মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর নিয়ম কানুন

মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর নিয়ম কানুন                   

(পুরুষের জন্য তিনটি কাপড় দেওয়া সুন্নত, যেমন— ইজার, কোর্তা এবং চাদর ।) মহিলার জন্য পাঁচটি কাপড় দেওয়া সুন্নত, যেমন- কোর্তা, ইজার, ছেরবন্দ, চাদর এবং সিনাবন্দ । ইজার মাথা হতে পা পর্যন্ত, চাদর তা হতে হাতখানেক বড় এবং কোর্তা গলা হতে পা পর্যন্ত হবে, কিন্তু কোর্তার কল্লি বা আস্তিন হবে না। (শুধু মাঝখান দিয়ে কিন্তু ফেড়ে মাথা ঢুকিয়ে দিতে হবে।) হেরবন্দ (১২ গিরা চওড়া এবং) তিন হাত লম্বা এবং সীনাবন্দ চওড়ায় বগলের নিচ হতে রান পর্যন্ত হবে, লম্বায় এটুকু হতে হবে যেন বাঁধা যায়। (মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরানোর নিয়ম কানুন)

মহিলার কাফন যদি পাঁচটি না দিয়ে ইজার, চাদর এবং ছেরবন্দ মাত্র এ তিনটি কাপড় দেয়, তবে তাও ঠিক আছে, এটাই যথেষ্ট। তিন কাপড়ের চেয়ে কম দেওয়া মাকরূহ। আর অক্ষম হলে তিন কাপড়ের চেয়েও কম দেওয়া জায়েজ আছে। মাসআলা : সীনাবন্দ যদি ছাতি হতে নাভি পর্যন্ত দেয়, তবে তাও জায়েজ আছে, কিন্তু

রান (হাঁটুর উপর) পর্যন্ত দেওয়া উত্তম।  কাফন পরানোর পূর্বে তাতে তিনবার কিংবা পাঁচবার লোবান বা আগর বাতির ধুনি দেওয়া উচিত ।

কাফন পরানোর নিয়ম : (খাটলির উপর) সর্বপ্রথমে (নিচে) চাদর, তার উপর ইজার, তার উপর কোর্তার নিচের পাট বিছাবে, উপরের পার্ট গুছিয়ে মাথার কাছে রেখে দিবে।

তারপর মুর্দাকে গোসলের পানি মুছে একটি কাপড় দ্বারা ঢেকে আস্তে এনে কাফনের উপর চিৎ করে শোয়াবে এবং কোর্তা পরিয়ে দিবে। তারপর যদি পুরুষ হয়,

তবে শুধু ইজার এবং চাদর লেপটিয়ে দিবে। আর যদি মহিলা হয়, তবে তার চুলগুলো দুই ভাগ করে ডানে বামে কোর্তার উপর দিয়ে বুকের উপর রেখে দিবে এবং ছেরবন্দ দ্বারা মাথা ঢেকে ঐ দুই ভাগ চুলের উপর দুই দিকে ছেরবন্দের কাপড়টি রেখে দিবে।

এ কাপড়ে গিরাও দিবে না পেঁচাবে না। তারপর ইজারের বাম পার্শ্ব (মুর্দার বাম পার্শ্বে) আগে উঠাবে এবং ডান পার্শ্বে পরে উঠিয়ে তার উপর রাখবে,

তারপর সীমাবন্দ দ্বারা সীনা পেঁচিয়ে দিবে, তারপর চাদর পেঁচিয়ে দিবে, বাম পার্শ্ব নিচে এবং ডান পার্শ্ব উপরে থাকবে। তারপর একটা সুতা দ্বারা কাফনের পায়ের দিকে একটা সুতা দ্বারা মাথার দিক বেঁধে দিবে এবং

কোনো কিছুর দ্বারা কোমরের দিকে এক বাঁধ দিয়ে দিলে ভালো হয়, যাতে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় খুলে না যায় । (কবরে রেখে এসব বাঁধ খুলে দিবে)। সীনাবন্দ যদি ছেরবন্দের পর ইজার পেঁচিয়ে আগে বেঁধে দেয়, তাও জায়েজ

আছে। কোর্তার উপর) বা সব কাফনের উপর দেওয়াও জায়েজ। (মুর্দা মহিলা হলে) মেয়ে মহলে এ পর্যন্তই কাজ হবে। তারপর পুরুষদেরকে ডেকে তাদের হাওয়ালা করে দিবে তার জানাযা পড়ে দাফন করবে।

যদি মহিলারাই জানাযার নামাজ পড়ে দেয়, তবুও জায়েজ হবে। (পুরুষের অভাবে মহিলারাই জানাযার নামাজ পড়বে এবং দাফনও করবে।)

কাফনের মধ্যে বা কবরের মধ্যে আহাদনামা, পীরের শাজরা অথবা অন্য কোনো দোয়া কালাম লিখে রাখা বা কাফনের উপর অথবা সীনার উপর কালি বা কর্পূর দ্বারা কোনো দোয়া বা কালিমা-কালাম লিখে দেওয়া জায়েজ নয় ।

অবশ্য (খালি আঙ্গুলে কালিমা বা আল্লাহর নাম লিখে দেওয়া বা) কা’বা শরীফের গিলাফ বা পীরের রুমাল ইত্যাদি বরকতের জন্য সাথে দেওয়া জায়েজ আছে।  ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই যে শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তার নাম রাখবে, উপরিউক্ত

নিয়মে গোসল, কাফন এবং জানাযার নামাজ পড়ে দাফন করবে। যে শিশু মৃত অবস্থায় প্রসব হয়েছে, প্রসবকালে জীবিত হওয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি, তাকেও গোসল দিতে হবে এবং তার নামও রখতে হবে । কিন্তু নিয়ম মতো কাফন দেওয়া (ও জানাযা পড়ার) প্রয়োজন নেই। একটি কাপড় লেপটিয়ে কবরে মাটি দিয়ে রাখলেই চলবে।

  শিশুর কাফন

অকালে গর্ভপাত হলে যদি সন্তানের হাত, পা, নাক, কান ইত্যাদি কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গই প্রকাশ না পায়, তবে গোসল ও নিয়মিত কাফন দিবে না। শুধু একটি কাপড়ে লেপ্টিয়ে একটি গর্ত খুঁড়ে মাটির নিচে পুতে রাখবে । আর যদি হাত, পা, নাক ইত্যাদি কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায়, তবে তাকে মুর্দা বাচ্চা মনে করতে হবে এবং নাম রাখতে হবে, গোসল দিতে হবে, কিন্তু জানাযার নামাজ পড়তে বা নিয়মিত কাফন দিতে হবে না, শুধু একটি কাপড়ে লেপ্টিয়ে দাফন করে রাখতে হবে ।

যে সময় সন্তানের মাথা বের হয়েছে সে সময় জীবিত থাকার আলামত পাওয়া গেলেও যদি সাথে সাথে মরে যায়, তবে ঐ বাচ্চাকে মুর্দাই জন্ম হয়েছে মনে করতে হবে। অবশ্য যদি বুক পর্যন্ত বের হয়, বা উল্টো বের হলে নাভি পর্যন্ত বের হয়, তবে তাকে জীবিত জন্ম হয়েছে মনে করবে।

মেয়ে যদি ছোট হয়, কিন্তু বালেগা হওয়ার কাছাকাছি হয়, তবে তাকে বয়স্কা মহিলার নিয়মে (পাঁচ কাপড়ে) কাফন দেওয়া সুন্নত, তিন কাপড়ে দিলেও চলবে । যদি কিছু ছোট হয়, তবে তাকেও ঐ নিয়মেই কাফন দেওয়া উত্তম ।

যদি অত্যন্ত ছোট মেয়ে হয়, এখনো বালেগা হতে অনেক দেরি, তার জন্যও মহিলার নিয়মে পাঁচ কাপড়ে কাফন দিবে। যদি শুধু ইজার ও চাদর এই দুই কাপড়ে কাফন দেয়, তাও জায়েজ আছে।

ছোট ছেলেকে মহিলারাও উপরিউক্ত নিয়মে গোসল দিতে এবং কাফন

পরাতে পারে । অবশ্য কাপড় পুরুষের নিয়মে দিতে হবে অর্থাৎ এক চাদর, এক ইজার

এবং এক জামা ।  পুরুষের কাফনে যদি শুধু ইজার ও চাদর এ দুটি কাপড় দেয়, তাও ঠিক আছে, দুটির চেয়ে কম দেওয়া মাকরূহ; অক্ষম হলে দুটির চেয়ে কমও মাকরূহ নয় ।  জানাযার উপর যে চাদর ঢাকার জন্য দেওয়া হয়, তা কাফনের মধ্যে শামিল নয় ।

যে শহরে মৃত্যু হয়, সেখানেই কাফন-দাফন করা ভালো, অন্যত্র নিয়ে যাওয়া ভালো নয়, (অবশ্য প্রয়োজন হলে দুই এক মাইল দূরে নেওয়া দোষ নয় ।)

বেহেশতী গাওহার হতে 

যদি কোথাও কোনো মৃত লোকের কোনো অঙ্গ যেমন- মাথা, হাত বা পা, অথবা মাথা ছাড়া শরীরের অর্ধেক পাওয়া যায়, তবে তা শুধু একটি কাপড়ে লেপ্টিয়ে দিলেই চলবে । আর যদি মাথাসহ অর্ধেক অথবা মাথা ছাড়া বেশি অর্ধেক পাওয়া যায়, তবে নিয়ম মতো কাফন দিতে হবে ।

যদি কোথাও কবর খুঁড়ে মুর্দার লাশ পাওয়া যায়, যদি লাশ না পঁচে আর তার শরীরে কাফন না থাকে, তবে তাকে সুন্নত নিয়ম মতো কাফন পরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু যদি শরীর পঁচে যায়, তবে নিয়ম মতো কাফন পরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, শুধু একটি কাপড়ে লেপ্টিয়ে মাটি দিয়ে দিলেই চলবে ।

জীবিতাবস্থায় যে যে মূল্যের কাপড় পরে, মৃতাবস্থায়ও তাকে সেরূপ মূল্যের কাপড় দেওয়া ভালো। যদি কাফনের কাপড় নতুন না হয়, পুরাতন পবিত্র পরিষ্কার হয়, তাতে কোনো দোষ নেই। গোসল দেওয়ার জন্য যেসব পাক-পবিত্র পরিষ্কার লোটা, ঘড়া ব্যবহৃত হয়, তাও পুরাতন হলে কোনো দোষ নেই।)

পুরুষের জানাযা চাদর দিয়ে ঢাকা জরুরি নয়, কিন্তু মহিলার জানাযার উপর পর্দা করা জরুরি। তবে এ চাদর কাফনেরমধ্যে গণ্য হবে না। কাজেই এতিমের মাল দ্বারা এটা খরিদ করা যাবে না, অন্য কেউ ক্রয় করে দিতে পারে বা পুরাতন চাদর ব্যবহার করতে পারে । [অনুবদাক]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *