন মার্গারেটের হাত। বহুদিন পরে দুজনে তাকাল দুজনের দিকে।
যেন ভালোবাসার শিহরণ খেলে গেল দুজনের রক্তে। শক্ত করে ওরা হাত চেপে
ধরল দুজনের।
এই দৃশ্য দেখে অতিথিরা যারপরনাই আনন্দিত হয়ে উঠল। ঘটনা শুনে তারা
আরও অবাক।
অনুষ্ঠান সঙ্গে সঙ্গে আরও জমে উঠল ।
আরও নাচগান, আরও হৈচৈ ।
তারপর জমিদারের প্রাসাদে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল।
ইতিপূর্বে
সেই দেশের কোথাও এমন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হয় নি। আনন্দে আর আনন্দে
ভেসে গেল সাতটি দিন।
অপূর্ব সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী ছেলের বউ পেয়ে জমিদার মহাখুশি। কারণ পৃথিবীর
কোথাও খুঁজে এমন রূপসী ও গুণী মেয়ে পাওয়া যাবে না।
মার্গারেটের জীবনে নেমে এল আশ্চর্য রকমের সুখ। সুখে-শান্তিতে তারা বাস
করতে লাগল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *